ছাতাকাহিনি ও বর্ষা
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
ছাতাকাহিনি
মুহিব ইমতিয়াজ
প্রথম যখন ছাতা আবিষ্কার হয়
তখন ছাতা ছিল আভিজাত্যের প্রতিক।সাধারণ মানুষ ছাতা ব্যবহার করতে পারতো না। শুধুমাত্র শাসক ও অভিজাত শ্রেনী ছাতা ব্যবহার করতো। তখন ছাতা ছিল বর্তমান সময়ের মারসিডিজ বা বিএমডাব্লিউ গাড়ীর মত। আর এই ছাতা আবিষ্কার নিয়ে রয়েছে নানা কথা। ছাতা আবিষ্কৃত হয়েছিল আজ থেকে প্রায় চার হাজার বছর আগে। ঠিক কোথায় এবং কারা প্রথম ছাতা আবিষ্কার করেছিল এ ব্যপারে বিতর্ক আছে। কেউ বলে মিশরীয়রা প্রথম ছাতা আবিস্কার করে, আবার কেউ বলে চাইনিজরা। তবে প্রাচীন মিশর, গ্রীস এবং চীন দেশের চিত্রকর্মে ছাতার নিদর্শন পাওয়া যায়। ছাতা প্রথমে ব্যবহৃত হত সুর্যের তাপ থেকে রক্ষা পাবার জন্য আর তখন মহিলারাই ছিল মুলত ছাতা ব্যবহারকারী। তবে বৃষ্টি প্রতিরোধ করার জন্য প্রথম ছাতার ব্যবহার শুরু করে চাইনিজরা।
ছাতার ইংরেজী প্রতিশব্দ ‘umbrella” শব্দটি ল্যাটিন ”umbra” শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ shade বা shadow। কে কবে ছাতা আবিষ্কার করেছিল, তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও ইতিহাসের ভিন্ন ভিন্ন পর্যায়ে অন্তত চারবার ছাতা আবিষ্কারের প্রমাণ পাওয়া যায়। মিশরীয় চিত্রলিপি, সমাধি এবং মন্দিরে আঁকা ছবি থেকে বোঝা যায়, খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০-২৪০০ অব্দের দিকে রাজা ও দেবতাদের ছায়াদানের জন্য চারকোণা সমতল ছাতা ব্যবহার করা হত।
চীনদেশের ইতিহাসেও ছাতার উল্লেখ আছে। ‘ঞযব জরঃবং ঙভ তযড়ঁ’ বইতে খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ অব্দে ব্যবহৃত গোলাকার সিল্কের ছাতা তৈরির কথা আছে। এ ধরনের গোলাকার ছাতা শোভাযাত্রায় রথে ছায়াদানের জন্য ব্যবহার করা হত। এ ছাড়াও প্রত্নতাত্তিক গবেষকগণ মাটি খুঁড়ে বেশ কিছু ছাতাওয়ালা তামার মূর্তিও আবিষ্কার করেছেন। এক সময় চিনা রাজদরবারগুলোতে অসংখ্য ছাতার ছবি আঁকা থাকত। ১২৭৫ খ্রিস্টাব্দে পরিব্রাজক মার্কো পোলো কুবলাই খানের দরবারে গেলে সেখানে তিনি দেখেছেন, সেনাপতির মাথার উপর সম্মানসূচক ছাতা মেলে ধরা হয়েছে।
চিন থেকেই রাজছত্রের ব্যবহার জাপান এবং কোরিয়ায় চালু হয়। জাপানে কয়েক শ বছর ধরে কেবল রাজারাই ছাতা ব্যবহার করতে পারতেন। কোরিয়ায়ও ছিল একই রীতি। সেখানেও ছাতাকে রাজকীয় প্রতীক হিসেবে মনে করা হত। সে সময় রাজার ছবি আঁকার উপরও নিষেধাজ্ঞা ছিল। শিল্পীরা ঘোড়ার উপর রাজছত্রের ছায়া এঁকেই রাজার উপস্থিতি বোঝাতেন।
রাজছত্রের আবিষ্কার হয়
মিশরে চারকোনা ছাতা আবিষ্কারের কয়েকশ বছর পর মেসোপটেমিয়া (বর্তমানে ইরাক) অঞ্চলে । প্রাচীন আসিরিয়া নগর ছিল টাইগ্রিস নদীর তীরে। সে নগরের এক খোদাইচিত্রে দেখা যায়, গোলাকার একটি ছাতা রাজার মাথার উপর ধরে রাখা হয়েছে। পরে মেসোপটেমিয়ার পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলেও রাজছত্রের প্রচলন হয়।
আফ্রিকা মহাদেশেও ছিল রাজছত্রের প্রচলন। ইথিওপিয়ার দ্বাদশ শতকে আঁকা ছবি ও প্রাচীন গ্রন্থে রাজছত্র ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। এখনও সেখানে সেই ঐতিহ্য অক্ষুণ্ন রয়েছে। বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতার রচনাতেও পূর্ব আফ্রিকায় রাজকীয় ছাতা ব্যবহারের উল্লেখ রয়েছে। তিনি ১৪ শতকে পূর্ব আফ্রিকা ভ্রমণ করেছিলেন। তার রচনায় উল্লেখ আছে, রোদ থেকে রক্ষা পেতে সে সময় সে দেশের রাজারা ছাতা ব্যবহার করতেন।
ভারতবর্ষের রাজছত্র
যখন থেকে, তাও অনেক প্রাচীন ইতিহাস। খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দে রচিত বৌদ্ধদের প্রাচীন গ্রন্থ থেকে জানা যায়, তখনও ভারতবর্ষে ছাতার প্রচলন ছিল। ভারতীয় রাজাদের মধ্যে রাজছত্র ব্যবহার ছিল ঐতিহ্যের অংশ। দক্ষিণের মুসলিম রাজ্যগুলোর শিল্পকর্মে ছাতার চিত্র থেকে এটিই স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, এ অঞ্চলের হিন্দু ও মুসলিম উভয় ধর্মের শাসকরাই রাজছত্রকে বিশেষ মর্যাদার আসনে বসিয়েছিলেন।
খ্রিস্টীয় নবম শতকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় রাজছত্রের প্রসার ঘটে। কম্বোডিয়া, লাওস, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম এবং জাভার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ রাজছত্র ব্যবহার শুরু করেন।
ধীরে ধীরে পরির্তন
আসতে থাকে ছাতার ধরণ মান ও ব্যবহারে। প্রথমে ব্যবহার হতো সূর্যের তাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। তবে বৃষ্টি প্রতিরোধ করার জন্য প্রথম ছাতার ব্যবহার শুরু করে চাইনিজরা। ছাতা আবিষ্কারের কাহিনী অনেক পুরনো হলেও অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত ছাতার আকৃতি ছিল অনেক বড় এবং ওজনও ছিল বেশি। ১৮৫২ সালে স্যামুয়েল ফক্স স্টিলের চিকন রড দিয়ে রানী ভিক্টোরিয়ার জন্য ছাতা তৈরি করেন।
ইংল্যান্ডে বিশেষ করে লন্ডনে প্রচুর বৃষ্টি হতো। এ জন্য সেখানে ব্যাপকভাবে ছাতার ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। যে কারণে লন্ডন ছাতার শহর হিসেবে পরিচিত। এক সময় বিশ্বের অনেক দেশ ব্রিটিশদের কলোনি ছিল। আর সেই কারণে তারা বিভিন্ন দেশ থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে অনেক কম খরচে ছাতা তৈরি করতে পারত। সে সময় তারা সোনা, রুপা, চামড়া, বিভিন্ন প্রাণীর শিং, বেত ও হাতির দাঁত দ্বারা ছাতার হাতল তৈরী করেন। এরপর ঊনিশ শতকে ছাতাকে বিভিন্ন ডিজাইনের এবং সহজে বহনযোগ্য করা হয়। ১৮৫২ সালে গেজ নামে একজন প্যারিস নাগরিক স্বয়ংক্রিয় সুইসের সাহায্যে ছাতা খোলার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন।
১৯২০ সালে জার্মানির বার্লিন শহরের হ্যানস হাপট নামে এক ব্যক্তি ছাতা তৈরিতে অভিনব পরিবর্তন আনেন। তিনি ছোট সাইজের সহজে পকেটে বহনযোগ্য ছাতা তৈরি করেন। ১৯৩৬ সালে লর্ড ও লেডি নামে এই ছাতা জার্মান জনগণের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। ১৯৫০ সালের দিকে জার্মানির নিরিপস কোম্পানির ছাতায় ডিজাইন ও আকার ভ্রমণকারীদের মধ্যে খুব সমাদৃত হয়েছিল। ১৯৬০ সালে পলিয়েস্টার কাপড়ের ছাতা পৃথিবীজুড়ে ব্যাপক হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল। উপহার হিসেবেও ছাতা এ সময় খুবই সমাদৃত হয়।
বিশ শতকের শেষের দিকে ছাতার আরেক ধরনের পরিবর্তন আসে; এক সময় ছাতার রং কালো থাকলেও এখন বাহারি রংয়ের ছাতা তৈরি হচ্ছে। অ্যালুমিনিয়াম, ফাইবার গ্লাস ইত্যাদি ব্যবহৃত অনেক আকর্ষণীয় ডিজাইনের ছাতা এসেছে বাজারে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে খোলা ও বন্ধের আলাদা সুইচ চমক এসেছে। ছাতার কাপড়, রং, সাইজ ও ডিজাইনে এসেছে অনেক ধরনের পরিবর্তন।
ছাতা যখন ফ্যাশন
হিসেবে ব্যবহার শুরু হয় , তার আগে রোদবৃষ্টিতে দারুণ কার্যকর বলে দিনদিন সাধারণ মানুষের কাছে ছাতা প্রয়োজনীয় হয়ে উঠতে লাগল। সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ইংরেজ ও ফরাসিরা ছাতার ব্যবহার শিখল। আর তারপরে ছাতা রীতিমতো নারীদের ফ্যাশনের অংশ হয়ে দাঁড়াল। নারীরা পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে রংবেরঙের ছাতা ব্যবহার করতে শুরু করল। তবে অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত ইংল্যান্ডে ছাতার ব্যবহার ছিল বেশ সীমিত।
ইংরেজ পর্যটক জোনাস হ্যানওয়ে
যখন দেখলেন যে ছাতা রীতিমত নারীদের ফ্যাশনের অংশ হয়ে গেল। আর বিপদে পড়ল ইংল্যান্ডের পুরুষরা।তখন তিনিই প্রথম এর ব্যাতিক্রম ঘটালেন। ১৭৫০ সাল থেকে তিনি ছাতাকে পথচলার সঙ্গী করে নিলেন। মূলত তার হাত ধরেই ইংল্যান্ডের পুরুষেদের কাছে ছাতা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তিনি ইংল্যান্ডের রাস্তাঘাটে, জনসম্মুখে ছাতা হাতে বের হতেন। টানা ত্রিশ বছর তিনি একাই ছাতা ব্যবহার করতেন। এর জন্য তাকে অবশ্য কম অপমান সহ্য করতে হয়নি! পথেঘাটে তাকে দেখলেই লোকজন নানা ঠাট্টা-মশকরা করত।প্রয়োজন বলে কথা! শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের নারী-পুরুষ সবাই ছাতা ব্যবহার করতে শুরু করে। ছাতা হয়ে উঠে সকলের পথ চলার সঙ্গী।
গল্পে রাজছত্রের কথা
উঠে আসে অতীতকালে রাজছত্র নিয়ে বিভিন্ন ধরনের গল্পগাঁথা থেকে। এর মধ্যে দ্বাদশ শতকের ব্রহ্মদেশের একটি কাহিনিতে রাজছত্রের ক্ষমতা চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। গল্পটি এ রকম--
এক রাজা ছিলেন। তার ছিল পাঁচ ছেলে। তার মধ্যে কে সিংহাসনে বসবে, এ নিয়ে রাজা ভারি চিন্তায় ছিলেন। কাকে রেখে কাকে ক্ষমতা দেবেন, তা ভেবেই পাচ্ছিলেন না।
অনেক ভেবে ভেবে তিনি এক বুদ্ধি বের করলেন। এক রাতে তিনি রাজছত্রটি খুলে এক জায়গায় দাঁড় করানোর আদেশ দিলেন। এরপর পুত্রদের বললেন ছাতা ঘিরে শুয়ে পড়তে। তিনি বললেন, যার দিকে এই রাজছত্র ঝুঁকে পড়বে, তাকেই সিংহাসনে বসাবেন। সেই হবে পরবর্তী রাজা। আর এভাবেই রাজা তার সন্তানদের মধ্য থেকে উত্তরাধিকারী নির্বাচন করলেন।
কাপড়ের রং ও নকশায় এসেছে বৈচিত্র্য। যুক্ত হয়েছে নানা প্রযুক্তিগত সুবিধা।
দ্য আমব্রেলা স্কাই
হিসেবে পরিচিত পর্তুগালের অ্যাগুয়েডা শহরকে বলা যেতে পারে ‘ছাতার শহর’। এই শহরের কয়েকটি রাস্তার উপর রংবেরঙের ছাতা মেলে ঝুলিয়ে রাখা আছে। যাতে রোদ-বৃষ্টি যে কোনো আবহাওয়ায় লোকেরা আরামে পথ চলতে পারে। ‘দ্য আমব্রেলা স্কাই’ প্রকল্পের আওতায় ২০১২ সালে অ্যাগুয়েডা শহরের এই রাস্তাগুলোর উপর শতশত রঙিন ছাতা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। আর বর্ণিল ভাসমান ছাতায় ঢাকা আলো-ছায়াময় সে সব রাস্তায় হাঁটার জন্য সারা বিশ্ব থেকে বহু পর্যটক সেখানে বেড়াতে যায় ।
আম্ব্রেলা নিউজপেপার
তৈরী করেছে ইকুয়েডেরের এক্সাটা’র নিউজপেপার কর্তৃপক্ষ। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে হালের কাগুজে সংবাদপত্রের চাইতে বর্তমান ইন্টারনেট যুগে অনলাইন নিউজ মিডিয়ার দিকেই বেশি নজর মানুষের। কিন্তু তাই বলে সকালে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে কাগজের খবরের দিকে একটু না তাকালে কি হয় ?
ইকুয়েডরবছরে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয় যা তাদের জন্য সত্যিই একটি সমস্যার বিষয়। পেপার বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়ে যায়। বেচা বিক্রিও কমে যায় খবরের কাগজের। তাহলে এখন উপায় কি? এই কঠিন সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নতুন একটি পদ্ধতি বের করেছে ইকুয়েডরের এক্সাটা’র নিউজপেপার কর্তৃপক্ষ। তারা তৈরি করে ফেলেছে এমন একটা নিউজ পেপার যেটা ব্যবহার করা যায় ছাতা হিসাবেও!
বৃষ্টির দিনে সঙ্গে ছাতা না থাকলে হাতের কাছে থাকা পেপারই তখন একমাত্র ভরসা। তবে সেটা আর টিকে কতক্ষন? এবার থেকে থাকবে। কারণ চলে এসেছে এমন সংবাদপত্র, যে কিনা পানিতে ভিজবে না!
বৃষ্টির সময়ে সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে জনগনের কথা ভেবে “ছাতা নিউজপেপার” বা আম্ব্রেলা নিউজপেপার এর উদ্ভাবন করেছে এই কোম্পানী। বৃষ্টির সময়ে তারা স্পেশাল এডিশন বের করেছে যা সম্পূর্ণ লেমিনেশন করা!
এখন বৃষ্টি আর কোন সমস্যাই না। পত্রিকা পড়তেও পারবেন আবার ছাতা হিসেবে ব্যবহারও করতে পারবেন! লেমিনেশন করার জন্য বৃষ্টির মৌসুমে তাদের বিক্রিও বেড়ে গেল ১২ শতাংশ। এটি বৃষ্টি থেকে রক্ষা করবে পাশাপাশি সংবাদ পড়ার স্বাদও মেটাবে।
আধুনিকায়নের কথা ভেবে
আমেরিকান একটি কোম্পানী , নিউইয়র্ক ন্যুব্রেলা ইনক ( Newyork Nubrella inc. ) নিয়ে এলো ন্যুব্রেলা ( Nubrell ) .
এটি দেখতে অনেকটা ছাতার মতন হলেও এর ব্যাবহার বিধি ছাতার থেকে আরও উন্নত এবং সহজ।ন্যুব্রেলার সবথেকে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এর চমৎকার এরোডায়্নামিক ডিজাইন এবং সহজে বহন করার সুবিধা। প্রচলিত ধারার ছাতাগুলো সাধারনত এরোডায়নামিক ডিজাইনে তৈরি হয় না ; যে কারনে একটু ঝড়ো বাতাসে খুব সহজেই সেগুলো অকেজো হয়ে যায়। কিন্তু ন্যুব্রেলার এরোডায়্নামিক ডিজাইন সকল প্রতিকুল আবোহায়ওয়াতে টিকে থাকতে সক্ষম।এর আকৃতি হেলমেটের মত হওয়ার কারনে এটিকে বহন করতে হাতের প্রয়োজন পড়ে না । তাই খুব সহজেই যেখানে সেখানে এবং যখন তখন ব্যাবহার করা যায়।এমনকি শহরের ব্যস্ত রাস্তায় অন্য পথচারীদের সমস্যা না করেও।শুধু তাই নয় মোটরসাইকেল চালানোর সময় কিংবা ষ্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখার সময়ও অথবা প্রখর সূর্যালোকের হাত থেকে বাঁচার জন্য এটি যথেষ্ট উপকারী হবে। এর আরও একটা বড়দিক হলো যেকোন ধরনের এবং যেকোন বয়সের মানুষ তার রুচি ও পছন্দ অনুযায়ী এর সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
বর্তমানে তিপ্পান্নটি দেশে এই আধুনিক ছাতাটি ব্যাবহৃত হচ্ছে যার মূল্যমান পন্ঞ্চান্ন মার্কিন ডলার। ( 55$ )
ন্যুব্রেলার আবিষ্কারক এবং নিউয়র্ক ন্যুব্রেলা ইনকের পতিষ্ঠাতা এলেন কফম্যান এটিকে " একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক ছাতা " নামে অভিহিত করেছেন।
স্মার্ট আম্ব্রেলা
এটা নেদারল্যান্ডের ডেস্ফট ইউনিভার্সিটির গবেষক “ড. রলফ হাট” এর গবেষনা। গবেষকরা বলেন- এটি ব্যাবহার করে বৃষ্টি সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ করা যাবে। এই ছাতার ক্যানভাসের নিচে ব্যাবহার করা হয়েছে ‘পেইজো সেন্সর’ এটির মাধ্যমেই ছাতায় বৃষ্টির ফোঁটা পড়লে যে ভাইব্রেশন হয় তা দিয়ে বৃষ্টির পরিমাপ করা যায়।
ড. হাট বিবিসিকে বলেন- যদিও এজেন্সিগুলো সংখ্যায় কমে যাচ্ছে এবং এতে মানুষের অপারেশনাল ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট নিয়ে বা হাইড্রলজি নিয়ে গবেষণা করতে পারে না। কারন তারা এ জন্য প্রয়োজনীয় ডেটা সংগ্রহ করতে পারে না।
ভবিষ্যতে এ প্রযুক্তি নিয়ে আসার কথা জানিয়েছেন হাট। এতে বৃষ্টির সময় ছাতা খুললেই স্বয়ংক্রিয় ভাবে তথ্য চলে যাবে কম্পিউটারে। এবং অতিবৃষ্টির ফলে বন্যার আশঙ্কা থাকলেও আগাম সতর্কতা পাওয়া যাবে। এ সম্পর্কে ড. হাট আরও বলেন- আবাহাওয়ার তথ্য জানতে আমাদের রয়েছে রেডার ও স্যাটেলাইট। কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টি কতটুকু হয় তা পরিমাপ করা ব্যয়বহুল। আর এই কাজটুকু খুব অল্প সময় ও অল্পখরচে করে দেবে স্মার্ট আম্ব্রেলা।
বিশ্বের প্রথম ছাতার দোকান
“জেমস স্মিত এ্যান্ড সন্স” চালু হয় ১৮৩০ সালে এবং এই দোকান লন্ডনের ৫৩ নিউ অক্সফোর্ড ষ্টিটে আজও চালু আছে।
কেমন ছাতা কিনবেন
সব বয়সের মানুষই ছাতা ব্যবহার করে। এমনকি শিশুরাও ছাতা ব্যবহার থেকে বাদ যায় না। সব বয়সীদের কথা মাথায় রেখে ছাতা ব্যবসায়ীরা ছাতা তৈরি করেন। দোকানে বাচ্চাদের জন্য থাকে যেমন আকারে ছোট ছাতা, তেমনি বড়দের জন্যও থাকে বিভিন্ন আকারের, রং ও ডিজাইনের ছাতা। কালো রঙের পাশাপাশি লাল, গোলাপি, বেগুনি, মেরুন, ফিরোজাসহ বিভিন্ন রঙের ও প্রিন্টের ছাতা পাওয়া যায়। তাই ফ্যাশনেবল নারীরা আজকাল পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে ছাতা ব্যবহার করেন। এছাড়া বাজারে একভাজ, দুইভাজ ও তিনভাজেরও ছাতা পাওয়া যায়। ভাজওয়ালা ছাতাগুলো সবসময় ব্যাগে বহনের জন্য সুবিধাজনক।
ছাতা কেনার সময় অবশ্যই কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। তা হচ্ছে ছাতার ওপরের দিক রঙ-বেরঙের হলেও নিচের দিক যেন সাদা বা ধূসর হয়। কারণ এটি তাপ রোধ করবে। এলুমিনিয়ামের শিক দেখে ছাতা কেনা ভালো। তাহলে ছাতায় সহজে মরিচা পড়বে না। কেনার সময়ই ছাতা ভালো করে খুলে ও বন্ধ করে পরীক্ষা করে নেয়া উচিৎ।
দরদাম:
ডিজাইন, আকার ও মান অনুযায়ী বিভিন্ন কোম্পানির ছাতার দামের মধ্যে তারতম্য দেখা যায়। যেমন- শংকর ১৫০ থেকে ৫৫০ টাকা, রহমান ২৮০ টাকা, চেরী ১৫০ টাকা, এটলাস, ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, মুন ৩৫০ টাকা, অক্সি ২০০ টাকা, চায়না ২৫০ টাকা। আবার মার্কেট ও দোকান ভেদেও ছাতার দরদামের পার্থক্য হয়ে থাকে।
যেখানে পাবেন
দেশের সব জায়গাতেই আপনি অনায়াসে পেয়ে যাবেন নানা রকম ছাতা। রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট যেমন-গুলিস্তান, নিউমার্কেট, ইস্টার্ণ মল্লিকা, বায়তুল মোকাররম, বসুন্ধরা শপিংমলসহ ছাড়াও দেশের সব জায়গার ছোট-বড় সব মার্কেটেই আপনি পেয়ে যাবেন এসব ছাতা ।
বিক্রেতারা জানান, বড় ছাতার দাম ৩০০-৫৫০ টাকা, মাঝারি আকারের ২৫০-৩৫০ টাকা, ছোট ফোল্ডিং ছাতা ২৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা। নতুন মডেলের ছাতার দাম একটু বেশি, ৩৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। বাচ্চাদের ছাতার দাম ১৫০-৩৫০ টাকা। দেশি ছাতার দাম খানিকটা চড়া। কমের মধ্যে কিনতে চাইলে চীনে তৈরি বিভিন্ন ধরনের ছাতা আছে।
মোট কথা
আজ থেকে প্রায় চার হাজার বছর আগে ছাতা আবষ্কৃত হলেও ষোড়শ শতকের প্রথম দিকে এসে ছাতা জনসাধারণের কাছে পরিচিতি লাভ করে। উত্তর ইউরোপের বৃষ্টি প্রধান এলাকায়, বিশেষ করে লন্ডনে। তবে এই সময় শুধু মহিলারাই ছাতা ব্যবহার করত। পুরুষদের মাঝে ছাতার কোন ব্যবহার ছিলনা। পারস্য পর্যটক এবং লেখক জোনাস হ্যানওয়ে ছাতাকে জনপ্রিয় করতে ইংলান্ডের রাস্তায় একটানা ৩০ বছর ছাতাকে সঙ্গী করেন। মুলত তিনিই ইংল্যান্ডে পুরুষদের মাঝে ছাতার ব্যবহার জনপ্রিয় করে তোলেন। যে কারণে ইংরেজদের মাঝে ছাতার আরেক নাম ’হ্যানওয়ে’। হ্যানওয়ের প্রচেষ্টাতেই এক সময় পন্ঞ্চান্ন মার্কিন ডলার। ( 55$ )
ন্যুব্রেলার আবিষ্কারক এবং নিউয়র্ক ন্যুব্রেলা ইনকের পতিষ্ঠাতা এলেন কফম্যান এটিকে " একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক ছাতা " নামে অভিহিত করেছেন নারী-পুরুষ সবাই ছাতাকে নিত্যসঙ্গী করলেন।
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...
অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা
আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************
যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=
০১।
চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন
কুড়ি শব্দের গল্প
জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!
সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন