আমি রান্নাবান্না নিয়ে বেশ খুঁতখুঁতে। প্রধান কারন, আমি নিজে রান্না জানি এবং আমি অতি অবশ্যই ভালো মন্দ খেতে পছন্দ করি। আমার আম্মা যিনি আমাকে বিষ দিলেও আমি হাসিমুখে খাবো, সেই আম্মাকেও মাঝে মাঝে আমি যথেষ্ট সমালোচনা করি। উনার ক্ষেত্রে আমার সমালোচনা মানে, আমার কোন কিছু না খেয়ে বাটিটা ঠেলে টেবিলের অন্যদিকে পাঠিয়ে দেয়া। এর বেশি এ্যাকশনে যাইতে চাইলে ভাতে পানি ঢেলে শুধু লবন মরিচ দিয়ে খাওয়া শুরু করা। ব্যাস! বাকিটা রাজত্ব জয়ের ইতিহাস।
তবে, ছেলেরা প্রথম জীবনে মায়ের কাছে রাজত্ব করে আর দ্বিতীয় জীবনে স্ত্রীর কাছে রাজত্ব বিসর্জন করে। এই সত্য সুন্দর বনের বাঘ থেকে শুরু করে পাচিল টপকানো বিলাই সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আমার বিবাহিত, ফলে অবস্থা হচ্ছে পড়েছি মোঘলের হাতে, খেতে হবে খানা সাথে।
আমি কৌতুক করা খুবই পছন্দ করি। যারা সত্যিকার কৌতুক করতে পারেন বা জানেন, তাদেরকে আমি শ্রদ্ধা করি। তবে মাঝে মাঝে বুঝে শুনে কৌতুক করতে হয় কারন সবার রসবোধ এক হয় না। এই কৌতুক করতে গিয়ে যথেষ্ট নাজেহাল হয়েছি যেমন গত ঈদে যেখানে পানির দামে গরু পাওয়া যাচ্ছে, লোকজন ছাগল কিনতে গিয়ে একটু বাড়িয়ে গরু কিনে আনছেন, সেখানে আমার সামনের বাসার এক ভদ্রলোক প্রায় ৪০ হাজার টাকা দিয়ে একটি পাঠনাইয়া ছাগল কিনে আনলেন। উনি ছাগল পেছনে নিয়ে আমাকে ঘটনাটা বর্ণনা করলেন। আমি খুবই কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ইয়ে মানে ছাগল কোনটা?
পরের ঘটনা কিছুটা ভয়াবহ! কিছুক্ষন পর বাসায় ঢুকতেই দেখি আম্মার চোখ মুখ লাল। ঘটনা তেমন কিছু না, সামনের বাসা থেকে অভিযোগ আসছে, আপনার ছেলের মত বেয়াদপ এই এলাকায় আর কেউ নেই।
বলুন তো, কি মুসকিলের ব্যাপার!
যাইহোক, মুল ঘটনায় আসি। পালং শাক আমার খুবই পছন্দের একটা তরকারী। এটা দিয়ে রান্না করা যে কোন আইটেমই আমার অতি প্রিয়। আম্মা মাঝে মাঝে হালকা ঝোল ঝোল করে চিংড়ি, আলু দিয়ে এই শাক রান্না করত। বিশ্বাস করেন, সেদিন অন্য যে কোন দিনের চেয়ে ভাত বেশি খাওয়া হতো।
আজকে রাতে খেতে বসে দেখি, মেন্যুতে পালং শাক। খুশিতে লাফিয়ে উঠার আগেই শাকের চেহারা দেখে হতাশ হলাম। বুঝলাম, ইহা আমার স্ত্রীর প্রাণপ্রিয় বুয়া রান্না করেছে। উনাকে নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই। তবে মুল সমস্যা হচ্ছে রান্না আর উনার মাঝে দুরত্ব কয়েকশ আলোকবর্ষ।
যাইহোক, খুব আন্তরিকভাবে স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলাম, ইয়ে আগে তো কখনও বলো নি, আমাদের বুয়া সৌদি আরবে কাজ করছেন?
স্বীয় স্ত্রী আমার দিকে কিছুটা চোখ মিটমিট করে ঘটনাটা বুঝার চেষ্টা করলেন। কিছুটা বিভ্রান্ত মনে হলেও, স্বভাবসুলভ ভাবে ঝাড়ি দিয়ে বললেন, কি বল এই সব? বুয়া সৌদি আরবে থাকবে কেন?
আমি মিষ্টি হেসে বললাম, নাহ মানে, রান্না দেখে মনে হচ্ছে যেখানে রান্না করা হয়েছে তার আশেপাশে কয়েক'শ কিলোমিটারের মধ্যে পানি নামে কোন বস্তু নেই। কিংবা যিনি রান্না করেছেন, তিনি বোধ করি ভুলে গেছেন আল্লাহর দুনিয়ায় পানি বলে কিছু আছে। তেলের কথা তো ভয়ে বলতে পারতেছি না।
স্ত্রী ক্রোধে ফুলছেন। আমি সেটা লক্ষ্য না করার ভান করে বললাম, এই রান্না করা শাক টিপে যদি কেউ এক ফোঁটা তেল কিংবা পানি কিংবা শাকের রসও বের করতে পারে, আমি তাঁর নামে একটা মরুদ্যান দিবো।
হঠাৎ চারিদিকে কেমন যেন একটা ফোসফোস শব্দ শুনলাম। সাথে সাথে মনে হলো, আমাজনে আগুন লাগার কারনে কোন সাপ টাপ এই দিকে চলে আসতে পারে। কিন্তু স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে ভুল ভেঙ্গে গেলো। আমি ঢোঁক গিলে বললাম, কোন সমস্যা নেই - আমি ডাল দিয়ে কাজ চালিয়ে নিবো। শাক আর ডাল মিলিয়ে খেলে পানির সমস্যা দূর হয়ে যাবে। আসলে শাকের পানি ডালে উঠে গেছে।
.........।
প্রিয় পাঠক, এইটা আসলে একটা গল্প। কল্পনার রাজ্যে বসে লিখেছি। এটাকে সত্য ধরে নিবেন না। স্ত্রীর মুখে মুখে তর্ক করে নিজের জীবনের উপর ঝুঁকি নিবেন না।সব কিছুকে কল্পিত গল্প বলে চালিয়ে দিন। ব্যাস! এটাই জীবনের সৌন্দর্য।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১:১৭