somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুয়ালালামপুরের ডায়েরী: গোপালীয় খানাপিনা আর রোবোকন প্রতিযোগিতা

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৬ ভোর ৪:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত সপ্তাহান্তে আনর্্তজাতিক রোবোকন প্রতিযোগিতার আয়োজন হচ্ছিলো কুয়ালালামপুরে। আমাদের বুয়েটের একটা তুখোড় দল সেখানে অংশগ্রহন করেছে। মাশীদের জুনিয়র বন্ধু এবং একই সাথে আমাদের কমন স্যার থাকায় আমরা কয়েকজন ঠিক করি ওদের সাথে দেখা করা, বাংলাদেশ টিমকে সমর্থন প্রদানের জন্য মিশন কুয়ালালামপুর গ্রহন করা হোক।

এর মধ্যে কথা হচ্ছিল গোপাল ভাঁড় পরিবারের সাথে। ভাবীর (জানতে চাই) রান্নার প্রশংসা শুনছিলাম মাশীদের কাছে। সৌভাগ্য এই ট্রিপে নিমন্ত্রন ছিলো গোপাল পরিবারে, মেনু হাইফাই: আচার গোস্ত, খিচুড়ি, পোলাও, স্পেশাল মুরগি, সব্জি ইত্যাদি। এর আগে অনেকবার কুয়ালালামপুরে যাওয়া হলেও সেখানে থাকা মুড়িওয়ালা, গোপাল ভাড় অথবা জানতে চাই, কারো সাথেই দেখা হয় নাই। এইবেলা সুযোগ।

মিশন কুয়ালালামপুর:
পরিকল্পনার পরে সিঙ্গাপুর থেকে রাতের বাস নিয়ে শুক্রবার রওনা হই আমি, মাশীদ, আমাদের বুয়েটের আরেক বন্ধু আরেফিন ও তার স্ত্রী এবং দুই ইরানী বান্ধবী। পৌছে যাই খুব ভোরে, প্রায় সাড়ে চারটায়। পরিকল্পনা ছিলো নতুনদের নিয়ে পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার পরিদর্শন। খুব অল্প ঘুমিয়ে ভোরে যখন বাস থেকে নামি তখন প্রায় সবাই ঢুলছি। কিছুদুর হেটে একটা রেস্টুরেন্টে চা কফি খেয়ে চাঙ্গা হওয়ার ব্যর্থ প্রচেষ্টা। অত:পর প্রায় 9টার সময়ে টুইন টাওয়ার পরিদর্শন। টুইন টাওয়ারে অপেক্ষার সময় পরিচয় হয়েছিলো জামর্ান মার্গার সাথে। বেজায় আমুদে মার্গার কৌতুক শুনে হাসিতে পেট ফাটে আমাদের।

দুপুরের দাওয়াত পিছিয়ে রাতে:
গোপাল ভাড়ের বাসায় দুপুরের খাওয়ার দাওয়াত ছিলো। খুব টাইট সময়ে নতুনদের জন্য কয়েকটা জায়গা ঘুরিয়ে না দেখালেই নয়। গেন্টিং হাইল্যান্ডস ইত্যাদি ঘুরে আসার পরিকল্পনায় দুপুরের দাওয়াতটা রাতে পিছাতে হলো (গোপাল পরিবারের অনুমতি পূর্বক)। এদিকে গেন্টিং হাইল্যান্ড থেকে ঘুরে আসতে আসতে রীতিমতো রাত। ফিরতি বাসটা দেরীতে ছিলো। আগের রাতের অল্প ঘুম, সারাদিনের দৌড়াদৌড়িতে জান শেষ। গেন্টিং থেকে ফিরেই ট্যাঙ্ িক্যাব নিয়ে ছুটলাম গোপালের বাড়ির ঠিকানা ধরে। এদিকে মাশীদ ওখানে বসে আছে, জলদি যাওয়ার জন্য তাগাদা জানাচ্ছিলো মেসেজ পাঠিয়ে।

একেবারেই অজানা ঠিকানায় ভালোয় ভালোয় ক্যাব ওয়ালার সৌজন্যে পৌছালাম যখন তখন যে সময়ে যেতে চেয়েছি তার থেকে অনেকটা দেরী হয়ে গেছে। বাসা খুঁজে বের করে দরজা নক করতে সহাস্যে ভাবী আর গোপুর দেখা মিললো। আরো ছিলো মুড়িওয়ালা এবং আরো কয়েকজন। ততক্ষনে খাবার রেডি। সুতরাং কথা কম খরচ করে খেতে বসা।

খাবারের বিশাল বর্ণনা সংক্ষেপ করি, নইলে আমার পেটে পিলে হবে। আচার গোস্তটা (গো মাংসের) ছিলো অসাধারন। রেসিপিটা ভাবীর কাছে অনুরোধ করছি এই বেলা, নেঙ্ট পোস্টে ছাড়বেন। আমি নিজে ট্রাই দিবো। চিকেনটাও ছিলো তোফা। মিষ্টি মিষ্টি এবং দারুন মজার। পোলাও ছিলো। তবে চিরকাল খিচুড়ির প্রতি অধিক দূর্বলতায় পোলাও স্যাক্রিফাইস করে খিচুড়িই খেলাম। অনেক বার নিতে নিতে বহুত খেয়ে ফেলেছি। ওদিকে নিজের বাড়িতে লজ্জা করে অল্প খেলেন গোপাল ভাড়। পরে গোপাল ভাড়ের বাড়ি থেকে আরেক কলিগ মামুন ভাইয়ের বাড়িতেও যাওয়া হয়েছিলো।

দেখা সাক্ষাতের পাট চুকিয়ে যখন ফিরি তখন প্রায় রাত 1টা। মামুন ভাইয়ের সুবিশাল এ্যাপার্টমেন্টের নীচের পশ্চিমা পার্টির নাচ ও গানের শব্দ থিতিয়ে আসে যখন ট্যাক্সি রাতের কুয়ালালামপুরের রাস্তায় নামে।

অল্প সময়ের জন্য দেখা সাক্ষাৎ। বেজায় ক্লান্ত থাকায় জম্পেশ আড্ডা দেওয়া (অথবা আড্ডায় অংশগ্রহন) আর হলো না এই বেলা। পরের দিন সকালে উঠতে হতো, অন্যদিকে বন্ধু তার বাড়িতে অপেক্ষা করছে; সব মিলিয়ে আড্ডা স্যাক্রিফাইস করতে হলো। যদিও মামুন ভাইয়ের বাসায় থেকে যেতে বলছিলো বাকিরা। ড্রইং রুমের টেবিল সরিয়ে সেখানে উইকএন্ড আড্ডার প্রস্তুতি শুরু রাত একটার দিকে।

অল্প সময়ের দেখা সাক্ষাতে গোপাল ভাড়কে খুবই হাসি খুশি আমোদ প্রিয় মনে হয়েছে। ভাবীও একেবারে সেই রকম অতিথি পরায়ন যা চেহারা দেখেই বোঝা যায়। মুড়িওয়ালা হেভি মজার মানুষ। ভালো লেগেছে পারিবারিক আন্তরিকতা। দু:খ থেকে গ্যালো রান্না ঘরের সিংকে জমা থালাগুলো চুপি চুপি ধুয়ে ফেলতে গিয়ে ভাবীর কাছে ধরা খাওয়া। প্রায় শেষ করার আগে রান্না ঘরে লাল কার্ড।

[গাঢ়]ভালো কথা, ভাবী, আচার গোস্তের রেসিপি প্লীজ! [/গাঢ়]

রোবোকনে বাংলাদেশ:
বুয়েটের টীমটা প্রতিযোগিতায় যে গ্রুপে পড়েছে সেখানে ছিলো বাঘা জাপান। সুতরাং অনেকটা আগেই ভাগ্য নির্ধারন ছিলো সেটা জানতো বাংলাদেশ টীম। আমাদের সীমিত রিসোর্স নিয়ে ভালোই খেলেছে বুয়েটের টীম। জাপানের কাছে হারলেও সৌদি আরবকে হারিয়েছি। যদিও সৌদি রোবোটের প্রযুক্তি ভালো, অর্থায়ন অনেক বেশি ছিলো দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো। আর গরীব আমরা, আমাদের রোবোটের চেহারাও সেইরকম। কিন্তু মেধার কি কমতি আছে? সুতরাং যখন সৌদি আরবের কিং ফয়সল ইউনিভার্সিটিকে বাংলাদেশ তার দ্বিতীয় খেলায় হারিয়ে দিলো তখন গ্যালারী ভর্তি অন্য ন্যাশনালিটির অনেকেই বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানাতে মুখর। সিঙ্গাপুর থেকে বয়ে নিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের পতাকাটা তখন গ্যালারীতে বাঁধা আর বাংলাদেশের পতাকা আকা টী-শার্ট গায়ে মাশীদের মুখটা তখন বেজায় উজ্জল।

[ইটালিক]ছবি পরে আপলোড করবো। দু:ভাগ্য জনক ভাবে গোপালের বাসায় ছবি তোলা হয় নাই। পরে তুলেছি, তবে সেখানে ভাবী নাই। নেক্সট টাইম :( [/ইটালিক]
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৬ রাত ১১:৪৯
৪০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×