বারান্দায় দাড়িয়ে আছি। শেষ বিকেলে গলির মাথায় পাড়ার বাচ্চাদের হৈ হৈ, কলকাকলি দেখতে খুব ভাল লাগে। বাচ্চাদের হৈ হৈ এবং পাখির কিচিরমিচির মন দিয়ে শুনতে পারলে খুব ভাল লাগে যদিও নিজেকে তখন খুব একা লাগে কেন যেনো! কোথা থেকে যেনো হুট করে একটা গন্ধ নাকে আসল। খুব পরিচিত লাগছে কিন্তু বুঝতে পারছিনা কিসের। স্মৃতির পাতা হাতড়াতে হাতড়াতে হঠাত মনে হল এতো আমার সেই ছোট্ট বেলার পুতুলের বাক্সের গন্ধ!
বাসায় জুতা অথবা মিষ্টি আনা হলে ভাল বাক্সটা রেখে দিতাম পুতুলের ঘর বানাতে। বান্ধবীদের মত আমার বাক্স অত সম্র্বদ্ধ ছিল না। আমার যেখানে ছিল এক বা দুইটা পুতুল আর দুই চারটা শাড়ী ওদের সেখানে ছিল একাধিক পুতুল। জামাই-বউ ছেলে মেয়ে নিয়ে ছিল ওদের বাক্সের সংসার। ওদের সংসারে খাট-পালংক, সবুজ পান্না-চুনি কী না ছিল। এক জনের কাছে সবুজ রংয়ের একটা কাচের পাথড় ছিল। আমার যে কী দুখ ছিল আমার ওরকম সবুজ পান্না ছিলনা বলে!
একটা মেয়ে পুতুল নিয়েই আমার সংসার ছিল। ফলে আমার বান্ধবী আমাকে এও বলত "তোমার পুতুল কি বিয়ে করবেনা? সারা জীবন হিমু হয়ে থাকবে!" এই হিমু কাহিনীটা অনেক পরে জেনেছি। তখন জানতাম বিয়ে না করলে বুঝি তাকে হিমু বলে!
-----------------------
কোন মানে হয়না এত বছর পর এসব মনে পড়ে নস্টালজিক হওয়ার!
★★★★★★★★★★
বারান্দায় রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছি। রেলিং ধরে দাড়ালে মনে হয় জেলখানায় আছি। এই কংক্রিটের শহরটা জেলখানার চাইতে ভাল কিছু মনেও হয়না। এক-দেড় হাত চওড়া বারান্দাটার উত্তর-পশ্চিম কোনাটা আমার খুব পছন্দ। শীত আসি আসি করছে এমন এক বিকেলে দাঁড়িয়ে আছি। নাকে এল খড়-কুটোয় মিশ্রিত এক গন্ধ। এই শহরে কোথা থেকে আসে এই গন্ধ! নাকি কেবলই আমার অবচেতন মনের কল্পনা!
★★★★★★★★
আমার বিছানার সাথে পশ্চিমের খোলা জানালার পাশে বসলে কিছুদিন পরেই নাকে আসবে বসন্তের ফসলের মাঠের ঘ্রান।
শীতের খড়-কুটোর গন্ধ, বসন্তের ফসলী মাঠের গন্ধ, চৈত্রের কালবৈশাখী বা প্রথম ব্রষ্টির গন্ধ আমাকে আমার শহুরে বন্দী জীবনে গ্রামের কথা মনে করিয়ে দেয়। জন্মের পর থেকে এই শহরে বড় হলেও কেন শহুরে জীবন এত অসহ্য!!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৪৬