somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বারো বছরের কবিতাঃ চেনা অচেনা আমি ।। রেজওয়ান তানিম

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কবিতা আমার, আমি কবিতার' এ যেমন সত্য, তেমনি সত্য আমার ব্লগ। এই ব্লগকে ভালবাসি, ঠিক যেমন আমি কবিতা। এই কবিতার জন্যে যেমন উৎসর্গ করেছি আসবাবের আরাম, তেমনি এই ব্লগের জন্যেও অনেক অনেক বিনিদ্র রাত! সে যাই হোক, কালের ফেরে এখন আর প্রতিনিয়ত কিংবা মাসে দু একটি করে পোস্ট দেয়াও হয়ত হয় না। তবুও মনে পড়ে, এই ব্লগের কাছে আমার আজন্ম ঋণ। এ ঋণ শোধ হবার নয় বলেই ফিরে আসি বারেবার, আবার যেখানে জমে ধুলো বালি মেঘ, ফিরে চলা দিন কিংবা কথা বলা রাত, বোবা চাবিগান, ঝুরো কথার উড়ো মৌতাত! আজকে মনটা কেমন উদাস হয়ে উঠেছে, তাই সদ্য বারোতে (১৮ মার্চ ওর জন্মদিন ছিল) পা রাখা নবীনকিশোর কবিতা আমার কেমন বেড়ে উঠেছে শৈশব ছেড়ে সেটাই দেখাতে চাই বন্ধু, স্বজন, চেনাজানা আর আনকোরা যারা, এই লেখাগুলোকে স্বপ্ন মনে করেন, আগুন ছোঁয়াচ পেতে চান কিছু শীত রাতে। বিবর্তনের ক্রমেই যাব, কিছু লেখা হয়তবা পূর্বে প্রকাশ পেয়েছে ভিন্ন কোথাও কিংবা এইখানে.।.।.।



২০১৭
বছর শুরু থেকেই গান ও অনুবাদ চড়েছে মাথায়, মৌলিক কবিতা লিখিনি তেমন। অল্প লিখেছি, তবে তৃপ্তি দিয়েছে বেশ। তবু গানগুলোকেই এসময়ে প্রতিনিধিত্বমূলক লেখা বলব। গানের কথা যেমন, আমার কাছে কবিতার আরেক নাম। সেই বিশ্বাস থেকেই আশা, এই রোদ কবিতা/ গানটি ভাল লাগবে...

(উৎসর্গঃ চমক দম্পতিকে, যারা সত্যিই চমকে দ্যায়;
বুয়েটে পড়াকালীন যোগাযোগ যে কত ভাল হত, এই গানটি শুধুই আপনাদের)

রোদ

রোদ নামে ক্যানভাসে,
জীবনের রঙ মেখে
সে নতুন গান লেখে,
তোমাকে ভালবেসে!

চেনাশোনা গান পাখি পাখি মনে উড়ে চলে চায়
গুড়োকাঁচ ক্ষণ বুকের খাঁচায় প্রেম লিখে যায়

জানা কিছু রঙ বদলায় ঢং তোমার ছোঁয়ায়
মৌন বিকেল হচ্ছে আড়াল ভেজা কুয়াশায়

তবু কথা ফোটে, আরো আলো ওঠে, কিছু রোদ নামে...

রোদ নামে ক্যানভাসে,
জীবনের রঙ মেখে
সে নতুন গান লেখে,
তোমাকে ভালবেসে!

আগুন ছোঁয়াচ ভুলে যাওয়া শীত ছেড়েছে আঁচল
হাসি রঙ চোখে আঁকছো শুধুই কথার কাজল

ভুল করা রাত জোনাকির আলো রেখে যায়
বরষার ঝুম দুপুরের ঘুম ছুঁয়ে দিয়ে যায়

তবু ফুল ফোটে, আরো নীল ওঠে, কিছু রোদ নামে...

রোদ নামে ক্যানভাসে,
জীবনের রঙ মেখে
সে নতুন গান লেখে,
তোমাকে ভালবেসে!

২০১৬

এই বছরে বেশ কিছু কবিতা, গান ও প্রবন্ধ লিখেছি। তবে মূল বিষয় এই বছরে আবার অনুবাদক হিসেবে নবজন্ম। সেই ২০১২ তে কিছু অনুবাদ করেছিলাম, যা সে সময়ে সাড়া তুলেছিল। কিন্তু এরপরে একদম হয়নি। আবার আমাকে অনুবাদে নিয়ে এলো লেখক ও সম্পাদক এনামুল রেজা। ওর কাছে কৃতজ্ঞতা। কবি ইয়েটস এর কিছু কবিতা অনুবাদ করি, যা দেখে প্রশংসা করেছিলেন, অধ্যাপক পবিত্র সরকার।সারাজীবনের অনেক ঠুনকো স্মৃতির ভিড়ে এ জ্বলজ্বল করছে তারার মত, যা আজও ভুলতে পারিনি। আজকে সেই অনুবাদগুলো থেকে একটি, এখানে। এই কবিতাটি পাঠ করে সন্তানহারা এক মা (রেহানা ইয়াসমিন) ফেসবুকে আমাকে জানিয়েছেন তিনি ঘণ্টাখানেক কেঁদেছেন। শুনে আমারও কান্না পেয়েছে। ওনার মেয়ে তামান্না রহমান হৃদি মারা গিয়েছিলেন এয়ারফোর্স এর প্রশিক্ষণরত বিমানে দুর্ঘটনায়। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এ এক লজ্জাজনক ও নজিরবিহীন অবহেলায় অকালে মাত্র বাইশ বছর বয়সের মেয়ে তামান্না মারা গেলেন।

মৃত্যুস্বপ্ন এক
A Dream of Death

কেউ একজন মরে পড়েছিল এক অচেনা জায়গায়,
স্বপ্নে দেখলাম হঠাৎ!

এবং কাছেপিঠে ছিল না কোন নির্ভরতার হাত,
ওরা পাটাতনে পেরেক ঠুকে দ্যায় সে মুখের ঠিক উপরে।
আর ও দেশের কৃষকেরা
বিস্ময় নিয়ে শুইয়েছিল তাকে শেষতম নৈঃশব্দ্য বাসে।

আর গোরস্তুপের উপর তারা তুলে দিল দুটো কাঠখণ্ডের এক ক্রুশ,
এবং চারদিক ঘিরে দ্যায় সাইপ্রাস গাছে।

এবং রেখে আসে মেয়েটিকে উপরের নির্বিকার তারাদের মাঝে
যতক্ষণ না আমি খোঁদাই করি, এই কথাগুলো-

[প্রথম প্রেমের চেয়েও সে ছিল কিছু বেশি সুন্দর,
কিন্তু এখন চিরঘুমে শুয়েছে সে কফিনের নীচে ! ]

২০১৫
আমার লেখালেখির বন্ধ্যাকাল। এই সময়ে এসে শুধু মনে হয়েছিল, আর কোনদিন লিখতে পারব না। প্রায়ই কান্না পেত। ব্যস্ততা, কাজের চাপ, পড়াশুনা সব মিলে মাথা গরম হবার জোগাড়। হতাশা এই সময়ে গ্রাস করেছিল। এই সময়ের কবিতাতে তার ছাপ থাকবে না, তা হয় ?

ইকারুস

একদিন ঘুম ভেঙে, আয়নায় চোখ রেখে
নিজেকে আবিষ্কার করি ঘাস ফড়িঙের চঞ্চলতায়…

সূর্যসঙ্গমের কিংবদন্তীতুল্য শিহরণে
উড়ে যেতে যেতে ঘাসের সমুদ্র ছেড়ে আগুন আকাশে
হঠাৎ আমি উপলব্ধি করি,
মোমডানারা কেমন ধীরে ধীরে
যেন গলে যাচ্ছে অসহ্য সুখে!

হায় ঈশ্বর!
আমি বোধহয় আরেক ইকারুস!
অজ্ঞতার আগুনে পোড়াই নিজস্ব বিকেল।



২০১৪
এই সময়ের আমি একেবারেই যেন বাস্তুচ্যুত। নিজেকে খুঁজে ফিরছি, কই আছি জানি না। ভুলে গেছি আমার স্বদেশ, আমার শেকড়। কোথায় রয়েছি কিছু জানি না। এই সময়ে খুব কম কবিতা লেখা হলেও প্রচ্ছন্ন একটা হতাশার বোধ কিন্তু ছিল এতে। ২০১৫ তে সবচেয়ে কম লিখেছি, চোদ্দতেও খুব বেশী নয়। এই সময়ের একটা কবিতা যা লিখে সুখ পেয়েছিলাম।

পাপ
(উৎসর্গঃ কচি রেজা'কে)

খুলে যাচ্ছে অর্গল, জানলার ওষ্ঠ ভরে যাচ্ছে
মিষ্টি রোদচুমুয়!
ভাঙা চশমার ফাঁকে, পলক ফেলে দেখি
রঙ পাল্টাচ্ছে কাঠের প্রজাপতি।

অথচ
একাকীত্ব নিয়ে উপহাস করছে
র‍্যাকে কে রাখা পুরনো স্নোবুট। নিষ্ঠুর বেঁচে থাকা,
খেলে যাচ্ছে কুয়াশার পাশা।
------------------------ও নিরাশ্রয়,
আর কত মহত্ত্ব দেখাবে তুমি?

আমাকে উল্টে দিয়ে অসমাপ্ত পুরাণের পথে
হে পুণ্য-
তুমি লিখেই চলেছ অবিশ্বাসের ধর্মগ্রন্থ!

অথচ ভাবলে না, পরাজিত পতঙ্গের পাপ
চুপচাপ লিখে রাখে, আনকোরা অভিশাপ!

২০১৩
আমার লেখার স্বর্ণযুগ চলেছে তখন, একেবারে যে রকমটি লিখতে চেয়েছি, ঠিক তেমন। এই সময়ে টানা তিন বছর (২০১১-১৩) এত লিখেছি যে এই সময়ের কবিতাতেই দুটো কাব্যগ্রন্থ প্রায় তৈরি হয়ে এসেছে। এই বছরের লেখা শাদা পরচুল অন্ধকার এখনো অতিক্রম করতে পারিনি মনে হয়। কবে পারব সেটাও বলা কঠিন।

শাদা পরচুল অন্ধকার- চার
(পুরো কবিতাটি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না এটি এক দীর্ঘ কবিতা বলে )

শহরে অবিশ্বাসের রোদ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে দুশো বছরের পুরোনো শকুন। পোড় খাওয়া নাগরিক বালুকণার গায়ে লেপ্টে আছে সম্ভ্রমহানির চিহ্ন। অস্থির হাওয়া কেউটের মতো ফণা তুলে ঘোষণা করে, কুমিরের পেটে এখন শাদা পরচুল। পুরাণের অ্যাপোলো, বিষের বীণ বাজিয়ে তুমি চুষে নাও গোখরোর স্রাব; ভেবেছ কি কখনো, বেটে ময়ূর আয়নায় দেখে না পেখমের উচ্ছ্বাস? অন্ধ বালকের পায়ে ভুল পথের শেকল, শেকড় ভুলে গেছে অসময়ের জাদুকর। স্টেজ পারফরম্যান্সে ভুল হয় তাসের জাদু, অবিশ্বাস পতিত হয় কালাজ্বরে। আলেয়ার কোলে হাত রেখে বেঁকে বসে বুটিকের দর্জি, আর বুনবে না জলের নীলানলে পাক খাওয়া এক দল বানমাছের ছবিযুক্ত ওয়ালেট। গতরাতে বাতাস নামে নি শহরে, দেখে যাও জলের কৌটাগুলো কী আশ্চর্যরকম নিরুত্তাপ! ঘাড়ে সওয়ার হয়েছে পাপের বোঝা, পিছু লেগেছে সেই পূর্বজন্ম থেকে; ভোর হতেই দূষিত করে ফেলতে চায়, আমার দৈনন্দিন পাটিগণিতের শহরটাকে।

২০১২

এই বছর অনেক পাওয়ার। বইয়ের প্রকাশ, (প্রথম কবিতার বই মৌনমুখর বেলায়) অনেক অনেক শুভকামনা, ভালোবাসা আর সাথে ঈর্ষা ও ক্রোধ জুটল অনেকের। এই কবিতাটি অনেক স্মৃতিবহুল এ জন্যে যে, এটি প্রচুর চুরি গেছে, ফেসবুকে এবং অন্যান্য মাধ্যমে। অনেকেই হয়ত পড়েছে কিন্তু জানে না এ আমার লেখা। সে নিয়ে কষ্ট হলেও সুখ হয় এই ভেবে যে মিডিয়ার আশীর্বাদ ছাড়াই আমার কবিতা ব্লগ, ফেসবুক করে ছড়িয়ে গেছে বহুদূরে!

বিষচুমু

ঠোঁটে বিষের লিপস্টিক
মেখে নেয় প্রিয়ন্তিকা, আমাকে
চুমু খাবে বলে।

ওতো জানে না, আজকাল
বিষচুমু খেতে খেতে অদ্ভুত কেমন এক
এন্টিবডি তৈরি করেছে শরীর,
বিষের চুমু খেলেই এখন
শুধু নেশা ধরে!
মনে হয়,
মরে গেলেই ভাল হত!

দেখতে হত না
আরেকটা বিষমাখা সকাল।



২০১১

বিশ্ববিদ্যালয়য়ের চৌকাঠ পার হওয়া সদ্য তরুণ, কি আর লিখি আর কি বলি ভাবতে যখন সময় যাবার কথা, সেই সময়ে শুরু হল লেখার স্বর্ণসময়। চাকরি পেয়েছিলাম খুব বেশী পরিশ্রম না করেই, কাজে তেমন চাপ ছিল না, ওখানে বসেই লিখেছি অনেক। ওই বছরের কবিতার একটি মৃত্যু, যা অনেকটা সিগনেচার হয়ে আছে এখনো। যখনি কোন অনুষ্ঠানে যাই আজকের দিনেও, ওটি পাঠ করেই তবে নামতে হয়। এই কবিতাটি অনুবাদ করেন শ্রদ্ধেয় আবু এম ইউসুফ, আর এ কবিতার হাত ধরেই দেশের বাইরে নিজের কবিতাকে নিয়ে যাই…

মৃত্যু

এই খানে নেমে এসেছে, শশ্মানের শব পোড়ানো রাত্রির মতন-
অদ্ভুত ক্লান্ত নিস্তব্ধতা । মৃত্যু এখন তার শীতলতা নিয়ে;
হয়ত ঘুরছে আমাদের আশেপাশে । হয়তবা দেহান্তরের খেলায়,
লীন হবে পরম সত্ত্বা কোন । অন্ধকার আমাদের অবসন্ন করে,
নিয়ে যাবে বিনাশের কাছে । ভূষা কালি বা কয়লার মতন
অসভ্য এই রাত ; কিশোরীর ঢেউ খেলানো খোলাচুল কিংবা
উঠতি বুকপাহাড়ের খাঁজের মতন দৃষ্টি সুখের নয় । নক্ষত্র গুলো
ক্লান্ত হয়ে সব, শুয়ে পড়েছে নিজস্ব উঠোনে । অতিথি করে নিয়ে
গেছে ধার করা আলোয় স্নিগ্ধ চাঁদটাকে । সামনের রাস্তাটুকু
পাণ্ডব বিবর্জিত । বটের তলায় এখন ঝিমুচ্ছে না বসে বসে,
কাজে ফাকি দেয়া বুড়ো চৌকিদার টা । যে বিকট সিটি
রোজ রাতে মাথায় আনে দূষণের অদৃশ্য বিষ ; পরম প্রার্থিত
শব্দিত স্বর, কাঙ্ক্ষিত হলেও এখন অনুপস্থিত । নিরবতা তাই-
হিরণ্ময় হয়ে ছেয়ে রেখেছে সব, অস্বস্তির পূর্ণ অনুভবে ; আমার
সমস্ত সত্ত্বাকে, আমার সবটুকু আশার দেয়ালিকে ।

গরম জলে উষ্ণতার কিছুটা উপশম । মাদকতায়
যদি দূর হয় সব অনাকাঙ্ক্ষিত অস্থিরতা গুলো !
ইঁদুর বিড়ালে খেলা রাত তাড়াবার । কবিতা আসুক সুন্দরের
আলো নিয়ে । সুন্দরের পূজায় কালরাতের হোক অবসান !
অবাক হঠাৎ , জল্লাদের কোপের মতন ঘাই মারে উলঙ্গ
দমকা বাতাস । কবিতারা থমকে দাড়ায় ; বিহ্বলতায় ।
দ্রিম দ্রিম শব্দ ; মৃত্যুদূতের রণ দামামা, এ ঘর থেকে
ও ঘরে ছুটে চলছে । শশব্যস্ত কবিতার বিদায় । বুকফাটা
আর্তনাদ তখনি ! পাশের ঘরটা থেকে আমার ঘরে ; শব্দ
তরঙ্গ উড়ে বেড়ায় নিজের মনে, দেয়ালের গম্ভীরতা
ঠেকাতে পারেনি মৃত্যুর বিজয় সংগীত ।
মৃত্যু ! অনন্য সাধারণ নিয়তির বিধান ! সবচেয়ে বড়
সত্য এ পৃথিবীর ! তবু সে চরম অনাকাঙ্ক্ষিত ।
কখনো আসে সে সংকেত দিয়ে কখনো বা অকস্মাৎ ।
ওরা কি পেয়েছিল মৃত্যুর পূর্ব সঙ্কেত ? হতচ্ছাড়া কুক পাখি
অপয়ার মত কি ডেকেছিল কাল, ওদের ঝুল বারান্দায় বসে ?
এসেছিল কি শাশ্বত মৃত্যুর অগ্রিম বার্তা নিয়ে ?

পৃথিবীর মানব সত্ত্বা, সবসময় করেছে কোন এক
শক্তিমান সত্ত্বার সন্ধান ! তারাই আবিষ্কার করে দেবতাদের ;
যে দেবতারা খেলে তাদের নিয়ে, বুক পকেটে রাখা
পুতুলটির মত । একদিন বজ্রদেব, জলদেবী আর বন রানীর ;
অন্তিম আরাধনায় মত্ত ছিল তারা । এই সব প্যাগানেরা ধর্ম
এনেছিল পৃথিবীর বুকে । কত রং, কত বিচিত্র সব-
নাম তার । নানান তন্ত্র ; মূর্তিপূজা অথবা ভুডু , অন্ধ জগতের
প্রেতাত্মা, লর্ড লুসিফারের কুৎসিত সাধনায় লিপ্ত কেউ কেউ ।
এর পরে বিপ্লব আসে, শুরু হয় সর্বগামীর মোক্ষ লাভের সাধনা ।
আসে ত্রিত্ববাদ, ক্রমে ক্রমে স্থান নেয় একেশ্বর বাদ । আরাধ্যের
বদল ঘটেছে, ঘটমান আর দশটা ঘটনার মতই । কিন্তু অমোঘ
মৃত্যু রয়ে যায় একই রূপে, সমান ভীতিতে । এই অজ্ঞেয়বাদী
আমায় সমান ভীত করে, পাশের বাড়িটির বুড়ো ধার্মিকের
মতন, মৃত্যু আর হল আজ রাতে । অনেক লিখেছি মৃত্যু নিয়ে;
তবু মৃত্যুকে করিনি প্রকাশ, কোন কল্পনা জালে কিংবা প্রতিশব্দে ।
একমাত্র শাশ্বত শব্দ মৃত্যু , যা এর তীব্র ভয়াল সুন্দরের
প্রকাশ ঘটায় । জলহীন কাদাটে পুকুরে ঝাঁপি নিয়ে, জেলের আতিপাতি
খোজ করে মাছ ধরার মতন, একদিন মৃত্যু খুঁজে নেবে ;
ঈশ্বরাদেশ অমান্যকারী,অবাধ্য ঠুনকো আমাকে । বিধাতার
দর্শন পাইনি কোনদিন । পাবার চেষ্টা করেও লাভ নেই জানি ;
কিন্তু মৃত্যু, আততায়ীর রূপে, দেখা দেবে সুনিশ্চিত !

২০১০

এই বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ এজন্য যে ব্লগে এই বছরে প্রথম লেখা শুরু করি। ব্লগে লেখা ও পাঠ আমার লেখাকে বদলে দিয়েছে, আমার মননকে, আমার পঠনকে করেছে সমৃদ্ধ। এ বছরের একটি কবিতা পাঠক চিত্তে বেশ আন্দোলন তুলেছিল, যার ফলশ্রুতিতে ‘প্রিয়ন্তিকা’ চরিত্রটিকে লেখক হিসেবে মানসী চরিত্র রূপে তৈরির চেষ্টা করছি। ইতিমধ্যে প্রিয়ন্তিকা বিষয়ে অনেকগুলো কবিতা লেখা হয়েছে, সেগুলোর পোস্ট আগামীতে দেয়া যাবে কোন এক সময়।

কেমন আছ প্রিয়ন্তিকা

নিঃসীম সমুদ্র তট-
একা আমি দাড়িয়ে । হাতে বেনসন সিগারেট;
আমার একাকীত্বের সাথী, আমার প্রেমিকা!
অবাক লাগছে ? অথচ জানো আমার কিন্তু
ভীষণ ভালো লাগছে ভাবতে- ওই যে
প্রতিটা ঢেউ ছুটে আসে নিয়ত,
কূলের কাছে, জড়িয়ে ধরে চুমু খায়;
আর আমি তখন-
চুম্বন স্পর্শ, খুঁজে নেই সুখ শলাকায় ।

প্রিয়ন্তি,আসবার কথা ছিল না তোমার?
এই সাগর সঙ্গমে,আমায় নিয়ে!
তুমি কী এসেছ আজ?
অন্য কারও দেহে,নিজের আদরটুকু বিলিয়ে দিয়ে !
নাকি তুমি ,সামনে ছড়িয়ে দেয়া-
ওই ধোঁয়াশায় মিলিয়ে গেছ, নিজেরই মত করে।

প্রিয়ন্তিকা! হয়ত ভালবাসতাম তোমায়,আগে-
চাইতাম বেলাভূমে কুড়াবো নুড়ি!
তবে এখন আর চাইনা তোমায়।
এখন আমি পেয়েছি সঙ্গী, আমরণ বন্ধুতা!
কেমন বাধ্যগত- মরতে চাইলেও
বাঁধা দেবে না।

প্রিয়ন্তিকা, মনে পড়ে তোমার-
নীরব জোছনাহীন সন্ধ্যা কত
কেটেছে তোমার সাথে,হৃদয়ের লেনদেনে-
ঠুনকো আড্ডায়, কিংবা
তোমার আবেগ ঝরা অধর মিলনে।
এখন, এসবের কোন দরকার পড়ে না!
এখন আমার কত প্রেমিকা!
চাইলেই চলে আসে রাতের আকর্ষণ -
নেশা ধরা রাঙা স্কচ্ ।
যে সুধা পাত্রে তাকালেই মনে হয়-
লাল আভায় ছাওয়া তোমার ঠোঁট!
আমি এক মনে পান করি;
তোমার মেখে দেয়া বিষাক্ত ওষ্ঠসুধা।
ওফ্! কী প্রবল আনন্দ, কী অসীম প্রাবল্য
তার ভালবাসায়; মাথায় তোলে
মত্ততার ঝড়-দুরন্ত সাইক্লোন, তপ্ত আগুন
জ্বালিয়ে আমায় করে অঙ্গার!
তুমি! এত ভালবাসা জানতে না মেয়ে।


প্রিয়ন্তিকা, আমি ভালো আছি
অনেক, অনেক ভালো।
মাঝে মাঝে এখন,আকাশের তারাদের-
খুব আপন মনে হয়;
চলে যেতে ইচ্ছে হয়, ওদের কাছে।
হয়ত ওরাও আমার মত একাকী বলে!
আমি ভালই আছি । তুমি?
কেমন আছ প্রিয়ন্তিকা ?

২০০৯

কেমন করে বলা যায়, কবিতার শুরুর দিনগুলোর কথা, ভেবে উঠতে পারি না। একলা থাকার দিনগুলো ছিল একান্তই আমার। কেউ পড়েনি আমার লেখা, কেউ দেখেনি আমার লেখা। বুয়েটে ক্লাসমেটরা মুষ্টিমেয় দুই চারজন। সাকুল্যে পাঁচ থেকে দশজনকে দেখাতাম, তাদের সে বিরক্তি-মাখা চোখের ইশারা ভোলা কঠিন। তবুও লিখে গেছি আপনমনে। বুয়েটে কবিতা ছাপা হয়েছে মাত্র তিন থেকে চারটা। অথচ এক সংখ্যায় অনেক ছেলেদের ছাপা হত আট দশটা। আমি জানি না, কেন কখনোই, কোনভাবে মিডিয়ার আশীর্বাদ পাইনি আমি! শুধু লিখে গেছি আপনমনে। সেই ঠিকুজি থেকে বের করে আনা এক কবিতা, তুই।

তুই

কত ভাল যে তোরে বাসি,
কেমনে বুঝাই?
কিসের মায়ায় যে কাছে টানস !
বুঝবার পারি না।
প্রত্যুষ সকাল , উত্তপ্ত দুপুর কী নিশীথ রাইতে
তোরেই শুধু দেহি- কল্পনায়
ভাবনায় ,চিন্তায় আমার চাইর পাশে।
বুকের মইধ্যে আমার-
লেলিহান আগুনের সাগর।
নিশিদিন তৃষ্ণার হল্কা
লাগে আমার মাথায়, তপ্ত করোটিতে হঠাৎ-
ওঠে মিলনের সাধ, অতৃপ্ত কামনা
তোরে দেইখা।
যখনি চক্ষের সামনে আমার -
দাঁড়াস তুই
বুকে তোলস মরণের সুনামি
সেই ঢেউয়ে
ভাইসা যাই আমি-কল্পনার কূলে।

চাইয়া দেখ্ - ঐ অচিন পাখি হইয়া
তুই উইড়া বেড়াইতাছস-
আমার মনের আকাশে,
এধার হইতে ওধার , এপার হইতে ওপার।
সে আকাশ জুইড়া
আছস খালি তুই!
সেইখানের পূর্ণিমার চান্দ-জ্বলন্ত সুরুজ;
একমাত্র তুই।
তোর কোমল আদর, আমারে করে পাগল।
আবার তোর তেজ-
আমার কেন্ যে উদ্দীপ্ত করে,
আমি নিজেই জানি না!
সত্যিই তুই রাজরাণী, আমার গরিব খানার-
রত্ন একটা, আমি তোর-
কেনা গোলাম। কেমন কইরা বল
বুঝামু তোরে
কত ভাল যে তোরে বাসি?

২০০৮

কবিতার স্বপ্নে বিভোর ও প্রত্যাখ্যাত এক তরুণ আমি। সারাজীবন, সমাজ, সংসার, বন্ধু, চেনা জানা পাড়া প্রতিবেশীরা যেভাবে জেনে এসেছে, তার থেকে বদলেছি অনেক। আমি মেনে নিতে পারলেও আর কেউ পারছে না। এই নগর, শহর অসহ্য অন্ধকার নিয়ে সামনে হাজির হচ্ছে, মন চাইছিল ছেড়ে ছুড়ে চলে যাই। সেই সময়ের একটা কবিতা। বলাবাহুল্য এই সময় থেকেই ঘুরে বেড়াবার পোকা মাথায় ঢোকে। খুলনা বিভাগ ছাড়া দেশের প্রায় সব বিভাগেই ঘুরে বেড়িয়েছি পরবর্তীতে।

আমারে খুঁজে নিও

এ জগতেও আমি আছি তোমার অপেক্ষায় !
হয়ত নিশ্চিন্ত, ভাবনাহীন নয়
এখনকার দিনগুলো, তবু তুমি আছ
এ হৃদয়ে ! সখা, খুঁজে নিও আমায়
বিগত জনমের মত । সরিয়ে দিও
আমার এ দেহে লেগে থাকা;
অন্ধ বিতৃষ্ণার সব খোলস, সব ক্ষত ।

সময়ের হয়ত কোন ভাষা জানা নেই ।
তবু নির্ভয়ে সে ঠিকই বলে যায়,
করনীয় আমাকে । সেই তাড়ায়, যদি আসে
বিবেকের বোধ, হয়ত তখন
কোনদিন হেটে যাব দূর বহুদূরে-
এই আমি উদভ্রান্তের মতন ।
হয়ত হাসবে লোক, পড়ে থাকবে
বিশাল রাজপথ, ব্যস্ত দিবস আমার চারপাশে ।
তখনো থাকব আমি, তোমার অপেক্ষায় !
সখা, তখন খুঁজে নিও আমায় ! নিয়ে যেও
গাঁয়ের সেই মেঠোপথে-
যেন পায়ে লাগে শিশিরে ভেজা ঘাসের ছোয়া ।

বিচিত্রতা প্রতিদিন এখানে লেখে কাব্য ।
এই শহরের কংক্রিটের আস্তরে গড়া ছোট্ট খাঁচায়-
চাপা পড়ে আছি- খুব সাধারণ
এক, শ্রমজীবী মানুষের প্রতীক হয়ে ।
আমার রাত্রি আজো কাটে মেসের ফ্লোরে ;
পাশে পড়ে থাকে সস্তা চকি খাট ।
এখনো স্বপ্ন দেখি রাতের বেলায়-
ওই এলো সখা, খুঁজে নিলো আমাকে
নিয়ে গেল দূর কোন হিজল গায়ে ।
মাটির বিছানা পেতে দিল ! পরম শান্তি-
আমি ঘুমিয়ে গেছি যেন মায়ের কোলে ।

সন্ধ্যাবেলায় খুঁজি প্রকৃতির আশ্রয় ।
বিচিত্র শহর, তার চেয়ে বিচিত্রে এর প্রকৃতি
নগরীর ফুসফুস আজ
ক্যান্সারে জীর্ণ ! ওর শাখা প্রশাখা অ্যালভিওলিতে-
চাপা বিষের আস্তর, প্রাণহীনতার
অবাধ যাতায়াত । ভীষণ দু:সময়-
তবু আস্থা অটল আমার । ভাবি কবে আসবে
আমার মুক্তিদূত, আমার সখা ।
খুঁজে নিয়ে যাবে, মুক্ত সবুজের স্বাধীনতায় ।
পাখির গান, বাতাসের তান হবে যেখানে
আমার আরেক রূপ, প্রাণ স্পন্দন ।

আমি জানি- আজ হতে বহু বছর আগে,
আনন্দ হয়েছে নির্বাসিত;
এই যান্ত্রিকতার পিস্টনে চাপা পড়া শহরে ।
পদে পদে বিক্ষত আমি, তবুও
চাই মুক্তি, স্বপ্ন দেখি- নির্মল বাতাসের ।
আমিও যে মানুষ । আমারো ইচ্ছে হয়
আঁকি সুনীল আকাশের হাজারো ছবি ।
এস অন্নপূর্ণা, এসো, খুঁজে নাও আমায়-
নিয়ে যাও, দূরের কোন গ্রামে, বহুদূরে
যেখানে শঙ্কা নেই, নেই সীমাহীন অবক্ষয় ।

২০০৭

কবি হব, রবিঠাকুর, নজরুলের মত, সুনীল কিংবা জীবনবাবুর মত। আমি কবি হব বাতাসের মাঝে নিজের কম্পন রেখে যেতে, নিজেকে লিখে গেছে কালের খাতায়। এই স্বপ্নে বিভোর সময়ে দুঃস্বপ্নের মত হানা দিয়েছিল রবিঠাকুর। বুয়েটের ছেলেপেলেরা নাম দিয়ে দিল রবীন্দ্রঘরানার কবি। লেখার এই কালো দাগগুলো অনেক কবি লেখকদের মত এড়িয়ে যেতে চাইনি। আমার যা কিছু আলো, তার পিছে আছে অযুত কালোর খেলা। সেই কালোকে জয় করেই আমার আলোর বর্ণালি। যা হোক, সে সময়ে অন্ত্যমিল বাদ, এই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে নেমে গেলাম লিখতে।খুব যে বেশী সময় লেগেছিল ঠাকুর থেকে বের হতে তা নয়, তবে বের হতে পেরেছিলাম, যথেষ্ট পরিশ্রমের পড়েই।

তুমি এসেছিলে

তুমি এসেছিলে
তপ্ত দুপুরে আমার ক্লান্তিতে।
তীব্র আলোর ক্ষিপ্র তেজে
ঝলসে যাচ্ছিল চোখ
সেদিন তাই তোমায় দেখা হয়ে ওঠেনি।

তুমি এসেছিলে
তীব্র শীতের রাতে আমার আলস্যে
কনকনে হাওয়ার জমাটভাবে-
লেপের ওম ছেড়ে ওঠা হয়নি
সেদিন তাই তোমার উষ্ণতা জানা যায়নি।

তুমি এসেছিলে
শব্দ হয়ে মুঠোফোনে,আমার বধিরতায়।
সমস্যা কোথায় ছিল-সংযোগে,
না আর কোনখানে বোঝা যায়নি
সেদিন তাই তোমার কলহাস্য শোনা হয়নি।

তুমি এসেছিলে
বৈশাখের বিকেলে,আমার ভীতিতে!
আকাশে একরাশ কালো থমথমে মেঘ
ঝড়ের প্রবল আশঙ্কা
সেদিন তাই তোমার স্নিগ্ধতা উপভোগ্য হয়নি।

তুমি এসেছিলে
রিমঝিম বর্ষায় আমার আনন্দে
ছন্দময় বৃষ্টিতে ভিজতে দারুণ লাগছিল
আর কোন দিকে চোখ যায়নি
সেদিন তাই তোমার চোখের ভাষা পড়া হয়নি।

তুমি এসেছিলে
স্বপ্নের ঘোরে আমার নিদ্রায়
তাই অবচেতনের ছায়ায়
তোমার হাত আমি খুঁজে পাইনি
সেদিন তাই তোমার নরম বাহু স্পর্শ করা হয়নি


২০০৬

১৮ মার্চ, ২০০৬ থেকে নানা চড়াই উৎরাই, গালিগালাজ, স্নেহ ভালোবাসা, কুৎসিত ষড়যন্ত্র, আন্তরিক আশীর্বাদ সবকিছু একেবারে সাথে করে নিয়ে চলছে লেখা। মাঝে মাঝে মনে হয়, লিখতে না এলেই ভাল হত। থাকত না আজকের দিনের দুঃখগুলো, না পাওয়ার, না পারার অগ্রন্থিত বেদনাটুকু। পাঠের অপার্থিব আনন্দ হারিয়েছি, যাদের কথা ভেবে শ্রদ্ধায় মাথা নুইয়ে আসত তাদের নীচতা দেখতে হত না, দেখতে হত না আমার অপারগতা ও অক্ষমতার অভিশপ্ত দিক। তাই কবিতার কাছে ক্ষমা চেয়ে ২০০৬ এ লেখা একটা কবিতা শেয়ার করছি।

ক্ষমা চাই

শোন, আমি ক্ষমা চাই স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য-
একটা একাত্তর আনবার জন্য।
ক্ষমা চাই এই ভেবে-কেন বলেছিলাম এই কথা-
একাত্তরে-দীপ্ত ডিসেম্বরে-এদেশ,
আমার-তোমার অনেক সাধনার! আর নেই বাধা,এবারই
স্বপ্ন পাবে ছোঁয়া বাস্তবতার।
ক্ষমা চাই কেন বলেছি-মোর অবুঝ ছেলেটিকে,
স্বাধীনতা,সে মুক্ত রঙিন ঘুড়ি।
কেন বলেছিলাম চঞ্চলা কিশোরী বোনটার হাত ধরে,
স্বাধীনতা মানে-লাল সবুজ শাড়ি।
ভাবি বিষণ্ণ দিনে,কেন বলেছিলাম সেদিন-আনব মুক্তি
সকল শোষিত বঞ্চিতের প্রাণে-
লজ্জা হয়,আজ তাকিয়ে সময়ের আয়নায়,দেখি নিজেই
আটকে গেছি শৃঙ্খল গহনে।
দীর্ঘ সময়!পঁয়ত্রিশটি বছর, শুধু চেষ্টাই করে গেলাম
বাধব প্রাণ একটু আশা ডোরে!
হয়েছি ব্যর্থ। হে সহিষ্ণু জাতি, হে নিরীহ বাঙালিরা-
ক্ষমা করে দিও,এ অধমেরে।
ক্ষমা কোরো অগ্নিঝরা দিন,যখন বিরুলিয়া গ্রামবাসীরা
শুনেছিল আমার নির্ভীক উচ্চারণ!
আমার সোনার বাংলায়-কোন পাপিষ্ঠের,কোন রাজাকারের
হবে না ঠাই,পাবে না কোন আসন।
আজ ক্ষমা চাই-ওদের কাছে,যাদের বলেছি-ওরে জালিম,
জোকের দল-হোক দেশটা স্বাধীন;
এরপর পাবি বিচারের রায়-দেখবি কেমন করে তোদের
সেঁধিয়ে দেবে মাটি,করবে অন্তরীণ।
হে যুদ্ধাপরাধী,নিপীড়ক অমানুষের দল-ক্ষমা কর্ আমায়
সেদিনের কথা রাখতে পারিনি বলে;
বাকরুদ্ধ আমি নীরবে জল ফেলি, যখন হাঁটু গেড়ে ঠুকি
সেলাম সেদিনের কথা ভুলে।
এক বুক কষ্ট, তবু ক্ষমা চাই-যাদের বলেছিলাম,এইতো
আর কটা দিন, এর পরে
চারদিক উজ্জ্বল করে আসবে নানা রঙের আলো,
সব কালো যাবে দূরে সরে।
ক্ষমা করে দিও বিপ্লবী হে, নির্ভীক সিংহ হৃদয়
কানসাটের আলোর সৈনিকেরা;
গড়লে ইতিহাস তোমরা,লজ্জার ইতিহাস!আলোর দাবিতে
দিলে প্রাণ,ছেড়ে গেলে ধরা!
কার কাছে চাইব ক্ষমা ?সে ভাষা থাকে না আমার-
যখন ছোট্ট শিশু বেড়াতে গিয়ে,
আনন্দ কি জানবার আগেই, হারিয়ে যায় বর্বরতায়-
অপরূপ পৃথিবীকে বিদায় দিয়ে।
জানি না কোন ভাষাবিদ আসবে কি এদেশে কোনদিন
যে দেবে এ শিশুর মাকে সান্ত্বনা!
কোন সমব্যথী কি আসবে এগিয়ে,শোকাতুর পিতার কাছে
মুছে দিতে কাফন পড়ানোর যন্ত্রণা?
ক্ষমা চাই, যুবতী মেয়ে ফুলের পাগলপ্রায় মাতা আর
নির্বাক বিষণ্ণ পিতার কাছে।
যে ফুল দিত স্বর্গ সৌরভ,দুমড়ে মুচড়ে সমাজের ধিক্কারে-
ঝরে গেল অকালেই সে।
ক্ষমা কোরা পৃথিবী,এ মানব আর দেশকে - প্রিয় ফুল,
পারিনি নিরাপদ জীবন দিতে।
ক্ষমা কোরো অদৃষ্ট,আমি হতভাগা পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা বলে
আমি চলি,দেশসেবার দুশো টাকা ভাতাতে।
শেষ ক্ষমা চাই-আমার শহীদ সকল বন্ধুদের কাছে
আনর দেশ,যারা নিজের জীবন দিয়ে।
ক্ষমা কোরা তোমরা আমায়,হয়েছি ব্যর্থ আমরা সবাই
কথা দিয়ে তা ধরে রাখতে গিয়ে।

ভোলাদিনের অযুত নয়ন, নক্ষত্রের রাতে:

একা আমি একলা থাকা কবিতার খাতা নিয়ে হাজির হলাম ব্লগের ডেরায়। দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ লেখকের সাথে আমার যোগাযোগ হল ব্লগে। ২০১০ থেকেই ব্লগে লিখি তখন হাতেও সময় ছিল, ব্লগে যে যা কবিতা, গল্প কিংবা প্রবন্ধ ধারার লেখা লিখতেন তাই পড়তাম। খুবই গর্বের সাথে এ কথা বলব যে, ওই সময়টা বাংলাব্লগের সমৃদ্ধ সময়গুলোর একটি। আজকের দিনে, এদেশে যারা নিজেদেরকে প্রথিতযশা লেখক বলে প্রতিষ্ঠিত করেছেন,তাদের অনেকেই ওই সময় ব্লগে ছিলেন। প্রথিতযশা বলতে যাদের বোঝাচ্ছি, যেমন ধরা যাক মুজিব মেহদী, টোকন ঠাকুর, মলয় রায় চৌধুরী, সরকার আমিন, মুজিব ইরম, সোহেল হাসান গালিব, আহমেদ মোস্তফা কামাল, ওবায়েদ আকাশ, সরসিজ আলীম, আহমেদ স্বপন, রহমান হেনরি, ইমন জুবায়ের, সুলতানা শিরীন সাজি আরও অনেকেই ছিলেন। সকলের নাম মনে করতে পারছি না। এরা মূলত ৮০ এবং ৯০ এর দশকের কিংবা তারও আগের। আর এছাড়া আমার ওই ব্লগে লিখতে লিখতে যাদের সাথে বন্ধুত্ব হয়ে যায় তাদের মধ্যে, খলিল ভাই, স্বদেশ হাসনাইন, পান্থ সাইফ, শাহেদ খান, হাসান মাহবুব, রানা, মাহি ফ্লোরা, শায়মা, রেজোওয়ানা, এরা ছিলেন। এরা এখনো লিখছেন এবং দেশের লেখালেখির মূলধারাতে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এদের লেখা পাঠ ও সাথে মন্তব্য আদান-প্রদান ও ইতিবাচক উৎসাহেই একসময় মনে হল, আমার লেখাও কারও কারও ভাল লাগে। এই আমাকে লেখক হিসেবে আজকের দিনে সামনে এনেছে। যাদের নাম উল্লেখ করেছি কিংবা করিনি, তাদের সকলকে শুভকামনা জানাই। তাদের কাছে আজন্মের ঋণ।


উৎসর্গঃ

একটু আগে কবি মৌ মধুবন্তীর ফেসবুক থেকে জানতে পেলাম ষাটের দশকের কবি সাযযাদ কাদির মারা গেছেন হঠাৎ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে। বিশিষ্ট এই কবি ও লেখককে তার সমসাময়িক বন্ধু ও কবিরা যেভাবে অবহেলা করে গেছেন তা ইতিহাসে বিরল। তিনি সময়ের চেয়ে অনেক বেশী এগিয়ে ছিলেন, এ কথা আমি বলতে পারি নির্দ্বিধায়। ওনার গল্প কবিতার যথাযথ মূল্যায়ন একদিন হবে এই প্রত্যাশা। ২০১৬ বইমেলায় উনার সাথে আমার বেশ কয়েকবার বসার সৌভাগ্য হয়েছিল, প্রচুর জানেন ও বলেন তিনি। বেশ নাকউঁচু স্বভাবের এই লেখকের উপর অনেকে প্রথম দর্শনে বিরক্তও হতে পারেন, তবে ওনার সাথে যত মিশত লোকে, তত দেখতে পেত একেবারে শিশুর মত মন। আমার সাথে একদিন রিক্সায় উনি প্রায় ঘণ্টাখানেক ছিলেন অনেক কথা হয়েছে, এছাড়া মেলায় তো হয়েছেই। যথারীতি বড় লেখকদের সাথে তোলা ছবি নেই বলে, কবি রফিক আজাদ, সৈয়দ হক এদের মত সাযযাদ কাদির ও হারালেন আমার জীবন থেকে কোন স্মৃতির ছবি না রেখেই। আজকের এই লেখাটুকু ওনার স্মৃতির প্রতি।

প্রয়াণে কেঁদো না তুমি, দিও না ফুল সমাধিতে
শুধু মনে রেখো কিছু ছত্র, কবি যা লিখে যায় জীবনের পাতায়...
স্মৃতির মিনার হোক আপন সৃষ্টি তার!


পুনশ্চঃ

কবির প্রতিভা কিংবা কবিতা তৈরির ভাষা কবি হুট করে পায় না, দীর্ঘদিনের চর্চা থেকেই আসে। সেই চর্চাটা দেখাতেই আজকের আয়োজন। এই লেখায় কিছু কবিতা হয়ত, আজকের প্রেক্ষাপটে অনেকের কাছে দুর্বল, তবুও এই কবিতাও আমার। একে অগ্রাহ্য করলে বড় কবি বলে লোকের কাছে স্বীকৃতিও পাই, তবু তা চাই না। আমার যা লেখা, তার সবটুকু আমার। ভালো, মন্দ মিলিয়ে সকল আমার রঙ!
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১৫
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×