২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ৬ তারিখটি মহাকাশ গবেষণার ইতিহাস বই এর পাতায় লিখা থাকবে চিরদিনের জন্য। ছোটবেলায় জেনেছিলাম প্রথম মহাকাশ ভ্রমণকারি প্রাণী ছিলও একটি কুকুর যার নাম ছিলও "লাইকা"। মহাকাশ ভ্রমণ কারি প্রথম মানুষের নাম ছিলও "ইউরি গ্যাগারিন"। মহাকাশ ভ্রমণ কারি প্রথম মহিলা মহাকাশচারীর নাম ছিলও "ভেলেন্তিনা তেরোষ্কোভা"। ৬ ই ফেব্রুয়ারী ২০১৮, আমেরিকার বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা কোম্পানি এলন মাস্কের এর "স্পেস-এক্স" মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে পাঠালো টেসলা ইলেকট্রিক কার কোম্পানির একটি চেরি-লাল রঙের একটি স্পোর্টস কার যার নাম "রোডস্টার"। কক্ষপথে উৎক্ষেপিত কারটি ১ বিলিয়ন বছর ধরে কক্ষপথে ঘুরতে থাকবে।
নিম্নক্ত লিংন্ক থেকে আপনিও লাইভ দেখতে পারেন কারটি এখন কক্ষপথের কো স্হানে অবস্হান করছে। Live Views of Starman
আজকে যে রকেটটি ব্যবহার করা হয়েছে তার নাম ফ্যালকন-হেভি। স্পেস-এক্স কোম্পানির পৃথক ৩ টি ফ্যালকন-৯ FALCON 9 রকেট একত্রিত করে এর সমন্বয়ে গঠিত ফ্যালকন-হেভি। এখান উল্লেখ্য যে প্রতিটি ফ্যালকন-৯ রকেট আবার ৯ টি করে ইঞ্জিনের দ্বারা গঠিত THREE NINE-ENGINE CORES। অর্থাৎ, ফ্যালকন-হেভি সর্বোমোট ২৭ টি ইন্জিন দ্বারা গঠিত। ফ্যালকন-হেভি এর উচ্চতা ২৩৫ ফুট। এটি কক্ষপথে উৎক্ষেপণ খরচ প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার।
ছবি: ফ্যালকন-হেভি কিভাবে কক্ষপথে যাবে তার চিত্র।
******** ফ্যালকন-হেভি রকেট উৎক্ষেপণ সফল হয়েছে। ***********
ফেব্রুয়ারি মাসের ৬ তারিখটি মহাকাশ গবেষণার ইতিহাস বই এর পাতায় লিখা থাকবে চিরদিনের জন্য। এই রকেট উৎক্ষেপণ নিয়ে কেন এত আলোচনা হচ্ছে তার কয়েকটি কারণ নিম্নরূপ:
১) আজকের এই উৎক্ষেপ সফল হলে (সফল হয়েছে) মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠানোর পথে সবচেয়ে বড় বাধা দূর হবে। কারণ মঙ্গল গ্রহে কোন নভোযান যেতে এক পথেই প্রায় ৭ মাস সময় লাগবে। আসতে ৭ মাস। অর্থাৎ প্রায় ১৪ মাস। আগামী কয়েক বছরের মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠাতে চাইলে তবে অনেক বড় নভোযান পাঠাতে হবে যে নভোযানে রকেটের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে জ্বালানি থাকতে হবে; ও মানুষের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার-দবার পাঠাতে হবে।
২) ফ্যালকন-হেভি রকেট প্রায় ৬৪ টন ওজনের মালা-মাল কক্ষ পথে পাঠানোর ক্ষমতা রাখে। বর্তমানে পৃথিবীতে সবচেয়ে শক্তিশালী রকেটের (ডেল্টা-৪) চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ওজনের মালা-মাল কক্ষপথে পাঠানোর ক্ষমতা সম্পন্ন। [WITH MORE THAN 5 MILLION POUNDS OF THRUST AT LIFTOFF, FALCON Heavy will be the most capable rocket flying.]
৩) স্পেস-এক্স ব্যতীত অন্য কোন কোম্পানির রকেট-বুস্টার একবারের বেশি ব্যবহার করা যায় না। বর্তমানে যে রকটগুলো দিয়ে অন্য গ্রহের কক্ষপথে গবেষণার যন্ত্রপাতি পাঠানো হয় তা অপেক্ষা ৩ ভাগের এক ভাগ খরচে ফ্যালকন-হেভি রেকট দিয়ে অন্য গ্রহের কক্ষপথে গবেষণার যন্ত্রপাতি পাঠানো সম্ভব হবে।
৪) বর্তমানে যে রকেট গুলো আছে সেগুলো দ্বারা আমরা শুধু মঙ্গল গ্রহে কোন কিছু পাঠানোর সক্ষমতা রাখি; কিন্তু সেখানে মিশন শেষ করে আবার পৃথিবীতে ফেরত আসার সক্ষমতা রাখি না। রকেট গুলো পৃথিবী পৃষ্ঠে ফেরত আসার মতো জ্বালানী বহন করার ক্ষমতা রাখে না।
৫) ১৯৭৩ সালে চন্দ্র পৃষ্ঠে মানুষ নিয়ে গিয়েছিল যে রকেট (স্যাটার্ন-৫ (Saturn V )) শুধুমাত্র ঐ রকেটটি ফ্যালকন-হেভি রকেট অপেক্ষা বেশি ওজনের মালামাল কক্ষপথে পাঠিয়েছিল।
৬) স্পেস-এক্স কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা এলন মাস্ক একই সাথে ইলেকট্রিক কার কোম্পানি টেসলা ও অনলাইনে টাকা পাঠানোর কোম্পানি পে-পাল এর প্রতিষ্ঠাতাও। টেসলা কোম্পানির ইলেকট্রিক কার এলন মাস্কের প্রিয় বস্তু। আজকের এই উৎক্ষেপণ ছিলও প্রথম পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ। যে কারণে নিজের প্রিয় কার এর ড্রাইভিং সিটে মানুষের একটি ডামি বসিয়ে তা মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে নিক্ষেপ করা হলো যা প্রায় অনন্তকাল (১ বিলিয়ন বছর) ধরে ঘুরতে থাকবে। মঙ্গল গ্রহের কক্ষ পথে ঘূর্ণায়মান ঐ কার ও ড্রাইভিং সিটের ঐ মানুষটি জ্ঞান অন্বেষণয় মানুষের নিরন্তর প্রচেষ্টার একটি প্রতীকী চিত্র নির্দেশ করে।
ছবি: প্রথম মহাকাশ ভ্রমণকারি প্রাণী "লাইকা" নামে একটি কুকুর
ছবি: মহাকাশ ভ্রমণ কারি প্রথম পুরুষ "ইউরি গ্যাগারিন"
ছবি: মহাকাশ ভ্রমণ কারি প্রথম মহিলা মহাকাশচারীর নাম ছিলও "ভেলেন্তিনা তেরোষ্কোভা"