somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাদম্বিনী: হার সুইসাইড ইজ আ পলিটিকাল ডেথ

২০ শে জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এর নামও কাদম্বিনী ।হবে হয়তো রবীন্দ্রনাথেরই। সেই বেশ । সেই চোখ। সেই হুতাশ করা অবাক হওয়া মুখ। যেন সে আদতে এই ইহজগতের কেউ নয়। কয়েক দিন হল মরে গেছে। শাড়ির আঁচল মেঝেতে খানিক লুটানো।

প্রথম তার দেখা যখন মিলল সে ঠায় বসে আছে একটা সেই যুগের কেদারায়।
অপলক।
নির্বাক।
ভাষাহীন চোখ।
মরণের স্বাদ কেমন যেন সে জানে। তেতো! বড় তেতো সেই স্বাদ। তবু আবার মরতে চায়। পানিতে ডুবে মরেছিল গেলবার। এইবার ভাবছে ঘরেই মরবে। কায়দা খুঁজছে।

অথবা
কোনদিন সে মরে নি।
কোনদিন মরতে চায় না সে ।
তবু ঘর তাকে মরতে বলে, পর বলে, আপন বলে।
তাকে মরে প্রমাণ করতে হবে যে সে মরে নাই।

খ.
হতে পারে এ রবীন্দ্রনাথের কাদম্বিনী নয়। বরং মঞ্চের নায়িকা। কাদম্বিনীর রোল সে করে বছর বছর 'জীবিত ও মৃত' গল্প থেকে তৈরী করা নাটকে। শীতকালে করতে হয় বর্ষাকালের অভিনয়। শেষ দৃশ্য , মানে আবার মরে যাওয়ার দৃশ্য করে সে শহরে বিখ্যাত বেশ। আহা বিধবার সাদা শাড়ি ভিজে একাকার। মরে ভেসে ওঠার অভিনয়। সে বেশ মন দিয়ে করত। চোখ বন্ধ করে বুক ভরে কাঁদত সে দৃশ্যটি করার সময়।

একবার ঘরেই রিহার্সেল করছিল। হঠাৎ সে সিদ্ধান্ত নিল এই রোল সে আর করবে না। কারণ এই রোল করে তার মনে হচ্ছিল মৃত্যু খুবই শৈল্পিক একটা ব্যাপার। বিশেষ করে স্বেচ্ছামৃত্যু।

প্রায়ই তার মনে হতো এমন সুন্দর করে মরে যাবে সে। ভাবত একদিন বাজারের সবচেয়ে সুন্দর দোয়াতে সুন্দরতম ময়ূর পালক ডুবিয়ে অতি মনোরম এক কাগজে সে শেষপত্রখানি লিখবে। কবিতার ভাষায়। এরপর রূপার পেপারওয়েট চেপে চিঠিখানা রাখবে বসার ঘরের সুদর্শন টেবিলে। তারপর চুল বাঁধবে। রঙিন ফুল দিয়ে ঘন খোঁপা করবে । চোখে কাজল। চমন বাহার, এলাচ, গুবাক, তবক, কিসমিস দিয়ে সুগন্ধি পান মুখে দিয়ে বসবে সোজা আয়নার সামনে। ধীরে ধীরে পানের রসে রঙ্গীন হবে ঠোঁট। নিজেকে প্রাণ ভরে দেখবে। যেন নিজের ঘরে করা জীবনের শ্রেষ্ঠ অভিনয়। ফুলের রাখি পড়া, বহু অঙ্গুরি জড়ানো হাতে রঙিন মদের মতোন বিষ তুলে নেবে ঘরের সব থেকে মনোহর পেয়ালায়। ধীরে ধীরে মরে যাবে। নির্বিবাদ, শব্দহীন।

গ.
অথবা এই কাদম্বিনী মূলত একজন বাঈজি। শত পুরুষ তার নাচের পূজারী। তার রূপের কদর করে সহস্র জন। শহর জুড়ে তার নামডাক। এই নাচগানের জলসার জীবন সে অতি ভালোবাসে। সে প্রেমের গান গায় কিন্তু প্রেমে পড়ে না। কামনা বাসনা, ছলা কলার নৃত্যভঙিমায় শত পুরুষকে প্রলুব্ধ করে কিন্তু কাউকে বাহুডোরে জড়ায় না। ঝলমলে আসরের পরে যে একলা রাত নামে, সেখানে সে অতি স্বাধীন। এই স্বাধীনতাই তার কাছে সত্যিকারের জীবন। কিন্তু তার কাছ থেকে ফিরে যাওয়া এইসব পুরুষ নিজেদের অপমান সইতে পারছিল না। তাদের মনে হচ্ছিল এই নারীর কাছে তারা পরাজিত। ক্রোধে, অপমানে, হিংসায় বাইজির এই সত্যিকারের জীবনকে তারা মরণ নাম দিল।

তারা সফলও হল হয়তো। কাদম্বিনীর একলা রাত আর একলা থাকল না। এই সমস্ত পুরুষের শত কণ্ঠ একের পর এক কানে বাজতে লাগল। ঘর জুড়ে মাতাল কর্কশ কণ্ঠ গুলো যেন সমস্বরে বলে লাগল...' তুই তো কবেই মরে গেছিস। যেই ফুলে ভ্রমর বসে না, যতই রূপ থাকুক, যত মধুর গন্ধ, সেই ফুলের দাম কী? পুতুলের শরীরের গঠন যত নিপুণই হোক, তাতে তো প্রাণ থাকে না। তুই তো কলের গান, নাচের পুতুল। আজীবন মরণসমান তোর জীবন । তুই তো লাশ, কাদম্বিনী, তুই নাচতে জানা প্রাণহীন দেহ।'

কাদম্বিনী একদিন সত্যিই মরে গেল মরে গেল নিজ হাতে। 'মরিয়া প্রমাণ করিল, সে মরে নাই'।

সেই পুরুষেরা মনে মনে কী বলল কে জানে? কিন্তু মুখে মুখে বলল,

' কী নির্বোধ। এমন রঙিন জীবন কেউ শেষ করে দেয়। কী গলা! কী নাচ! কেমন সুগভীর চোখ ছিল! শত মাতাল চাইত তাকে তবু কেমন অধরা অপ্সরী রয়ে গেল আজীবন। অমন নেশা ভরা চোখ, অমন রাঙা উতাল শরীর! এমন জীবন কেউ এভাবে শেষ করে?
দিজ ইজ শিয়ার স্টুপিডিটি।'
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৭
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×