somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গোপালগঞ্জের ওপর কেন এত রাগ বেগম জিয়ার ][ সৈয়দ বোরহান কবীর

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গোপালগঞ্জের ওপর কেন এত রাগ বেগম জিয়ার ?

সৈয়দ বোরহান কবীর


‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচি আবারো প্রমাণ করলো ‘যত গর্জায় ততটা বর্ষায় না।’ বিরোধী দলের আস্ফালন, হুমকি আর টকশোতে সুশীলদের আর্তনাদ দেখে মনে হয়েছিল, লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে পড়বে। খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘যেকোন মূল্যে কর্মসূচি সফল করা হবে।’ কিন্তু নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা রাজধানীতে কাকপক্ষী দেখা গেলেও বিএনপি নেতাকর্মীদের দেখা গেল না। আচমকা পুলিশ ব্যারিকেড ভেঙে জনতার বাঁধভাঙা জোয়ারের ছিটেফোঁটাও দেখা গেল না। ২৯ ডিসেম্বর আবারো প্রমাণ করলো, জনগণের সম্পৃক্ততা ছাড়া ষড়যন্ত্র হয় কিন্তু আন্দোলন হয় না। সাম্প্রতিক সময়ে মিশর, সিরিয়া কিংবা থাইল্যান্ডের আন্দোলনে আমরা দেখেছি, জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সব বাঁধা উপেক্ষা করেই সেখানে জনগণ রাস্তায় নেমে পড়েছিল। আমরা যদি ইতিহাস বিস্মৃত না হই তাহলে দেখবোÑ ২০০১ সালে জনতার বাঁধভাঙা ঢল কীভাবে নেমেছিল রাজপথে। নব্বইয়ের গণআন্দোলনের কথা না হয় বাদই দিলাম। কিন্তু ২৯ ডিসেম্বর নিরুত্তাপ জনগণ খালেদা জিয়াকে প্রত্যাখ্যান করলেন। তারা বেগম জিয়ার ডাকে সাড়া দিলেন না। প্রেসক্লাবে কিছু সাংবাদিক-অসাংবাদিকের চিৎকার-চেঁচামেচি ও সুপ্রিম কোর্টের সামনে কালো কোট পরিহিত কিছু রাজনৈতিক কর্মীর তামাশা ছাড়া ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ ছিল অনুল্লেখ্য। এ যেন পর্বতের মুসিক প্রসব।

সকাল থেকে শুনেছিলাম, বেগম জিয়া বেরুবেন। কিন্তু সকাল পেরিয়ে পরন্ত বিকালে আপোসহীন নেত্রীর অশোভন কিছু খিস্তি হলোÑ ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’র একমাত্র প্রাপ্তি। বেগম খালেদা জিয়া বিরোধী দলের নেত্রী। এই সরকারকে ইদানীং প্রায়ই তিনি ‘অবৈধ’ বলেন। তাহলে ‘অবৈধ’ সরকারের, অবৈধ সংসদের বিরোধী দলের নেতা হিসেবে তিনিও অবৈধ। অবৈধ হলেও তিনি সরকারি সুযোগ-সুবিধা ঠিকই নিচ্ছেন। এমনকী যে গাড়িতে উঠে তিনি পল্টন যাত্রার নাটক করলেন, টেলিভিশনের বদৌলতে দেখলাম সেই গাড়িতে জাতীয় পতাকা লাগানো।

বেগম জিয়াকে নিরাপত্তার জন্য তার বাসভবন থেকে বেরুতে দেওয়া হয়নি। তিনি যে গৃহবন্দি বা গ্রেপ্তার হননি, তার প্রমাণ পাওয়া গেল বিকালে। তিনি টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে বেশ কিছু কথা বললেন। গ্রেপ্তার বা গৃহবন্দি কোনো ব্যক্তি নিশ্চয়ই গণমাধ্যমের সামনে এভাবে গালাগাল করতে পারেন না। বিরোধী দলের নেতা একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তাই তার কাছে জনগণ সবসময় শালীন এবং শিষ্টাচারসম্মত বক্তব্য আশা করেন। কিন্তু তিনি যে ভাষায় এবং সে স্বরে উপস্থিত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনকে ধমকালেন, সেই ভাষা রাজতন্ত্রের যুগে ‘মহারানী’রাও ধমকাতেন কিনা সে জন্য ইতিহাস ঘাটতে হবে। তিনি একনারী কর্মকর্তাকে তারস্বরে ধমকে ‘বেয়াদব’ বললেন। এর আগে সংসদেও তিনি একবার ‘বেয়াদব’ বলে আওয়ামী লীগের সাংসদদের শাসিয়েছিলেন। কথায় কথায় কাউকে ‘বেয়াদব, চুপ’ ইত্যাদি বলা গণতান্ত্রিক চর্চা নয়। এটা সামন্ততান্ত্রিক রীতি ও সংস্কৃতি। বেগম জিয়া যে জনগণের অধিকারে বিশ্বাস করেন না, সামন্ততন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র, রাজতন্ত্রে বিশ্বাস করেন এই ‘ধমক’ তার একটি প্রমাণ মাত্র।

বেগম জিয়া দুবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে কি ভাষায় সম্বোধন করলেন? এটা কি ভদ্রসমাজে ব্যবহার্য ভাষা?

বেগম জিয়া একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘গোপালী’ এর পর তিনি যে কথাটা বললেন, তা ভয়াবহ। তিনি বললেন ‘গোপালগঞ্জের নাম পাল্টে দেবো।’ গোপালগঞ্জ, বাংলাদেশ এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে থাকা তিনটি নাম। গোপালগঞ্জের পবিত্র মাটিতে জš§ নিয়েছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। গোপালগঞ্জের পবিত্র মাটিতেই শায়িত আছেন এই জাতির প্রতিষ্ঠাতা পুরুষ। এজন্যই কি বেগম জিয়ার গোপালগঞ্জের ওপর এত রাগ? ‘বাংলাদেশ’ নামে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠায় ‘গোপালগঞ্জ’ চির ভাস্বর একটি নাম। এজন্যই কি গোপালগঞ্জের ওপর বেগম জিয়ার এত ক্ষোভ? এজন্যই কি তিনি গোপালগঞ্জের নাম পাল্টে ফেলতে চান? গোপালগঞ্জ নাম পাল্টে তিনি কি রাখতে চান? কান্দাহার? পাঞ্জাব? বেলুচিস্তান? নাকি অন্য কোনো নাম? গোপালগঞ্জ নাম পাল্টানোর গোপন ইচ্ছা প্রকাশ্য হওয়ার মধ্য দিয়ে বেগম জিয়ার জন্য গোপন ইচ্ছাগুলো উঁকি দিল। তিনি কি ‘বাংলাদেশ’ নামটাও পাল্টে ফেলতে চান? তিনি কি আমাদের জাতীয় সংগীত পাল্টে ফেলতে চান? এজন্যই কি তার এ আন্দোলন? তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মোড়ক এটাই কি তার আসল উদ্দেশ্য? এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে বেগম জিয়াকেই। এর জবাবে আমাদের ‘বেয়াদব’ বলা হলেও আমরা চুপ থাকবো না।

পাদটীকা : ২৪ ডিসেম্বর বেগম জিয়ার লিখিত বক্তব্যটি ছিল মার্জিত, সুন্দর, কিন্তু ২৯ ডিসেম্বর তার তাৎক্ষণিক বক্তব্যটি কুৎসিত, অরুচিকর। এর আগে বেগম জিয়া প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিসংলাপেও এরকম নোংরা শব্দ ব্যবহার করেছিলেন। বেগম জিয়ার লিখিত বক্তব্য যে তার কথা নয়, অন্যের লিখে দেওয়া বক্তব্য তা বোঝার মতো লোকের অভাব নেই বাংলাদেশে।


১৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×