somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিক্ষা পদ্ধতি কি ডিজিটাল হয়ে গেল??

০২ রা অক্টোবর, ২০১০ বিকাল ৫:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বসুন্ধরা প্লটে এক পরিবারের সাথে আমার খুব ভালো সম্পর্ক। কার্যবশত আমি বাসায় বেশ কিছুদিন তাদের অন্ন ধ্বংস করেছি। তার বিনিময়ে কিছুই তাদের দিতে পারছি না মনে কষ্ট। কি করি ভাবছি। ভাই-ভাবীর একমাত্র মেয়ে ক্লাশ ফাইভে পড়ে ভিকারুণনেসা নুন স্কুল, বসুন্ধরা শাখায়। ওর মা ওকে পড়ায় আবার কোচিং-এও দিয়েছে। দুরন্তমনা মেয়েটা পড়ায় সহজে মন বসাতে পারে না। মায়ের উপর তার প্রচন্ড রকমের বিরক্তি। কেন তাকে সারাক্ষন টেবিলে বসিয়ে রাখে। টেবিলে সে ঠিকই বসে কিন্তু পড়ে না, প্রচন্ড ফাকি দেয়। আমার দেখে দেখে মেজাজ খারাপ। শেষে বলেই ফেললাম, ভাবী আপনি কাজে যান, আমি ওকে পড়াই। ভাবী শুনে খুশি, ঠিক আছে পড়াও। মেয়ের অভ্যাস একঘন্টার মধ্যে কমপক্ষে ৪ বার টেবিল থেকে উঠবে। আমাকে আন্টি ডাকে। যাইহোক ওকে বললাম, দেখো তুমি কি বোঝনা বল, আমি বুঝিয়ে দেই। প্রথমে গণিত দিয়ে শুরু করলাম। কয়েকটা অংক দেখিয়ে দিতেই বলল, আন্টি এভাবে হবে না, ম্রাডাম নম্বর কেটে দিবে।
কেন হবে না। নিয়ম তো ঠিক আছে, রেজাল্ট মিলেছে হবে না কেন?
-সেই গাইড বই বের করে আমাকে দেখিযে বলে, এভাবে করতে হবে।
ও তাহলে তোমার ম্যাডাম গাইড বই ফলো করে।
-তা বলতে পারবো না, তেব ম্যাডাম যেভাবে করায় গাইড বইয়ের সাথে হুবুহু মিলে যায়, তাই গাইড বই দেখে অংক করি।
ঠিক আছে করো নম্বর যখন কেটেই দেয়। তালে বাংলা পড়ি?
-না গ্রামার পড়বো, বাংলা পড়তে ভালো লাগে না, ওতো শুধু প্রশ্ন উত্তর মুখুস্ত করবো আরকি?
তুমি বুঝে মুখুস্ত করো, নাকি না বুঝে মুখুস্ত করো।
-ম্যাডাম কিছুই বুঝাই না, শুধু বই দাগিয়ে দেয় আর আমরা মুখুস্ত করি।
ও, ঠিক আছে তাহলে আমি একটা কবিতা তোমাকে বুঝাই, দেখ তুমি মনোযোগ দিয়ে শুনলে তোমাকে পড়তে হবে না, সব প্রশ্নের উত্তর তুমি দিতে পারবে।

কবিতা পড়লাম আর বুঝালাম, প্রশ্ন শব্দার্থ, শুণ্যস্থান ধরলাম ও সব পারল। তখন বললাম-কি যা বলেছি সত্যি বলিনি।
-আন্টি ম্যাডাম তো আমাদের এভাবে পড়ায় না, আর আমরা বুঝে যা লিখবো তাতে ম্যাডাম নাম্বার দিবে না, গাইড বই বা মেইন বইয়ে যা আছে তা এ অক্ষর সেদিক সেদিক হতে পারবে না।

এরপর ও নিজেই ইচ্ছে করে আমার সামনে সমাজ, বিজ্ঞান, ধর্ম বই সামনে দিল। আমাকে এই এই চ্যাপ্টার বুঝিয়ে দিন। সেইদিন ওকে আমি ৫ ঘন্টা টেবিলে রেখেছিলাম এব ও মজা পাচ্ছিল। আর বলর-স্কুলের ম্যাডাম বলেন আর কোচিং বলেন, এভাবে কোন স্যার বা ম্যাডাম আমাদেরকে বুঝায় না, স্কুলে বই দাগিয়ে দেয় আর কোচিং এ দাগানো বই মুখুস্ত করায় আর খাতায় লেখায়। এর এক অক্ষর বাদ না যায়।

এতো গেল ভিকারুননিসা স্কুল এর শিক্ষা প্রণয়ন পদ্ধতি। অন্য স্কুলের এর ব্যতিক্রম হয়না হয়তো।

এবার ঈদে বাড়ীতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। একদিন সকালে মা, ভাবীর মধ্যে কথা কাটাকাটি আর ভায়ের ক্লাশ থ্রী পড়ুয়া ছেলের কান্না। আমি জানতে চাইলাম ব্যাপারটা। মা বলল, শিশিরের গাইড আনার কথাছিল ওপার থেকে আনতে মনে নেই। আমি তো অবাক শিশিরের আবার গাইড বই কিসের ওতো ক্লাশ থ্রীতে পড়ে। ভাবী বলল-কি বলে ও ক্লাশ ওয়ানেরও গাইড বের হইছে। বলেন কি ভাবী এতটুকুন বাচ্চাদের গাইড বই। নো কোন গাইড ফাইড চলবে না। মেইন বই পড়ে যা বুঝবে তাই পড়তে হবে। ওর মামা ওকে বুঝিয়ে পড়াবে।

আমাদের স্কুলে দেখেছি প্রত্যেকটা স্যার, ম্যাডাম বইয়ের যে বিষয় পড়াতেন তা এমন ভাবে লাইন লাইন ধরে বাস্তবতার সাথে উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিতেন যে, বাড়ীতে গিযে আর আলাদা করে প্রশ্ন উত্তর পড়তে হতো না। এমননি কোন নোট বই পড়তাম না ক্লাশ টেন পর্যন্ত শুধু ইংরেজী ছাড়া। ফলে পরীক্ষার আগে কোন চাপ ছিল পড়ার। পরীক্ষার খাতায় নিজের মতো করে প্রশ্ন উত্তর লিখে দিয়ে এসেছি। রেজাল্ট ভালোই করেছি। তবে কিছু শিখেছি।

আর এখন মুখুস্ত, গাইড বই, লাইন দাগানো। সত্যি আমার কষ্ট হয় শিক্ষার পদ্ধতি কোনদিকে যাচ্ছে। শর্টকাটে বড়লোক হওয়ার পদ্ধতি যেমন শিক্ষা দেওয়ার পদ্ধতি শিক্ষক/শিক্ষিকাগণ শর্টকাট চালু করেছেন। কলেজ ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে এই মুখুস্ত বিদ্যার অভ্যাস কি আদোই ধরে রাখা সম্ভব। আর ধরে রাখলে কতটুকু সফল হওয়া যাবে। তাই দেখা যায় বেশীর ভাগ গ্রাম থেকে উঠে আসা ছেলে মেয়েরাই ইউনিভার্সিটিতে চান্স পায় এবং রেজাল্ট ভাল করে। আর শহরের ছেলে মেয়েরা বেশীর ভাগ স্কুলে খুব ভাল রেজাল্ট করে কিন্তু কলেজে গিয়ে আর কুলিয়ে উঠতে পারে না ফলে যেমন তেমন রেজাল্ট করে। এটা ওদের দোষ নয় ওদেরকে যেভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। বর্তমান শহুরে স্কুলেগুলো এবং স্কুলের শিক্ষক/শিক্ষিকা হয়ে গেছেন বাণিজ্যিক। স্কুলের ক্লাশ কোনমতে শেষ করে মনোযোগ দেন নিজের কোচিং কিংবা অন্য কারো কোচিং-এ। আরো কিভাবে বেশী ইনকাম করা যায়। একজন শিক্ষকের তো এটা বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। শিক্ষকের বৈশিষ্ট্য তাই যা সে শিখেছে তার সবটুকু শিক্ষার্থীদের কে মনপ্রাণ উজাড় করে ঢেলে দেয়া। তার শিক্ষা ওদের মধ্যে যেন আলো ছড়ায়। তা না করে তারা স্কুলে বইয়ের লাইন দাগিয়ে দেন, আর কোচিং এ গিয়ে সে দাগানো লাই গলদ:করণ করান আর খাতায় লেখান।

শিক্ষক/শিক্ষিকা স্কুল শেষে কোচিং খুলে তাদের কি দেচ্ছেন, দাগানো লাইন মুখুস্ত, গাইড বই দেখে অংক করানো আর মাস শেষে কোচিং ফি, সাথে মডেল টেষ্ট ফি, হ্যান্ড নোটের (খরচের ৪ গুন) চার্জ। তারা একদিকে স্কুলে বেতন নিচ্ছেন, কোচিং-এ টাকা নিচ্ছেন বিনিময়ে শিক্ষার্থীকে কি দিচ্ছেন ? মুখুস্ত, লাইন দাগানো, গাইড ফলো ইত্যাদি। তারা কি একবারো ভাবেন না তারা কিভাবে শিখেছেন, তাদের পদ্ধতি কেমন ছিল।

একটা দেশের প্রধান সম্পদ শিক্ষা। সেই শিক্ষা তো বাণিজ্যিক হতে পারে না। মাস শেষ হলে বেতন, সাথে আছে কত রকমের ফিরিস্তি-লাইব্রেরী ফি, খেলাধুলা, মডেল টেষ্ট ফি, পরীক্ষার ফি, খাতা, ড্রেস, মনোগ্রাম, (হোস্টেলের থাকলে ইফতারের ফি, দারোয়ানদের বকশিসের টাকা)। এত যদি এক্সট্রা টাকা নেয় তার বিনিময়ে একটা স্কুল, একজন শিক্ষক একটা শিক্ষার্থীকে কি দিচ্ছে ? মুখুস্ত বিদ্যার পদ্ধতি, গাইড বইয়ের পোকা, বানিয়ে লেখার যাবে না, অংক রেজাল্ট মিললেও হবে না গাইড বা ম্যাডামের মত করতে হবে। তো শিক্ষার্থীরা কষ্ট করে অংক না করে গাইডের অংক মুখুস্ত করে। এটা কোন শিক্ষার পদ্ধতি???

তারউপর বাজারে গাইড বই হচ্ছে বানান ভুলের রাজ্য। এমনকি শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক মূদ্রিত বই এর মধ্যেও বানান ভুল পাওয়া যাচ্ছে প্রচুর। এব্যপারে শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ কি কোন তদারকি করছেন বা তাদের আমলে কি আছে এব্যাপার গুলো। আমার মতে, শহরের সব কোচিং বন্ধ করে দেওয়া উচিত। ক্লাশ ফাইফ পর্যন্ত কোন গাইড বাজারে ছাড়া যাবে না, গাইড বই প্রকাশক ও সম্পাদক এর বানান ভুলের জন্য যথাযোথ শাস্তিযোগ্য ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। বর্তমানে কলেজের শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতি যেভাবে স্কুলের শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতিও তাই চালু করা উচিত তাতে যোগ্য শিক্ষক পাওয়া যাবে কিছুটা হলেও। যোগ্য শিক্ষক না হলে মেধা তৈরী হবে না। এরকম ডিজিটাল পদ্ধতি চলতে থাকলে মেধাবীরা অঙ্কুরে ধ্বংস হয়ে যাবে। দেশ অনেক সামনে এগিয়ে যাবে ??? তাই নয় কি ?

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১০ বিকাল ৫:৩১
৭টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×