বেনীমাধব ২১ শে ডিসেম্বর ট্রেনের দরজায় দাঁড়ানো মাধবীলতাকে ফোন নং সহ চিরকুট দিয়ে বলেছিলো , আমি তোমাকে চাই ।
মাধবীলতা মৃদু হেসে কেউ না দেখে এইভাবে আলোগোছে চিরকুট নিলে ।
মাধবীলতা বেনীমাধবকে ঠিকই দু'দিন পরেই জিজ্ঞাসা করেছিলো , কেনো সে তাকে চায় ?
বেনীমাধব বলেছিল , সেটা খুঁজতেই আমাদের দু'জনকেই দুজনের চাইতে হবে ।
এরপর আকাশে অনেক রঙ্গিন রংধনু ডানা মেলে ধরলো , শরতের আকাশে খালি সাদা আর সাদা মেঘের ভেলা ,বাতাসে চৈতালী শিষের মাঝে , বানীমাধব একদিন মাধবীলতার হয়ে গেলো ।
মাধবীলতা অকারণেই মাঝে মাঝে মনের রঙের কৌটা খুলে বেনীমাধবকে মাখিয়ে দিতো, মনে মনে বলতো বেনীমাধব সেই বাগানের মালী, যেখানে ১২ মাস ই ফুটে রক্ত জবা আর বাগানের পুকুরে ফোটে বড় বড় জলপদ্ম। বেনীমাধবও মুখে কিছু বলতো না , কিন্ত দিস্তা দিস্তা রুলটানা খাতা কিনে অজস্র পত্রের মাধ্যমে লিখে যেতো , সে কেন মাধবীলতাকে চায় ।কিন্ত,
সব চিঠি ডাকপিয়নের কাছে যায় না , আর যা যায় , তার সব কিছুই ঠিক ঠিকানায় বিলি হয় না ।আর ঠিক ঠিকানায় বিলি হলেও, সঠিক মানুষের চিঠিটা পৌছে না । আর সঠিক মানুষ চিঠিটি পেলেও , চিঠির অক্ষরে লেখা ভালোবাসার বিনুনি গুলোর ভাজ, মাধবীলতা বুঝে উঠতে পারতোনা ।
আবার , মাধবীলতা ঠিকই জানতো বেনীমাধবের গড়াপেটার রসায়ন । মাধবীলতা জানতো বেনীমাধবের সরল অঙ্কায়ন । বেনীমাধব তাই পর্বতের নৈবদ্যে হাটু গেড়ে উদযাপন করতো দিন শেষের দীপাবলীর উতসব ।
বেনীমাধব আর মাধবীলতার কাহিনী টা এভাবে শেষ হতে পারতো , কিন্ত হয়নি ।
তারা নিয়ম করে এক সময় হয়ে গেলো পুস্তকের আর কবিতার মূল বিষয়বস্তু ।
জগতে নিয়ম করে সমুদ্রের ঢেউ হয় , বর্ষাকালে মৌসুমী বায়ু বয় , মাঘের শেষে গাঁ কাঁপানো হীম আসে , কিন্তু তারা দু'জন দু'জনকে চাইতে চাইতে, বিপরীত দিকে হেটে এতো দূর চলে গেল , এতো দূরে সরে গেলো ----- তারা দু'জন আর দু'জনের হলো না , তাতে অবশ্য এই পৃথিবীর কিছুই বয়ে গেলো না ।
সেই ট্রেন আজো থামে কমলাপুরের প্ল্যাটফর্মে , সে ২১ শে ডিসেম্বর ঘুরে ঘুরে বছরের সবচেয়ে ছোট দিন হিসাবে আসে , আর এসে এসে বেনীমাধব আর মাধবীলতার চাওয়া পাওয়াকে আরো ছোট করে দিয়ে চলে যায় ।
এ বিশাল পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ রেলপথে , বেনীমাধব আর মাধবীলতার ট্রেন সমান্তরাল ভাবে বিপরীত দিকে বয়ে যায় ।
The fountains mingle with the river,
And the rivers with the ocean;
The winds of heaven mix forever
With a sweet emotion;
Nothing in the world is single;
All things by a law divine
In another’s being mingle–
Why not I with thine?
See, the mountains kiss high heaven,
And the waves clasp one another;
No sister flower could be forgiven
If it disdained its brother;
And the sunlight clasps the earth,
And the moonbeams kiss the sea;–
What are all these kissings worth,
If thou kiss not me? ----Love’s Philosophy (Percy Bysshe Shelley)
অনুবাদ :
নিঝর মিশেছে তটিনীর সাথে
তটিনী মিশেছে সাগর-’পরে ,
পবনের সাথে মিশিছে পবন
চির-সুমধুর প্রণয়-ভরে!
জগতে কেহই নাইকো একেলা ,
সকলি বিধির নিয়ম-গুণে ,
একের সহিত মিশিছে অপরে
আমি বা কেন না তোমার সনে ?
দেখো , গিরি ওই চুমিছে আকাশে ,
ঢেউ- ‘ পরে ঢেউ পড়িছে ঢলি ,
সে কুলবালারে কে বা না দোষিবে ,
ভাইটিরে যদি যায় সে ভুলি!
রবি-কর দেখো চুমিছে ধরণী ,
শশি-কর চুমে সাগর জল ,
তুমি যদি মোরে না চুম ‘, ললনা ,
এ-সব চুম্বনে কী তবে ফল ?--- প্রেমতত্ত্ব (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)