সাম্প্রতিক সময়ে প্রচন্ড গরম পড়েছে। বছরের এই সময়ে যে গরম পড়ে তার নাম ভ্যাপসা গরম এবং গরমের বিভিন্ন শ্রেনী বিভাগে এই ভ্যাপসা গরমই সবচেয়ে কুখ্যাত। ফলে এই গরমের যন্ত্রনায় স্বাভাবিক লজ্জা ধর্মও বজায় রাখা বেশ কঠিন হয়ে গেছে। এই সময়ে উচিত বেশি করে বিশুদ্ধ পানি পান করা এবং পানি জাতীয় বিভিন্ন খাবার বেছে নেয়া।
শৈশব থেকেই আমার টুকটাক রান্নাবান্নার শখ ছিলো যা বিভিন্ন পর্যায়ে বন্ধুবান্ধব,পরিবার ও অন্যান্যদের কাছ থেকে প্রশংসা পেয়ে পেশাদার পর্যায় যাওয়ার সাহস যুগিয়েছে। আর এই পেশাদার প্রেক্ষাপটে যাওয়ার লক্ষ্যে সম্প্রতি ঢাকার একটি বিখ্যাত পাঁচ তারকা প্রতিষ্ঠানে culinary arts কল্যুইনারি আর্টস নিয়ে কিঞ্চিত পড়াশোনা করছি। যাইহোক, আজকে আপনাদেরকে কিছু সামার ড্রিংক্স বা গরমের সময় খাবার উপযোগী পানীয় সম্পর্কে জানাবো যা ভ্যাপসা গরমে আপনার দেহে সতেজতা ফিরিয়ে আনতে এই পানীয় দারুন কার্যকরী। যদিও এই পানীয়গুলো বিদেশী তথাপি দেশীয় ফল ব্যবহার করে আমরা এইগুলো সহজেই তৈরি করতে পারি।
আজকে যে পানীয়টি আমরা তৈরী করব, তার নাম মোহিতো। অনেকেই অনেকেই একে ভার্জিন মোহিতও বলে থাকেন। মোহিতো মুলত একটি কিউবান মিক্সড ড্রিংক্স বা ককটেল। অনেকরকম ককটেল আছে, তারমধ্যে মোহিতো হচ্ছে মুলত হাইবল শ্রেনীর ককটেল। হাইবল হচ্ছে এমন এক ধরনের মিক্সড ড্রিংক্স যেখানে সামান্য পরিমানে এ্যালকোহলকে বেসড বানিয়ে অন্যান্য উপাদান বেশি করে দেয়া হয়। প্রকৃত মোহিতো তৈরি করতে প্রয়োজন হোয়াইট রাম, ব্রাউন সুগার বা ক্ষেত্র বিশেষে আখের রস, লেবুর রস, সোডা ওয়াটার এবং পুদিনা পাতা। সমস্ত পৃথিবীতে এই কিউবান পানীয়টি দারুন জনপ্রিয়। যেহেতু বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ নন এলকোহলিক তাই আপনাদেরকে নন এলকোহলিক মোহিতো বানানো সম্পর্কে জানাবো। আজকে বলব, লেমন মোহিতো সম্পর্কে।
আসুন জানি প্রয়োজনীয় উপাদান সম্পর্কে।
সাবকন্টিনেন্টাল পদ্ধতিঃ
১। ছোট কিউব করে কাটা ৫/৬ টুকরো লেবু। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট কলম্বো লেবু বা বাতাবী লেবু যেটায় রস এবং গন্ধ বেশি সেটা নেয়াই উত্তম।
২। আখের চিনি/ দেশি চিনি/ না পেলে সাধারন চিনি।
৩। ১০/১২ টা পুদিনা পাতা।
৪। স্প্রাইট/ সেভেন আপ।
কিভাবে করবেনঃ
মোহিতো শ্রেনীর ড্রিংসগুলো সাধারনত তুলনামুলক লম্বা গ্লাসে সার্ভ করা হয়। এতে দেখতে সুন্দর লাগে এবং টেস্টও কিছুটা ভালো হয়। যেমন:
তবে বেশি লম্বা গ্লাস না পেলে সাধারন পানি খাওয়ার গ্লাস নিন। গ্লাসে প্রথমে দুই/ আড়াই চা চামচ চিনি ঢালুন, গ্লাস লম্বা হলে চিনির পরিমান একটু বাড়িয়ে দিন। তারপর পুদিনা পাতা দিন এবং শেষে দিন লেবুর টুকরো গুলো। সব দেয়ার পর একটা মাডলার নিয়ে ভালো করে মাডলিং করে নিন। মাডলিং মানে হচ্ছে পিষে নেয়া।
মাডলার
মাডলার আপনি যে কোন সুপার শপেই পাবেন। আর যদি তা না চান, তাহলে সহজ পদ্ধতি হচ্ছে রুটি বেলার বেলুনের ডাট গ্লাসে ঢুকিয়ে ভালো করে পিষে নিন। দেখবেন, লেবু আর পুদিনার রস বের হয়ে একটা সুন্দর গন্ধ বের হচ্ছে। এই অবস্থায় গ্লাসের দুই/তৃতীয়াংশ বরফ দিন। যদি ইউরোপিয়ান স্টাইলে খেতে চান, তাহলে বরফ কুচি দিন, আর যদি আমেরিকান স্টাইলে খেতে চান, তাহলে আস্ত বরফ কিউব দিন। এরপর স্পাইট বা সেভেন ঢালুন।
তারপর, গার্নিসিং বা সাজানোর জন্য একটা কয়েক পিস গোল গোল লেবু আর পুদিনা পাতা নিতে পারেন। গ্লাসে সাইডে গোল করে লেবু লাগিয়ে পাশে একটা পুদিনার ডাল দিয়ে দিতে পারেন। তারপর স্ট্র দিলেই আপনার ড্রিংস রেডি।
এরপর চুমুক দিন!! হঠাৎ দেখবেন আপনার সামনে নীল সমুদ্র। সাদা বালির বিচ। অদ্ভুত সুন্দর বাতাস।
ভালো করে চেয়ে দেখুন, কে যেন সাতার কেটে আপনার দিকেই আসছে।
এছাড়া অন্য আরো একটি পদ্ধতি আছে। তবে তার জন্য আপনার কিছু জিনিস আগে থেকে প্রস্তুত করে রাখতে হবে, অথবা কিনে নিয়ে আসতে হবে। যেমন জিনজার এ্যলে, সুগার সিরাপ বা সিম্পল সিরাপ। এইগুলো চাইলে ঘরেও বানানো যায়।
১। পুদিনা পাতা নিন, ১৫/২০ টা,
২। চিনি – এক টেবিল চামচ
৩। ৬ চা চামচ লেবুর রস
৪। ৩ চা চামচ সিম্পল সিরাপ বা চিনির সিরাপ।
৫। পরিমান মত জিঞ্জার এ্যাল বা ক্লাব সোডা বা সেভেন আপ।।
প্রথমে গ্লাসে পুদিনা পাতা, চিনি আর লেবুর রস ভালো করে পিষে নিন। এরপর গ্লাসে বেশি করে বরফ দিন। এরপর চাইলে ১০/১৫ চা চামচ জিঞ্জার এ্যল দিয়ে উপরে সামান্য পানি দিয়ে ভালো করে নেড়ে তা্রপর চুমুক দিন, পানি দিতে না চাইলে সোডা ওয়াটার দিন। অথবা জাস্ট বরফ দেয়ার পর সেভেন আপ দিয়ে দিন। এরপর নাড়ুন আর চুমুক দিন।
ব্যাস হয়ে গেলো!!!
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ২:৪৫