somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালোবাসার খোলা চিঠি ৩

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ ভোর ৫:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রিয়তমেষু,

জানো, খুঁজতে খুঁজতে বিজ্ঞানীরা মঙ্গল গ্রহরে ছেনে ফেলেছে। ছেনে ফেলার কারণ হল, বিজ্ঞানীরা মঙ্গলে ডাইড্রোজেন মোনোক্সাইড খুঁজছেন। এই পদার্থ সকল জীবেরই জীবনধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি জীবনের প্রধান উপাদান। ডাইড্রোজেন মোনোক্সাইডকে আমরা অনেকগুলা নাম দিয়ে রেখেছি- পুষ্কর, অম্ভ, অম্বু, উদকুম্ভ, উদক, সলিলি, বারি ইত্যাদি। তবে এদের মধ্যে জনপ্রিয় নামটা হল জল বা পানি।

তো বিজ্ঞানীদের এই খোঁজাখুঁজির অর্থ হল, যদি পানি পাওয়া যায় তাহলে বুঝে ফেলতে হবে মঙ্গল গ্রহে জীবনধারণ করা যাবে। পানি পাওয়া না গেলে জীবনের নাকি সেখানে বেইল নাই।

পানির উপাদান হলো দুইটি যথা হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন।এ দুটি উপাদানের সমন্বয়ে তৈরি হয় পানি- স্কুলের পাঠ্য বই শিখিয়েছিল। সে পাঠ্য আরও শিখিয়েছে, পৃথিবীর তিন ভাগ জল এক ভাগ স্থল। পৃথিবীর সত্তর ভাগ জুড়েই পানি। কিন্তু তার মাত্র আড়াই ভাগ বিশুদ্ধ। মানুষের শরীরেও ষাট থেকে সত্তর ভাগ পানি।

বিশুদ্ধ পানির বড়ই অভাব। শুধুই আমাদের দেশটাতে, তা নয়, পুরো পৃথিবীতেই। বিশেষজ্ঞরা কঠিন মুখ করে বলছেন, ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকাংশেরও বেশি পানি সংক্রান্ত সঙ্কটের সম্মুখীন হবে। ফলে পানি অপচয় না করতে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে।

কিন্তু মানুষ বিশেষজ্ঞদের কঠিন মুখ করে বলা কথাবার্তা শুনছে না। সচেতন হচ্ছে না। এই যেমন তুমি। তোমাকে আমি সচেতন মানুষ বলেই জানি, জানতাম আসলে। এই তুমিই পানির কী নিদারুণ অপচয় করছ! যখন তখন তোমার দু চোখ বেয়ে জল ঝরাতেই থাক। যখন আমি নিষেধ করে অপচয় রোধ করতে চাই, তখন তোমার চোখেদের সঙ্গে তোমার নাকটাও ঐক্যবদ্ধ হয়। নাক দিয়েও জল ঝরাতে থাক। দুঃখ।

এইভাবে চলতে থাকলে খুব দ্রুতই তোমাকে পানিশূন্যতায় ভুগতে হবে। তখন পানিশূন্যতা রোধ করতে তোমাকে রুটিন করে খাওয়ার স্যালাইন খেতে হবে। দেশের পানি সম্পদের যা হাল, তাতে স্যালাইনের প্যাকেট খুলে স্যালাইন গুঁড়ো মেশাবার মত বিশুদ্ধ পানি কি পাওয়া যাবে?

নিন্দুকেরা বলে, ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ করা পানি কল থেকে নিয়ে সরাসরি পান করা আর বিষ গুলে খাওয়ার মধ্যে নাকি কোনও ভেদ নেই। এসব নিন্দুকদের আমি অর্বাচীন ডাকি। তুমিই বল, সরাসরি পান করতে হলে আগে তো কলে পানি আসতে হবে, তাই না?

নদীমাতৃক এই বাংলাদেশটাকে আমরা আদর করে সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা ডাকি। সুজলা মানে হল সুন্দর জল। এটা প্রকৃতি প্রদত্ত। তোমার সঙ্গে যেমন আত্মার যোগাযোগ, তেমনি নদীর সঙ্গে আমাদের নাড়ীর যোগ। ধলেশ্বরী নদীর উৎস থেকে গড়ে ওঠা বুড়িগঙ্গা নদীর তীরেই রাজধানী ঢাকাকে আমরা গড়ে তুলেছিলাম। এটা চারশ’ দশ বছর আগের কথা।

বুড়িগঙ্গা নদীর দু পার দখল করতে করতে বুড়িগঙ্গার প্রস্থ এখন আমরা অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছি। যদিও দৈর্ঘ্য আঠার মাইলই আছে। সুজলা এই নদীকে আমরা এখন আড়ালে পৃথিবীর দীর্ঘতম নর্দমা ডাকি। এই দাবিকে প্রতিষ্ঠা করতে কল কারাখানা আর নাগরিক জীবনের সকল আবর্জনা আমরা বুড়িগঙ্গাতেই ফেলি। নাই বা হল আমাদের একটা বৈকাল হ্রদ, পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের মত দীর্ঘতম নর্দমা তো হবে! আমরা এখন তার প্রতিষ্ঠান এগিয়ে চলেছি।

বছর দুয়েক আগে তোমাকে নিয়ে বিক্রমপুরে মিন্টুদের বাড়ি গিয়েছিলাম, তোমার মনে আছে? সেবার বুড়িগঙ্গা সেতু অতিক্রম করার সময় তুমি অবাক হয়ে বলছিলে, ‘কিসের গন্ধ!’

আমি প্রত্যুত্তর এড়িয়ে গিয়েছিলাম। আজ বলি, গন্ধটা ছিল বুড়িগঙ্গার পানির গন্ধ। সেদিন তুমি নদীতে নৌকা ভ্রমণ করতে চাও নি বলে আমি মনে মনে ঈশ্বর আর ভাগ্যকে কতবার ধন্যবাদ দিয়েছি, তা কি তুমি জানো? নয়ত তোমার চুলেদের থেকেও কুঁচকুঁচে কালো পানি দেখে তুমি ঢাকার নাগরিকদের অভিশম্পাত করতে। হয়ত তোমার চোখ আবারও জল অপচয়ে মেতে উঠত।

তুমি কি জানো পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় নামে আমাদের একটা মন্ত্রণালয় আছে? বিশ্বাস হচ্ছে না বুঝি? সত্যি বলছি। কিরা। এই মন্ত্রণালয়ে সকলেই খুব পানি ভালোবাসেন। তাইত গেল সাত বছরে নয়শ’ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং করার পরও প্রতি বছরই নদীতে ভাঙন হয়। নদী তীরের মানুষ নিঃস্ব হয়। প্রতি বছরই বন্যা হয়। আর ঢাকা শহরের রাজপথে নৌকায় ভ্রমণ করার সুব্যবস্থা করা হয়। পানির প্রতি ভালোবাসা না থাকলে এটা কোনদিন সম্ভব হত? তুমিই বল? তখন শহরের অনেক বাড়ির জানালা দিয়ে লোকেরা ছিপ ফেলে মাছ ধরা উৎসব পালন করে। উত্তেজনা আর শিহরণ জাগে না? দাঁড়াও, এবার বর্ষায় আমিও একটা ছিপ কিনে ফেলব। ছুটির দিনে জানলায় দাঁড়িয়ে ছিপ ফেলে মাছ ধরব। তুমি ওয়াসার দূষিত পানি ফুটিয়ে থার্মোস ভর্তি করে চা নিয়ে জানালার ধারে বসবে আমার পাশে। কি রোমান্টিক না?

এখন তো গরম কাল ফুরিয়ে শীত আসছে, বোঝা যায়? শীত আসবে একসময়। এসে চলেও যাবে, বুঝতেই পারবে না। আবার গরম কাল এলেই শুরু হবে গ্রীষ্মের দাবদাহ, সব বছর যেমন হয়। বৈশাখী ঝড় হবে, ঘোরতর বৃষ্টি হবে। ওয়াসা যদি নিয়মিত পানি সরবরাহ রাখে তাহলে কি তুমি বৃষ্টিতে ভিজবে? ‘আজি ঝরঝর মূখর বাদর দিনে’ গুনগুন করবে? করবে না? তাছাড়া অতিরিক্ত গরমে পানি খরচ বেশি হতে পারে। এটা প্রায় তোমার চোখের জলের মতই আরেকটা অপচয়। এর চেয়ে পানি সরবরাহ বন্ধ রাখাই উত্তম, তাই না? সব গরমে ঢাকা ওয়ালা এই উত্তম কর্মটিই করে।

তোমার চোখেদেরকেও ঢাকা ওয়াসার মত করতে হবে। সুন্দর বিদেশি বাথরুম ফিটিংসের কল থাকবে, পানি থাকবে না। তেমনি তোমার অপরূপ চোখ থাকবে, অশ্রু থাকবে না। ওয়াসার মত, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মত তোমাকেও পানিকে ভালোবাসতে হবে। পানি অপচয় করা চলবে না। হোক তা সুমিষ্ট কিংবা নোনা।

ইতি

তোমারই

আমি


সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ ভোর ৫:২৭
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×