আবদুল মজিদ অন্তর : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে আম পেড়ে খাওয়ার অভিযোগে শিক্ষার্থীকে পুলিশে দিয়েছেন প্রো-ভিসি! অথচ ছাত্রলীগ আম গাছ দখলে নিয়ে বিজনেস করলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি রাবি প্রশাসন। বুধবার সন্ধ্যায় কয়েকজন ছাত্র খাওয়ার উদ্দেশ্য কিছু আম পাড়লে সহকারী প্রক্টর এসে বাধা দিলে সবাই চলে যায় কিন্তু থেকে যান একজন ছাত্র। তার নাম আনোয়ারুল ইসলাম (আনু), পড়ছেন রাবিতে পপুলেশন সায়েন্স বিভাগে চতুর্থ বর্ষে।
তিনি জানতে চান 'আমার ক্যাম্পাসের আম, আমি একজন শিক্ষার্থী হিসেবে খাওয়ার অধিকার রাখি না?' একরকম কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তার আইডি কার্ড নিয়ে নেওয়া হয়। পরে প্রোভিসি এসে তাকে পুলিশের গাড়িতে তুলে দেয়, পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে আটকে রাখে।
খবর পেয়ে থানায় গেলাম তাকে ছেড়ে আনতে। অপেক্ষা করেছিলাম ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) রুমে। তিনি আনুকে হাজির করে আম পাড়ার কারণ জানতে চাইলেন। এসময় এক হৃদয় বিদারক কাহিনীর অবতারণা হয়!
আনু জানান ছোট বেলায় তার বাবা মার মধ্যে পারিবারিক কলহের কারণে দুজন পৃথক হয়ে যায়। আনুকে তার এক আত্মীয় অভাবের সংসারে কোন রকম লালন পালন করে এসএসসি পাশ করান। পরে নিজের স্ট্রাগলে এইচএসসি পাশ করে রাবিতে ভর্তি হন। এরপর পরিবারের সাথে তার কোন যোগাযোগ নেই, এমনকি যে তাকে লালন পালন করতো সেও আর কোন খোঁজ রাখেনি।
টিউশনি করে এতদুর আসতে পেরেছে সে। আজ প্রায় কয়েক মাস হয়ে গেল তার হাতে কোন টিউশনি নেই। বিভিন্ন দোকান থেকে সে কোনরকম বাকিতে এক-দুবেলা খেয়ে না খেয়ে পার করছে! এখন আর কেউ বাকিও দিতে চাচ্ছে না!
গত দুইদিন ধরে সে শুধু আম খেয়েই টিকে আছে! বুধবার সন্ধ্যায়ও সে কোন খাবার না পেয়ে ক্যাম্পাসের গাছ থেকে বেশ কিছু আম নামায়, এই উদ্দেশ্যে যে, এগুলো রুমে রেখে দিলে পাকার পর দুয়েকদিন খেতে পারবে। ক্ষুধার্ত থাকায় সে মানুষের সাথে স্বাভাবিক আচরণ করতে পারছে না, অল্পতেই সে রেগে যায়...! এতটুকু শুনেই ওসির চোখে পানি জমে যায়, সাথে উপস্থিত সকলের! ওসি তার স্ট্রাগলকে স্যালুট জানান। সেই সাথে তাকে থানায় নিয়ে আসাকেও অমানবিক উল্লেখ করেন।
অথচ আমাদের মাননীয় প্রো-ভিসি তথা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার কোন খোঁজ খবর না নিয়ে আম পাড়ার অভিযোগে নির্দয়ভাবে পুলিশের হাতে তুলে দেয়! পুলিশের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আনুর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করার জন্য। রাত ১০ টায় আনুকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রকল্যাণ তহবিল নামে একটা তহবিল আছে, এর কাজ কি, আমি জানি। এভাবে আনুরা সমাজে নিগৃহীত হয়, ক্ষুধার্ত থাকে, একসময় অপরাধী হয়ে ওঠে! এর জন্য দায়ী কে...?
আবদুল মজিদ অন্তর
শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১৮ রাত ৯:২৫