প্রতিনিয়ত বাসে চড়তে হয়। তবে আলহামদুলিল্লাহ যে যুদ্ধ করে বাসে চড়া লাগে না যা আমার একেবারেই সহ্য হয়না। বাস স্ট্যান্ডে ভীড় দেখলে যুদ্ধ করে চড়ার চাইতে এক ঘন্টা দাড়িয়ে থাকা আমার কাছে শ্রেয় মনে হয়। আর সিট না পেলে সাধারনত সেই বাসে চড়ার কথা তো ভাবতেই পারিনা। আমার কথা হচ্ছে মানুষ দেখে-শুনে পণ্য কেনে আর আমি দেখে-শুনে বাসে উঠবো ।
যাইহোক আমার বাস বিলাসের গপসপ-ই একটু করি আজ
***************************
খুব ইচ্ছে করে ভাল একটা বাসে লং জার্নি করবো। কিন্তু আমার কপালে... বলছি সে কথা,
বাসে করে জীবনের প্রথম লং জার্নি ছিল সিলেট থেকে ঢাকা ফেরা।শ্যামলী পরিবহনের বাস। বাস ভাল ছিল কিন্তু সিট ছিল একেবারে পেছনের দিকের। বাপ্রে বাপ সেই কাহিনী না হয় নাই বলি । তাও যারা খুব চাপাচাপি করছেন জানতে তাদের বলি, কিছুক্ষন পর পর মনে হচ্ছিল বাস বুঝি লাফ দিয়ে আকাশ ছোঁয়ার চেষ্টা করছে (ঝাঁকুনির চোটে এই অবস্থা)! পেটের
নাড়ী ভুড়ির সাথে প্যাচ খেয়ে গেলে তার জন্যে আমি ঐ শ্যামলীর বাসকেই সম্পুর্ণ ভাবে দ্বায়ী করবো !
*******************************
গত বছরের দিকে গিয়েছিলাম মাগুরা। ভাবলাম এবার সুযোগ এসেছে একটা বড়সড় জার্নি দেবার সুন্দর একটা বাসে যাওয়া যাবে। কিন্তু......কিন্তু...... ভাইয়া যেই বাসের টিকেট কেটে দিলো ওটাই মনে হয় ছিল হানিফের সবচাইতে পঁচা বাস। আমি আর ঐ কথা মনে করতে চাইনা। সেই বাসেই পাটুরিয়া ঘাটে ৮ঘন্টার জ্যামে পড়েছিলাম।
************************************
কিছু দিন আগে বান্ধবীর বিবাহ বার্ষিকীতে চমকে দেবার জন্যে চার বান্ধবী মিলে গেলাম তার বাপের বাসা টংগীতে। সারাদিন হৈহৈ করে বিকেলে ফেরার পথে ভাবছি কে কিভাবে আসবে। তিন জন এক বাসে ফিরতে পারলেও একজন যাবে মগবাজার তাই তাকে অন্য বাসে যেতে হবে এখন তারও ইচ্ছে করছে না অন্য বাসে যাওয়ার। আমি বললাম এখান থেকে তো ভাল বাস পাচ্ছিনা তাই আমি আজমপুর পর্যন্ত যাবো (সেই পর্যন্ত এক বান্ধবী যাবে) "সেখান থেকে দেখে-শুনে একটা ভাল বিআরটিসিতে চড়ে রাজকীয় ভাবে যাবো" । এই ভাবতে ভাবতে সবাই চড়ে বসলাম মগবাজার এর বাসে। বাসের পেছনের সিটে বসে আজমপুর পর্যন্ত হৈচৈ-মজা করতে করতে এলাম। নামার আগ পর্যন্ত তো আর জানতাম না আমার কপালে ছিল এই....তাহলে তো বসে বসে হৈ-হুল্লোড় না করে একটু আল্লাহকে ডাকতাম ।
বাস থেকে নেমে দেখি কোন বিআরটিসি নাই, সূচনা নাই, কনক, হিমাচল কিচ্ছু নাই! শুধু বলাকা, প্রভাতী, ৩ & ২৭ নাম্বার এই সব বাস। তাও দু-একটা মহিলা সিট ফাঁকা। এই গরমে মহিলা সিটে বাসা মানে নামার সময় ধুমায়িত রোস্ট হয়ে বের হওয়া। কপালে দূর্গতি থাকলে ঠেকায় কে! কই ভাবলাম রাজরানী হয়ে যাবো এখন কপালে.... । যাগগে কতক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে আল্লাহর নামে চলিলাম, মানে এক বাসে উঠে পড়লাম। ওঠার পরে দেখি নাহ্ বাসটা ভালই আছে। পড়ন্ত বিকেলের ফুরফুরে হাওয়া খেতে খেতে চলছিলাম। কিন্তু কপালের নাম গোপাল! কিছুূর যাবার পরে এক ব্যাটা বসলো পাশে। বাসে ওঠার পরপরই ঘুমের ভান করে আমার দিকে হেলে পড়ে আরাম করার চেষ্টা করতে চাইছিলো। প্রায় সারা পথ ব্যাটাকে কতক্ষন পর পর ধমক থেরাপী দিয়ে আনতে হয়েছে।
***************************************
এবারের কাহিনী হল একেবারে কড়কড়ে, গত কালকের ঘটনা। কলেজের গেট থেকে বের হয়ে বান্ধবীরা ঠিক করলাম কুণ (নট কোণ) আইসক্রীম খাবো। এই কুণের কাহিনী বলছি পরে। । তো গেট দিয়ে বের হয়েই দেখি আমি যে বাসে আসবো তার দুইটা বাস সিগনালে দাড়িয়ে। সামনেরটা পুরানো আর পেছনের টা ঝাঁ চকচকে নতুন, সুন্দর পর্দা ওয়ালা সুন্দর সিটের। আনন্দে টগবগ করে ফুটতে শুরু করেদিলাম, পেছনের টাতেই যাবো। আইসক্রীম ওয়ালাকে বললাম মামা তাড়াতাড়ি আমাকে একটা দেন বাস চলে যাবে। আইসক্রীম নিয়ে ১০টাকার নোট দিয়েছি ৫টাকা ফেরত দিবে আমাকে, তা না করে আবার ১০ টাকার নোট ই দিল ভুলে। বললাম করছেন কী ৫ টাকা পাবো ত! এবার দিল একটা ৫টাকার টেপ মারা নোট। হাতে নিয়ে ব্যাগে ঢোকাটে ঢোকাতে বললাম, ছেঁড়া টাকা দিলেন, কালকে আবার এইটাই দিমু আপনেরে" । বলে দেন তাইলে বদলাই দেই, এত ছেঁড়া আইলো কইথ্থেকে । এবার আবার দিল ১০টাকার নোট। দেখ কান্ড পাবো ৫ টাকা দিচ্ছে ১০ টাকা। আইসক্রীমওয়ালা হেসে দিয়ে বলে "আজকে এত ১০ টাকা কেন"।
যাক খেতে খেতে প্রায় দৌড়ে উঠলাম আমার কাংখিত বাসে। কিন্তু বিধিবাম ! এই ছিল মোর কপালে! । বাসের দরজায় দাড়িয়ে দেখি কোন যাত্রী নাই, ড্রাইভার, হেল্পার আর গলায় আইডি কার্ড ঝোলানো সুন্দর কাপড় পড়া এক যুবক। "বাস কী যাবেনা"? আমি জিজ্ঞেস করতে করতেই সে জবাব দিল "এটা স্টাফ বাস" । "হেল্পার বললো সামনের টায় যান" ।
মনটা ভেংগে চুরচুরা হয়ে গেলো। কী আর করা! গ্লাস-প্লেট ভেংগে চুরচুরা হলে নাহয় ফেলে দিতাম। তাই বলেতো মন ফেলে দেয়া যায়না। ভাংগা মন নিয়েই চড়লাম সামনের বাসে।
বাসে উঠে দেখি ষোল কলা পূর্ণ থুক্কু যাত্রীতে পূর্ণ। পেছনের দিকে কয়েকটা সিট খালি। এক মেয়ের পাশে জানালার পাশের সিটে বসে পরলাম। রোদ বলে মেয়ে জানালার পাশে বসে নাই কিন্তু কিছুক্ষন পরে দেখি সে বাতাসের আশায় পুরো জানালা খুলে দিচ্ছে যার ফলে সব রোদ আমার উপর এসে পড়ে। কপাল আমার এমনেই গায়ের রং অঙ্গার, রইদ্দে পুইড়া কয়লা হওনের বেশী দেরী নাই আর ।
*******************************************
এবার আসি কোণ (আসকে উচ্চারন হবে কুউউন) । কলেজের সামনে ছোট ছোট গাড়ীতে করে ৫/১০ টাকায় বিক্রী করে এই কোন। আমরা দল বেঁধে খাই। এমনো গিয়েছে যে রাজাল্টের পরে তা সেলিব্রেট করার জন্যে একেক জনে একেক দিন পুরো গ্রুপকে খাইয়েছে ঐ কোণ। একদিন খেতে যাচ্ছি তো আমাদের উল্টো দিক থেকে স্কুলের এক মেয়ে মায়ের সাথে আসছিল হাতে ছিল দামী কোণ (৪০/৪৫ টাকার গুলো) আক্ষরিক অর্থেই যেগুলো কোণ। পাশের বান্ধবীকে বললাম , "দেখো ঐ মেয়ে যা খাচ্ছে সেটা হলো কোণ আর আমরা যা খেতে যাচ্ছি তা হলো কুঊউণ" । হাসির রোল পড়ে গেল সবার মধ্যে। সেই থেকে হলো কুউঊণ ।
গাড়ীতে কোন টায় লেখা থাকে শিলা কোন, কোনটায় আনন্দ কোন। কোনটায় আবার লেখা থাকে ভাল খাইলে আসেন! তাইতো ভাল খাই, এমনো দিন আছে যে একেক জন দুইটা করে খাই, আনন্দ কুউউণ।
সবাই ভাল-মন্দ খাইবেন, ভাল রাখতে না পারলেও মন্দ রাখবেন আর নিজে ভাল থাকবেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৭