হযরত ইবরাহীম (আ) এর দুই পুত্র ছিলেন, হযরত ইসমাঈল (আ) এবং হযরত ইসহাক (আ) । হযরত ইসহাক (আ) এর পুত্র ছিলেন হযরত ইয়াকূব (আ), এবং হযরত ইয়াকূব (আ) এর ছিলেন ১২ জন পুত্র । তার এই ১২ জন ছেলের অধীনে থাকা তৎকালীন ১২টি গোত্রই বনী ইসরাঈল বা ইসরাঈলের গোত্র নামে পরিচিত । এছাড়াও, ইয়াকূব (আ) এর ১২জন ছেলের মধ্যে একজনের নাম ছিল ইয়াহূদা, সেই ইয়াহূদার নাম থেকেই বর্তমান ইহুদী নামের উৎপত্তি।
ফেরাউনের হাত থেকে বনী ইসরাঈল জাতিকে মুক্ত করে নিয়ে এসে খ্রীষ্টপূর্ব ১৪০০ সালের দিকে হযরত মূসা (আ) জর্ডান নদীর পূর্ব তীর, যা বর্তমানে ফিলিস্তিনের পূর্ব তীর নামে পরিচিত, সেখানে বসবাস করা শুরু করেন । সেসময় ঐ অঞ্চলের দক্ষিন দিকে আমালিকা গোত্র বাস করতো, তারা ছিল অত্যাচারী এবং দুর্ধর্ষ । মূসা নবী বনী ইসরাঈল জাতিকে আদেশ দিয়েছিলেন এই আমালিকা জাতিকে আক্রমন করে ওদেরকে হত্যা করে পুরো এলাকা দখলে নিয়ে নিতে এবং রাজত্ব করতে । কিন্তু,বনী ইসরাঈলীরা তার কথা মানে নি, ফলে টানা ৪০ বছর তারা যাযাবরদের মত এদিকে - সেদিকে ঘুরে বেড়িয়েছিল, কোনো থাকার জায়গা পায়নি ।
অবশেষে, তালূত রাজার অধীনে খ্রীষ্টপূর্ব ১১০০ সালের দিকে বনী ইসরাঈলীরা আমালিকা গোত্রকে ধ্বংস করে এবং সমগ্র ফিলিস্তিনকে জয় করে । তালূত রাজার সেনাপতি ছিলেন হযরত দাউদ (আ), তিনি ৪০ বছর এবং তার ছেলে হযরত সোলায়মান (আ) আরো ৬০ বছরের মত ফিলিস্তিন শাসন করেন । হযরত সোলায়মান (আ)ই মুসলমানদের প্রথম কেবলা মসজিদুল আকসা নির্মান করেন । সোলায়মান (আ) এর মৃত্যুর পর বনী ইসরাইলীদের রাজত্ব ইসরাঈল ও জুডা, এই দুটি ভাগে ভাগ হয়ে যায় । এসময়ে ইসরাইলীরা নানারকম পাপকাজ এবং অনাচারে জড়িয়ে পড়ে, মূর্তিপূজা শুরু করে, নিজের মেয়েকে বিয়ে করা, রক্ষিতা রাখা, মদ পান, মসজিদুল আকসার বারান্দায় প্রস্রাব করা ইত্যাদী করতে শুরু করে । অতঃপর, খ্রীষ্টপূর্ব ৭২১ সালে এ্যাসিরীয় বাহিনী উত্তর দিকের ইসরাঈল রাজ্য দখল করে নেয় এবং, খ্রীষ্টপূর্ব ৫৮৬ সালে ব্যাবীলনীয়রা দক্ষিন দিকের জুডা রাজ্য দখল করে নেয় । তারা সকল বাড়ি ঘর ধ্বংস করে দেয়, মসজিদুল আকসাকে পুড়িয়ে দেয়, সমস্ত ইসরাইলীদেরকে হয় হত্যা করে নয়তো তাড়িয়ে দেয় ফিলিস্তিন হতে ।
প্রায় সকল ইয়াহূদিরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে । আল্প কিছু ইহুদী যারা ফিলিস্তিনে ছিল, তারা পারস্য, আলেকজান্ডার, টলেমী, মেক্কাবী, রোমান, বাইজান্টাইন, আরব মুসলমান এবং সর্বশেষ তুর্কী মুসলমানদের দ্বারা শাসিত হতে থাকে ।। যে সকল ইহুদী ইউরোপে পালিয়ে গিয়েছিল, সেখানে তারা খ্রীষ্টানদের অত্যাচারের শিকার হয় । ক্যাথলিক চার্চ হাজার হাজার ইহুদীদেরকে হত্যা করে, ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম এডওয়ার্ড ইংল্যান্ড থেকে ইহুদীদেরকে তাড়িয়ে দেন । স্পেনে গথিক খ্রীষ্টানরা ইহুদীদের উপর নির্যাতন করে, জার্মানীর হিটলার ইহুদীদেরকে হত্যা করে । এভাবে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ঠিক আগ মূহুর্ত পর্যন্ত ইহুদীরা ছিল দুনিয়ার সবচাইতে বেশী নির্যাতিত ও সবচাইতে বড় উদ্বাস্তু জাতি, যেমনটা আজকের ফিলিস্তিনি মুসলমান কিংবা রোহিঙ্গা মুসলমানরা ।।