somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার করতে গিয়ে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যটি লজ্জায় নিজের মুখ ঢেকে ফেলে কিন্তু নির্লজ্জ সরকার ঢাকে না !!!

১৪ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কোন-কোন সরকার বিরোধী আন্দোলনকারীরা পায় পাখা-বাতাস সহ বিরিয়ানি খাওয়া ও হোটেল শেরাটন-সোনারগাঁ এর রাত্রি যাপনের ব্যবস্হা পক্ষান্তরে অন্য আন্দোলনকারীরা পায় পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস ও থানার জেলখানায় রাত্রি যাপনের ব্যবস্হা। মদিনা সনদে চলা দেশে আন্দোলনকারীদের সাথে এই রকম বৈষম্য কেন?

সরকারের নির্দেশ পালন করে কোটা সংস্কারের দাবিতে পথে নেমে আসা মেয়েটিকে গ্রেফতার করতে গিয়ে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যটিও নৈতিকতা বিরোধী কাজটি করতে গিয়ে লজ্জায় নিজের মুখ ঢেকে ফেলতে হলও। [কোটা সংস্কার চেয়ে মিছিল, কাঁদানে গ্যাস ও লাঠিপেটা], সুত্র: দৈনিক প্রথম আলো





সরকারি চাকুরীতে কোটা-প্রথার সংস্কার চেয়ে তৃতীয় বারের মতো সারা-দেশে পথে নেমেছিল বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চাকুরী প্রার্থীরা। সম্পূর্ণ অহিংস একটা আন্দোল দমনে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করলো; প্রথমে আন্দোলনকারী ৩ জনকে গ্রেফতার করলো; এর পরে গ্রেফতারকৃতদের ছড়িয়ে নিতে ৫০ আন্দোলনকারী থানায় উপস্থিত হয়ে পুলিশকে অনুরোধ করলো তাদের ছেড়ে দিতে অথবা তাদের গ্রেফতার করতে। জনগণের সেবক থেকে সরকারের সেবকে পরিণত হওয়া পুলিশ বাহিনী ঐ ৫০ জনকেও গ্রেফতার করে জেলখানায় আটকে রাখলো।





যে সরকার কিছুদিন পূর্বে অন্য একটি সরকার বিরোধী আন্দোলনকারীদের পাখা-বাতাস সহ বিরিয়ানি খাওয়ার ব্যবস্হা করলো। আন্দোলনের নেতাদের হোটেল শেরাটন-সোনারগাঁ এর রাত্রি যাপনের ব্যবস্হা করলো। সরকার প্রধান সংসদ নামক মাছের বাজারে দাঁড়াইয়া চোখে গ্লিসারিন লাগাইয়া আবেগে কাইন্দা দিলো। বাংলা সিনেমার নায়িকার মতো ডায়লগ "শয়তান দেহ পাবি কিন্তু মন পাবি না" এর অনুকরণ কইরা কইলো তাহার শরীর সংসদে থাকলেও মন সারাদিন আন্দোলনকারীদের ঐখানে পড়ে থাকে।



যে গণমাধ্যম পাখা-বাতাস সহ বিরিয়ানি খাওয়া সরকার বিরোধী আন্দোলনকারীদের লাইভ কভারেজ দিল দিনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২৫ ঘণ্টা সেই একই গণমাধ্যম গুলো সরকারি চাকুরীতে কোটা-প্রথার সংস্কার চেয়ে পথে নামা আন্দোলনকারীদের উপরে পুলিশের কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপের সংবাদ ও আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের গ্রেফতারের সংবাদ পুরো ব্ল্যাক আউট করে দিলো।



গতকাল রাতে ছোটবোনকে ফোন দেওয়ার সাথে-সাথে বলে ভাইয়া শুনছিস নাকি খবর? তার কথা শুনে ভয় পেয়ে দ্রুত জিজ্ঞাসা করলাম আব্বা বা আম্মার কিছু হয়েছে নাকি? ২ বছর পূর্বে আব্বার হার্টে ২ টা রিং পড়াতে হয়েছে; আম্মারও একটা মেজর অপারেশন করতে হয়েছিল তাই অসময়ে দেশ থেকে পরিবারের কেউ ফোন দিলে ফোন ধরে প্রথমে জিজ্ঞাসা করতে হয় কোন সমস্যা? যাই হউক, ছোট বোন বলে যে বিপ্লব তো জেলে!!! সরকারি চাকুরীতে কোট সংস্কারের দাবিতে যে ছাত্র-ছাত্রীদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ তাদের মধ্যে বিপ্লবও আছে। বিপ্লব হলও আমার আপন চাচাত ছোট ভাই।

বিপ্লব কয়েক মাস পূর্বে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ ও এমবিএ পাস করার পরে এখন চাকুরী খুঁজছে। দেশের উচ্চ শিক্ষিত লাখ-লাখ বেকারের মধ্যে সেও একজন। চাচার মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার সুযোগ হয় নাই যুদ্ধের সময় বয়স ১০ বছরের কম হওয়ায়। দাদা মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ও খাদ্য দিয়ে সাহায্য করলেও মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে না। ফলে মুক্তিযোদ্ধার নাতি-পুতি কোটার মধ্যেও সে পড়ে না। অগত্যা দেশের শিক্ষিত ৯৮% বেকারের মতো তাকেও পথে নামতে হয়েছে মেধার ভিত্তিতে সরকারি চাকুরীর সুযোগের দাবিতে।

যোগ্য মানুষ থাকার পরেও অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতার মানুষদের কাছ থেকে সরকারি সেবা নিতে বাধ্য করা হবে কেন দেশের করদাতাদের?

গতকাল কোটা সংস্কারের দাবিতে তৃতীয়বারের মতো পথে নেমেছিল। গতকালের কর্মসূচী ছিলও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে নিজেদের যৌক্তিক দাবির পক্ষে স্মারনলিপী প্রদান। অগণতান্ত্রিক বা নামমাত্র গণতান্ত্রিক সরকার গুলো যা করে তা হলও দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ যা চায় তার বিপরীতে নিজেদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়। বাংলাদেশ সরকারও এর ব্যতিক্রম না। আজ থেকে ৪৭ বছর পূর্বে যে প্রেক্ষিত বিবেচনা করে সরকারি চাকুরীতে কোটা-প্রথা চালু করা হয়েছিল সেই একই গান গেয়ে যাচ্ছে আজ স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরে।

গতকাল আন্দোলনস্থল হতে পুলিশ ৩ জনকে গ্রেফতার করে রমনা থানার হাজতে পুরোয়। এই সংবাদ শুনে আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের ৬০ জনের একটি দল রমনা থানায় উপস্থিত হয়ে পুলিশকে অনুরোধ করে গ্রেফতারকৃত ৩ জনকে ছেড়ে দিতে অথবা তাদের ৬০ জনকেও গ্রেফতার করে একই হাজতে পুরার জন্য। আমাদের দয়ার সাগর পুলিশ ভাইয়েরা দয়া পরবশ হয়ে তাদের ৬০ জনকেও হাজতে পুরে দিয়েছে। কারণ তারা চায় না আন্দোলনরত ছোট ভাইয়েরা ঢাকার রাস্তায় বসে রোদে পুরে কালো হয়ে যাক; ঢাকার পাবলিক টয়লেটের অ-স্বাস্থ্যকর পরিবেশে সৌচকৃত সম্পন্ন করুক। অন্তত ছোট ভাইদের মাথার উপর ফ্যান তো ঘুরবে (নিশ্চিত না রমনা থানার হাজতে ফ্যান আদৌ আছে কি না!!)। রমনা থানার পুলিশ ভাইয়েরা বড়ই দয়ালু; তারা চায় না কেউ হাজতে ফ্যানের বাতাস খাবে আর কেউ ঢাকার রাস্তায় বসে রোদে পুরে কালো হয়ে তাই সকলে ফ্যনের বাতাস খাওয়ার সুযোগ করতে দিতে রমনা থানার হাজতের ২০ জন ধরন ক্ষমতার রুমে ৬৫ জন দাঁড়াইয়া থাকার ব্যবস্হা করে দিয়েছিল।

গ্রেফতার ৩ জনকে ছাড়িয়ে নিতে গিয়ে ৬০ জনের কারাবরণের সংবাদ শুনে এবারে প্রায় ৫০০ জন আন্দোনলাকরী থানায় উপস্থিত। ঐ দিকে ঢাকায় আন্দোনলাকরীদের গ্রেফতারের সংবাদ শুনে সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে পথে নেমে রাস্তা অবরোধ করা শুরু করে। বিশেষ করা কুমিল্লায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও সাভারে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোনলাকরী ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করা শুরু করলে সরকার ও পুলিশের কর্তা ব্যক্তিদের বোধোদয় হওয়া শরু করে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে গ্রেফতার করার ৬ ঘণ্টা পরে গ্রেফতারকৃত সকলকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।

বড় ভাই হিসাবে ছোট ভাইয়ের জেলে যাওয়ায় চিন্তিত হওয়া উচিত, কিন্তু ছোট ভাইয়ের জেলে যাওয়ায় গর্ববোধ করছি। বাবা-মায়ের দেওয়া "বিপ্লব" নামটাকে সে সার্থক প্রমাণ করেছে ১ টা দিনের জন্য হলেও। পরিবারে চাকুরী প্রার্থীর সংখ্যাও একাধিক; একই সাথে পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত সদস্য সংখ্যাও। নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে সরকারের নির্দেশ পালন করতে ছোট ভাইয়ের পিঠে বড় ভাইয়ের লাঠির বাড়ির সম্ভাবনা অস্বীকার করা যায় না।

পূর্বে বলেছি, আবারও বলছি, সরকারি চাকুরীতে বৈষম্য মূলক কোটা সংস্কার করে মেধা ভিত্তিক নিয়োগের জন্য পথে নেমে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য নিজের শর্তহীন সমর্থন থাকল।

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:৩০
১০টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×