একই তারিখে ০৪বছরপরে ( সালটা হলো ১৮৮৩)। এই অধমের ও জন্ম ১৪ই মার্চ,১৯৭১ সালে ।১৪ই মার্চের প্রতি তাই বরাবরের মতোন আমার একটা পক্ষপাতিত্ব
আছে ।এই দুই জনের প্রতিও আমার পক্ষপাতিত্ব আছে । আইনস্টাইন এবং কার্ল মার্ক্স
এই দুই জনকেই আমি খুব পছন্দ করি তাদেরকে 'দূর্বোধ্যতার' জন্য ।আইনস্টাইন আমার
পরের চাপ্টার ,আগে মার্ক্স সাহেব রেই ধরি।উনি কয়টা বই লিখছেন, কতোগুলা আর্টিকেল লিখছেন তা আমার অজানা , তবে এই দুইশ বছরে তার উপরে লিখা বইএর সংখ্যা অনেক,অনেক বেশী বলেই আমার ধারণা ।১৮৪৯ সালে উনি লন্ডনে চলে সেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এইখানেই ছিলেন ।লন্ডনে উনি শায়িত আছেন এই তথ্যটা আমার আসলেই অজানা ছিলো ।যখন সালেহ ভাই বললেন , আমি বেশ খানিকটা অবাক ই হয়েছিলাম ।খবরটা শুনার পর থেকেই Highgate Cemetery, যাওয়ার ইচ্ছাটা প্রবল হতে লাগলো ।সাম্যবাদের অন্যতম একজন জনক stateless person হিসাবে bronchitis and pleurisy তে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ।গেলো মাসের ২৫ তারিখে চলে গেলাম মার্ক্সের সমাধিতে। হ্যা, সমাধি ।
কারণ, সাম্যবাদের একজন জনক কে পুঁজিবাদের দেশের এমন এক জায়গায় যেভাবে খুব আভিজত্য সহকারে বন্দিত রাখা হয়েছে, যেখানে অনেক কবরের ভীড়ে মাক্সের সমাধি ফলক টাই চোখে পড়বে। আসুন ঘুরে আসি কার্ল মার্ক্সের সমাধিতে ।
লন্ডনে কোন কিছুই ফ্রি নয় , তবে বিনা পয়সায় কিছু পেপার পত্রিকা পাওয়া যায়। তবে কার্ল মার্ক্স কে দেখবেন ? ৩ পাউন্ড ফি লাগবে ।বাংলাদেশী মুদ্রায় ৩৭৫ টাকা।বিদেশে নো ফ্রি লাঞ্চ বলে একটা কথা প্রচলিত আছে । একের পর এক নিচের ছবি গুলা দেখুন । বুঝে যাবেন ।
এইখানে মার্ক্স সাহেবের ছোট একটা রেপ্লিকা মূর্তি আছে । সমাজতন্ত্রের জনকের সমাধি দেখার মূল্য দেখেন কতো লেখা আছে ?নো ফ্রি লাঞ্চ ম্যান । কার্ল মার্ক্স রে দেখবেন , তাও তিন টা পাউন্ড।
ভেতরে ঢুকতে লাগ্লাম । অনেক বড় সিমেট্রি। ৩০ হাজার লোক এইখানে শুয়ে আছে ।ভেতরের রাস্তা মসৃণ , ঢালু। জীবনের পথের মতোন।
বামে ঘুরতেই ,দূর থেকে দেখা গেলো মার্ক্স সাহেব কোথায় শুয়ে আছেন।
কাছে গেলাম, ভালো করে দেখলাম । ভারিক্কি চেহারা , রাগী রাগী ভাব ।যার তত্ত্বে অসংখ্য মানুষ বিশ্বাস করেছে , অনেক দেশ পরিচালিত হয়েছে ।অনেকে তাদের ধর্মগ্রন্থ না পড়ে দাস কাপিটেল পড়েছে , এই সেই মানুষের সমাধি ।
সমাধি ফলক অনেক বড় , অনেক উচুঁ। প্রমাণ টা দেখাই।
সালেহ ভাই বললেন , আসেন , বসের সাথে কয়েক খান ফটো তুলি ।আমরা এমন দেশের মানুষ , উনি হয়তো তার জীবদ্দশায় কোনদিন বাংলাদেশের নাম শুনেন নি (শুনার কথাও না ,১৮৮৩ সালে বাংলাদেশের নাম তো ছিলো না )।সাম্যবাদ আসলেই পৃথিবীতে খুব জরুরী ছিলো , বসে'র সমাধির উপর দাড়িঁয়ে কথাটা ভেবে নিলাম আবার ও ।পবিত্র কোরানে অনেকবার বলা হয়েছে সাম্যবাদের কথা । সালেহ ভাই বলেন , বস ও তাই বলেছেন , তবে হয়তো খানিকটা ঘুরিয়ে , খানিক্টা তার মতো করে ।
তবে পৃথিবীতে উনার তত্ত্বকে অনেকেই ভুলেনি, অনেক দিক্ষীত রা বারবার আসেন , তাকে শ্রদ্ধা জানাতে ।এই যেমন এই বৃদ্ধা জার্মান এসেছেন
এই দেখা দেখি শেষ করতে না করতেই নেমে গেলো কঠিন শীত । আমি আশেপাশের কিছু সমাধি দেখলাম ।দেখলাম , মানুষ কতোভাবেই না নিজেকে সজ্জিত করে। মৃত্যুর আগে , কিংবা পরে।
[img|http://media.somewhereinblog.net/images/thumbs/mrnimchand_1363292814_15-22.jpg
এটা দেখুন
দীনহীন উপরের এই সমাধিটি আমাকে খানিকটা ভাবালো।হয়তো কেউকেটা গোছের কিছু নয় । খুব সাধারণ মানুষ ছিলেন এরা । এরা ? হ্যা , মনে হয় এটা দুই জন মানুষের সমাধি। হয়তো এরা সারাজীবন একে অপরকে আকঁড়ে ছিলেন, চেয়েছিলেন মৃত্যুর পরে ও আকঁড়ে ধরে থাকতে ।
ঠান্ডা হতে বাচতে খুব দ্রুত গাড়ীতে উঠতে হবে । খুব জোরে জোরে হাটঁতে হাটঁতে ভাবতে লাগলাম ।
“মিনহা খালাক না কুম,ওয়া ফিহা নুয়্যিদুকুম,ওয়া মিনহা নুখরিজুকুম তারাত্বান উখরা”
-এ মাটি থেকে তোমাকে সৃষ্টি করা হয়েছে,এ মাটিতেই তুমি ফিরে যাবে, আবার এ মাটি থেকেই তোমাকে পুণর্জীবিত করা হবে।
আল-কোরআন
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৯