somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার হাওর অঞ্চলের কৃষকদের ২০১৭ সালের চোখের জল মুছে যাওয়ার পূর্বেই ২০১৮ সালে আবারও ফসলহানীর সম্ভাবনা

০৫ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



২০১৭ সালে "সুনামগঞ্জের হাওরে ফসল-হানি আর কৃষকের হাহাকারের পর বছর-জুড়ে এত আলোচনা-পরিকল্পনার পরও নির্ধারিত সময়ে একটি বাঁধেরও কাজ শেষ হলও না। গত ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু কাজ হয়েছে গড়ে ৬৫ ভাগ। ৫০টি হাওরে এখন ৯৬৪টি বাঁধ প্রকল্পের কাজ চলছে।"

যতই চেষ্টা করি দেশ নিয়ে কিছু লিখবো না; পত্রিকার পাতা খুলে তত বেশি করে দেশের সাধারণ মানুষের জান-মাল সম্পর্কিত সমস্যা গুলো আমার চোখের সামনেই পড়ে। বাংলাদেশের মানুষের জেলি-ফিস এর মতো স্বল্পস্থায়ী স্মরণ ক্ষমতার কারণে হয়তো ভুলেই গেছে যে ২০১৭ সালে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার হাওর অঞ্চলের কৃষকদের পাহাড়ি ঢলে ডুবে যাওয়া ফসল হারিয়ে কান্নার ছবি। বাঁধ তৈরি বাজেট পুরোটাই মেরা দেওয়া; পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রকৌশলী কতৃকর্ত ইঁদুরে বাঁধে ঘর তৈরির তত্ত্ব সবই ভুলে গেছে।



আজকের দৈনিক প্রথম আলোর সংবাদ: হাওরে বাঁধ নির্মাণে দলীয় প্রভাব

২০১৭ সালে "সুনামগঞ্জের হাওরে ফসল-হানি আর কৃষকের হাহাকারের পর বছর-জুড়ে এত আলোচনা-পরিকল্পনার পরও নির্ধারিত সময়ে একটি বাঁধেরও কাজ শেষ হলও না। গত ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু কাজ হয়েছে গড়ে ৬৫ ভাগ। ৫০টি হাওরে এখন ৯৬৪টি বাঁধ প্রকল্পের কাজ চলছে।"

"নির্ধারিত সময়ে একটি বাঁধেরও কাজ শেষ হয়নি।
কৃষকের আড়ালে কাজে যুক্ত হয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা।"

"‘হাওর বাঁচাও, সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন’ সংগঠনের সভাপতি বজলুল মজিদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা উদ্বিগ্ন, আমরা হতাশ। এত কথা, এত চিৎকার করলাম। তবু সময়মতো কাজ শেষ হলো না। এটা হাওরবাসীর জন্য খুবই দুঃখজনক। কৃষকদের মধ্যে এখনই ফসল নিয়ে আতঙ্ক শুরু হয়ে গেছে।’"

পত্রিকায় বাঁধ তৈর এবছরের অবস্থা পড়ে একটু ঢু মারলাম আবহাওয়া পূর্বাভাষ বিষয়ক কিছু সাইটে। আগামী ১৫ দিনের বৃষ্টিপাতের যে চিত্র পেলাম তা মোটেই সুখকর না। সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার উজানে ভারতের জেলা গুলোতে ২০০ থেকে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। ঐ সকল এলাকায় বৃষ্টি হওয়া মানে তা ২/৩ দিন পরে সিলেট ও সুনামগঞ্জের হাওড় এলাকার নদীর পানি বৃদ্ধি।

বাঁধ গুলোর নির্মাণ কাজ যদি এখনও ৩৫ ভাগ অবশিষ্ট থাকে ও কাজ শেষ করতে আরও ২ সপ্তাহ লাগে তবে অবস্থা কি হবে সেটা নিশ্চয় বুঝতে পারতেছেন। আগের দিন রাস্তার গর্তে মাটি ফেলে পরেরদিন ভারি বৃষ্টি হয় তবে সেই মাটির কতটুকু রাস্তায় লেগে থাকবে আর কতটুকু বৃষ্টির পানিতে ভেসে যাবে সেটা বুঝার জন্য নিশ্চয় রকেট বৈজ্ঞানিক হতে হবে না কাউকে। আগামী ২ সপ্তাহে কি পরিমাণ বৃষ্টিপাত হতে পারে তার দুইটা চিত্র যোগ করলাম। পূর্বাভাষ চিত্র আমেরিকার আবহাওয়া পূর্বাভাষ মডেল Global Forecast System (GFS) হতে প্রাপ্ত। প্রথম চিত্র হলও সিঙ্গেল রিয়েলাইজেশন (মডেল এবার চালিয়ে যে পূর্বাভাষ পাওয়া যায়); পরের চিত্র হলও মডেল ৩০ বার চালিয়ে প্রতিবার যে পূর্বাভাষ পাওয়া যায় সেই ৩০ টি পূর্বাভাষের গড়; এই গড়কে বলা হয়ে থাকে Ensemble forecasting। সোজা বাংলায় তুলনা করা যেতে পারে ডায়াবেটিস আক্রান্ত কোন মানুষের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ সঠিক ভাবে নির্ণয়ের জন্য ৩০ বার রক্ত পরীক্ষা করে প্রতিবার প্রাপ্ত রেজাল্ট যোগ করে সেই রেজাল্টের গড় নিয়ে গ্লুকোজের যে পরিমাণ পাওয়া যায় সেটাই হলও আবহাওয়া বিজ্ঞানের ভাষায় Ensemble forecasting।



Global Forecast System (GFS) 30 member Ensemble Average

আবহাওয়া পদার্থ বিজ্ঞানের তথ্য মতে এই বছর বাংলাদেশে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ পূর্ব-প্রশান্ত মহাসাগরের বিষুবরেখা বরাবর পানির তাপমাত্রা গত ৩০ বছরের একই সময়ের পানির তাপমাত্রা অপেক্ষা মাইনাস শূন্য দশমিক ৫ ডিগ্রী কম রয়েছে। আবহাওয়া পদার্থ বিজ্ঞানের ভাষায় যে অবস্থাকে লা-নিনা অবস্থা বলা হয়ে থাকে। পূর্ব-প্রশান্ত মহাসাগরের বিষুবরেখা বরাবর পানির তাপমাত্রার সাথে বাংলাদেশের বৃষ্টিপাতের বিপরীত সম্পর্ক রয়েছে। অর্থাৎ, যে বছর প্রশান্ত মহাসাগরের বিষুবরেখা বরাবর পানির তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকবে সেই বছর বর্ষা মৌসুমে বাংলাদেশে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃষ্টিপাত হবে।



ব্লগে যারা সাংবাদিক আছেন বা মিডিয়ার সাথে জড়িত আছেন; সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার হাওর অঞ্চলের কৃষকদের চোখে পানির কথা যদি গত এক বছরে ভুলে না যান তবে ঐ সকল জেলার প্রশাসন, পানিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের একটু তাগাদা দেন আগামী ৭ দিনের মধ্যে বাঁধ গুলোর কাজ শেষ করার জন্য। নইলে গতবারের বন্যর ধাক্কায় দেশের মানুষকে ৫০ টাকায় মোটা চাউল খেতে হচ্ছে; ২০১৮ সালে একই ভাবে হাওড় এলাকার ফলস ক্ষতিগ্রস্ত হলে ৭০ টাকায় চাউল খাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে দেশের মানুষকে।

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:১৮
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×