কলেজে পড়ার সময় থেকে আমার মেসজীবন শুরু। এক রুমে দুজন থাকতাম। সন্ধ্যার পর পড়ার সময় রুমের বাতি নেভানোই থাকত। আমি আর আমার রুমমেট দুজনেই পড়ার জন্য টেবিল ল্যম্প ব্যবহার করতাম। টেবিল ল্যম্প ব্যবহার করলেই বাতির আসেপাশে পোকা ঘোরাঘুরি করত। মাঝে মাঝে দেখতাম টেবিলের উল্টো দিকের দেয়ালে একটা টিকটিকি। পোকার লোভে টেবিলের পাশের দেয়ালে ঘোরাঘুরি করত।
কতদিন যে পড়তে পড়তে টিকটিকিটার শিকার করা দেখেছি। অদ্ভুত কিছু ব্যপার লক্ষ করেছি তখন। টিকটিকিকে আমি কখনোই আলোতে ডাকতে শুনিনি। অন্ধকার ঘরে সে কি কোন প্রাগৈতিহাসিক উল্লাস প্রকাশ করতে ডাকত কিনা কে জানে? এটি কোন বৈজ্ঞানিক তথ্য উপাত্ত নয়, ব্যক্তিগত এ্যরবিট্রারি তথ্যের সংগ্রহ বলতে পারেন। যাই হোক, এভাবে পড়ার টেবিলের আশেপাশে টিকটিকিটিকে বারংবার দেখতে দেখতে এবং শোবার সময় এর ডাক শুনতে শুনতে ঘুমুতে যাবার একটি অনাকাঙ্খিত বদঅভ্যাস তৈরি হয়ে যাবার দরুন টিকটিকিটির সাথে একটি সুক্ষ্ম সম্পর্ক তৈরি হল আমার।
একদিন অনেক রাতে ঘুম ভেঙে গেল। তেমন কিছুই না, প্রকৃতির ডাক। উঠে ঘুমঘুম চোখে টয়লেটের দিকে এগিয়ে গেলাম। টয়লেটের দরজা বন্ধ করার সময় উপর থেকে যেন কি একটা পায়ের কাছে পড়তে দেখলাম। ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখে সেটি ঠিক ঠাওরে উঠতে পারলাম না।
এরপর কয়েকদিন পড়ার টেবিলে টিকটিকিটির দেখা পাইনি, ঘুমুতে যাবার সময়ও টিকটিক শব্দ শুনিনি। দিনকয়েক পর একদিন টয়লেটে দেখলাম দরজার কাছেই পানির কলের নীচে রাখা বালটির চিপায় একটি টিকটিকিট মৃতদেহ। সেদিন রাতের সাবকনশাস মাইন্ড থেকে কিছু ছবি মনে পড়ল - একটি টিকটিকি টয়লেটের দরজার উপরে বসে ছিল বোধ হয়, আমি দরজাটা বন্ধ করতেই দরজার পাল্লার সাথে গলা বেধে এটির ইহজগত সাঙ্গ হয়।
আজ আমার বাইকের চাকা একটি ছুচোর মৃত্যুর কারন। এই ঘটনাটা আমাকে অনেকদিন আগের সেই টিকটিকিটির কথা স্মরন করিয়ে দিল।