somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিশুর সুস্থতা; প্রয়োজন মা-বাবার সচেতনতা

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আধুনিক হয়েছে সব কিছু। জীবন যাত্রার মান বদলাচ্ছে সময়ের সাথে সাথে। পরিবারগুলো ছোট হতে হতে একেবারে অনু হতে পরমাণু পরিবার হয়ে যাচ্ছে যেখানে মা বাবা আর বড়জোর এক বা দু'জন সন্তান থাকে। মা-বাবাকে ছাড়া এই সন্তানরা কাউকেই তেমন পায় না। পরিবারে মা যদি হয় কর্মজীবি তাহলে ত কথাই নেই। শিশুর বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ একটা সময় কাটে অধিকাংশ সময়-ই কাজের মানুষ বা অন্য কারো কাছে। শিশু যদি নানী-দাদী বা খুব আপন কারো কাছে বেড়ে ওঠে তবে মোটামুটি নিশ্চিত থাকা গেলেও প্রচন্ড রকম আশংকায় থাকে কাজের মানুষ বা সেরকম কারো কাছে বেড়ে উঠলে। তারা হয়ত আপনার শিশুর পেশাব-পায়খানা পরিষ্কার করবে, কয়েকবার খাওয়াবে, খেলবে, ঘুম পাড়াবে কিন্তু শিশুর অন্যান্য চাহিদা যা শিশুর বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে খুবই জরুরী তা পূরণ করতে পারবেনা।

উপরের কথাগুলো পড়ে কর্মজীবি মা'দের হতাশ হওয়ার কিছু নেই বা যারা পুরো সময় সংসারে কাটান তাদেরও খুব বেশী খুশি হওয়ার কিছু নেই এই ভেবে যে আমার শিশু আমার তত্ত্বাবধানে বড় হচ্ছে তাই একেবারেই সুস্থ ভাবে বেড়ে উঠছে, তার কোন চাহিদার ঘাটতি থাকছেনা।
এরকমটাই আমাদের ধারনা বা ভেবে এসেছি আমরা সব সময়।

কিন্তু আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা সেটাকে অনেকটাই বদলে দিয়েছে। আমার ৪/৫ বছরের পুঁথিগত বিদ্যাকে হাতে কলমে ব্যবহার করতে গিয়ে দেখি অনেক অনেক শিশুকে মা-বাবা নিয়ে আসেন যাদের বাচ্চারা কথা বলে না, ডাকলে সাড়া দেয় না, মা- বাবাকে ডাকেনা। প্রথমেই দেখা হয় শিশু বড় ধরণের শারীরিক কোন সমস্যা আছে কিনা। না থাকলে বুঝতে হবে সমস্যা অন্যখানে। শিশুটি হয়ত কিছুই পারেনা সেরকম নয় তবে বু্দ্ধিগত ভাবে পিছিয়ে পড়েছে অন্য শিশুর থেকে। তাই প্রয়োজন তার আলাদা যত্ন। একটু বিশেষ যত্ন। হয়ত আপনার শিশুটি তার সমবয়সী শিশুর মত হাটছে না, খেলছে না, কথা বলছে না কিন্তু ধৈর্য্য ধরে আপনি; মা-বাবা তাকে সময় দিন দেখবেন একদিন সব না পারলেও অনেক পারবে।

বাসায় জন্মের সময় মা-বাবা বা পরিবারের অন্যরা খেয়াল রাখুন বাচ্চা কাঁদছে কিনা। না কাঁদলে যত দ্রুত সম্ভব কাঁদানোর চেষ্টা করুন। জন্মের সময় শিশুর এই না কাঁদার চরম পরিনতি সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হতে পারে বাবা-মাকে। অবশ্যই অবশ্যই সচেতন হতে হবে। শিশুর খিঁচুনী হচ্ছে কিনা খেয়াল করুন, হলে কবিরাজ আর ফকিরের কাছে না দৌড়ে সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে, হসপিটালে যান।

২দিন বয়সে নিজেরাই পরীক্ষা করুন শিশু কানে শোনে কিনা। মা শিশুকে বুকের দুধ দেওয়ার সময় ঘরকে একদম শব্দমুক্ত রাখবেন, তার পর শিশুর এক কানের পেছনে গিয়ে খুব কম আওয়াজে ডাকবেন "এই যে" , "শোনা মনি" ইত্যাদি। শিশু যদি কানে শোনে তবে মা টের পাবেন সেটা, শিশু খাবার বন্ধ করে দেবে, শব্দের উৎস খুজবে। এভাবে দুই কান পরীক্ষা করুন।

৬ মাস বয়স থেকে শিশু এক হাত থেকে আরেক হাতে কিছু নিতে পারবে।

নিচে আমি একটি তালিকা দিচ্ছি যা দেখে বাবা-মা নিজেরাই পরীক্ষা করে দেখতে পারবেন বয়স অনুযায়ী তাদের শিশুর কার্যক্রম স্বাভাবিক কিনা :

৬মাসের শেষে :

** চিৎ অবস্থায় মাথা তুলতে পারে।
** কিছুক্ষণের জন্যে মাথা তুলে থাকতে পারে।
** অঙ্গ সঞ্চালনের মাধ্যমে নিজের জীবনীশক্তিকে উপভোগ করতে পারে।
** হামাগুড়ি দেওয়ার চেষ্টা করে।
** চলন্ত আলোর উৎসকে অনুসরণ করে।
** নিজের হাত ও আংগুল নিয়ে খেলা করে ।
** কয়েকটি বস্তুকে হাতে ধরতে পারে।
** শব্দের উৎসের দিকে মাথা ঘোরায়।
** মা-বাবা ও অন্যান্য যাদের সাথে নিয়মিত দেখা হয় তাদের চিহ্নিত করতে পারে।
** বিভিন্ন প্রকারের শব্দ ( Cooing) করে।

৬-১২ মাসের মধ্যে: এক স্বরযুক্ত শব্দ (Babbling) যেমন: তা-তা, দা-দা ইত্যাদি উচ্চারণ করতে পারে।

৯-১৮ মাসের মধ্যে: কোন অবলম্বন ছাড়াই শিশু একাকী দাড়াতে সক্ষম।

৮-১৪ মাসের মধ্যে: অন্যের সাহায্যে খেতে ও পান করতে পারে।

১০-২০ মাসের মধ্যে : শিশু হাটতে পারে।

১৪-২৪ মাসের মধ্যে: শিশু কারো সাহায্য ছাড়াই খেতে ও পান করতে পারে।

১৬-২৬ মাসের মধ্যে: শিশু খাবার খুব বেশী না ছড়িয়ে ছিটিয়ে খেতে সক্ষম।

১২-২১ মাসের মধ্যে: একটি শব্দ উচ্চারণ করতে পারে।

১৮-২৭মাসের মধ্যে: প্রায় ১০টি শব্দ আয়ত্ত করতে পারে।

২-৩বছরে: শিশু জামা পড়তে পারে।

৩-৪ বছরে: শিশু জুতা পড়তে পারে।
৪-৫বছরে: ফিতে বাঁধা ছাড়া শিশু সম্পূর্ণ জামাকাপড় পড়তে পারে।

[ তথ্যসূত্র:: ব্যতিক্রমধর্মী শিশু: অধ্যাপিকা সুলতানা সারওয়াতারা জামান ও অধ্যাপক বিষ্ণুপদ নন্দ]

প্রাথমিক ভাবে বাসায় বসে নিজেই পর্যবেক্ষন করে দেখতে পারেন আপনার আদরের সোনামনি সুস্থ আছে কিনা, তার বয়স অনুযায়ী স্বাভিক কার্যক্রম করছে কিনা। যদি না করে তবে অতি শিঘ্রই কোন শিশু বিশেষজ্ঞ বা আপনার নিকটস্থ 'শিশু বিকাশ কেন্দ্রে' নিয়ে যাবেন।

ঢাকা শিশু হাসপাতাল এর আন্ডারে সারা দেশে যেসব হাসপাতালে শিশু বিকাশ কেন্দ্র রয়েছে সেগুলোর নাম দিয়ে দিলাম।
১। ঢাকা শিশু হাসপাতাল
২। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা
৩। শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা
৪। স্যার সলিমুল্লাহ্‌ মেডিলেক কলেজ হাসপাতাল, মিটফোর্ড, ঢাকা
৫। সিলেট এমএজি, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা
৬। শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল
৭। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম
৮। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা
৯। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী
১০। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর
১১। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ
১২। দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ শাসপাতাল, দিনাজপুর
১৩। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ফরিদপুর
১৪। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুমিল্লা
১৫। শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বগুড়া
১৬। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ, কক্সবাজার।

শিশুর মা-বাবা শিশুর প্রতি সচেতন হবেন যাতে এমন পরিস্থিতি না আসে যখন নিজেকে অপরাধী মনে হয়।

শেষ দুটি পরামর্শ (অনুরোধ ও )

পরামর্শ-১: বাচ্চা খেতে চায়না কিছুই, জোর করে খাওয়াতে হয়, এটা খুব-ই কমন একটি সমস্যা সব মায়ের কাছে। কেউ কেউ নাক টিপে খাওয়ান। দয়া করে এভাবে খাওয়াবেন না, প্লিজ ! বাচ্চা যদি সারা দিন নাও খায় আপনি শুধু খেয়াল রাখুন সে স্বাভাবিক কাজকর্ম করছে কিনা, খেলছে কিনা। যদি করে দরকার নাই জোর করার। ক্ষিদে পেলে নিজেই খাবে। খেতে না চাইলে আগে যদি ৩ঘন্টা পর পর খাওয়াতেন তাহলে ৪-৫ ঘন্টা পর পর চেষ্টা করুন। সময় নিয়ে, ধৈর্য্য ধরে খাওয়াবেন। রোজ রোজ এক খাবার দিবেন না, আপনি কি রোজ এক খাবার খান? খান না। তাহলে কীভেবে ভাবেন রোজ একঘেয়ে সুজি, খিচুড়ি আপনার বাচ্চা হাসি মুখে খেয়ে নেবে? খাবারে বৈচিত্র আনার চেষ্টা করবেন।

পরামর্শ-২: শিশুকে টিভি ছেড়ে, মোবাইলে গান দিয়ে, ট্যাবে গেম দিয়ে বসিয়ে রাখবেন না। আল্লাহর ওয়াস্তে এই কাজ করবেন না। নিজেরা যতটা পারেন বেশী সময় দেবেন, খেলবেন, গল্প বলবেন, বাইরে খেলতে নিয়ে যাবেন অন্যবাচ্চাদের সাথে। আজকে উপায় নাই বলে আপনি আপনার বাচ্চাকে আধুনিক গেজেট দিয়ে, টিভি, কম্পিউটারের সামনে বসিয়ে রাখছেন কিন্তু বিশ্বাস করেন আপনিই একদিন আপনার শিশুকে নিয়ে ডাক্তার, কাউন্সেলরের কাছে যাবেন আপনার শিশু জেদী, কারো সাথে মেশে না, কথা বলেনা ইত্যাদি ইত্যাদি সমস্যা নিয়ে। শিশুর সামাজিকীকরণে চরম সমস্যা হয় এরকম হলে। আশাকরি সেরকম দিন দেখতে হবে না, মা-বাবারা একটু সচেতন হলেই।

ফর্সা বা কালো, ছেলে বা মেয়ে নয় সুস্থ একটি শিশুই সবার কাম্য। :)
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:২৯
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×