somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নামাজ-রোজায় মন দিতে চান তসলিমা নাসরিন

১১ ই অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন বলেছেন, ‘একসময় আমি দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। বুড়ো, মাঝবয়সী ও প্রবীণ বন্ধুদের নিয়ে দেহজ খেলায় মেতে উঠি। ভোগ করি যৌনতা। কিন্তু এখন দেহজ খেলায় মত্ত থাকার বয়স নেই। সুখের পায়রারা আজ কেউ আমার পাশে নেই।’

তসলিমা আরো বলেন, প্রায় দেড় যুগ ধরে তিনি নির্বাসনে দিন যাপন করছেন। মৌলবাদীদের আশীর্বাদপুষ্ট বিএনপি সরকারও তাকে দেশে ফিরতে দেননি। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি হিসেবে দাবি করা আওয়ামী লীগ সরকারও তাকে দেশে ফেরার সুযোগ দেননি। তিনি এখন ক্লান্ত। দেশে ফিরতে চান। দেশেই বাকিটা জীবন কাটাতে চান।

তসলিমা নাসরিন আগের মতো এখন আর লিখতেও পারছেন না বা লিখছেন না। উতল হাওয়া, আমার মেয়েবেলা, ভ্রমর কইও গিয়া র মতো বই আর আসছে না। আগের মতো কাব্য-কবিতাও না। একাধিক স্বামী ও একাধিক পুরুষের সঙ্গে তার দেহজ সম্পর্কের কথা তিনি বেশ রসিয়ে রসিয়ে লিখেছেন। কিন্তু আজকাল বয়সের কারণে নারী হিসেবে আর এই সম্পর্ক অব্যাহত রাখা সম্ভব হচ্ছে না।

তসলিমা এখন হতাশ, চোখের নিচে কালি পড়েছে, চামড়ায় বয়সের চাপ, শরীরের মধ্যে নানা রকম ব্যথা তো আছেই। একাকিত্ব তাকে আরও পঙ্গু করে দিচ্ছে। এমনি অবস্থায় বিদেশের কোথাও থিতু হতেও পারছেন না তিনি। দেশে ফেরাও তার জন্য দিন দিন কঠিন হয়ে গেছে। যেই মৌলবাদীদের ভয়ে তিনি দেশ ছেড়ে ছিলেন, সেই ভয় এখনো তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি তুলে ধরেন তার এখনকার জীবনানুভূতি। সাক্ষাৎকারটি সারসংবাদ পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো :

প্রশ্ন : আপনার কাছে একটা প্রশ্ন। এই যে লেখালেখি করলেন, এর মূল উদ্দেশ্য কী ছিল, দেহের স্বাধীনতা না চিন্তার স্বাধীনতা?
তসলিমা : প্রশ্নটা আপেক্ষিক। আসলে আমি তো পেশায় ছিলাম চিকিৎসক। আমার বাবা চেয়েছিলেন তার মতো হতে। আমিও অধ্যাপক ডা. রজব আলীর মতো একজন খ্যাতিমান চিকিৎসক হই। শৈশব, কৈশোর এবং যৌবনে আমি অনুভব করি, নারীরা আমাদের সমাজে ক্রীতদাসীর মতো। পুরুষরা তাদের ভোগ্যপণ্যের মতো ব্যবহার করে। এ কারণেই বিষয়গুলো নিয়ে প্রথমে লেখালেখির কথা ভাবি।

প্রশ্ন : স্বাধীনতার দাবিতে কি আপনার এই লড়াই?
তসলিমা : আমি প্রথমত নারীর জরায়ুর স্বাধীনতার দাবি তুলি। একজন পুরুষ যখন চাইবে, তখনই তার মনস্কামনা পূর্ণ করতে ছুটে যেতে হবে। এটা তো হতে পারে না। অথচ তখন ছুটে না গেলে জীবনের সব পুণ্য নাকি শেষ হয়ে যাবে। চিন্তার স্বাধীনতা না থাকলে ভালো লেখক হওয়া যায় না।


দেহের স্বাধীনতার বিষয়টা গৌণ। তবে একেবারে ফেলনা নয়। পুরুষই একচেটিয়া মজা লুটবে, নারী শুধু ভোগবাদীদের কাছে পুতুলের মতো হয়ে থাকবে, এটা মেনে নিতে পারিনি।


প্রশ্ন : আপনি পরিকল্পিতভাবে নিজেকে আলোচিত করে তোলেন। আজ বাংলা সাহিত্যে বা বাংলাদেশের সাহিত্যজগতে আপনি তো চরমভাবে অবহেলিত।
তসলিমা : আমি একটা আলোড়ন সৃষ্টি করেছি। সত্য কথা সাহিত্যে অনেকের জন্য কষ্টদায়ক হয়। আমি আমার বহু স্বামী ও ভোগ্য পুরুষদের নামধাম প্রকাশ করে দেয়ায় অনেক বন্ধু আমাকে এড়িয়ে চলেন।


বাংলা সাহিত্যের অনেক দামি দামি পুরুষও চান না যে আমি দেশে ফিরি। একসময় আমার বিপক্ষে ছিল কট্টর মৌলবাদীরা। এখন প্রগতিশীল অনেক সাহিত্যিকও বিপক্ষে। কারণ এদের নষ্ট মুখোশ আমি খুলে দিয়েছি।


প্রশ্ন : আপনি চিকিৎসক থাকলেই ভালো করতেন। মিডিয়াতে কেন এলেন? সাহিত্যেই বা কেন?
তসলিমা : আমি নারীর অধিকার নিয়ে ভেবেছি। কিন্তু এখন মনে হয় আমি মানবিকভাবে আশ্রয়হীন। আর এ কারণেই আমি অন্য স্রোতে সুখ খুঁজেছি। পরিবার হারালাম, স্বামী-সন্তান হলো না, ঘরসংসার হলো না। তখন দৈহিক সম্পর্কে নেশাগ্রস্ত না থেকে আর কোনো পথ খোলা ছিল না।


প্রশ্ন : এখন আপনি কী চান?
তসলিমা : অনেক কিছু। আমার হারিয়ে যাওয়া জীবন, যৌবন, ভোগ-উপভোগ, স্বামী-সন্তান, পরিবার-পরিজন। কিন্তু দিতে পারবেন কি? আজ আমি নিজ দেশের কাউকে দেখলে কুণ্ঠিত ও লজ্জিত হই। খ্যাতি, অর্থ, পুরস্কার সবই আছে, তবুও মনে হয় আমি ভীষণ পরাজিত। দিনে হইচই করে কাটাই, রাত হলে একাকিত্ব পেয়ে বসে। আগের মতো পুরুষদের নিয়ে রাতকে উপভোগ করার মতো শরীর-মন কোনোটাই নেই।


প্রশ্ন : এখন কেমন পুরুষ বন্ধু আছে?
তসলিমা : একসময় অনেক ব্যক্তিত্ববানদের পেছনে আমি ঘুরেছি। ব্যক্তিত্বহীনরা আমার পেছনে পেছনে ঘুরেছে। আজকাল আর সুখের পায়রাদের দেখি না। মনে হয় নিজেই নিজেকে নষ্ট করেছি।


পরিচিত হয়েছি নষ্ট নারী, নষ্টা চরিত্রের মেয়ে হিসেবে। লেখালেখি করে তাই এসব পুরুষদের ওপর আমার রাগ, ঘৃণা ও অবহেলাকে প্রকাশ করেছি। যৌনতার রানি হিসেবে প্রকাশিত হলাম, অথচ এই রানির কোনো রাজাও নেই, প্রজাও নেই। এজন্য আজ হতাশায় নিমজ্জিত আমি।


প্রশ্ন : ধর্মকর্ম করেন?
তসলিমা : মাঝেমধ্যে মনে হয় সব ছেড়ে নামাজ-রোজা করি, তাওবা করে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করি। কম্যুনিস্টরাও তো একসময় বদলে যায়। আমার জন্ম ১২ই রবিউল আউয়াল, মহানবীর জন্মদিনে। নানি বলেছিলেন, আমার নাতনি হবে পরহেজগার। সেই আমি হলাম বহু পুরুষভোগ্য একজন ধর্মকর্মহীন নারী। বলা তো যায় না, মানুষ আর কত দিন বাঁচে। আমার মা ছিলেন পিরের মুরিদ। আমিও হয়তো একদিন বদলে যাব।


প্রশ্ন : বিয়েটিয়ে করবার ইচ্ছে আছে কি?
তসলিমা : এখন বিয়ে করে কী করব? পুরুষটিই বা আমার মধ্যে কী পাবে? সবই পড়ন্ত বেলায়। যে বিয়ে করবে, সে যদি আমার মধ্যে যৌন সুখ না চায়, সন্তান না চায়, এমন মানব পেলে হয়তো একজনকে সঙ্গী করার কথা ভাবতেও পারি।


প্রশ্ন : আপনি কি একেবারে ফুরিয়ে গেছেন?
তসলিমা : না, তা ঠিক নয়। তবে পুরুষ তো শত বছরেও নারীকে সন্তান দেয়। মেয়েরা তো পারে না। আমার এখনো রজঃস্রাব বন্ধ হয়নি। মেশিনারি ঠিক আছে। তবে নতুন বা আনকোরা তো নয়, লক্কড়ঝক্কড় মেশিনারির মতো আরকি? পুরুষদেরও বয়স বাড়লে খাই খাই বেড়ে যায়। এতটা মেটানো তো আর এই বয়সে সম্ভব হবে না।


প্রশ্ন : বয়স বাড়লে পুরুষেদের সেক্স বাড়ে, এটা কীভাবে বুঝলেন?
তসলিমা : কত বুড়ো, মাঝবয়সী ও প্রবীণ বন্ধুদের নিয়ে দেহজ খেলায় মেতেছি, এটা আমার জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি।


প্রশ্ন : রাত যখন বিশ্বকে গ্রাস করে, আপনার ঘুম আসছে না- তখন আপনার বেশি করে কী মনে পড়ে?
তসলিমা : খুব বেশি মনে পড়ে আমার প্রথম প্রেম, প্রথম স্বামী, প্রয়াত কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহকে। অনেক কাঁদি তার জন্য। পেয়েও হারালাম তাকে। রাগ হয়েছিল বিয়ের রাতেই। আমি তো ডাক্তার। তার পুরুষদদণ্ডে ক্ষত দেখি। বুঝতে পেরেছিলাম যাকে জীবন দিয়ে ভালোবাসি, সে বেশ্যাবাড়ি যায়। সিফিলিস-গনোরিয়ায় আক্রান্ত সে। তবু তাকে বলি, আজ বাসররাতে যৌনকেলি হবে না। তোমার শরীরে রোগ। এখন আমার শরীরে তুমি ঢুকলে আমিও এ রোগে আক্রান্ত হব। তোমাকে সুস্থ করে তুলব, তারপর হবে আমাদের আনন্দবাসর। কিন্তু পুরুষ তো জোর করতে চাইল, ব্যর্থ হয়ে চলে গেল পতিতার বুকেই।



প্রশ্ন : অন্য স্বামীদের কথা মনে পড়ে না?
তসলিমা : তারা এমন উল্লেখযোগ্য কেউ নন। তাদের মুরোদ আমি দেখেছি। তার চেয়ে বহু বন্ধুর মধ্যে আমি দেখেছি, কেমন উন্মত্ত তেজ। ওদের স্মৃতি মনে পড়ে মাঝেমধ্যে।



প্রশ্ন : দেশে ফিরবেন না?
তসলিমা : দেশই আমাকে ফিরতে দেবে না। আর কোথায় যাব? বাবা-মা-ভাইবোন সবাইকে আমি লেখাতে জবাই করে দিয়েছি। আসলে নেশাগ্রস্তই ছিলাম, অনেক কিছু বুঝিনি। আজ আত্মীয়স্বজনও আমাকে ঘৃণা করে। মরার পর লাশ নিয়ে চিন্তা থাকে, আমার নেই। কোনো পরীক্ষাগারে দেহটা ঝুলবে। ছাত্রদের কাজে লাগবে।



তথ্যসূত্র : স্বদেশ অন লাইন
- See more at: Click This Link
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×