ভারতের চরম উগ্রবাদী হিন্দুদের একটা সংগঠন আছে। সংগঠনটির নাম বজরং । এই সংগঠনটির সদস্যদের বলা হয় বজরঙ্গী। এরা হনুমানকে অনেক বেশি সম্মান দেয় দেবতা হিসেবে। সিনেমাটিতেও দেখা যায় সালমান খান হনুমানকে দেখলেই নমস্কার বা প্রণাম করে। অর্থাৎ এখানে তিনি বজরঙ্গী।
এবার দেখি বজরঙ্গীদের উগ্রতার একটা নমুনা:
ঘটনার সূত্রপাত ২০০২ এর ২৭ ফেব্রুয়ারি-- গুজরাটের গোধরায় SABARMATI EXPRESS নামে একটি ট্রেনে হামলায় ভারতের ৫৯ জন মারা যায়। এরা অযোধ্যা থেকে ধর্মীয় কাজ করে আসছিল, এবং হিন্দু ছিল।
সেই জলন্ত ট্রেণের ছবি।
এই ঘটনার ফলে কোন প্রমাণ ছাড়াই দোষ দেওয়া হয় ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমদের উপর। সংঘটিত হয় আহমেদাবাদে নারোদা পাতিয়া গণহত্যা। বজরঙ্গীরা সেইদিন নৃশংস হামলা চালিয়ে হত্যা করে সংখ্যালঘু মুসলিমদের।
এবার দেখে নেই সেই গণহত্যার কিছু ছবি:
ঐ হামলায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া একজন বজরঙ্গী হলো বাবু প্যাটেল। যাকে সেই সময় ডাকা হতো বজরঙ্গী ভাই। ২০০৭ সালে তেহেলকা ম্যাগাজিনের এক সাংবাদিক তার সাক্ষাৎকার গোপন ক্যামেরায় রেকর্ড করে প্রকাশ করে দেয়।
সাক্ষাৎকারটির লিংক: বজরঙ্গী ভাই বাবু প্যাটেলের সাক্ষাৎকার
সাক্ষাৎকারের কিছু অনুবাদ নিম্নরূপ:
"কেটে টুকরা করা, পুড়িয়ে দেয়া, আগুন ধরানো অনেক কিছুই করা হল, অনেক কিছুই। আসলে আমরা মুসলমানদের আগুনে পুড়াতেই বেশি পছন্দ করি, কারণ এই জারজরা তাদের দেহ মৃত্যুর পর চিতায় পুড়াতে চায় না।
আমার শুধু একটি ইচ্ছা,......শুধু একটি শেষ ইচ্ছা...... আমাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হোক,.......আমাকে ফাঁসিতে ঝুলানো হলেও তা গ্রাহ্য করব না.........তবে আমাকে ফাঁসিতে দেওয়ার আগে মাত্র দুইদিন সময় দেয়া হোক, আমি জুহাপুরায় (মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা) চলে যাব। সেখানে ৭-৮ লক্ষ লোক বাস করে। আমি তাদের শেষ করব........কমকরে হলেও তো সেখানে আমার ২৫-৫০ হাজার মুসলমানকে হত্যা করা উচিত।"
"গণহত্যার পর থানায় মামলার নথিতে লেখা হয়, এক গর্ভবতী মুসলিম মহিলার পেট চিরে আমি ৯ মাসের ভ্রম্ননকে বের করেছি, নিক্ষেপ করেছি আগুনে। আসলে আমি তাদেরকে দেখিয়েছি, দেখ! আমাদের বিরোধীতার শাস্তি কি। একজনকেও ছাড়া যাবে না। এমনি তোদের ভূমিষ্ট হতেও দেয়া যাবে না। আমি বলেছি, যদি মহিলাও হয়....., যদি শিশু হয় তবু তাদের কেটে ফেল.....চিড়ে ফেল..........টুকরো করে ফেল......আগুনে পুড়াও সকল মুসলমানদের।
আমাদের অনেকে তাদের ঘরবাড়ি লুট করতে অযথা সময় নষ্ট করছিল। আমি বলেছি, অযথা এ কাজ না করে তাদের কাউকে বাঁচতে দিও না, এরপর সবই তো আমাদের। আমরা দল বেধে বেধে মুসলমানদের ঘরে ঘরে ঘুরছিলাম। প্রত্যেকেই মুসলমান মারছিল অতি উন্মাদনার সাথে।
"আমরা এসআরপি (স্টেট রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স) ক্যাম্পের পাশেই এই গণহত্যা চালাই। (আসলেএকসাথেই করা হয় সে গণহত্যা) তবে পুলিশরা মাত্র একজন মুসলমানকে সেভ করেছিল। সে ছিল তাদের উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা।"
"মুসলমান মারতে এত্ত মজা লাগে না....সাহেব, আসলে তাদের মারার পর আমার নিজেকে রানা প্রতাপ বা মহেন্দ্র প্রতাপের মত (মুসলিম নিধনকারী রাজা) মত মনে হয়েছে। এতদিন শুধু তাদের নাম শুনেছি, কিন্তু সেই দিন আমি তাই করলাম.... যা তারা আমার জন্য করেছিল।"
বাবু প্যাটেলের ছবি:
এটাই বজরঙ্গীদের তৈরি একটা নির্মম ইতিহাস। সেপ্টেম্বর ২০০৮ সালে কংগ্রেসে মনিশ তিওয়ারী বজরং দলকে নিষিদ্ধ করার দাবী উত্থাপন করেছিলেন। মাসিক পত্রিকা কম্যুনালিজম্ কম্ব্যাট আগস্ট ২০০৮ সালে বজরং দলের তাৎক্ষণিক নিষেধাজ্ঞার দাবি তোলে। রাজ্যসভা সাংসদ রাম বিলাস পাসোয়ান থেকে শুরু করে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী (১৯৯৪-১৯৯৬) ও একই সাথে ভারতের ১১ তম প্রধানমন্ত্রী ডেভে গৌড়া ও উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী বজরং দলের পাশাপাশি শ্রী রাম সেনার উপরও নিষেধাজ্ঞার দাবি তোলেন।
বুঝতে পারছি না এতো বছর পরে সালমান খানকে সেই বজরঙ্গীদের প্রতিনিধি করে এতো আবেগঘন সিনেমা তৈরি করা হলো, আর মাানুষইবা সিনেমাটা দেখে এতো আবেগ কেন ঝরাচ্ছে! এটা শুধুই একটা সিনেমা বাস্তব উল্টো কথা বলে।
যদি সিনেমাটা মহৎ উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে তবে উগ্রবাদী বজরঙ্গীদের এই সিনেমাটা থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। তাদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হওয়া উচিত। আর একটা সিনেমা দেখে কান্নাকাটি না করে আমাদের হিন্দু-মুসলিম উভয়ের উচিত মৌলবাদীতা পরিহার করা উচিত। শুধু সিনেমা দেখে লাফাইয়া কাঁদলে চলবে না
বি:দ্র: ★ এই পোস্টটিকে যেন হিন্দু ধর্মবিদ্বেষ হিসেবে ধরা না হয়। কারণ মৌলবাদীতা সব ধর্মেই আছে। কিছুদিন আগের রামুতে হামলা, মালোপাড়ায় হামলা এগুলোও কিন্তু এমনই উগ্রবাদীতার প্রকাশ।
★ পোস্টের শিরোনামে সাম্প্রদায়িকতা প্রকাশ পাওয়ায় এডিট করা হলো
তথ্য সূত্র:
লিংক ১
লিংক ২
লিংক ৩
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ২:১২