আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তি নাম্বার- ১০ থেকে থেকে জানা গিয়েছে যে উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিচ্ছে। ঘুর্ণিঝড়টির নাম দেয়া হয়েছে “KOMEN” ( WITH ECP 988 HPA)। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে এবং বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তের ওয়েবসাইট (http://bmd.gov.bd/?/p/=Marine-Warning-156) থেকে জানা গিয়েছে ঘুর্ণি ঝড়টি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর কিংবা বিকেল নাগাদ বরিশাল ও চট্টগ্রামের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
তাই জন নিরাপত্তার স্বার্থে কক্সবাজার এবং চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেত জারি করা হয়েছে এবং সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকেও ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে।
কক্সবাজার সদর, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, উখিয়া, টেকনাফ, চকরিয়া, পেকুয়াসহ উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকায় লোকজনকে সরিয়ে নিতে গতকাল (আজ রাত) থেকেই মাইকিং করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৬-৭ হাজার লোককে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
আরো জানা গিয়েছে - নিম্নচাপ কেন্দ্রে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় এখন পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৬২ কিলোমিটার বা আরো বেশি পর্যন্ত বাড়তে পারে। এই ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা এবং জেলাগুলোর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। পাশপাশি পাহাড়ী অঞ্চলে ভুমিধসেরও আশংকা রয়েছে।
স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ঘুর্ণিঝড় 'কোমেন' এর বর্তমান অবস্থান ও চিত্র। ঘুর্ণিঝড়টির অবস্থা লাইভ দেখার জন্য অনুগ্রহ করে এখানে ক্লিক করুন।
স্থানীয় ব্লগারদের দৃষ্টি আকর্ষন করছিঃ
ঘুর্ণিঝড় 'কোমেন' যে অঞ্চল দিয়ে বয়ে যাবে সেখানে যে সকল ব্লগার বর্তমানে অবস্থান করছেন, তারা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিপদগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াবার ব্যাপারে অনুরোধ করছি। ঘুর্ণিঝড়ে আপনার এলাকাটি আক্রান্ত হবার পূর্বাভাস পেলে কিভাবে কি করবেন সেই ব্যাপারে কিছুটা ধারনা দেয়ার চেষ্টা করছি।
১। প্রথমেই এলাকার তরুন ও আগ্রহীদের নিয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবী উদ্ধারকারী দল প্রস্তুত করুন যারা দুর্যোগের পূর্বে, দুর্যোগকালীন, দূর্যোগ পরবর্তি উদ্ধারকার্য চালাতে ও ত্রানকার্য পর্যবেক্ষন ও বিতরনে সাহায্য করতে পারবে। খোঁজ নিন, আপনার আশেপাশে কোন ব্লগার আছেন কিনা। যদি থাকে তাহলে পরষ্পরের সাথে একটি সমন্বয় করে নিন।
২। নিরাপদ আশ্রয় চিহ্নিত করে মানুষজনকে সেখানে সরে যাওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করুন। নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের বেশি অগ্রাধিকার দিন।
৩। গবাদি পশুদেরকে যদি নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়ার মত সময় না থাকে, তাহলে অন্তত তাদের দড়ি খুলে মুক্ত করে দিন।
৪। জলোচ্ছ্বাস প্রবণ অঞ্চলে যদি সময় থাকে তাহলে টিউবওয়েলটি খুলে পাইপটি প্লাস্টিক দিয়ে ভালো করে আটকে দিন, যেন লোনা বা ময়লা পানি ভেতরে প্রবেশ না করতে পারে।
৫। শুকনো খাবার, দিয়াশলাই ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পলিথিন দিয়ে সংরক্ষন করার ব্যবস্থা করুন।
৬। সবাইকে যার যার মূল্যবান জিনিসপত্র ভালো করে পলেথিন দিয়ে প্যাকেট করে সংরক্ষন করতে সাহায্য করুন।
৭। অন্যের মূল্যবান জিনিসপত্র যেন বেহাত না হয়ে যায়, সেই ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন।
৮। কিছু প্রাথমিক চিকিৎসার জিনিসপত্র ও খাবার সামগ্রি যোগাড় করে তা আপনাদের অস্থায়ী মনিটর ক্যাম্পে রাখতে পারেন।
৯। সবাইকে ছোট ছোট দলে ভাগ করে কাজ বুঝিয়ে দিন এবং তা পর্যবেক্ষন করুন।
১০। যে কোন প্রয়োজনে যদি ইন্টারনেট ব্যবহার করার সুযোগ থাকে তা আমাদের সবার সাথে শেয়ার করুন বা পরবর্তীতে অবশ্যই সবাইকে জানান।
ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের পরবর্তী সময়ে আপনার করনীয়ঃ
১। রাস্তা-ঘাটের উপর উপড়ে পড়া গাছপালা সরিয়ে ফেলুন যাতে সহজে সাহায্যকারী দল আসতে পারে এবং দ্রুত যোগাযোগ সম্ভব হয়।
২। আশ্রয়কেন্দ্র হতে মানুষকে বাড়ি ফিরতে সাহায্য করুন এবং নিজের ভিটায় বা গ্রামে অন্যদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিন।
৩। অতি দ্রুত উদ্ধার দল নিয়ে খাল, নদী, পুকুর ও সমুদ্রে ভাসা বা বনাঞ্চলে বা কাদার মধ্যে আটকে পড়া লোকদের উদ্ধার করুন।
৪। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত জনসাধারণ যাতে শুধু এনজিও বা সরকারি সাহায্যের অপেক্ষায় বসে না থেকে নিজে যেন অন্যকে সাহায্য করে সে বিষয়ে সচেষ্ট হতে হবে।
৫। দ্বীপের বা চরের নিকটবর্তী কাদার মধ্যে আটকে পড়া লোকদের উদ্ধারের জন্য দলবদ্ধ হয়ে দড়ি ও নৌকার সাহায্যে লোক উদ্ধারকর্ম আরম্ভ করুন। কাদায় আটকে পড়া লোকের কাছে দড়ি বা বাঁশ পৌঁছে দিয়ে তাকে উদ্ধার কাজে সাহায্য করা যায়।
৬। পুকুরের বা নদীর পানি ফুটিয়ে পান করুন। বৃষ্টির পানি ধরে রাখুন।
৭। নারী, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও অসুস্থ লোকদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় ত্রাণ বন্টন (আলাদা লাইনে) করুন।
(ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস পরবর্তী করনীয়ঃ কৃতজ্ঞতা
এই তথ্যগুলো প্রয়োজনে অন্যদের সাথেও শেয়ার করুন। ব্লগাররা অতীতেও বিভিন্ন দূর্যোগে মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, হাত বাড়িয়ে দিয়েছে আর্তমানবতার সেবায়। তাই দরকারে আপনিও অংশ নিন। পাশাপাশি আমরা প্রার্থনা করি, সৃষ্টিকর্তা যেন আমাদেরকে এই দূর্যোগ থেকে রক্ষা করেন।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ২:০২