somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাল্পনিক_ভালোবাসা
বহুদিন আগে কোন এক বারান্দায় শেষ বিকেলের আলোয় আলোকিত উড়ন্ত খোলা চুলের এক তীক্ষ্ণ হৃদয়হরনকারী দৃষ্টি সম্পন্ন তরুনীকে দেখে ভেবেছিলাম, আমি যাদুকর হব। মানুষ বশীকরণের যাদু শিখে, তাকে বশ করে নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দিব সারাটি জীবন।

জনৈক প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং জগতের এক শ্রেষ্ঠ দার্শনিকের কথা।

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমার এলাকার জনৈক ব্যক্তি গার্মেন্টস, মার্কেট, বাড়ি, গাড়ি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ইত্যাদির মালিক হবার পাশাপাশি পৈত্রিকসুত্রে একটি মসজিদও পেয়েছিলেন। বিভিন্ন ধর্মীয় দিনগুলোতে তাঁর এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য ইমাম সাহেব বিশেষ দোয়া প্রার্থনা করেন। আমরা সাধারন মুসুল্লিরা সেই প্রার্থনায় সমবেত হতাম। ভদ্রলোক মাত্র ৪৫ বছর বয়সে মারা গেলেন, তখন তার রুহের মাগফেরাত কামনা করে সাপ্তাহব্যাপী দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছিল।

জুম্মার নামাজ শেষে দীর্ঘ মুনাজাতে ইমাম সাহেব যখন সেই ব্যক্তির জন্য বাড়তি আবেগী গলায় দোয়া প্রার্থনা করেন, তখন আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে অতীতের কিছু দৃশ্য। মনে পড়ে ভদ্রলোক তার বাড়ির গ্যারেজে বসে রয়েছেন। দুজন লোক তার পা আর মাথা মালিশ করছেন। একবার তার বাসার কাজের লোককে কি একটা ভুলের কারনে প্রহার করতে করতে রাস্তায় ফেলে রেখেছিলেন, কেউ উদ্ধার করতে আসে নি। বিষয়টা সাহসের ছিল না ছিল প্রভাবের, সম্মানের। কর্তা মারছেন, নিশ্চয় মারের কারন আছে এটাই ছিল স্বাভাবিক যুক্তি। তিনি প্রচুর দান করতেন। মসজিদ, মাদ্রাসায়, ওয়াজ মাহফিল, রাজনৈতিক জনসভাগুলো তার আড়ম্বর দানে ছিল পরিপূর্ন।

মসজিদ সংলগ্ন বাড়ির নিচতলার একটি রুম ছিল তার অফিস। সেখানে দলবেঁধে আকুন্ঠ মদ্যপানের প্রভাব থাকত সারা দিন জুড়ে। ফলে কারনে অকারনে খিস্তি খেউড়, দু'চার ঘা, তুচ্ছতাচ্ছিল্য সাধারন মানুষগুলো হাসিমুখেই মেনে নিত। অবস্থা নিয়ন্ত্রনের বাইরে গেলে শুনেছি হুজুর এসে দোয়া পড়ে তাকে ফুঁ দিয়ে দিত। হয়ত সেই হয়ত ফুঁয়ের গুনে তিনি শান্ত হয়ে ঘুমাতে যেতেন। চারিদিকে বিরাজ করত বিরল নিরবতা।

আমার মনে আছে, থার্টিফাস্ট নাইটে ভদ্রলোকের ছাদে আতসবাজি, ডিজে পার্টি, মদ্যপান আর ভাড়াটে নারী মডেলের উদ্দাম নৃত্য বারান্দা দিয়ে উঁকি মেরে দেখা ছিলো আমার পাশ্চাত্য সংস্কৃতির সাথে পরিচয়ের প্রথম ধাপ, আমার উত্তেজনাময় অতীতের গোপন গল্প।

ভদ্রলোক নিজের ব্যাপারে বড়ই উদাসীন ছিলেন। একবার শুনলাম তার বউ আত্মহত্যা করেছে অথচ কারা যেন রটিয়ে দিন খুন হয়েছে। এত ভালো বংশের, এত প্রভাবশালী ব্যক্তির চরিত্রে কালিমা লেপনের ব্যাপারটিকে কেউ ভালো চোখে দেখে নি। সবাই প্রতিবাদ করেছিল। থানা পুলিশও একসময় লজ্জা পেয়েছিলো তদন্ত করতে গিয়ে।

একরাতে ভদ্রলোকের বুঝি খুব পাখি হবার শখ হয়েছিলো। তাই প্রাণভরে মদ্যপান করেছিলেন। তবে মদ্যপানে মানুষ হয়ত পাখি হতে পারে কিন্তু উড়তে যে পারে না, এটা বুঝি তার জানা ছিল না। তাই ছাদ থেকে পড়ে গেলেন। চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

এলাকার সবাই কেঁদেছিল, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা এসেছিলো। তার কবর হয়েছল মসজিদের ভেতর পারিবারিক কবরস্থানে। দাফনের সময় ইমাম সাহেব বলেছিলেন, আহারে! মসজিদের খেদমতে তিনি ছিলেন এক অনন্য প্রাণ। আল্লাহ তাকে বেহেস্ত নসীব করুক। আমিন! আমার মনে পড়ে, সেদিন সবাই জোরে আমিন বলে এক প্যাকেট বিরিয়ানী নিয়ে বাসায় ফেরত গিয়েছিলো।

আজকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী। আজকেও ভদ্রলোকের জন্য অনেক দোয়া হলো। স্বাভাবিকের চাইতে দীর্ঘ প্রার্থনা হলো মসজিদে। প্রভাবশালীরা চিরকালই মনে হয় প্রভাব বিস্তার করেন। তাই আজকেও ইমাম সাহেব দীর্ঘ মুনাজাত করলেন। সাদকায়ে জারিয়ার সুফল তার আত্মায় পৌঁছে দেয়ার প্রার্থনা করলেন। পাশাপাশি এলাকার আরেকজন বিত্তশালী মানুষের মৃত বাবার জন্য প্রার্থনার আহবান হলো তবে তা কিছুটা নিভৃতে, নিরবে। আমি পড়ে গেলাম জটিল ধাঁধায়। জগতের সকল প্রভাবশালীই হয়ত বিত্তশালী কিন্তু সকল বিত্তশালীই কি প্রভাবশালী? এর উত্তরটা একটা প্যারাডক্স।

মসজিদ থেকে বাসায় ফেরার স্বল্প দুরত্ব পাড়ি দিতে দিতে আমি ফিরে গেলাম ১৪০০ বছর আগের এক দিনে। সেদিন একজন ব্যক্তি বিশাল এক সমাবেশে উপস্থিত জনতাকে বলছিলো মানবজাতির শ্রেষ্ঠ দর্শনের কিছু নিয়ম, কিছু সুত্রের কথা। তিনি বলেছিলেন, মনে রাখবে পৃথিবীতে কেউ কারো চেয়ে বড় বা ছোট নয়, সকল মানুষই সমান। এখানে নেই সাদা কালোর কোন ভেদাভেদ।

এটা কোন অনুরোধ ছিল না, এটা ছিল তাঁর প্রচলিত দর্শন উপলব্ধির শ্রেষ্ঠ সুত্র, প্রাচীন সমাজে মানবতার হাতে খড়ি। আজকে বর্ণবাদ নিয়ে অনেক আন্দোলন হচ্ছে তবে কেউ ১৪০০ বছর আগে মরুর বুকে সেই জগত শ্রেষ্ঠ দার্শনিকের কথার সুত্র টানছেন না।

আমাদের সমাজে নারীদের প্রতি অবহেলার বানী শোনা যায়, তাদের অধিকার নিয়ে সমাজের মুক্তচিন্তার ধারক বাহকগন চিন্তিত। অথচ কিছু মুক্তচিন্তার মানুষের কাছে আজন্ম দোষী এই মানুষটি সেদিন ঘোষনা করেছিলেন, সাবধান! নারীদের সাথে ভালো ব্যবহার করবে। তাদের ওপর কখনো অন্যায়-অত্যাচার করবে না, নারীদের অধিকার নিশ্চিত করো, সম্মান করো। এটা তাঁর অনুরোধ ছিল না, এটা ছিল নির্দেশ এবং পৃথিবীর প্রথম নারীদের অধিকার রক্ষার আইন। অথচ সেই কেউ সেই সুত্র প্রদানকারীর কথা বলেন না, স্বীকার করেন না বাস্তবতা। এই দিকে আমরা নিজ নিজ স্বার্থের দায়ে আজকে অনেক কিছুকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছি আর দোষ চাপাচ্ছি ঐ দর্শনের।

মহান মানুষটি তার ভাষনে আরো - অধীনস্থদের সাথে ভালো ব্যবহার নিশ্চিত করো, তাদের ওপর নির্যাতন করবে না। তোমরা যা খাবে তাদেরকে তাই খেতে দিবে। তোমরা যে কাপড় পড়বে, তাদেরকে তাই পড়তে দিবে। মনে রেখো তারাও তোমাদের মত মানুষ।

আমরা কি তা করতে পেরেছি? গৃহকর্মী নির্যাতন, যাকাতের কাপড়, মাটিতে বসে কাজের লোককে খাওয়া, এঁটো বাসী খাবারে আমরা বরন করে নিয়েছে আমাদের গৃহের সাহায্যকারী মানুষগুলোকে। দোষ কি দর্শনের? না আমাদের?

সর্বশেষে তিনি আরো বলেছিলেন, কুসংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাস থেকে দূরে থাকতে এবং ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি না করতে। কারন ইতিপুর্বে অনেক জাতি এই সব করে ধ্বংস হয়েছে। আমরা কি পারছি ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি থেকে দূরে থাকতে? আমরা কি ধর্মের সামান্য সমালোচনায় বা জানতে চাওয়ায় অসহিষ্ণু হচ্ছি না? ধর্মের নামে কি মানুষ হত্যা জায়েজ করা হচ্ছে না? আমরা কি পারছি কুসংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাস থেকে দূরে থাকতে? আমরা কি পারছি চাঁদের গায়ে কথিত ধর্মগুরুকে দেখার হাত থেকে বাঁচতে?

আমরা কিছুই পারছি না। আমরা সেই দর্শনের কোন বানী, তত্বকেই সঠিক ও উপযুক্তভাবে আত্মস্থ করতে পারি নি, মূল্যায়ন করতে পারি নি বরং ব্যবহার করেছি নিজেদের স্বার্থে। তিনি যে দর্শনের কথা বলেছিলেন, আমরা সেই দর্শনে শুধুই দীক্ষিত হয়েই শুধু একটি বিশেষ শ্রেনীতে বা গোত্রে ভাগ হয়েছি, চর্চা করতে পারি নি, প্রয়োগ করতে পারি নি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এবং মানব কল্যানে। তথাপি আশা করি আমরা একদিন হয়ত তাঁর এই দর্শন বুঝতে পারবো কেননা তিনি বলেছিলেন, আমার কথাগুলো সকলের কাছে পৌঁছে দাও, হতে পারে আজকে যে এখানে উপস্থিত ছিল না, সেই হয়ত আমার কথার বেশি মূল্যায়ন করবে, অর্থ বুঝবে। আমরা সেই দিনটি প্রত্যাশায় আছি।

আমার কাছে এক একটি ধর্ম এক একটি দর্শন। সেই হিসাবে ইসলামকেও আমি একটি দর্শন হিসেবেই দেখি। এই মানুষটি হলেন সেই দর্শনের শ্রেষ্ঠ দার্শনিক - প্রিয় নবী মোহাম্মদ (সাঃ)। আজকে এই সর্বশ্রেষ্ঠ মহান মানুষটির জন্মদিন এবং তাঁর মৃত্যুদিনও।

আপনার উপর সালাম ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রিয় মোহাম্মদ! নিশ্চয়ই আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই এবং আপনিই তার প্রেরিত রাসুল।
৫০টি মন্তব্য ৪২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×