somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ও আলোর পথযাত্রী

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত ২৫শে ফেব্রুয়ারী দুই ভাগনি এবং এক ভাগিনাকে নিয়ে বইমেলায় গিয়েছিলাম। ১০ ভাগিনা ভাগনির একমাত্র মামা হিসেবে এই কাজটি গত ১২/১৩ বছর ধরেই আমাকে করতে হচ্ছে এবং আমি অনেক আনন্দের সাথেই এই কাজটি করে থাকি। তো, সেদিন দোয়েল চত্বর নেমে মেলা গেটের দিকে হাটতে হাটতে খাদ্য ও পুস্টি বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের সামনের রাস্তার কালো পিচের দিকে হঠাত চোখে পরলো, সেখানে তামাটে হলুদ এবং কালচে রং এর একটা ছোপ। আমার ক্লাস টেনে পড়া ভাগনি জিজ্ঞেস করলো “মামা এটা কিসের দাগ” আমি একটু মুচকি হেসে উত্তর দিলাম এখানে কেউ ককটেল মেরেছিল, এটা ককটেল বিস্ফোরোনের দাগ। একথা শুনেই তিনজন খুব ভয় পেয়ে গেল এবং আমার ক্লাস ফোরে পড়া আরেক ভাগনি জিজ্ঞেস করলো মামা কারা এবং কেন মেরেছে এই ককটেল। আমি উত্তর দিয়েছিলাম “কিছু মানুষ চায় আমরা যেন বইমেলায় না আসি, তাই আমাদের ভয় দেখাতে এই ককটেল মেরেছিল”। সে আবার প্রশ্ন করলো তারপরেও এতো মানুষ বই মেলায় কেন আসে। আমি উত্তর দিয়েছিলাম “মা, আমরা যদি ভয় পেয়ে বই মেলায় না আসি, তাহলে তো ওরা জিতে যাবে। ওদের জিতে যাওয়া তো উচিত না”। পাশে হাটতে থাকা দুই তরুন আমার কথা শুনে মুচকি হেসে আমার দিকে তাকালো, সাথে তাকালো আমার ভাগিনা এবং ভাগনিদ্বয়, সেই তাকানোতে আমি ভয় দেখিনি, দেখেছি প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদীদের হার মানানোর প্রত্যয়।

ঠিক তাঁর পরদিন সন্ধ্যায় এই মেলাতে এসেই প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদীদের হাতে জখম এবং খুন হন সময়ের সেরা সন্তানদের একজন, আমাদের সহযোদ্ধা অভিজিত রায়। প্রথমে হুমায়ুন আজাদ, তারপর রাজীব হায়দার, অধ্যাপক শফিউল ইসলাম আর এখন অভিজিত রায়। মৃত্যুর মিছিল থেমে নেই, তারপরেও বই মেলায় ভীড় হবে, বাড়বে মুক্ত চিন্তার মানুষ। রাজীব হায়দার আর অভিজিত রায়েরা অন্তত মরে গিয়ে হলেও প্রমান করবে প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদীদের পরাজয় বাংলার মাটিতে চিরকাল হতেই থাকবে। এরা কখনই জিতবে না।

অভিজিত রায়কে সহযোদ্ধা উল্লেখ করায় অনেকে আপত্তি তুলতে পারেন এই বলে যে এখানে যুদ্ধ কোথায় আসলো ? আর কে কি মনে করে জানিনা, এই উদ্যোগকে আমি যুদ্ধের সাথে তুলনা করি, যে যুদ্ধের প্রধান অস্ত্র কলম / কম্পিউটার কি বোর্ড। এই প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদীরা হয়তো হাতে অস্ত্র তুলে নেয়, সেটা তাঁদের দেউলিয়াত্ব এবং নপুংসকতার প্রকাশ। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়তেও তাঁরা সম্মুখ যুদ্ধে পরাজয় আসন্ন জেনে কাপুরুষের মতো জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজিবীদের হত্যা করেছিল। সেই একই কায়দায় এখনো তাঁরা আমাদের সময়ের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করছে। আর আমরা আতংকিত হয়ে দেখি যে আমাদের দেশের কিছু মানুষ শুধুমাত্র তাঁদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সফল করার জন্য সেই হায়েনাদের আস্রয় প্রস্রয় দিচ্ছে এবং প্রয়োজনে ব্যাবহার করছে। তাই আমার কাছে এটি যুদ্ধ, এই যুদ্ধে আমি মারনাস্ত্র তুলে নিবো না, আমি তুলে নেবো কলম। আমার লেখাই আমার প্রতিবাদ।

এরা যে শুধুমাত্র প্রতিক্রিয়া দেখাতেই গিয়েই মুক্তমনা এবং চিন্তাবিদদের হত্য করছে এটা চিন্তা করলে ভুল হবে, এর পেছনে সুদুরপ্রসারী একটি পরিকল্পনাও তাদের আছে। ইংরেজীতে একটি প্রবাদ আছে In a kingdom of blind, an one eyed man is king. যার মানে অন্ধদের দেশে যার এক চোখ আছে সে ই রাজা। তাই তাঁরা তাঁদের একমাত্র চোখ নিয়ে এই জাতিকে অন্ধ করে দেয়ার চেস্টায় রত যাতে তারাই রাজত্ব করতে পারে। সেই ৭১ সাল থেকে শুরু করলেও তাঁদের এই উদ্দেশ্য এই বাংলার মাটিতে কোনদিন সফল হবে না। একজন রাজীব হায়দারের অথবা অভিজিত রায়ের মৃত্যু আরো অসংখ্য রাজীব অভিজিতের জন্ম দিবে যারা বয়ে নিয়ে যাবে এই আলোর মশাল।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×