somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খন্ড খন্ড ভালবাসা

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পরম মমতা-১
ছোট্ট এক শিশু এসেছে বাবা মায়ের কোলে চড়ে। বছরখানেক হবে বয়স। কান্নার সময় সামনে নিচের পাটিতে দুটো সদ্য গজানো দাঁত দেখতে পেলা। মা তোয়ালে দিয়ে পরম মমতায় বুকে জড়িয়ে রেখেছেন। সিরিয়ালের টোকেন নিয়ে টেবিলের সামনে সন্তানকে কোলে করে বাবা এলেন রক্ত দিতে। কোন ভাবে সুবিধা করতে না পেরে এবার মা কোলে নিলেন। সিরিন্জ ঢোকানের সময় ও পরে যে চিৎকার দিয়ে কাঁদলো তাতে আমারই বুকটা কেঁপে গিয়েছিল! এই কান্না দেখে মা বাবার কী অবস্থা হয়েছিল তারাই জানেন।

পরম মমতা-২
সর্বোচ্চ দুই বছর হবে শিশুটির বয়স। প্রথমে মায়ের কোলে না থাকলেও ডাক পড়লে মা-ই কোলে করে টেবিলে নিয়ে বসায়। এক জনের পক্ষে সম্ভব হয়না কাজটি করার। সুঁই ঢোকানোর সাথে সাথে শুরু হয় কান্না। কান্নার মাঝেই সে কিছু বলার চেষ্টা করছিল। আমি চেষ্টা করেছিলাম মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখতে, তার অবস্থা বুঝতে। আগের শিশুর মায়ের মত ছিল না তার চেহারা। সম্ভবত হাসি হাসিই ছিল মুখটি।


ভয়!
প্রায় ৬ ফুটের মত উচ্চতার স্বাস্থ্যবান এক যুবক। তার ডাক পড়লে চেয়ারে গিয়ে বসে। হাত বাঁধা হলে মুখটা খিচে অন্যদিকে তাকিয়ে রইল যতক্ষন কাজ শেষ না হল। মাঝে একটু মনে হয় হাতের দিকে তাকিয়েছিল আবার অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে পাংশু করে বসে থাকে! =p~ । আম্মাকে বললাম, দেখো এই ব্যাটা মুখ কেমন করে রাখছে। আম্মা বলেন, আমারো ত ভয় লাগে।
আমার একসময় প্রচন্ড ভীতি ছিল ইনজেকশনে। এখনো ভয় পেলেও রক্ত নেওয়ার সময় তাকিয়ে দেখি সুঁই ঢোকালেই কেমন রক্তে বোতল ভরে যায়। মজাই লাগে দেখতে। :P
আরেকটা জিনিস দারুন মজা লাগে, তবে সচরাচর দেখা যায় না। হাতের উপর মশা পড়লে একটু কামড় সহ্য করে চুপচাপ তাকিয়ে থাকলে দেখা যায় মশার শুঁড় বেয়ে রক্ত কীভাবে যাচ্ছে এবং পেট একটু একটু করে ফুলে যাচ্ছে। শেষ মুহুর্তে পেটের পেছনদিক দিয়ে এক বিন্দু পানির মতন বের হয়। =p~ :P


পরম নির্ভরতা-১
৮০ বছরের উর্ধ্বে বয়স বৃদ্ধার, সাথে সম্ভবত ছেলে এসেছে। ডান হাত রক্ত সংগ্রহের টেবিলে দিয়ে বাম হাত দিয়ে ছেলেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ছেলের পেটে মুখ গুঁজে বসে রইলেন। একটা সময় ছেলেও এভাবে মাকে জড়িয়ে ধরে নিরাপদ আশ্রয় পেয়েছে তাই না!
কেন যেনো চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে এখন দৃশ্যটা চোখের সামনে ভেসে উঠতে!


পরম নির্ভরতা-২
১৩-১৫ বছর হবে হয়ত মেয়েটির। বাবার সাথে এসেছে। সিরিয়াল আসার আগ পর্যন্ত বাবার গায়ের সাথে ঘেসে, কাধে মাথা রেখে ভালই গল্প করছিল। ডাক পড়লে টেবিলে গিয়ে ডান হাত রেখে বাম হাত দিয়ে বাবার কোমড় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে থাকে। বাবাও বার বার মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে সাহস দিচ্ছে। এর মাঝেই অনেক চেষ্টা করে একটা ফুটা করেও রগ না পাওয়ায় টেপ লাগিয়ে দিয়ে বাম হাত দিতে বলে। মেয়েটির কষ্ট হয়ত তার সহ্যের বাইরে চলে গেছে ! বাবা বার বার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর ডান হাত দিয়ে মেয়ে চোখ ঢেকে রেখে মাঝে মাঝে চোখ মুছছে! এই হাতেও অনেক কষ্ট করে আরেক জনের সাহায্য নিয়ে রগ খুজে বের করতে হয়েছে!

সাহস
এও সম্ভবত বাবার সাথে এসেছে, ৮-১০ বছর বয়সী খুব সাহসী ছেলে। তারও রগ পেতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে রক্ত সংগ্রহকারী কর্মীর। আরেক জনের সাহায্য নিয়ে কাজটি করতে হয়েছে। বাবা পাশে দাড়িয়ে সাহস দিচ্ছিলেন এবং ব্যাথা পাও বা ভয় পাও জিজ্ঞেস করলে চটপট না সুচক উত্তর দেয়।


সাহস, মমতা, নির্ভরতা
সর্বোচ্চ ৫ বছর হবে মেয়েটির বয়স। বেশ সুন্দর সাজুগুজু করিয়েই এনেছেন বাবা মা। মা চেয়ারের পেছনে দাড়ানো, বাবা পাশে দাড়িয়ে এক হাত ধরে আছেন। ডান হাত টেবিলে রাখতে কান্না শুরু করে ব্যথা পাবো বলে। সবাই তাকে আস্বস্ত করে; না নড়লে ব্যথা পাবেনা কিন্তু নড়লে পাবে বলে। তাই হয়ত সুঁই ঢোকানোর পরে ব্যথায় কান্না করলেও তেমন নড়েনি, শক্ত করে বাবাকে জড়িয়ে ধরে রাখে।


শাসন

ছেলের বয়স সর্বোচ্চ ৩০ বছর হবে। সাথে বাবা মা নিয়ে এসেছে। প্রথমে বাবাকে ধরে নিয়ে যায় রক্তের টেবিলে। মা বসে ফোনে কিছু করছিলেন। এর মাঝেই ছেলে এসে মাকে শাসনের সুরে বলে, এখন ফোন রাখো, তোমারো রক্ত দিতে হবে। মা আচ্ছা বলে সুবোধ বালিকার মতন ফোনটি ব্যাগে রাখেন। :P বাবাকে নিয়ে এসে বসিয়ে এবার মাকে নিয়ে যায় আবার। মায়ের রক্ত দেওয়া শেষ হলে হাতে টেপ না লাগিয়েই এক ফাঁকে সিটে এসে বসে পড়েন। ছেলে এসে বলে, "হাতে টেপ লাগাইছো? এখানে চলে আসছো যে! এই বয়সেও এত চঞ্চল কেন তুমি!" =p~ । মা এবারো সুবোধ বালিকার মত সুর সুর করে আবার টেবিলে গিয়ে টেপ লাগিয়ে আসেন। মাকে বসিয়ে এবার ছেলে নিজেই টেবিলের সামনে গিয়ে বসে নিজের রক্ত দিতে। আম্মা বলেন ওমা! এইটা আবার কী! পুরা ফ্যামিলি দেখি আসছে! হয়ত রুটিন চেকের জন্যে আসছে সবাই।
**************************
আম্মার কিছু ব্লাড টেস্টের জন্যে icddrb তে গিয়েছিলাম সকালে। একবার ব্লাড দিয়ে ২ঘন্টা বসে থাকতে হয়েছে পরের বারের জন্যে। এর মাঝেই চোখের সামনে আসে এই সকল টুকরো টুকরো দৃশ্য।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৫৭
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×