বৈপরীত্য নিয়েই মানুষের জীবন।
কেউ ভালোবাসে গোলাপ, কেউ ভালোবাসে দোলনচাঁপা আবার কেউবা বকুল এবং এতো গেল ফুলের কথা, আবার যদি ফলের কথাই বলি, তাহলে দেখা যাবে কেউ ভালোবাসে আম, কেউবা আপেল আবার কেউবা ভালোবাসে কুল। এবং আরো বহু মানুষ তাদের নিজস্ব পছন্দ অনুযায়ী ভালোবাসতে পারে ফুল ফল এবং এই পৃথিবীর যাবতীয় বিষয়। এভাবে নানাজনের রুচি পছন্দ আর ভালো লাগা ভালোবাসায় পার্থক্য থাকবেই; পার্থক্য হবেই। তাই বলি, বৈপরীত্য আর বৈচিত্রতাই মানুষের জীবনের এক প্রধান বৈশিষ্ট্য। প্রত্যেকটা মানুষ যেমন আলাদা প্রত্যেকটা মানুষের রুচি প্রকৃতি আর স্বভাব বৈশিষ্ট্যও আলাদা। এর পরেও কথা থাকে, একজন মানুষ তার সময়ের সাথে সাথে এবং তার প্রয়োজনের অভিঘাতে বদলায়। বদলাতে বাধ্য হয়। মানুষকে সময়ের চাহিদা পূরণ করতেই হয়। সময়ের চাহিদা পূরণ করতে হলে মানুষকে তার আর্থ-সামাজিক অবস্থানের সাথে সাথে পরিবর্তন বিবর্তণের মধ্য দিয়েই যেতে হয়। মানুষকে বাঁচতে হলে যেমন খেতে হয়, তেমনি বাঁচতে হলে তাকে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে নিজেকে সময়ের চাহিদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণভাবে সমসাময়িকতার সাথে বদলাতেও হয়। তবে এই বদলানো যেন সত্য-সুন্দর বা মানুষের মানবিক মূল্যবোধের বিপরীতে গিয়ে সমসায়িকতার দোহাই দিয়ে অস্বাভাবিকভাবে জোয়ারে নিজেকে না ভাসিয়ে দেয় বা নষ্ট শ্রোতে নিজে ভেসে না যায়।
একটা ভূ-খন্ডের মানুষের স্বাধীনতা আর মুক্তির থেকে আর বড় কোনো স্বপ্ন হতে পারেনা। বঙ্গবন্ধু সেই স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং তিনি তাঁর স্বপ্নকে সার্থক করেছিলেন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং ধীরে ধীরে পর্যায়ক্রমে দেশের মানুষকে সংগঠিত করে দেশের মানুষকে স্বাধীনতার আকাঙ্খার চুরান্ত পর্যায়ে পৌছে দিয়েছিলেন যেখান থেকে স্বাধীনতা ছাড়া মানুষের আর ফিরবার আর কোনো উপায় ছিলনা। তিনি মানুষকে এমন যায়গায় পৌছে দিয়েছিলেন যে, হয় স্বাধীনতা না হয় মৃত্যু। দেশের মানুষ সেই DO OR DIE অবস্থা থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ আর সম্ভ্রমের বিণিময়ে এই দেশটাকে এদেশের মানুষ অর্জন করেছে। কোনো ভূখন্ডের মানুষের জীবনে তার দেশের স্বাধীনতা অর্জনের থেকে বড় আর মহান কোন অর্জন থাকতে পারেনা।
একটা স্বাধীন দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি তথা উন্নত জীবনের স্বপ্ন সার্থকভাবে রূপায়ণ করে চলছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি তাঁর মহান পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই দেশের মানুষের জন্য এক উন্নত আর সম্মৃদ্ধ সোনারবাংলা তৈরি করে চলছেন। একমাত্র তাঁর স্বপ্নবান নেতৃত্বের দৃঢ়তা, বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতা আর তাঁর স্বপ্নের কারণেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বিস্ময়। আর আমরা এই বাংলাদেশের মানুষ আমরা বাঙালিরা গৌরব করে বলতে পারি ‘সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’।
এই দেশের আপামর জনসাধারণের স্বপ্ন হচ্ছে তাদের জীবন জীবিকা আর মৌলিক মানবাধিকারের স্বপ্ন। দেশের মানুষের খাদ্য বস্র আশ্রয় বা বাসস্থান শিক্ষা চিকিৎসা এবং কাজের নিশ্চয়তার স্বপ্ন। দেশের নাগরিক হিসেবে ধর্ম বর্ণ সম্প্রদায় নির্বশেষে আইনের চোখে সমানাধিকারের সুযোগ পাবার স্বপ্ন। দেশের মানুষের এই ‘আইনের চোখে’ সমানাধিকারের ক্ষেত্রে দেশের আইন যেন তাঁর ‘অন্ধত্ব’ নিয়ে বসে না থাকে।
আমাদের সন্তানেরা, আগামী দিনের এদেশের নাগরিকরা যেন তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে, তারা যেন শিক্ষা-দীক্ষায়, জ্ঞানে-বিজ্ঞানে সারা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তাদের সমসাময়িক মানুষের সাথে সবকিছুতেই সক্ষমতায় সমানতালে চলতে পারে, তাদের সেই স্বপ্নপূরণে সেভাবেই তাদেরকে গড়ে তূলতে আমাদের সহযোগীতা করাই হচ্ছে এখন আমাদের এই রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রধান গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
মানুষ স্বপ্নছাড়া বাঁচতে পারেনা। ঘুমের মধ্যে মানুষ স্বপ্ন দেখে। তবে, মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে এবং অধিকাংশ সময়েই ঘুম ভাঙ্গলে তার স্বপ্নও হারিয়ে যায়। স্বপ্নহীন মানুষ আর মৃত মানুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে বলে আমার মনে হয়না। স্বপ্নবান মানুষ দেশের সম্পদ। আমাদের এই দেশে এখন একদল স্বপ্নবান মানুষ তৈরি করতে হবে যারা এই দেশকে জ্ঞানে বিজ্ঞানের উৎকর্ষতায় আর উন্নতিতে আমাদেরকে নিয়ে যাবে অনেক অনেক উচ্চতায়। তবে যে মানুষ জেগে জেগে স্বপ্ন দেখে এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারে, তাহলে তার স্বপ্নদেখা সার্থক হয়। জীবিত মানুষ স্বপ্ন দেখতে পারে। মৃত মানুষ স্বপ্ন দেখতে পারেনা। সে ইতিহাস হয়ে যায়।
স্বপ্নের আরেক নাম ভালোবাসা। মানুষের স্বপ্ন মানে, তার ইচ্ছে, তার প্রত্যাশা, তার ইচ্ছে পূরণের আকাঙ্খা আর তার সীমাহীন ভালোবাসা। মানুষ যদি তার ইচ্ছে পূরণের আকাঙ্খাকে বাস্তবে রূপায়িত করতে পারে তাহলে তার জন্ম আর জীবন হয় সার্থক।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:৫০