somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চট্টগ্রামের বোয়ালখালী হতে দুর্গাপুজার উৎপত্তি।

২৩ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(দুর্গাপূজার উৎপত্তিস্থান মেধস আশ্রমের ছবি)

প্রাচীনকাল থেকেই সনাতন-ধর্মাবলম্বীরা সাড়ম্বরে উদযাপন করে আসছে দেবী দুর্গার আরাধনা বা শক্তিপূজা। এ শারদীয় দুর্গোৎসব এখন সর্বজনীন উৎসবে পরিগণিত। এ দুর্গাপূজার উৎস ও মর্ত্যলোকে মায়ের আবির্ভাব নিয়ে রয়েছে নানা কিংবদমিত্ম। জনশ্রম্নতি রয়েছে, বোয়ালখালী করলডেঙ্গা পাহাড় চূড়ায় অবস্থিত মেধা মুনি আশ্রম থেকেই আরাধনা-শক্তি পূজার উৎপত্তি। পৌরাণিকেও তা উলেস্নখ রয়েছে। দুর্গাপূজার উৎপত্তিস্থল খ্যাত চ-তীর্থ এ মেধস আশ্রম পড়ে রয়েছে অযত্নে-অবহেলায়। এ আশ্রমকে জাতীয় আশ্রম ঘোষণার দাবি-পরিকল্পনা উপেক্ষত রয়ে গেছে। আশ্রমের ইতিহাসগ্রন্থে উলেস্নখ রয়েছে, বোয়ালখালী উপজেলার করলডেঙ্গা পাহাড়চূড়ায় অবস্থিত মেধস আশ্রমে মেধস মুনি নামের এক সাধক-ঋষি যোগবলে শত সহস্র বছর আগে দেবী ভগবতির আবির্ভাব ঘটিয়েছিলেন। মেধা মুনির কাছে দেবী মাহাত্ম্য অবগত হয়ে রাজ্যহারা রাজা সুরথ ও স্বজন বিতাড়িত বণিক সমাধি বৈশ্যই সর্বপ্রথম মর্ত্যলোকে শক্তির আরাধনা বা মায়ের পূজা প্রবর্তন করেন। সনাতন-সম্প্রদায়ের ধর্মীয় গ্রন্থ পুরাণ, চ-ী, দেবীভাগবতে, মার্কে--য় ও কামাখ্যা পটলে মেধা আশ্রমের কথা উলেস্নখ রয়েছে। তাতে উলেস্নখ রয়েছে, ‘ভারতবর্ষের অন্যতম তীর্থস্থান মেধস আশ্রম। মুনি মেধা কোন্ কালের তা জ্ঞান দৈন্যবশত জানার উপায় নেই। তবে তিনি যে পুরাণোক্ত মুনি তা বিজ্ঞজনদের অজানা নয়। একইভাবে তিনি কোন্ কালে চট্টলভূমির মহাতীর্থ চন্দ্রনাথের দক্ষিণ-পূর্বাংশের এক গিরিশীর্ষে আশ্রম বা সাধনকেন্দ্র গড়ে তুলেছিলেন সে সম্পর্কেও আজ জানার উপায় নেই। একালের মানুষের সৌভাগ্য যে, আজ থেকে ১১১ বছর আগে মেধা মুনির আশ্রমটি বিস্মৃতির অতল থেকে পুনরম্নদ্ধার বা পুন:আবিষ্কার করা হয়।’
কোথায় এ আশ্রম : বোয়ালখালী উপজেলার আহ্লা-করলডেঙ্গা ইউনিয়নের করলডেঙ্গা পাহাড়চূড়ায় মেধস মুনির আশ্রম অবস্থিত। প্রায় পাঁচশত ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট পাহাড়েই এ আশ্রম। পাশের পাহাড় চূড়ায় রয়েছে শিব ও কালি মন্দির। গত পাঁচ বছর আগে স্থাপন করা হয়েছে নান্দনিক শিল্পীশৈলিতে নির্মিত কামাখ্যা মন্দির।
যেভাবে আবিষ্কৃত : বরিশালের গৈলা অঞ্চলের পন্ডিত জগবন্ধু চক্রবর্তীর ঘরে ১২৬৬ বঙ্গাব্দের ২৫ অগ্রহায়ণে জন্ম নেন চন্দ্রশেখর। জন্মের দুবছর পর মারা যান তাঁর পিতা। মায়ের অনুরোধে ১৪ বছর বয়সে বিয়ে করেন মাদারীপুরের রাম নারায়ন পাঠকের কন্যা বিধূমুখীকে। ছয় মাস পর মারা যান স্ত্রী। এর কিছুদিন পর মারা যান মা। সংসারে আপন বলতে আর কেউ রইল না চন্দ্রশেখরের। একাকিত্ব জীবনে এসে চন্দ্রশেখর নানা বেদ শাস্ত্র পাঠ করে হয়ে ওঠেন পরিচিত পন্ডিত। তখন নাম হল শীতলচন্দ্র। তিনি মাদারীপুরে প্রতিষ্ঠা করেন সংস্কৃত কলেজসহ নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পরবর্তীতে যোগীপুরম্নষ স্বামী সত্যানন্দের সাথে সাক্ষাতের পর চন্দ্রশেখরের মনে চন্দ্রনাথ দর্শনের তীব্র আগ্রহ জন্মে। তিনি চলে আসেন সীতাকুন্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়ে। সেখানে তিনি বৈরাগ্য ধর্ম গ্রহণ করেন। ততদিনে চন্দ্রশেখর হয়ে ওঠেন বেদানন্দ স্বামী। যোগবলে বেদানন্দ দর্শন লাভ করেন চন্দ্রনাথের (শিব)। চন্দ্রনাথ সেই দর্শনে বেদানন্দকে পাহাড়ের অগ্নিকোণে দৃষ্টি নিবন্ধ করার আদেশ দিয়ে বলেন, ‘দেবীর আবির্ভাবস্থান মেধস আশ্রম পৌরাণিক শত সহস্র বছরের পবিত্র তীর্থভূমি। কালের আবর্তে সেই পীঠস্থান অবলুপ্ত হয়ে পড়েছে। তুমি স্বীয় সাধনাবলে দেবীতীর্থ পুন:আবিষ্কার করে তার উন্নয়নে মনোনিবেশ কর। দেবী দশভূজা দুর্গা তোমার ইচ্ছ পূরণ করবে। দৈববলে প্রভূ চন্দ্রনাথের আদেশে বেদানন্দ স্বামী পাহাড়-পর্বত পরিভ্রমণ করে করলডেঙ্গার সন্ন্যাসি পাহাড়চূড়ায় সেই মেধস আশ্রম আবিষ্কার করেন। পরে ভারতবর্ষের প--ত ও গবেষকেরা এই স্থানকেই প্রাচীন মেধস মুনির আশ্রম হিসেবে স্বীকৃতি দেন।
দুর্গাপূজার উৎপত্তি : রাজ্যহারা রাজা সুরথ ও স্বজন পরিত্যক্ত বণিক সমাধি বৈশ্য উপস্থিত হয়েছিলেন মেধা মুনির আশ্রমে। মেধাশ্রমে মুনিপদে তাঁদের দু:খের কথা ব্যক্ত করলেন। মেধা ঋষি সুরথ ও সমাধি বৈশ্যের জাগতিক দু:খ-দুর্গতির কথা শুনে মুনি তাঁদের শোনালেন, ‘মধুময়ী চ-ী’। মেধা ঋষির উপদেশ শোনে সুরথ ও সমাধি বৈশ্য অরণ্য অভ্যমত্মরে ঋষি মেধসের আশ্রমে মৃন্ময়ী মুর্তি গড়ে সর্বপ্রথম মর্ত্যলোকে দশভূজা দুর্গাদেবীর পূজা শুরম্ন করেছিলেন।
‘৭১ সালে ভাঙচুর : ১৯৭১ সালে ১৬ জুন পাকসেনারা আশ্রমে লুণ্ঠন চালায় এবং গান পাউডার দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। দেশ স্বাধীনের পর ভগ্নদশা মন্দিরে পাথর মূর্তি প্রতিস্থাপন করে অনাম্বড়ভাবে পূজা শুরম্ন হয়।
জাতীয় তীর্থ ঘোষণা : দীর্ঘদিন ধরে দুর্গাপূজার উৎপত্তিস্থলকে জাতীয় তীর্থ ঘোষণার দাবি করেছেন সনাতন ধর্মারলম্বীরা। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে সরকারের শিক্ষা ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. হোসেন জিলস্নুর রহমান এ তীর্থপীঠ পরিদর্শন করে জাতীয় তীর্থ ঘোষণার প্রতিশ্রম্নতি দেন। কিন্তু সেই ঘোষণা আজও অধরা রয়ে গেছে।
পর্যটন কেন্দ্র ও কমপেস্নক্স : প্রকৃতির লীলাভূমি পাহাড়চূড়ায় মরোরম পরিবেশে অবস্থিত এ আশ্রম। পাশের পাহাড়ে রয়েছে মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের পাদপীঠ হযরত বু-আলী কালন্দর শাহ (রাহ.) মাজার শরিফ। এ বিখ্যাত সাধক-দরবেশের নামে এই অঞ্চলের নামকরণ করা হয়। পাশের বৈদ্য পাড়ায় রয়েছে বৌধিবৃক্ষ। একই এলাকায় তিন ধর্মাবলম্বীদের তীর্থভূমি খ্যাত করলডেঙ্গায় পাহাড়কে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র ও ধর্মীয় ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন চট্টগ্রাম-৭ আসনের সাংসদ মঈনউদ্দিন খান বাদল। এই সরকারের পৌনে চার বছরেও সেই প্রতিশ্রম্নতি বাসত্মবায়নের মুখ দেখেনি।
অবহেলিত: পুণ্যতীর্থ ও দৃষ্টিনন্দন এ মন্দিরে দেশ-বিদেশ থেকে প্রচুর পূজারিরা, পর্যটক, ভ্রমণপিপাসু ছুটে আসেন এই এলাকায়। সারা বছরই লেগে থাকে দর্শনার্থীদের ভিড়। কিন্তু সেইভাবে গড়ে ওঠেনি যোগাযোগব্যবস্থা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা। দুর্গম-ভঙ্গুর সড়ক, নিরাপত্তা, পানীয়সহ নানা সদস্যায় অযত্নে-অবহেলায় পড়ে রয়েছে এই আশ্রম।
আশ্রমের অধ্যক্ষ অধ্যক্ষ বুলবুল নন্দ ব্রহ্মচারী বলেন, দুর্গাপূজার উৎপত্তিস্থাল খ্যাত মেধস শত বছর ধরে অযত্নে-অবহেলায় পড়ে রয়েছে। পানি, রাসত্মা ও নিরাপত্তাসহ নানা সংকট রয়েছে। সংকট নিরসনের বিভিন্ন সময়ে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে আসলেও তা উপেক্ষিতই থেকে যায়। তিনি আক্ষপ করে বলেন, মহাসাড়ম্বে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে সারদীয় দুর্গাপূজা। কিন্তু পূজার উৎপত্তিস্থল পড়ে আছে অবহেলায়। ভক্ত ও পুর্ণ্যার্থীদের আর্থিক সহায়তায় মেধস আশ্রম পরিচালিত হয় বলে জানান তিনি। এতে ২২ জন সেবক-সেবিকা রয়ে বলে জানান তিনি।
বোয়ালখালী উপজেলা সর্ম্পকে জানুন।
দুর্গাপুজার উৎপত্তি সুত্র -১

দুর্গা পুজার উৎপত্তি সুত্র -২
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ২:৪৬
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×