ঈদ চলে গেছে অনেক আগেই, তাতে কী আমি আজ ঈদের গপ্পোই করবো । শেষ চারটা ঈদ (রোজা & কোরবানী) গ্রামে করা হয়েছে তাই এইবার গ্রামে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না। আসলে গ্রামের ঈদ সবার সাথে খুব মজা হয় কিন্তু পথের জার্নি, ভীড়, অন্যসব ঝামেলার জন্যেই মন চায় না। পথের কষ্ট দূর করার জন্যে আব্বা অবশ্য অন্য ব্যবস্থা নেন ইদানিং তাই একটু আরামেই যাওয়া যায়। যাইহোক ঠিক করাই ছিল ঈদ গ্রাম হবে তাও আমার মামাতো বোন আম্মাকে ফোন দিয়ে বলে, "আর কেউ যাক না যাক ঈদে তুমি বাড়ী যাবাই যাবা" । আর কেউ মানে হলো আমরা। আমরা তাল বাহানা করি তাই আমাদের খোঁচা মেরে বললো আরকি । আম্মার ভাতিজিরা ফু্প্পি বলতে অজ্ঞান। আড়াই বছরেরটা তো আম্মাকে বলে ওর মেয়ে। ওর মেয়ে কে জিজ্ঞেস করলে আম্মার নাম বলে!!
যাহোক ঢাকায় ঈদ করলে ঈদের কোন আনন্দ, আমেজ ই পাওয়া যায় না। কিন্তু গ্রামে তা উল্টো। ২৯ রোজার দিন দুপুরে ঘুমিয়েছিলাম উঠে শুনি দুই মামাতো বোন এসে এসে ঘুরে যাচ্ছে মেহেদী পড়বে বলে। আমি বললাম আজ যদি চাঁদ না উঠে তো মেহেদী দিবি ক্যান? তর আর সইছে না, বলে না উঠলে না উঠবে তাও আজকেই দিমু! কী আর করা, ৬টার দিক থেকে শুরু করলাম মেহেদী দেওয়া। মেজো মামার বড় মেয়ে আমাদের অতি আদরের হানিয়া ওরফে হানি নিজে নির্ঝন্ঝাট ভাবে দিবে বলে বিকেলের আগেই বাড়ীতে বসে বাকী দুই পিচ্চি সাদিয়া আর তাবাসুমকে নিজেই দিয়ে এসেছে। কী চাল্লু মাইয়া ! শুরু করলাম রিয়া মনিকে দিয়ে। ও আরেক মামাতো বোন। তো আমার ম্যারাথন মেহেদী দেওয়া শুরু হলো রিয়া মনি VS হানি। রিয়া মনির এক হাত, হানির আরেক হাত। চাঁদ যে আজ উঠবে এটা একমাস আগেই পেপারে দেখেছিলাম তাই নিশ্চিতই ছিলাম। চুপি বলি আমি ২৯ রোজা হলেই খুশি। ২৯ দিন রোজা রেখে আমার ঐ এক দিনের জন্যে আর তর সয় না, একদিন আগে ঈদ হলেই খুশি। এর মাঝে চাচাতো ভাই একটা এসেছে, চাচাতো বোনের ছেলে এসেছে একটা। আম্মাকে এসে বলে নানুুউহ্ আজকে রাতে থাকার জায়গা হবে? আম্মা আবার মজা করে বললেন জায়গা না থাকলে নিচে ঘুমাবা। আমাদের বাড়ীটা সব পিচ্চি পাচ্চারই খুব পছন্দের তাই ঈদের আগের রাতে সব এখানেই মজা করে।
ইফতারের পর ডাইনিংয়ে বসে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছি এমন সময় শুনি ছেলে পিচ্চিগুলা বাজি ফুটাচ্ছে, তার আগে দিনের বেলা হানি'কে তারাবাতির কথা মনে করিয়ে দিয়েছি এবং আমার জন্যেও যাতে এক প্যাকেট থাকে সেটাও বলে রেখেছি। তারাবাতি ছাড়া চাঁদ রাত হয় নাকি! :#P যাইহোক বাজির শব্দে কীসের মেহেদী কীসের কী দৌড়ে দরজার সামনে এসেদেখি পাগলের মতন শুরু কয়ে গেছে। ভাগনে এক পর্যায়ে ব্যাগ নিয়ে এলো। বাম হাতে ব্যাগ রেখে তা থেকে বের করে পটাপট ফুটিয়ে যাচ্ছিলো। আমরা মেয়েরাও এক মাঝেই তারাবাতি জ্বালালাম। । ভাগনেকে বললাম একটা বাজি দিতে আমি ফুটাবো। কালীপটকা এত দ্রুত ফুটে ভয়ও করছিলো। চাচাতো ভাইটা কাগজ ছিঁড়ে স্লো করে দিলো কিন্তু এর মাঝেই কে যেনো আমাকে ভয় দেখানোর জন্যে চিৎকার দিলো ফুটে গেল ফুটে গেলো বলে। আমি কী আর হাতে রাখি আগুন ধরতে না ধরতেই উঠোনে ছুড়ে দিলাম, গেল নিভে। তুলে এনে আবার একই কাজ করলাম। তৃতীয়বার বড় এক ভাইয়া এসে সেটা ফুটিয়ে আমাকে বলে, "তোর কী কুম্ভ রাশি নাকিরে?" আমার হাতে বাজি ফুটলোনা বলে আমার নাকি কুম্ভ রাশি!
রাত ১০টার পর পর্যন্ত চলেছিল মেহেদী পর্ব।
রাত ১২টা থেকে যে শুরু হলো টানা বৃষ্টি একদম সকাল পর্যন্ত। সারা দিনই হয়েছে বৃষ্টি। বাড়ী যাবোনা, আর গেলেও যদি ঈদে বৃষ্টি নামে তাহলে ঈদের দিন কালো জামা পড়ে শোক করবো বলে একটা জামা বানিয়েছিলাম। জামা,সালোয়ার, ওড়না সব কালো। আগের দিন সেটা পড়ে ভিজিয়ে ফেলা ঈদের দিন পড়তে পারলাম না।
পায়ে হাত দিয়ে সালামটা আমার কাছে কেমন যেনো ভাল লাগেনা। জীবনে ৩/৪ বার হয়ত এটা করেছিলাম। ঈদের দিন সালামীটা বলে বলেই আদায় করে নেই। নানাভাই'র সালামী প্যাকেজটা আমার সবচাইতে পছন্দ হয়েছে। দেখলাম ২০টাকার দুটো নোটের ভেতর ১০টাকার একটা নোট এভাবে রেখে দিয়েছেন। সেটা দিচ্ছেন হাতে। তাঁর আদরের একমাত্র কন্যা (আম্মা)কে অবশ্য আরো বেশী দিয়েছেন (পার্শিয়ালটি) ।
সারাদিন পেয়ে পেয়ে ব্যাগ ভরেছি এবার বিকেলে নাইন আর অনার্স ফোর্থ ইয়ারে পড়ুয়া দুই কাজিন ধরলো আমাকে সালামীর জন্যে। হায় আল্লাহ কি বিপদ! শেষে ছাড়াতে পেরে পা এগিয়ে দিয়ে বললাম সালাম কর তার পরে সালামী। দুটোই দেখি টপাটপ সালাম করে ফেললো! শেষে কী আর করা ব্যাগটা অনেক খুঁজেপেতে দুটো দশটাকার নোট বের করে দুজনের হাতে গুজে দিয়ে বললাম ঈদের দিন যে যা খুশী হয়ে দেয় তাই নিতে হয়।
আলহামদুলিল্লাহ, অনেক অনেক মজা হয়েছে। কিছু সমস্যা, ঝামেলা সত্তেও ঈদ হয় গ্রামেই, আনন্দটা গ্রামেই বোঝা যায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ২:২৭