somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসম্পূর্ণ স্বপ্নবাড়ি ও কয়েকটি এ্যান্টিসোশ্যাল চিত্রপট

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৮:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কাল রাতে আমি ঘুরে এসেছিলাম আধোজাগ্রত অন্ধকারের শুঁড়িখানা থেকে। গত একমাস ধরে রোজ যাই, ইচ্ছায় কিংবা নিতান্ত অনিচ্ছায়। আমি যাই কথাটা ঠিক সত্য নয়, বরং এটা সত্য আমাকে যেতে হয় এখন, নিজেকে বাঁচানোর জন্য।




সেই অন্ধজগত আমাকে দেখায় কোজাগরী চাঁদের মাতাল করা এক বিশ্রী হাসি। ধূসর হঠাৎ শাদা হয়ে ওঠে. আর তাই দেখে জ্বলে ওঠে আমার আহত বনবিড়াল মন। সে চায় এক খণ্ড অন্ধকার, অশ্লীল আলো ছড়ানো জোছনার প্যাকেট নয়। জোছনার প্যাকেটে থাকে মূলত পাগল করা সৃষ্টিসুখ, যা এখন নিহিলিস্ট তরুণদের মর্মপীড়ার কারণ। বাতাসে ভেসে বেড়ানো ঘুণপোকার ঝাঁকগুলো আজকাল মস্তিষ্কের নরম সিন্যাপসে প্রবেশ করে সুনিপুণ পারঙ্গমতায়। নিরন্তর অসুখের আনন্দ দিয়ে যায় ওরা- যাতে মোহ ও প্রেম, মায়া ও মমতা, ক্ষোভ ও দ্রোহ- প্রতিটি অনুভূতিকে ছাপিয়ে মূর্ত হয় কামজ বিকার। প্রতিটি অঙ্গাণু শুরু করে অভিনয় নির্লজ্জ অস্থিরতার ডার্টি পিকচারে। এক লক্ষ্য নিয়ে আগায় সে, খুনে দৃষ্টিতে আঁকবে বিকারগ্রস্থতার মানচিত্র। এ্যান্টিসোশ্যাল ধারণার নিষিদ্ধ চিত্রপট! অসম্পূর্ণ স্বপ্নবাড়িতে মরে যাওয়া সমাজব্যবস্থাগুলোর মমি এখন মরা কান্না শুরু করেছে।

নিজেকে পরাজিত ঘোষণা করি! আমার মানবসত্তা ভুলে গেছে মানবিকতার শিশুপাঠগুলো। খুলে গেছে পশমি মুখোশ, লুকিয়ে রাখা তাবৎ ভণ্ডামি বেড়িয়ে আসে নির্লজ্জ নগ্নতায়। চমকপূর্ণ দৃষ্টিক্ষেপে নারী ভোলানো হাসি, বিকারের প্রথম সংকেত। লালসার বিষবাষ্পে পুরু হয়ে ওঠে অসভ্যতার ধুম্রজাল। অষ্টাদশীর দেহ এখন চোখবিলাসের পণ্য। ঊর্ধ্বাঙ্গের পরিধেয় ভেদ করে ঘাতক কামনা খেলা করে অন্তর্বাসের আঁটসাঁট পরিসরে। সদ্য জেগে ওঠা হিমালয়ের গর্বিত চূড়ায় পৌছাতে চায় পঞ্চপাণ্ডবের কার্বন কপি, পাঁচজোড়া গর্বোদ্ধত আঙুল, শিরায় শিরায় আকা যাদের বিকৃতি বিন্যাস। উঠতি বুকপাহাড় মর্দনেচ্ছায় নিশপিশ করা এ কালো হাতকে যারা নীতিকথা শোনাতে আসে, চড় মারি ওদের গালে। ওরা কি জানেনা অন্ধকারের গভীর প্রেমে বিলীন হয়ে গেছি আমি, কত আগে!

ভেঙে যাওয়া এসব বিস্মৃতির বয়স বছর না পেরোতেই আমি ভুলে গেছি কোন একদিন স্বপ্ন ছিল আমারো। স্বপ্নে একটা ঘর ছিল, সে ঘরে চাষ হত ছলাৎ ছলাৎ জলের শঙ্খবিলাস নদীর। প্রতিবার বর্ষায় সে পোয়াতি হত, চলে আসত মণাঙ্গিনার বালুচরে। খানিকটা পথ, বালুর মাঠ হেটে গেলেই সামনে চোখে পড়ত বাবলার বন। হিজল, পারুলের ফুল, নিশি ডাহুকের ডাক, মৌ পাপিয়ার সুর কানে বাজত রোজ। বনের ওপাশেই সেই স্বপ্নবাড়ি; যেখানে যান্ত্রিক উপায়ে তৈরি হত শাদা-কালো-লাল স্বপ্নগুলো।

সেখানে এখন কবরের নিস্তব্ধতা। পোড়োবাড়ির মতন কঙ্কালসার মনপবনের বাগানবাড়ি আমার। শান বাধানো ঘাটের আলিশান পদ্মপুকুরে কাকচক্ষু জল পুতিগন্ধময়, শুকিয়ে যাওয়া নারকেল-তাল-সুপারির পচাপাতার দুর্গন্ধে কাছে ঘেঁষা দুষ্কর। ফুলবাগানে দু:স্বপ্নের মড়ক, যেন এখানে চলেছিল নিউক্লিয়ার ওয়্যার। বিশাল দোতলা বাড়ির পলেস্তারা জুড়ে এখন ফার্নের বিশাল কলোনি, সাপখোপের চিরস্থায়ী আবাস। তাই ও এখন আর স্বপ্ন বাগান নয়, স্বপ্নগোর। স্বপ্নগোরে গিয়ে এখন বিষাদের কোলে ডুবে পান করতে হয় বিভ্রান্তির হেমলক। এখানে নীরব হয়ে থাকে মানবিকতা। মানুষের আশাবাদী মন, স্বপ্নচারী আত্মারা ডুবে থাকে বিষাদ নীলিমার বাঁকে।

ভেঙে যাওয়া বেদনা থেকে উত্থিত কামজ এ বিকারের লালপোকাদের তাড়িয়ে দেবার কথা ছিল আমার, পারিনি। বেমালুম ভুলে গেছি আমিও একদিন গেয়েছি যৌবন শক্তির গান, দ্রোহের শ্লোগানে দিয়েছি আগুনে সুর। আজ আমি ভুলে গেছি মানবজন্মের সবটুকু অর্জনের কথা। এ সময়ে আমার হাত, চোখ ও মস্তিষ্ক জুড়ে থাকে কতগুলো নিষিদ্ধ ট্যাবু, যেগুলোকে মনে হতে থাকে আমার আরাধ্য। অবিশ্বাসী মন ওতে আনতে চায় আরাধনাও আস্বাদ। ওরা আমার সামনে নিভে যাওয়া স্বপ্নগুলোর কৃত্রিম পর্দা তৈরি করে, আমি তাই ওদের নিয়ে সময় কাটাই, বিছানায় শুই গভীর রাতে, দুপুর রোদে বিছানা ঝলসে গেলে উঠেই প্রথমে চুমু খাই সমাজ নিষিদ্ধ এ্যান্টিসোশ্যাল হাইপোথিসিসে। আমার এখন এর চেয়ে বেশি কি চাইবার আছে, যখন ঘুম, কান্না ও দু:খ সবই আমার নিয়ন্ত্রণে?
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৮:১২
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×