somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাল্পনিক_ভালোবাসা
বহুদিন আগে কোন এক বারান্দায় শেষ বিকেলের আলোয় আলোকিত উড়ন্ত খোলা চুলের এক তীক্ষ্ণ হৃদয়হরনকারী দৃষ্টি সম্পন্ন তরুনীকে দেখে ভেবেছিলাম, আমি যাদুকর হব। মানুষ বশীকরণের যাদু শিখে, তাকে বশ করে নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দিব সারাটি জীবন।

অনুগল্পঃ আবর্জনা

১২ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গত কয়েক মাসে আনিস স্বপ্নে শুধু পাখি দেখতে পাচ্ছে। লাল, নীল, বেগুনী সহ নানা বর্ণের প্রচুর পাখি। প্রথম প্রথম পাখিগুলো কোন ডাকাডাকি না করে ওকে বৃত্তের কেন্দ্র বানিয়ে চারিদিকে শুধু উড়ে বেড়াতো। কিন্তু ইদানীং পাখিগুলো আরো নিচে এসে উড়ছে, কা কা করে ডাকছে। আনিস অত্যন্ত অবাক হয়ে লক্ষ্য করল, এই সবগুলো পাখি হচ্ছে কাক! মনে মনে ভাবল, কাক আবার রঙিন হয় নাকি?
হঠাৎ ও দেখল, একটা নীল রঙের কাক ডাইভ দিয়ে ওর পাশে এসে বসল। চমৎকার কিন্নর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা আপনি কি বলতে পারেন এই শহরে কাকদের পরিচয় কি? শুধু কাউয়া না পাখি?

আনিস প্রশ্ন শুনে কিছুটা থতমত খেলো। সে কাকের জবাবে পাখি বলতে গিয়েও থমকে গেলো। মনে হলো চারিদিকে কারা যেন অট্টহাসি হাসছে। সেই অট্টহাসির মাঝে কে যেন ফিসফিস করে বলছে, এই শহরে কাক বলে কোন পাখি নেই, কাক মানে কাউয়া।
আবার অট্টহাসি শুরু। এবার আরো তীক্ষ্ণ।

হঠাৎ আনিসের মাথা ব্যথা শুরু হলো। অট্রোহাসির শব্দ মাথা থেকে দুর করতে নিজ হাতে ওর দুই কান সে চেপে ধরল। কিছুক্ষণ পর সব চুপচাপ, নিস্তব্ধ। সেই অপার্থিব ফিসফিসানি এখন আর নেই। দুরে মাইকে আজান শব্দ শোনা যাচ্ছে। ধীরে ধীরে আলো ফুটছে এই শহরে। আনিস বারান্দার গ্রীল ধরে কাঁপা কাঁপা পায়ে উঠে দাঁড়ালো। চেয়ে দেখল, ধূসর কালো চূড়ান্ত পরিণতি মেনে হারিয়ে যাচ্ছে মিষ্টি স্নিগ্ধ আলোতে। বাতাসে শীতের গন্ধ, আলস্যের হাতছানি।

বাসার সামনের ডাস্টবিনটা একেবারে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। কোন উপচে পড়া ময়লা তো দূরে থাক, সামান্য ময়লার টিকিও দেখা যাচ্ছে না। বরং একটা বেড়ালকে দেখা গেলো হতাশ হয়ে ডাস্টবিনের পাশের দেয়ালে ঝিম মেরে দাঁড়িয়ে আছে।

কা কা! হঠাৎ তীক্ষ্ণ ডাকে চমকে উঠল আনিস। একটা ছোট কালো কাক এসে রেলিং বসেছে। দূরে অনেকগুলো রঙিন কাক উড়াউড়ি করছে। স্পষ্টত বুঝতে পারল, তাকে দেখে কিছুটা অস্থিরতা বাড়ছে কাকগুলোর মধ্যে। ছোট কাকটা আবারও করুণভাবে কা কা করে উঠল। ওর ডাক শুনে মনে হলো সে যেন বলতে চাইছে - কালো কালো করিস না লো, ও গোয়ালের ঝি, আমায় বিধাতা করেছে কালো আমি করব কি?

আনিস রঙিন কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে কাকগুলোর দিকে আবারও তাকালো। সবগুলো কাক বারান্দার পাশের আম গাছে বসে ওর দিকে সর্তক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যেভাবে পুলিশ কোন অপরাধীকে গ্রেফতার করার আগে তীক্ষ্ণ চোখে পর্যবেক্ষণ করে, ঠিক সেইভাবে।

আনিসের খুব ক্লান্ত লাগছে। রাত জাগা ক্লান্তি সকালে ঠাণ্ডা বাতাসে ওর চোখ বন্ধ হয়ে এলো। হঠাৎ দেখল, কাকগুলো সব উড়তে শুরু করেছে, ধীরে ধীরে ডাইভ দিয়ে তারা নেমে আসছে বারান্দার দিকে। আনিস নির্জীব ভাবে পড়ে আছে। কালো কাকটা তীক্ষ্ণ স্বরে শুধু কা কা করে ডেকেই যাচ্ছে।

একটা রঙিন কাক আনিসের কাঁধে সাবধানে এক পা দিলো। কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে, আস্তে করে তুলে দিলো আরেক পা। এরপর আরো একটা, তারপর আরো একটা, আস্তে আস্তে সব কাক ঘিরে ধরল আনিসকে। আনিস টের পেলো, কাকগুলো প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত। ক্লান্ত হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে কিছু পচা, গলিত আবর্জনা। কয়েকটা কাক যেন পাগল হয়ে গেছে, প্রাণান্ত চেষ্টা করছে ওর বুক পকেট থেকে কিছু একটা টেনে করতে। আনিসও সমানে দুই হাত দিয়ে বুক পকেট আগলে রাখার চেষ্টা করছে। অদ্ভুত এক অসম লড়াই। কিন্তু দুরে হঠাৎ কে যেন ফিসফিস করে বলে উঠল, আর কত দিন আনিস? আর কত দিন? তারচেয়ে এই ক্ষুধার্ত পাখিগুলোকে খেতে দাও, এরাই তো আবর্জনা খেয়ে পরিষ্কার রাখে সব কিছু।

চারিদিক হঠাৎ করে যেন প্রচণ্ড গতিতে পিছনে চলতে শুরু করল। থামল, কয়েক বছর আগের এক পড়ন্ত বিকেলে। সেই বিকেলে কেউ একজন কথা রাখে নি। হাজারো রঙিন স্বপ্ন বুনা ক্যানভাস এক নিমিষে হয়েছে ধুসর। দুজনের ভালোবাসায় যে ছোট্ট ঘর আলোকিত হবার কথা ছিলো, সেই ঘরে আলো আর কখনও জ্বলে নি। বরং আলো জ্বলেছিলো শহরের সবচেয়ে বড় কমিউনিটি সেন্টারে, কৃত্রিম আলোয় এই অন্ধকার শহরও সেদিন আলোকিত হয়ে ছিলো। আভিজাত্য এবং অর্থের কাছে সেদিন পরাজিত হয়েছিলো একজন মানুষ। তিন বছরের প্রেম তখন একটি প্রহসন, ডাস্টবিনের নোংরা আবর্জনা।

ফিসফিসে কণ্ঠস্বরটা আরো জোরালো হয়েছে। প্রচণ্ড অনুনয় করে বলছে, প্লীজ, ছেড়ে দাও, আর কত?

আনিস ধীরে ধীরে বুকের উপর থেকে দুই হাত সরিয়ে নিলো। লড়াই শেষ বুঝতে পেরে কাকগুলোও ভীষণ আগ্রাসী। জ্ঞান হারাবার আগে আনিস টের পেলো, কয়েক জোড়া ঠোঁট ধীরে ধীরে ওর পকেট থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করছে তানিয়া নামের একটি মেয়ের বিবর্ণ ছবি।

চোখ বন্ধ করেই টের পেল চারিদিকে শুরু হয়েছে ভোজন উৎসব।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৯
৫১টি মন্তব্য ৪১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×