somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কৃষ্ণচুড়া আগুন!

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফুল পছন্দ করেনা এমন মানুষ হয়ত খুব কম আছে পৃথিবীতে। ছোট্ট বেলায় গোলাপ ফুল দেখলে খুব বায়না করতাম কিনে দেবার জন্যে।
কারো গাছে ফুল দেখার চাইতে সেটা আমার হাতে দেখতে বেশি পছন্দ করতাম। কখন যেন রঙ্গীন ফুলের প্রতি ছোট্টবেলার সেই টানটা হারিয়ে গেছে, টের পাইনি। মাদ্রাসা থেকে ফেরার পথে গোলাপ-রজনীগন্ধা ওয়ালার কাছ থেকে সুন্দর গোলাপের চাইতে সাদা রজনীগন্ধা-ই বেশি কিনেছি বলে মনে পড়ে। গোলাপের প্রতি, বিশেষ করে লাল গোলাপের প্রতি কেন যেন আমার তেমন টান নেই। আধ ফোটা গোলাপ দেখতে বেশ লাগলেও পুরো ফুটে গেলে আর ভাল লাগে না। আমার মনে হয় যত সুন্দর তত-ই অসুন্দর এই কথাটা গোলাপের ক্ষেত্রে খুব প্রযোজ্য।
আমার মায়ের গোলাপ



আবারো গোলাপ



এগেইন গোলাপ :P



সুন্দর সাদা মিষ্টি ঘ্রানের রজনীগন্ধা, ঝড়ে গেলেও কী সুন্দর লাগে দেখতে। আচ্ছা কামিনীর কথা-ই ধরি, ছোট্ট, ক্ষণস্থায়ী ফুল ফোটার আগেই যেন লুটিয়ে পড়ার জন্যে প্রস্তুত! গাছের ডালের চাইতে গাছ তলার মাটিই যেন তার বেশি পছন্দ। গাছ তলায় সাদা কামিনীর চাদর দেখতে কী অদ্ভুত সুন্দর, কী মোহনীয় তার ঘ্রান! বৃষ্টির পরে বা গভীর রাতে গলির মাথার বাড়ী থেকে বাতাসে ভেসে আসা কামিনীর ঘ্রান মাতাল করে দেয়। চুপচাপ একটানা কেবল এই ঘ্রান ভোগ করে যেতে পারি আমি। ভোগ বলছি এই অর্থে, ঊপভোগ নাকি কাউকে সাথে নিয়ে করতে হয়, আর ভোগ একাই করে। আমার কাউকে দরকার পড়েনা তখন। তবে উপভোগ এই অর্থে বলতে পারি তখন আমি এবং আমার আমি-কেই পছন্দ করি। যাই হোক ভোগ উপভোগের উপাখ্যান লিখবো না আর। তবে দু'একটা ছবি দেখাতেই পারি
একলা কামিনী



তবে দল বেঁধেও থাকে


হাসনাহেনা নামক একটি ফুল যে আছে সেটা অনেক সময় ভুলেই যাই অথচ ছোটবেলায় আমার মনে হয় বাসায় ফুলগাছ বলতে হাসনা হেনা-ই ছিল প্রথম ফুলগাছ। গ্রামে এই গাছটি সম্পর্কে একটি কথা প্রচলিত, সেটা হল হাসনাহেনার ঘ্রানে নাকি সাপ আসে। কথাটা কতটা সত্যি তা জানিনা, তবে সাপে আমার প্রচন্ড ভীতি আছে।
বারান্দার টবে দুটো বেলী ফুল গাছ ছিল। রাতের বেলা ফুল ফুটলে সারা ঘর ম ম করতো ঘ্রানে। সকাল বেলা মুঠো ভরে ফুল তুলে ঘরে রাখলে প্রায় সারাদিন ঘরে ঘ্রান থাকতো। সব অতীত কালে লিখছি কারন হাসনা হেনা বা বেলী কোন গাছ-ই আমার নেই অনেক বছর।

আমাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে তোমার পছন্দের ফুল কোনটি, অথবা যে কোন একটি নাম বলো, আমি পারবো না।
সাদা পাপড়ি কমলা ডাটির প্রান ভরানো, চোখ জুড়ানো শিউলির প্রেমে আমি কবে পড়েছি মনে নেই তবে এর সাথে পরিচয় সম্ভবত ক্লাস ফোরে থাকতে। আমার যদি একটি উঠোন ওয়ালা বাড়ী হয় তার এক কোনায় একটি শিউকি গাছ লাগাবো। সকাল বেলা সাদা-কমলা সুন্দরীরা গাছ তলায় লুটিয়ে থাকবে আর আমি তাদের যত্ন করে তুলে ঘরে নিয়ে আসবো। বাস্তবে না হোক ভাবনাতে ত দোষ নেই, আর ভাবনাটা যদি হয় নিজের একার, যেখানে বাগড়া দেবার কেউ না থাকে তাহলে তো কথাই নেই!

আরেকটি ভাললাগার ফুল গন্ধরাজ। নানার বাড়ীতে টিনের চালের উপর উঠে যাওয়া গন্ধরাজ গাছ দেখেছি ছোটবেলা থেকে। গন্ধরাজে সম্ভবত লাল লাল বীজ হয়, ছোট্টবেলায় ফুলের চাইতে লাল বীজের প্রতি আগ্রহটা বেশি ছিল মনে হয়। গন্ধরাজ নাম মনে হলেই মনে হয় টিনের চাল ছুঁয়ে যাওয়া ফুলে ফুলে ভরা গাছ যায় নিচে কলতলা। কী জানি কেন মনে হয় এটা। হয়ত নানা বাড়ীতে এটা দেখি তাই। বৃক্ষমেলা থেকে একবার এক গন্ধরাজ গাছ কিনেছিলাম। কয়েক বছর ছিল সেটা। সে যে কী আগ্রহ আর অপেক্ষা ছিল গাছটি নিয়ে। বছরে একবার কয়েকদিন ফুল দিতো। নতুন কুড়ি বের হলে মনটা চনমন করে উঠত এই বুঝি কলি এল এই বুঝি কলি এলো, কিন্তু না হতাশ করে দিয়ে সেই কুড়ি পাতায় রুপ নিতো! ভাল-ই ফুল দিয়েছিল গাছটা।

সব সাদা ফুলের গল্প বলছি, রঙ্গীন ফুল কী তাহলে আমার অপছন্দ ! ঠিক অপছন্দ কিনা জানি না তবে ফুল বললেই আমার চোখে প্রথমেই সাদা ফুল ভেসে ওঠে। নীল আকাশ আমার খুব পছন্দ , নীল রং ও। নীল অপরাজিতা ছিল আমার বারান্দায় এক সময়। চমৎকার একটি ফুল। যেমন মোহনীয় রং তেমনি লক্ষ্মী তার স্বভাব। ফুল দিতে কার্পণ্য করবেনা, আমাকে হতাশ করেনি কখনো।
অপরাজিতার ছবি মোবাইলে আতিপাতি করে খুজেও পাওয়া না গেলেও,
নয়নতারা নয়নে পরে গেল, উপেক্ষা করি কী করে !



জন্ম থেকে মৃত্যু (ফটোগ্রাফার : আমার ভাইয়া)



আমি যে কেবল সাদা ফুল-ই দেখি বা পছন্দ করি তা কিন্তু নয়। রঙ্গীন ফুলের নাম বললে আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে কৃষ্ণচুড়া। মনে হয় যেন দাউদাউ করে জ্বলছে সবুজ গাছে গাঢ় লাল এই ফুলটি। গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদেও আমি হাটতে রাজী আছি যদি রাস্তার দুপাশে কৃষ্ণচুড়ার সারি থাকে। বাড়ীর গেটে একটি কৃষ্ণচুড়া লাগানোর খুব ইচ্ছে হয়। মনে হবে যারা আসবে যাবে সবাইকে লাল গালিচা বিছিয়ে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে সব সময়।
কৃষ্ণচুড়া নামটা মনে হলেও মনে হয় যেন দাউদাউ করে জ্বলছে, অথচ ফুলটি দেখতে তো সেরকম ভয়ংকর নয়, তাহলে কেন এমনটা লাগে!
কিছু সমীকরণ থাকে যার সমাধান হয় না। কিছু কষ্ট থাকে যা বোঝানো যায় না কাউকে। কিছু ব্যাপার থাকে যা কারো সাথে শেয়ার করা যায় না, কখন-ই না। ভেতরটা কেবল দাউদাউ করে জ্বলতে থাকে, ঠিক যেন কৃষ্ণচুড়ার মতন! এই আগুন নিভে যায় না কখনো, হয়ত কখনো কমে যায় তখন কৃষ্ণ বর্ণের কয়লা হয় তবে সেটা জ্বলন্ত-ই থাকে। জ্বলুক না হয় কিছু কৃষ্ণচুড়া আগুন!
ছবি কৃতজ্ঞতা ব্লগার জুন বুবু



অনেক হল ফুল উপাখ্যান। কষ্ট করে এসেছেন, পড়েছেন, সহ্য করেছেন আমার বকবকানি। খালি মুখে ত যেতে দিতে পারি না। সামান্য কিছু পানীয় ;)
লাল চা; অবশ্যই আমার হাতে বানানো B-)



লাল পানির ব্যাবস্থাও আছে ;)



তো হয়েই যাক? !:#P

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৪৮
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×