কালবৈশাখী ঝড় যেমন হয় আরকি, ঈশান কোনে কালো মেঘ জমে কিছুক্ষন পরিবেশ থম মেরে থেকে হুটহাট ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়। আজো এরকমই হল। বৈশাখ মাস শুরু হবার ৬দিন পরে আজ-ই মনে হয় প্রথম হল, বারান্দার দরজা অর্ধেক খুলে বাইরের অবস্থা দেখতে দেখতে ভাবছে নিরু। পাখিরা প্রকৃতির মেজাজ মর্জি বুঝে আগে ভাগেই নীড়ে ফিরে গেছে, যারা যেতে পারেনি বাতাসের সাথে পাল্লা দিয়ে, যুদ্ধ করে ফেরার চেষ্টা করছে। সামনের বাড়ীর বউটা তাড়াহুড়ো করে শাশুড়ির বারান্দার কাপড় তুলে ঠিক ওপর তলায় নিজের ফ্ল্যাটে গিয়ে নিজের কাপড় তুলে দরজা লাগিয়ে দেয়, অদ্ভুত মানুষ এরা। এসি লাগানোর পর থেকে চব্বিশ ঘন্টার চার ঘন্টাও মনে হয় দরজা জানলা খোলে না! কীভাবে থাকে এরা ভেবে পায়না নিরু। দিনে দুই ঘন্টা দরজা জানলা বন্ধ রাখলে ওর অস্থির লাগে। চোরের ভয়ে রাতটা কোনমতে বন্ধ করে পার করে সকাল হবার সাথে সাথেই খুলে দেয়। ওর মধ্যবিত্ত মন বোঝায় ওকে যে ওর বাসায় এসি লাগালেও হয়ত এরকম-ই করবে । তবে বাইরের আলো বাতাস না ঢুকলে ঘরের পরিবেশ গুমোট হয়ে থাকে এটা ঐ বউ বা তার ঘরের কেউ জানেনা ! বাসায় ছোট্ট একটা বাবু আছে তাদের, তার জন্যে হলেও ত ভাবা উচিত। নাহ্ বড্ড বেশি ভাবছে ও অন্য বাসার ব্যাপার নিয়ে। যাদের বাচ্চা তারাই ভাবুক। ও দাড়িয়েছে ঝড়-বৃষ্টি দেখার জন্যে , অন্যের অন্দরমহল নিয়ে ভাবার জন্যে না। গলির মাথায় একতলা বাড়িটার নারকেল গাছটা ভয়ানক ভাবে দুলছে। কিছুদিন আগেই গাছটা ছেঁটে দিয়েছে এখন আরো লম্বা লাগছে। বাতাসে এমন ভাবে দুলছে মনে হচ্ছে এখনি বুঝি ভেংগে পড়বে। কিন্তু না আবার সোজা হয়ে যায়। এই বাসায় আসার পর থেকে এরকম-ই দেখে আসছে। চারপাশ মোটামুটি খোলা থাকার দরুন ঝড়ের সময় বিল্ডিংয়ে বাতাস আছড়ে পড়ে এমন ভয়ানক শব্দ করে না ! আত্নারাম খাঁচা ছাড়া হতে চায়! মনে হয় বিল্ডিংটা বুঝি এইবারই গেল ভেংগে। এই সময়টা নিরু দোয়া দুরুদ পড়তে থাকে আর আল্লাহকে ডাকতে থাকে। ঝড়ের সাথে সাথে ঘন ঘন বিজলী চমকাচ্ছে। নাহ আর বারান্দায় থাকা যাবে না ভাবতে ভাবতে দরজা বন্ধ করে ঘরে ঢুকে পড়ে।
রান্না ঘরের জানলার সাথে ঝোলানো কড়াই ঝড়ের সাথে পাল্লা দিয়ে তুমুল বেগে আছড়াচ্ছে। ওগুলোকে থামানোর জন্যে যাওয়ার পথে নিরু দেখে মায়ের ঘরের জানলার সাথে যুদ্ধ করছে ওর ভাই। সব দরজা জানলা বন্ধ করে নিজের ঘরে এসে বিছানায় বসে নিরু। মন টিকছে না। বাইরে কী হচ্ছে দেখার জন্যে মনটা আঁকুপাকু করছে। পশ্চিমের জানলা খুলে বাইরে তাকায়। বৃষ্টির ছাঁটে বিছানা ভিজে যাচ্ছে, যাক একটু ভিজলে কিচ্ছু হবে না ভেবে এক হাতে জানলা বাইরের দিকে ঠেলে ধরে বসে থাকে। হুক গুলো নেই যে আটকে রাখবে। বাড়ি খেয়ে কাঁচ ভাংলে আবার কে যাবে বাড়িওয়ালাকে তেল মালিশ করতে তার চাইতে এই ভাল ভাবতে ভাবতে বাইরে মনযোগ দেয়। পাশের চারতলার ছাদে বড় রং এর ড্রামে লাগানো অনেকগুলো কাঠগোলাপের গাছ। প্রত্যেকটিতে ফুল এসেছে। ভীষণ ভাল লাগে দেখতে। কয়দিন যাবত ভাবছে একটা ডাল এনে বারান্দার টবে লাগাবে। কিন্তু চাইতে কেমন যেন লাগছে যদিও ঐ বাড়ীতে অনেক বছর থেকে এসেছে নিরুরা। বৃষ্টি নামলে গাছে ভরা ছাদটা দেখতে বেশ ভালই লাগে। জানলা খুলে নিরু দেখে আর ভাবে দূর থেকে সব-ই ভাল লাগে।
ছাদ পেরিয়ে দৃষ্টি মেলে দেয় আরো সামনে, দূরে রেইল লাইনে। মানুষ দৌড়োদৌড়ি করে যার যার গন্তব্যে ফিরছে। কেউ বাজার করেছিল, কেই অফিস থেকে ফিরছে কেউবা এমনিই হয়ত বের হয়েছিল বিকেলের হাওয়া খেতে। বৃষ্টির বেগ বেড়ে যাওয়া জানলা বন্ধ করতে বাধ্য হয় নিরু। এবার কী করবে যে ভাবতে থাকে। করার অনেক কিছু থাকলেও কিছুই করতে ইচ্ছে করে না। এলোমেলো একটা অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ধৈর্য্য ধরে অবিচল থাকাটা খুবই জরুরী সে জানে কিন্তু মাঝে মাঝে বালির বাঁধের মত ভেংগে যায়। শক্ত হতে হবে, শক্ত করতে হবে নিজেকে। ভাবতে ভাবতেই মনে হয় ঝড় বৃষ্টিটাকে অন্তত উপভোগ্য করা দরকার, আর তার জন্যে ভাল করে দুকাপ চা বানানো উচিত। আপাতত তাই করতে যায় নিরু, ততক্ষণে ঝড় কিছুটা থেমে গেলেও বৃষ্টি বেড়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৪:০৬