somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মৃতিতে ভূপেন হাজারিকা

০৬ ই নভেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভূপেন হাজারিকাকে নিয়ে আমার কিছু স্মৃতি আছে৷

ছয় বা সাত ক্লাসে পড়ি তখন৷ আব্বা কুমারখালীর ইউ এন ও বিধায় আমরা তখন কুমারখালীতে থাকি৷ একদিন শোনা গেলো প্রখ্যাত কণ্ঠশীল্পি ভূপেন হাজারিকা বাংলাদেশে আসছেন৷ তিনি এখানে একক গানের একটা অনুষ্ঠান করবেন আর বিটিভি অনুষ্ঠানটা সম্প্রচার করবে৷

পত্র পত্রিকায় ভূপেন হাজারিকাকে নিয়ে খুব লেখালেখি শুরু হয়ে গেলো৷ অত্যধিক লেখালেখিতে আব্বা কিছুটা বিরক্ত৷ কে ভূপেন হাজারিকা? তাকে নিয়ে এতো শোরগোল কেনো?

আব্বা কেন ভূপেন হাজারিকাকে চিনতেন না সে প্রশ্ন একটু বিস্ময়ের সৃষ্টি করতে পারে৷ এমন না যে আব্বা গান টান শুনতেন না৷ বরং উল্টো৷ একটা সময় তিনি নিজেই চলচিত্রের সাথে জড়িত ছিলেন৷ বাংলাদেশের প্রথম দিককার সিনেমা “নতুন নামে ডাকো”র প্রযোজক ছিলেন আমার নানা৷ তবে নানা প্রযোজক হলেও তিনি সক্রিয় ছিলেন না, নানার হয়ে আমার আব্বাই সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন৷

মনে রাখতে হবে, এটা সে সময়কার কথা যখন সবকিছু এমন জগাখিচুড়ি হয়ে যায়নি৷ এখন অনেক চ্যানেল আর অনুষ্ঠানের ভয়ে টিভির সামনে বসাই হয় না৷ কিন্তু তখন একটাই চ্যানেল, আর রাত ন'টা থেকে দশটা পরিবারের সবাই সে চ্যানেলের সামনে বসে থাকা মোটামুটি নিয়মের মতো ছিলো৷ ভূপেন বাবুর অনুষ্ঠানের রাতে টিভির সামনে বসে খেতে খেতে আমরা তার গান শুনলাম৷ দেখলাম আব্বার কণ্ঠ পুরোই পাল্টে গেছে৷ বললেন, শরৎচন্দ্রের মহেষ নিয়ে এমন গান লেখা যায়?

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের “মহেষ” গল্পটা আব্বার খুব প্রিয়৷ এক সময় গল্পটা পড়ে আবেগাপ্লূত হয়ে পড়েছিলেন৷ আজ এতদিন পরে “শরৎবাবু খোলা চিঠি দিলাম তোমার কাছে, তোমার গফুর মহেষ এখন কোথায় কেমন আছে” গান শুনে আব্বা উত্তেজিত হয়ে পড়লেন৷ আর উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলেন ভূপেন হাজারিকার প্রশংসায়৷

আরেকটা স্মৃতি৷ সেটা একটু বেশিই ব্যক্তিগত৷ এটাও সেই কুমারখালীতে থাকার সময়৷ সেবারে আমরা শিলাইদহে পিকনিকে গিয়েছিলাম৷ পিকনিক মাইকে কি সব হিন্দি গান বাজাচ্ছিলো, আমার পছন্দ হচ্ছিলো না৷ একটু বিরক্ত হয়ে মাউথপিস টেনে নিয়ে গাইতে শুরু করলাম - শরৎবাবু খোলা চিঠি দিলাম তোমার কাছে...

পিকনিকের আনন্দের সাথে গানটা বোধহয় ঠিক যায় না৷ কিন্তু আমি গান শেষ করতে কে একজন (অন্য এক পিকনিক পার্টির) এসে বলল, খুব ভালো গেয়েছো গানটা, আরেকবার গাও, হ্যাঁ!

হা হা৷ গান গেয়ে এমন স্বীকৃতি আমার সেই প্রথম৷ এবং সেই শেষ৷ আর কখনো আমি মাউথপিস হাতে গান করার সাহস করি নি৷

আমার জীবনে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গায়কের মৌসুম এসেছে৷ যখন যার মৌসুম এসেছে দেখা যাচ্ছে তার গানই একটানা শুনে যাচ্ছি৷ এক সময় ভূপেন হাজারিকার গান প্রচুর শুনেছি৷ এখন গান শোনার সীমা হেমন্ত-মান্না দে, জগজিৎ সিং আর সুমন-অঞ্জনের মথ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে৷ বহুদিন আর ভূপেনবাবুর গান শোনা হয় না৷ আজ ঘুম থেকে উঠে যখন ভূপেন হাজারিকার মৃত্যুর খবর পেলাম, তখন অনেক স্মৃতি মাথার মথ্যে নড়েচড়ে বসলো৷

প্রথম যৌবনের সেইসব উত্তাল দিনগুলোতে, বইমেলা বা অন্য কোথাও হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ যখন মাইকে ভূপেন হাজারিকা দরাজ গলায় গেয়ে উঠতেন- গঙ্গা আমার মা... পদ্মা আমার মা... তখন শরীর কেমন শিউরে উঠতো৷ টের পেতাম, গায়ের রোমগুলো সব দাঁড়িয়ে যাচ্ছে৷ অথবা কোন শীতের রাতে বন্ধুর বাসার ছাদে আড্ডা দিতে দিতে হঠাৎ যখন ভেসে আসতো- চোখ ছল ছল করে ওগো মা...

বন্ধু বিস্মিত হয়ে বলতো- দেখ দেখ, রোমগুলো কেমন দাঁড়িয়ে যাচ্ছে!

সেই সব স্মৃতি ভুলবো কি করে?

(একই সাথে গুগল প্লাসে প্রকাশিত)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ৯:২৯
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×