somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শোক দিবসের কবিতাঃ কৃতঘ্ন আত্মজ

১৫ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কিছু কিছু রাত দীর্ঘ অন্ধ সহবাসে ভুলে বসে, শেষ হয়
সমস্ত আঁধার একদিন, আলো জাগে যেমন জীবনে আরও।
দুর্বহ বেদনা চেপে রেখে দেখি আসে পনেরো অগাস্ট
রক্তঝরা কালোরাত, রয়েছে পাষাণ হয়ে বুকে চেপে।

বজ্রকন্ঠে যার শিখেছে বাঙালি আত্মপরিচয়ের গান
যুদ্ধে নেমেছে আনতে মুক্তি, বেঁধে প্রাণ স্বাধীন উল্লাসে
ছিল নেতা সেই, দেশ বা জাতির, দিল কণ্ঠ তার একটি ফুলকে
বাঁচানোর প্রেরণা, জানোয়ারেরা উল্লাস করে তার লাশ ফেলে...

হৃদয়ে বিষাদ চেপে শুনি আজো পিতৃকণ্ঠ; ধ্বনিত প্রবল
উচ্চারণ—'তোমরা আমার বাঙালিরে দাবায়া রাখতে পারবা না'।
বিবেকের ধিক্কার শুনি, মনে পড়ে যায় ইদিপাসের ইতিহাস
নিজেই উপড়ে নিয়ে চোখ নিজের, খণ্ডায় পিতৃহত্যার পাপ...

ছিঁড়ে গোলামির শেকল হাজার বছরের, নিজের ভাষায়
যিনি শেখালেন মুক্তির সঙ্গীত, লেগে আছে পিতৃহত্যা পাপ
হাতে কৃতঘ্ন আত্মজদের। কি করে হবে শোধ এ পাপের দায়
ভেবে পাইনিতো বিগত দশক চারে, পাব কি আগামী চারে?



পাদটীকা:

আমি রাজনীতি বুঝি না, বুঝতেও চাই না। ইতিহাস যতটুকু জেনেছি, তার ভিত্তিতে বলতে পারি, বাঙালি জাতিটা একান্তই অন্ত্যজ শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করে। বাংলার কৃষক, জেলে, মুটে, মজুর, কামার, কুলি এই সমস্ত শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষের কখনো সুযোগ হয়নি নিজের ভাষায় কথা বলা লোকের হাতে দেশের শাসনভার আছে, এমন দেখার। সোজা কথায় যাকে বলা যায় স্বাধিকার অর্জন, নিজের দেশ নিজে শাসনের অধিকার। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় বহিঃশক্তির হাতে আমাদের দেশ, আমাদের মাটি, আমাদের কাদাজল বিক্ষত হয়েছে বারবার। তুর্কি থেকে সুলতান এসেছে, মুঘলরা এসেছে, এসেছে দস্যু, মগ, বর্গি মারাঠা, এসেছে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো যথা ইংরেজ, ফরাসি, ওলন্দাজ কিংবা পর্তুগিজ। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবের ভাষাও কিন্তু ছিল না বাংলা। চিরকালের অন্ত্যজ বাঙালি জাতি তার হাজার বছরের ইতিহাসে যে মানুষটির হাত ধরে প্রথমবারের মত নিজের দেশ পেয়েছে, নিজের ভাষায় কথা বলা একজন নেতা পেয়েছে তার নাম শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু উপাধি যাকে দেয়া হয়েছিল এমন বয়সে, যে বয়সে একজন রাজনৈতিক নেতার হাতেখড়ি নেয়ার কথা। কিন্তু এই মানুষটি এত দীর্ঘকায় ব্যক্তিত্বের ছিলেন, যা স্বাধীনতার প্রায় অর্ধশত বছর পরেও উপলব্ধিতে আমরা সক্ষম নই।

মহান এই মানুষের হাত ধরে সদ্য স্বাধীন, মাছে ভাতে কোনমতে বেঁচে বর্তে থাকা ছোট খাটো কালো কুৎসিত মানুষের দেশে নানা রকম হায়েনা ও বিদেশী শকুনের আবির্ভাব দেখা গেছে। আর ওরা সফলও হয়েছে, নানারকম ষড়যন্ত্র ছড়িয়ে। মাত্র চারবছরে দেবতা থেকে মানুষের কাছে ভীষণ দানব আকারে উপস্থাপনের যে কুৎসিত ষড়যন্ত্র একাত্তরের পরাজিত শক্তি করেছে, তারই ফল এই পনেরো অগাস্ট। আমি মনে করি বাঙালি জাতির জন্য সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায় এই দিন। এই পাপের কোন তুলনা হয় না। দীর্ঘ পনেরো বছরের সামরিক শাসনেও এতটুকু প্রায়শ্চিত্ত হয়নি আমাদের। তাই আজকের দিনেও দেখি ২০ লাখ টাকার সাথে বঙ্গবন্ধুর লাশের তুলনা করতে। বাঙালি জাতির সংকীর্ণতা ও নিচুমনা হীন চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ এসব কথা। এদের নিন্দা জানানোর ভাষা আমার নেই। আমি শুধু জানি, বঙ্গবন্ধু একটি জাতির মহাকাব্যিক সংগ্রামের প্রতীক, আপামর জনসাধারণের জেগে ওঠার প্রতীক, একটি ভূখণ্ডের জন্মদাতা। তিনি কোন দলের নন, তিনি কোন খণ্ডিত আদর্শের নন, তিনি আমার, আপনার সকলের।

আমাদের নষ্ট রাজনীতি বঙ্গবন্ধুকে দলীয় সম্পত্তিতে পরিণত করে ইচ্ছেমত ফায়দা লুটছে। তিনি যে বাংলাদেশের সম্পদ, আওয়ামী লীগের সম্পত্তি নন; এটা আওয়ামী লীগ ভুলে গেছে। আশ্চর্য এই, আজ শোক দিবসের কাঙালি ভোজে দলের কর্মীরা কে কার আগে বিরানির ভাগ পাবে এই নিয়ে কামড়াকামড়ি করবে, উচ্চস্বরে হিন্দি গান ছেড়ে শোক দিবসের পিণ্ডি চটকাবে আর ‘দিনশেষে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়ন কর’ এই জাতীয় শ্লোগান দিয়ে মিছিল শেষে ঢেকুর তুলে ঘুম দেবে। আমরা যারা তাকে অন্তর দিয়ে শ্রদ্ধা করি, তাদের কাছে এগুলো স্রেফ অসভ্যতা। এগুলো বন্ধের দাবি জানাই। কাঙালি ভোজ দেয়া মানেই প্রদর্শনের চেষ্টা নয় বরং গরীবের পাশে অন্তত একটা দিন দাঁড়ানো। আমি সেইদিনের প্রত্যাশা করি, যেদিন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, বামধারার সকল দল এমনকি জামাতও শোক দিবস প্রকৃত অর্থে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করে পালন করবে। হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙা লোকটার এটুকু সম্মান প্রাপ্য।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:৫১
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×