চার অক্ষরের একটি শব্দ 'ভালোবাসা'।
প্রতিটি প্রাণের মাঝেই ভালোবাসা থাকে। মিশে থাকে ভালোবাসার অস্তিত্ব। ভালোবাসা কখনো নিজের অবস্থান বিচার করে আসে না। অথবা দেখে না ভালোবাসার মানুষটির অবস্থান। সবার জীবনেই কোন একসময় ঠিকই আসে ভালোবাসা। হ্যা, সবার জীবনেই আসে। কারো জীবনে ভালোবাসা সৌভাগ্যোদয় হয়ে আসে কারো বা আবার এই ভালোবাসাই নরকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। কারো মনে ভালোবাসা আনন্দ উল্লাস আর খুশি হয়ে থাকে কারো বা কেবল বেদনাময়।
ভালোবাসা কোন জাত-বেজাত, উচু-নিচু, ধনী-গরীব, সাদা-কালো, জ্ঞানী-অজ্ঞানী, ছোট-বড় বিচার করে আসে না। ভালোবাসা সবসময় মুক্ত। যখনতখন যেকেউ যেকোনো মানুষকে ভালোবাসতে পারেন। ভালোবেসে মনের ঘরে সাজাতে পারেন গোপন স্বর্গ। মনের ঘরের ভালোবাসা, স্বর্গ কারো নজরে আসে না। মনে মনে অনেক কিছুই করা যায় কল্পনায় ভেসে ভেসে। বাঁধা দিতে পারেনা কেউ মনের ভিতর সাজানো ভালোবাসার সাম্রাজ্যে। তেমনি মনের ভেতর খুব গভীর ভালোবাসায় সাজানো একটা সাম্রাজ্যের নীরবে হারিয়ে যাওয়ার গল্পই আজ শোনাতে এসেছি। আমি তো গল্পবাজ নই, তাই সুন্দরভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে আপনাদের বোঝাতে পারবোনা। তবে একটা নীরব ভালোবাসার কথা বলে যেতে পারবো নিজের মতো করে।
জীবন অনেক দিন যাবত ফেসবুক চালায়। দিনরাত চব্বিশঘণ্টার মধ্যে ঘুম বাদে খাওয়ার সময়ও বাম হাতে মোবাইল টিপে আর ভাত খায়। ছেলেটি সারাক্ষণ মোবাইল নাড়াচাড়া করার তালেই থাকে। তার হাতে থাকা মোবাইল যেন কেবল আল্লাহ্ আল্লাহ্ করে তার টিপাটিপি সহ্য করতে না পেরে। ফেসবুক গুগলি টুইটার ইউটিউব সবই চালায় সে। পুরা যৌবন তার। সারাক্ষণ কেমন যেন যৌবন জ্বালা তাকে তাড়া করে বেড়ায়। কাউকে কিছু বোঝতে দেয় না। মনের চাওয়া আকাঙ্ক্ষা তার মনেই থাকে। ফেসবুকে নাকি কতজনে প্রেম করে। জীবন মাঝেমধ্যে এগুলো খবর শুনে আর মনে মনে ভাবে হাইরে পুড়া কপাল আমার! আমার জন্য একটা মাইয়াও নাই, যে আমারে ভালোবাসবে, আদর করে মিষ্টি কথায় আমার মন ভোলাবে! ফেসবুকে অনেক মেয়ের আইডি। কিন্তু কখনওই কোন মেয়ের সাথে জীবনের কথা হল না, বা কোন মেয়ে ভুলেও তার সাথে একবার কথা বললো না! তাই মাঝেমধ্যে জীবন নিজের ভাগ্যকে দোষে আর কয় হাইরে ভাগ্য! তুই একটা ভালোবাসার মানুষ নিয়েও আইতে পারলি না!
জীবন ফেসবুকে নতুন একটা পেজ খুলেছে। পেজটি তার এক ফেসবুক বন্ধু খুলে দিয়েছে। তাই জীবন খুব খুশিখুশি। মনের আনন্দে লিখে চলেছে সেই পেজ-এ। ভালোই লাইক পাচ্ছে। অনেক বন্ধু খুব আন্তরিক হয়ে ওঠেছে। রাত প্রায় দুটো বাজে। জীবন ফেসবুকের পেজ-এ নতুন একটা পোষ্ট লিখে শেষ করেছে কিছুক্ষণ আগেই। এমন সময় পেজ ইনবক্সে একজন ম্যাসেজ দিল মনে হল। হ্যা, ম্যাসেজই। এই লোকটি এর আগেও ম্যাসেজ দিয়েছে কয়েকদিন। জীবন খুব ভালোই মনে করছে তাকে। খুব সুন্দর করে কথা বলেন (ম্যাসেজ লিখেন)সে। সেই লোকটির ম্যাসেজ দেখে জীবন খুশি বেজার কিছুই হল না। জীবন সবসময় ভাবে কোন মেয়ে তার ইনবক্সে কিছু লেখুক, কিন্তু আজ পর্যন্ত তা আর হল না....!
ম্যাসেজ অপশন খুলে দেখে- 'ভাই কেমন আছেন?'
জীবন লিখে দিল 'ভালো অাছি ভাই'।
প্রতিউত্তর এলো, 'আপনার পোষ্টগুলো খুব সন্দর, আমার খুব ভালো লাগে'। জীবন ধন্যবাদ লিখে বেরিয়ে এলেন। ফেসবুকে ঘুরছে, বন্ধুদের পোষ্টে লাইক আর কমেন্ট করছে.....।
কিছুক্ষণ পর ঘুমিয়ে পড়বে ভেবে পেজটা আরেকবার দেখতে পেজ-এ ঢোকলো। নোটিফিকেশন দেখতে গিয়ে ম্যাসেজ দেখে নতুন কয়েকটা। ম্যাসেজ দেখতে গিয়ে জীবন একটু স্থির হলো মনে হচ্ছে! সেই শুভাকাঙ্ক্ষী এবার বেশ কয়েকটি ছবি পাঠিয়েছে। সবগুলি ছবিই মেয়ে মানুষের। সবগুলি মেয়েই খুব সুন্দরী মনে হচ্ছে। জীবন এবার ভাবনায় পড়ে গেল। লোকটি কি মজা করছে আমার সাথে। নাকি লোকটি নিজেই একটা মেয়ে? অনেক মেয়েই তো আজকাল ছেলেদের নামে আইডি খুলে ফেসবুকে ঘরছে। তাই প্রোফাইলে ছবিগুলো ডাউনলোড দিয়ে লোকটির প্রোফাইলে গিয়ে দেখছে। তার প্রোফাইল পুরাই লক করা। কিছুই জানা গেল না। যাক, সে যেই হোক তাতে আমার কিছু যাবে আসবে না। এখন ছবিগুলো দেখি। জীবন ইনবক্স থেকে লোড করা ছবিগুলো দেখছে বারবার....।
একটা ছবি খুব সুন্দর লাগছে জীবনের। মেয়েটির সালোয়ার কামিজ পড়া মেকআপ ছাড়া সাদাসিধে ছবিটি জীবনের চোখদুটিকে জয় করে নিয়েছে মুহূর্তেই। জীবনের চোখ যেন সড়তে চায়ছে না মেয়েটির চোখ থেকে। ভাবছে, ওই চোখে যেন যাদু আছে। যতো দেখছি ততোই চেয়ে থাকতেই মন চাইছে। আজই প্রথম দেখছি, অথচ মনে হচ্ছে.... কত যুগযুগান্তরের পরিচিত সে। ছবিতেও কি প্রাণবন্ত জীবন্ত মনে হচ্ছে মেয়েটিকে...!
সম্ভবত গায়ের রং শ্যামা মনে হচ্ছে। পরনের সালোয়ার কমিজ দেখে মনে হচ্ছে অনেক ভদ্র একটি মেয়ে। যাকে দেখামাত্র চোখ বন্ধ করে বলা যায় ভালোবাসি। জীবনও দেরি করেনি। মেয়েটির চোখের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলে দিল আই লাভ ইউ...। তোমার মতো একজনকেই আমি খুঁজছি বহুবছর দুচোখের সীমানা জুড়ে। আজ পেয়েছি। তুমি আমার মনের সীমানা পুরোটাই দখল করে নিয়েছো একটি দেখাতেই। এই মন তোমার বাধ্যপ্রজা হয়ে তোমাকে রাণী করে রাখতে চায়। তুমি শুধু ভালোবাসা দিও উজাড় করে। আমি দিনরাত্রি তোমার ভালোবাসার সাগরে ভাসবো রংধনুর কাছ থেকে সাতরঙ চেয়ে নিয়ে। রাঙিয়ে তুলবো তোমার মনের ভূবন আমার ভালোবাসার অমিত ঢেলে। তুমি হবে আমার...? ছবি নিরুত্তর। কোন কথা বলে না। জীবন একা একাই মনের কথাগুলো বলে গেল....।
জীবন সেই ভালো লাগার মেয়েটির পাশে নিজের নাম লিখে সুন্দর করে পেজ-এর প্রোফাইল পিকচার করে দিল। মনে তার অনেক আনন্দ আজ। কত যুগ যুগান্তরের চাওয়া যেন আজ পূরণ হয়েছে। মনে মনে ভাবছে, কার না কার ছবি প্রোফাইলে দিলাম। যদি কিছু বলে তো...? বলুক, তবুও আমার মনের মতো ছবিটি আমার প্রোফাইল পিকচার হিসেবেই থাকবে। মনের অানন্দে ফেসবুক অফ করে শুয়ে পড়লো জীবন।
অনেক কিছু ভাবছে শুয়ে শুয়ে। মেয়েটির কি নাম, কোথায় বাড়ি, বিয়ে হয়েছে কিনা আরও কত কি ভাবনা আজ জীবনের চোখের ঘুম চোখ থেকে সরিয়ে সপ্তম আসমানে পাঠিয়ে দিয়েছে হয়তো। অনেকক্ষণ শুয়ে আছে ঘুম আসছে না। বারবার মেয়েটির মমতাময়ী গভীর চোখ দুটির ভাষা খুঁজতে ব্যাকুল জীবনের সকল ইন্দ্রীয়। মনে মনে বুকের সাথে জড়িয়ে কপালে চুমো দিয়ে বলছে, আমি তোমার অপেক্ষাতেই হয়তো এতটা বছর পুড়েছি মনের অশান্ত কামনার আগুনে। আজ থেকে তোমাতেই ভাগ করবো আমার যতো কামনা বাসনা। তুমি আমার হবে তো....? এই একটা প্রশ্নেই জীবনের সকল তন্দ্রা কেটে যায় নড়েচড়ে ছলছল করে ওঠে চোখের পাতা....।
ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে জীবন, তার ঠিক নেই। ঘুম থেকে জেগে গোসল সেরে আবারও তৈরি ফেসবুক খুলার জন্য। নেট অন করতেই অনেকগুলো নোটিফিকেশন। নোটিফিকেশন পড়ছে। হঠাৎ চোখে পড়ে গেল সেই আইডি থেকে পেজ ইনবক্সে ম্যাসেজ। তাড়াতাড়ি পেজ-এ ঢোকেই ইনবক্সে ঢোকে দেখে 'ভাই করছেন কি, আপার ওই ছবিটা প্রোফাইলে দিয়েছেন কেন? জানেন সে কে?' জীবন তো সত্যিই কিছু জানেনা সেই ছবিটি সম্পর্কে! সর্বনাশ! না জানি কি হয়েছে। তাড়াতাড়ি লিখে দিল, 'জানিনা তো ভাই, কে উনি? ম্যাসেজটি লিখে পরবর্তী ম্যাসেজ গুলো দেখেই জীবনের সব বোঝা হয়ে গেল, সে ভুল করেছে। সেই ছবিটি তার প্রোফাইলে দেওয়া মোটেও উচিৎ হয়নি। তার উপর তার নাম লিখে। ইসরে, কেউ যদি দেখে তো সত্যিই সর্বনাশ হয়ে যাবে জীবনের। তাড়াতাড়ি প্রোফাইল পিকচার ডিলিট করে নতুন আরেকটি ছবি সেট করে দিল জীবন। তারপর ইনবক্সে গিয়ে লিখে আসলো, 'সরি ভাই, বোঝতে পারিনি। সাদাসিধে পোষাকে দেখে ভেবেছিলাম খুব সুন্দরই তো, তাই প্রোফাইল পিকচার করে দিয়েছিলাম। ক্ষমা করবেন।
একরাতের সামান্য ভাবনায় মেয়েটি মনের অনেক খানি জায়গা দখল করে নিয়েছিল। মনে সামান্য দুঃখবোধ হলেও কিছু করার নেই, ভুলে যেতেই হবে। জীবন যে অতোটা যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি, আর পারবেও না। মনের ভালোবাসাটুকু আর কোথাও প্রকাশ করেনি জীবন। চুপচাপ মনের ঘরে তালা দিয়ে রেখেছিল। অনেকদিন, অনেকসময় দেখেছে সেই ছবিটি। নীরবে মনে মনে বলেছেও অনেক কিছু। সে পর্যন্তই সীমাবদ্ধ।
হঠাৎ একদিন মধ্যরাতে জীবনের মোবাইলে কল হচ্ছে। জীবন তখনো ফেসবুকেই ঘুরিতেছিল। একটা টেলিফোন নাম্বার থেকে কলটি এসেছে। রিসিভ করে সালাম দিয়ে কান পেতে শুনতে চাইছে, কে ? ওপাশ থেকে মেয়ে কণ্ঠ শুনে জীবন একটু অবাকই হলো। কারণ, এত রাতে জীবনকে খোঁজার মতো কেউ নেই। তারপর একটা মেয়ে! ওদিক থেকে, 'আপনি কে?' জীবন কোন বনিতা না করে সোজাসুজি বলে দিল জীবন।
আপনার বাড়ি কোথায়?
এবার জীবন একটু জানার চেষ্টা করে বললো, আপনি কে? তাছাড়া আমার নাম্বার পেলেন কোথায়?
আমি একটা মেয়ে বুঝতেই পারছেন। আপনার নাম্বারটা আপনার ফেসবুক থেকেই পাওয়া। বিরক্ত হচ্ছেন?
না না, বিরক্ত হচ্ছি না। আমার ঠিকানা জানতে চাইলেন, তাই আপনাকে জানতে চাওয়া।
লাইনটা হঠাৎ কথা বলার মাঝে কেটে গেল। জীবন আর ট্রাই না করে আবার ফেসবুকে মন দিল। ভাবছে, এত সুন্দর কণ্ঠ, আমাকে খোঁজে.... কে হতে পারে...? না, কিছু ঠাওর করতে পারলো না। এর মধ্যেই আবারও কল, সেই নাম্বার থেকেই। এবার বলছে 'আপনি কি করেন?'
জীবন সরাসরি বলে দিল 'আমি চাকরি করি'। আপনি কি করেন, কোথায় থাকেন?
আপনি খুব ভালো।
কেমনে বোঝলেন?
না মানে, আপনার লেখা গুলো ভালো লাগে।
ভালো লাগলো প্রশংসা শুনে। আপনি কিন্তু আপনার পরিচয় দিলেন না?
ও ও, আমি বিদেশ থাকি। জ্বি এর কাজ করি, বাড়ি যশোর।
ও আচ্ছা। আমার বিশ্বাস হচ্ছে না আপনি জ্বি এর কাজ করেন। আপনি কি বিবাহিত?
না, পাত্র খুঁজছি মনে মনে হা হা হা।
এমন সময় আরেকটা মেয়ে কণ্ঠ মনে হলো তাকে ডাকছে। সে বললো, আসছি...। লাইন কেটে গেল।
জীবন ভাবছে, সে কি সত্যিই বিদেশ থাকে বা জ্বি এর কাজ করে! মোটেও বিশ্বাস হলো না। কারণ, তাকে যে ডাক দিল সেও একটা মেয়ে মনে হলো। মনে হলো তারা হাসাহাসি করছে। তবে কেনই বা আমার নাম্বারে ফোন দিল। কিছুই বোঝে ওঠতে পারছেনা জীবন। যাক সে যেই হোক। তার চিন্তা করে আমার লাভ নেই। জীবন আবার ফেসবুকে ঘুরছে। কিছুক্ষণ পর আবার ফোন, সেই নাম্বার থেকেই! রিসিভ করে ওপাশের হাসাহাসির শব্দ শুনতে পাচ্ছে।
হ্যা ভাই, আপনি খুব সুন্দর।
ধন্যবাদ। খুশি হলাম।
আপনি কিসের চাকরি করেন?
আমি গরীব মানুষ আপু....। কোনরকম একটা সরকারি চাকরি ভাগ্যে জোটেছে, সেটাই ধরে পড়ে আছি আর কি।
আমিও গরীব ভাই। তাই তো বিদেশের নামে মানুষের বাড়িতে জ্বি এর কাজ করছি।
ওপাশে হাসি শুনা যাচ্ছে তাই জীবন চুপ হয়ে বোঝতে চেষ্টা করছে। কিছুই বোঝতে পারছে না।
কাকে যেন চুপ হতে বলে আমাকে বলছে, হ্যালো, বললেন না কিসের চাকরি করেন?
এবার সোজাসুজি বলে দিল জীবন, পুলিশ।
ও ও ভালো। পুলিশ তো ভালো চাকরিই। তো কতদিন ধরে করছেন?
ওপাশে কে যেন বলছে চলবে চলবে, আরও কি যেন বলছে ঠিক বোঝা গেল না। জীবন উত্তর দিল, পুলিশের চাকরি শুনে হাসছেন আপু...?
না না ভাই, সেরকম না। মালিকের মেয়েটা সমবয়সী তো, তাই দুষ্টুমি করছে। বললেন না কতদিন ধরে চাকরি করছেন?
ও হ্যা, চৌদ্দ বছর।
চৌদ্দ বছর....! আপনার প্রোফাইল ছবি দেখে কিন্তু বোঝা যায় না।
হুম, হয়তো। ছবিটা তিনমাস আগেই তুলেছি মোবাইলে।
যাক ভালো লাগলো আপনার কথা শুনে। একটা সত্যি কথা বলবেন?
সবি তো সত্যই বলছি, এখনো মিথ্যে বলিনি আপনার সাথে।
আপনি কি এখনো অবিবাহিত ?
জীবন এবার ভাবছে মিথ্যে বলবে, বোঝবে তাকে, কে সে। কিন্তু হঠাৎ করে সত্য কথাই বলে দিল, 'না, আমি বিবাহিত। আমার একটা আট বছরের ছেলেও আছে।
ওপাশ থেকে ও ও বলে সেই যে ফোন কেটে গেল আর কখনওই সেই নাম্বার থেকে ফোন আসে নি। জীবন ভাবে, ভালোই হলো, মেয়েটি অযথা মনে কষ্ট পেত। তারচেয়ে বরং অাগেই সব বলে দিয়েছি, সেটাই ভালো। জীবন আর কখনো সেই ফোনালাপের মেয়েটিকে ভাবেনি। কিন্তু ছবি দেখে মেয়েটিকে অনেকদিন ভেবেছে। কখনো কখনো মনে মনে আফসোস করেছে। ভেবেছে, ছোটসময় যদি বাপের কথামতো ঠিকমতো লেখাপড়া করতো, হয়তো সেও একসময় ঢাকা ভার্সিটি পড়তো। বাপের স্বপ্ন তো সেরকমই ছিল। তার একটা ছেলে ভার্সিটি পড়বে। আর সেই স্বপ্নটা জীবনের উপরই দেখতো বেশি। কারণ, পড়া লেখায় জীবনই একটু ভালো ছিল। কিন্তু তা আর হয়নি! ইন্টার পাশ করেই জীবনকে চাকরিতে দিতে হয়েছে তার বাপের। জীবন মাঝেমধ্যে একটু ভাবলেও তেমন দুঃখ করে না আর অতীত ভেবে। যা হবার হয়েছে। কিন্তু সেই মেয়ের ছবিটি দেখলেই একটু ভাবে জীবন.....।
এক রাতের ছবি দেখে ভালোবাসা হয়তো পরেরদিন সকালেই শেষ হয়েছিল, কিন্তু, সেই ভালোবাসাটুকু অনেকদিন ভাবিয়েছে জীবনকে। দুঃখ নয়, আফসোসও নয়...। প্রায় দুই বছর পর সেই ছবির মেয়েটির বিয়ের ছবি দেখে জীবনের চোখ যেন আটকে পড়ে। মনে পড়ে তাকে ঘিরে সেই একরাতের পাগলামী। মুহূর্তে ভিজে ওঠে চোখের পাতা। মনে মনে তার সামনের দিনগুলির সুখ ও শান্তি কামনা করে একটা ভালোবাসার সমাধি দিয়ে দিল চুপিচুপি। কেউ জানলো না একটা ভালোবাসার মরণ হলো নীরবেই।
এখন মাঝেমধ্যে জীবন ভাবে, মানুষের মন কতোটা মুক্ত! ভালোবাসা কখন যে কার উপর ভর করে সপে দিতে পারে নিজের মনটাকে তা কোন মানুষই বোঝতে পারেনা হয়তো। এরকম কত ভালোবাসা নীরবে শেষ হয়ে যায় তার কোন হিসেব কেউ রাখে না, কেউ বোঝে না, কেউ হয়তো জানেই না কখনো। কিছু ভালোবাসা হারিয়ে যায় নীরবে, নিঃশব্দে........
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২৮