প্রিয় পাঠক, এই পোস্টে কোন ধানাই পানাই হবে না, কথা হবে কাটছাঁট। তাই শুরুতেই সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদের শুভেচ্ছা পেয়ে অনেকেই হয়ত ভ্রু কুঁচকে ভাবছেন, ব্লগার কাল্পনিকের মাথাটা বুঝি গেছে! আজকে আবার কিসের ঈদ। আপনাদের আশ্বস্ত করেই বলছি, মাথা আমার ঠিকই আছে। আপনাদের জানিয়ে রাখতে চাই, আমার জীবনে ঈদ তিনটি - রোজার ঈদ, কোরবানীর ঈদ আর বিজয়ের ঈদ। ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি, আনন্দ। তাই গতকাল রাত থেকেই কেমন যেন একটা ঈদ ঈদ অনুভুত হচ্ছে। আজ ১৬ই ডিসেম্বর, আমাদের বিজয়ের দিন, আমার ব্যক্তিগত ঈদের দিন। সবাইকে বিজয়ের শুভেচ্ছা এবং ঈদ মোবারক।
কথায় বলে, মানুষের আনন্দ তার বয়সের ব্যস্তানুপাতিক। অর্থাৎ বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের মনের আনন্দও কমতে থাকে। আমি জানি না, এই তত্ব আমার বেলায় কতখানি প্রযোজ্য, তবে জ্ঞানবুদ্ধি হবার পর থেকে ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ আসলে আমি যে আনন্দ পাই, তা এখনও সেই শৈশবের মতই অমলিন আছে।
আমি যখন খুব ছোট ছিলাম, বাবা আমাকে স্টেডিয়ামে নিয়ে যেতেন, প্যারেড দেখতাম, ছত্রীসেনাদের মহড়া দেখতাম। ফেরার পথে বাবা আমাকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিয়ে যেতেন, দেখাতেন কোথায় পাকবাহিনী আত্মসম্পর্ন করেছিল। আমার কেন যেন খুব আনন্দ হতো। যে গল্পগুলো বাবার মুখে শুনেছি, তা বাস্তবে দেখার আনন্দই ছিল ভিন্ন। বাংলাদেশী হিসেবে নিজেকে গর্ব করার সুচনা লগ্ন ছিল সেটাই।
আমি আমার দেশকে নিয়ে ভীষন গর্ব করি। বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে তার সফলতা, ব্যর্থতার দায়ভার কখনই তার নিজের না, যদি সফলতা, ব্যর্থতার হিসেব কষতেই হয়, দেশটিকে যারা চালিয়েছেন, তাদের যোগ্যতার ভিত্তিতেই হবে। একটা রাষ্ট্রের বয়স ৪৪ বছর, বলতে গেলে কিছুই না।
আমার বাংলাদেশ হচ্ছে গরীবের ঘরের মেধাবী সন্তান, যে কিনা সঠিক দিশারীর অভাবে মুখ থুবড়ে পড়লেও ভেঙে পড়েনি। প্রতিবার বিপুল বিক্রমে সে উড়ে দাঁড়িয়েছে, লড়াই করেছে সকল প্রতিকুলতার বিরুদ্ধে।
অফুরন্ত, অমিত সম্ভবনার দেশ এই বাংলাদেশ। এই দেশের মানুষ প্রচন্ড স্বাধীনচেতা। আমরা পরাধীনতা থেকে মুক্ত হয়েছি, শোষকের বিরুদ্ধে স্বমস্বরে গর্জন করেছি। বিশ্বে দরবারে মাথা উঁচু করে বাঁচার সংগ্রাম করছি। এবার আমাদেরকে নজর দিতে হবে, নিজেদের মূল্যায়নের, নিজেদের জাতিগত সমস্যা থেকে আমাদের মুক্ত হতে হবে, দলীয় লেজুড়বৃত্তি বাদ দিয়ে দেশকে ভালোবাসতে হবে। কষ্ট করে যদি কেউ ছয় মাস সৎ ভাবে তার দায়িত্ব পালন করতে পারেন, এই দেশ নতুন চেহারা পাবে, এই দেশে আর কোন পরগাছা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না, কেউ ভাবতে পারবে না কারো একক সম্পত্তি হিসেবে।
বাংলাদেশের মাটি আজ কিছুটা হলেও অভিশাপ মুক্ত হবার পথে। সকল প্রপাগান্ডা, মিথ্যেচার, বাঁধা, বিপত্তি এবং রাজনৈতিক আদর্শের লড়াই স্বত্তেও এই দেশের বিরুদ্ধে যারা ছিলেন, তাদের বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন। এই ঘটনা আমাদের অনেক কিছুই শিক্ষা দেয়, যেই অন্যায় করুক না কেন, তার কোন ক্ষমা নেই, নিস্তার নেই। পাশাপাশি, কেউ যদি তার দায়িত্ব অনৈতিকভাবে পালন করেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করেন, একদিন না একদিন তারও শাস্তি হবেই। কথায় বলে, আজ যে ফকির, কাল সে রাজা।
এটা আমাদের সকলের দেশ। এটা আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। এই দেশের স্বাধীনতার জন্য জাতীয় নেতৃবৃন্দগণ যে যতটুকু অবদান, রেখেছেন, তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। ভুল ত্রুটি মানুষেরই হবে। আমাদের নেতারা আমাদেরই সন্তান, আমাদের মতই মানুষ। তারা কেউই ভুলের বাইরে নয়। আমরা প্রতিহিংসার রাজনৈতিক খেলা আর দেখতে চাই না। আমরা একটি যৌথ প্রচেষ্টায়, বাংলাদেশের স্বার্থকেন্দ্রিক রাজনীতি চাই। আরো চাই আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ক্ষমতার জন্য, নিজের দেশের মানুষের উপরই ভরসা করুন, অন্য কারো নয়।
পরিশেষে আমার একটা প্রিয় গানের কিছু অংশ আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। সবাইকে বিজয়ের শুভেচ্ছা।
তোমার মুক্তকেশের পুঞ্জ মেঘে লুকায় অশনি,
তোমার আঁচল ঝলে আকাশতলে রৌদ্রবসনী!
ওগো মা, তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফিরে!
আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি
তুমি এই অপরূপ রূপে বাহির হলে জননী!