সাদিক: (ঐটা আমার পছন্দের বিষয়। বলতে পারেন সবচেয়ে পছন্দের।)
- ধর্ম ! এইটা কোনো পছন্দের বিষয় হইলো, ছি! তোমার বয়স 26, তুমি না প্রকৌশলী! এই বয়সে কাউকে ধর্ম আকর্ষন করে নাকি? জানো না বিজ্ঞান পড়লে ধর্মরে বুল শিট না করলে সেইটারে আধুনিকতা বলে না। তুমি থাকো একটা প্রথম বিশ্বের আধুনিক সেকুলার দেশে। তুমি উইকএন্ডে কেলাবে যাবা, এক গাদা বান্ধবী নিয়ে ঘোরাঘুরি করবা, মাঝে মধ্যে জিনিসপত্র খাইবা - তা না তোমার ঘর ভর্তি গীতা, কথামৃত, উপনিষদ, বাইবেল, বাহাই, সুফি বই, কোরানের এক গাদা অনুবাদ, আরো হাবিজাবি বই; এইসব কি?
: (ঐ যে বললাম ব্যক্তিগত পছন্দ।)
- তুমি আসলে একটা ঘোরের মধ্যে আছো বুঝলা। তোমার দেশে ধর্ম হইলো বুড়া মানুষদের রিটারমেন্টের পরে 'নাই কাজ তো খই ভাঁজ' একটা বিষয়। এই বয়সে তো তোমার পর্ণো, ক্লাবিং, মেয়েদের প্রতি উথাল পাতাল আকর্ষণ থাকার কথা। আর তুমি 180 ডিগ্রি ঘুইরা সুফি দর্শনে এত আগ্রহী; এইটার মধ্যে ঘটনা কি? আমি কনফিউজড!
: আমি উত্তর দেই না, স্মিত হাসি। (তবে আমার হাসি আগস্তুককে বিব্রত করে না; সে একই জোসের সাথে প্রশ্নবাণ ছুড়তে থাকে)
- তোমারে দেখতে তো কাঠমোল্লা মনে হয় না। কিন্তু তোমার আসলে আধুনিকতা সম্পর্কেও কোনো ধারনা নেই। আজকের দিনে আধুনিক মানে ঘোর ধর্ম বিরোধী, মুক্তমনা। যে যত ধর্মকে বাঁশ দিবে সে ততো ইন্টেলেকচুয়াল - এ্ইটাই তো এখনকার ট্রেন্ড। তুমি দেখি ট্রেন্ডও বুঝো না !
: (হাসি ধরে রেখেই আমি বলি, আমার কাছে ইন্টেলেকচুয়াল যে ভিন্ন জিনিস। আমি খুব একটা ট্রেন্ডিও নই। জামা কাপড়ের দিকে দেখিয়ে বললাম, এই কারনে খুব সস্তা কাপড়েই চলে যায়। হালফ্যাশন কখনোই আকর্ষন করে না। )
- ভিন্ন জিনিস, অ। আচ্ছা ভালো। তোমার ফ্যামিলি কি খুব ধার্মিক নাকি?
: ( না ফ্যামিলি তথাকথিত ভাষায় ধার্মিক নয়। তবে প্রকৃত অর্থে শিক্ষিত, নৈতিক এবং আদর্শবান। এছাড়া যে ধর্ম উত্তরাধিকার সুত্রে পাওয়া যায় এমন ধর্মে আমার বিশ্বাস নেই। আমি যা উপলব্ধি করবো, যা আমার হৃদয় উৎসারিত তাই হবে আমার ধর্ম। অন্যথায় তা নামে ধর্ম। এ কারনে আমি মুসলিম পরিবারে জন্মানোর পরেও সব ধর্ম সম্পর্কে জানতে কখনোই আগ্রহ হারাই নি। এমনকি জন্মসুত্রে সুনি্ন হওয়ার পরেও আমি শিয়া, আহমেদিয়া সবার দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কেই জানতে আগ্রহী। )
- তোমার ধারাবাহিক একটা পোস্ট হইলো গিয়া: ভাবের কথায় পেট ভরে না, মন ভরলেও ভরতে পারে। এইটার মানে কি?
: ( ওইটা ইচ্ছা করে নিজেরে নিয়ে নিজের টিটকারি বলতে পারেন। তৃতীয় বিশ্বের দেশ হওয়ায় আমাদের মধ্যে পেট ভরার একটা প্রবণতা বেশি থাকে। অর্থনৈতিক নির্ভর চিন্তাই আমাদের চেতনার একটা বড় অংশ জুড়ে থাকে। ভাবের কথা, দর্শন ইত্যাদি মনের খোরাক। কিন্তু আমরা সব সময় যেহেতু পেট এবং পকেট মুখী চিন্তাতে ব্যস্ত তাই আমি জানি যেকোন ধরনের ভাবের কথা কইতে গেলে পঁচা ডিম বা জুতো স্যান্ডেল আসতেই পারে মন্তব্যে। অনেকটা যেন তার জন্য পূর্ব প্রস্তুতিস্বরূপ ঐ টাইটেলটি। তার বেশি কিছু না। )
- তা সুফি আইডিয়া তোমারে এত টানে কেন? তুমি তো মোছলমান, সুফিগোতো মোল্লারাও দেখতে পারে না।
: (কম্পারেটেভি রিলিজিওন স্টাডি বা তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব থেকেই সুফিতে আগ্রহ। সুফিরা সব ধর্মের অনর্্তগত সত্যকে সুন্দর করে বুঝতে পারে, বোঝাতে পারে। মোল্লারা এক ট্র্র্যাকের মানুষ। তারা সুফির সার্বজনীনতাকে পছন্দ করে না বলেই দেখতে পারে না, এর মধ্যে রাজনীতিও আছে; তবে সেটা দীর্ঘ ইতিহাস। এছাড়া ব্যক্তিগত কিছু ছিন্ন বিচ্ছিন্ন ঘটনা আমাকে সুফি দর্শনের প্রতি টেনে নিয়ে এসেছে। তবে সেগুলো বড়ই ব্যক্তিগত, উপলব্ধিগত ব্যাপার। ভাষা এবং শব্দ দিয়ে বলতে গেলে মুশকিলে পড়বো। মাফ করবেন। )
- আচ্ছা আচ্ছা বুঝছি। পাগলে পাইছে আর কি! তো তোমার সবচেয়ে প্রিয় ধর্ম কোনটা?
: ( সবচেয়ে প্রিয়? সব ধর্মের দর্শনই আমাকে আকর্ষণ করে। সুফি আইডিয়ার দিকে তাকালে দেখবো যে পুরো মানবসভ্যতার সমষ্টিগত মানসিক বিবর্তনের (কালেক্টিভ হিউম্যান ইন্টেলেকচুয়াল ইভোলিউশন) উপরে ভিত্তি করে সত্য বিভিন্নভাবে প্রকাশিত হয়েছে। ধারন মতার উপরে ভিত্তি করে স্রষ্টা তার মহিমা বিভিন্নভাবে প্রকাশ করেছেন। সেই বিভিন্নতা থেকেই মানব সভ্যতার বিভিন্ন সময় এবং স্থানে ধর্মের বিভিন্ন রূপ। কিন্তু সত্য ঐ একটাই।
এই উপলব্ধিটা আসলে উপনিষদের একেশ্বরবাদীতা এবং ওল্ড টেস্টামেন্টের জিহোভা বা কুরাআনের আল্ল্লাহতে কোনো পার্থক্য দেখা যাবে না। তখন কে প্রিয় কে অপ্রিয় এই প্রশ্ন হারিয়ে যায়। সনাতন ধর্ম আমার খুব পছন্দের, মূল একেশ্বরবাদী বেদান্ত দর্শন। অনেক দিন কেটেছে গৌতম বুদ্ধার প্রেমে, লোকটাকে আমার খুব ভালো লাগে; রাজকুমার অথচ সন্নাসী। তাওবাদের মধ্যে সুফিবাদের ছায়া ব্যাপক। জেন বুদ্ধিজমেও তাই। শিখদের ঈশ্বরভক্তি চমৎকার। খ্রিস্টানদের খোদা প্রেমে সৃষ্টির সেবা নি:সন্দেহে স্রষ্টারও খুব পছন্দের। মিশনারীদের তাই মনে প্রাণে শ্রদ্ধা করি যতন তা থেকে রাজনীতি দূরে থাকে। ইহুদী ধর্মের সাথে কোনো শত্রুতা খুঁজে পাই না। ইহুদী মরমীবাদ খুব উচ্চমার্গের খোদা প্রেমের দর্শন। বাহাই ধর্মের সার্বজনীনতা দেখে মুদ্ধ হই। মানুষ মুহাম্মদের মানসিক দৃঢ়তা, অসাধারন মেধা ও জ্ঞান; অবহেলিত এতিম বালক থেকে অন্ধকার সমাজকে একলা আলোকিত সমাজে রূপদান করার যে বিশাল ক্যানভাসে সাফল্য তা দেখে বাক্য হারা হয়ে যাই। সুতরাং কোন ধর্ম প্রিয় বললে অন্যদের প্রতি অবিচার করা হবে।
সুফিদের ভাষায়, গন্তব্য সবারই এক; হয়তো যাত্রা পথেই ভিন্নতা। আর গন্তব্য যখন এক, তখন অমুক প্রিয় আর তমুক প্রিয় নাই বা বললাম। )
- সব ধর্ম এক - এ্ইটা একটা কথা কইলা। যত সব ননসেন্স!! যাও কও গিয়া মানুষরে, ডলা দিবো। আর নিজের ঘোর কাটাও বুঝলা। এই বয়সে আর দশটা মানুষ যা করে সেইডা করো, কামে দিবো। এইসব ব্যাকডেটেড, পৌরাণিক কাহিনী রেখে আধুনিক হও। আধুনিক, মডার্ন, সেকুলার এবং মুক্তবুদ্ধির হও। তোমার সব কথা ননসেন্স!
: (আমি আবারও হাসি। এবার হয়তো আগের চাইতে একটু বেশি। )
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০০৬ দুপুর ১২:৪৫