আমি কার
_নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন
একটি প্রশ্ন, আমার জীবনকে তুলছে বিষিয়ে;
বারবার আমার হৃদয় দোয়ারে নাড়ছে কড়া।
চাইছে উত্তর সমাধান, করছে আত্ম চিৎকার;
বড়ই বিস্মিত আমি শুনে এ প্রশ্ন 'আমি কার'?
নির্বাক যেন আমি স্তব্ধ বসেই আছি চুপচাপ;
এ কেমন প্রশ্ন, কেমন ইচ্ছে আমাকে জানার!
কি বলবো! কিইবা হবে আমার সঠিক উত্তর!
মন কি বলে, আমি কি শুধুই কেবল আমার!?
আমি দেখি ক্ষুধার সাথে যুদ্ধ করে চলা ভিক্ষুক,
পথ শিশুর ক্ষুধার্ত মলিন মুখ ভেসে ওঠে বারবার;
ঘামে ভিজে ভরা এই শীতে ক্লান্ত শ্রমিকের মুখ,
ভয়ে কম্পিত বুক কৃষকের দুষ্টের জয় জয়কার!
মহাজনের উদ্যত আচরণ, গরীবের হাহাকার,
শোষিতের দীর্ঘশ্বাসে ভারী আজ আকাশ বাতাস;
দুষিত আজি মানুষের বিবেক অন্তর, চারিধার!
কাপুরুষের মতো সহজেই বলি 'আমি আমার'!!
আমার সকল চোখ বন্ধ, বিবেকের বন্ধ দুয়ার,
হায়রে! কেন এত স্বার্থপর আমি! দেই ধিক্কার;
নাপারি চিনতে নিজকে, দুর্বলের পাশে দাঁড়াবার!
বড় বিস্ময়, রহস্যময় অদ্ভুত এ প্রশ্ন 'আমি কার'?
আবৃতি : কবিতা- আমি কার
সামুতে প্রকাশ ৩০ মার্চ ২০১৭ইং
হইল না আমার কবিতা লিখা
_নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন
অনেক দিনের সখ! একটা কবিতা লিখবো-
প্রস্তুতি আর মনে ছিল দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করবোই পূরণ।
সে কবিতায় লিখা থাকবে- মনের অপূর্ণতা
কিংবা হারিয়ে যাওয়া সুখস্মৃতি, ব্যর্থতার ধরণ-
নিঃস্বতা, শূন্যতা, সুখের সেই ভালোবাসা,
প্রিয়া হারা জীবন, স্বপ্ন হারানো ঘর,
নির্মম বাস্তবতা আর দুঃসহ সকল যন্ত্রণা।
ভাবছি! কলঙ্কিত কিছু লজ্জা লুকাবো,
বলা যাবেনা সব, যা দেখে স্রষ্টা নিজেই নীরব!
সভ্যতার স্বর্ণযুগে এসে কি করে লিখবো মৃত মানবতা!
মানুষ মানুষে নেই, জাতিভেদ ধর্ম বর্ণ আর সীমাবদ্ধতা
রুদ্ধ করেছে মানবিকতার দ্বার, শোষকের জয়-উৎসব!
এখনো কাঁদছে ক্ষুধাতুর, গৃহহারা দুর্বল, কৌশলী চতুর
পুড়ে ঘরবাড়ী তুলে ধর্মের ধোঁয়া!
না, নাহ! যাবেনা তা বলা, ব্যবিচারে পুরোহিত মোল্লা!
ধর্ষকের উম্মাদনা চারিদিক, কত মায়ের চোখের জল
নীরবে ঝরে নিত্য। অসহায় নারী কলঙ্কের ভয়ে নিঃস্ব
সিক্ত চোখে ফরিয়াদি, পক্ষে নাই ন্যায্যতা-বিচারফল!
সত্যের বুকে লাথি দিয়ে মিথ্যার জয়ে মাতে বিত্তশালী,
স্বার্থে প্রবাহিত বিচারক! অন্ধ আইন চায় সাক্ষী সাক্ষর,
কে দাঁড়ায় বিপক্ষের কাঠগড়ায় জানটা যদি নেয় খুনি!
এভাবেই বেড়ে চলেছে সমাজের কীট অত্যাচারী দুর্বৃত্ত,
হারিয়ে সামাজিক মূল্যবোধ বাড়ছে দায়িত্বহীন ব্যক্তিত্ব!
সরবে পূঁজিবাদী শোষিত দুর্বল, বিছিয়েছে সমাজপতি
সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে তার প্রতাপ, লাগিয়ে রেখেছে দ্বন্দ্ব।
যুগে যুগে এল কত স্বাধীনতা-মিলেনি শোষিতের মুক্তি!
তাইতো কাদাজলে ভেসে উঠে আজো মৃত শিশুর দেহ,
কাটা-তারে ঝুলে স্বপ্ন আর জলে ভাসে বালিকার লাশ!
দরিদ্র মায়ের সামনেই ধর্ষিত হয় আদরের ছোট্ট খুকি,
কাঁপায় আরশ খোদার- অসহায় কিশোরীর সে আর্তনাদ,
পৌঁছে না শুধু মানুষের কানে! কত নির্মম এই বাস্তবতা!
দাসত্ব সবলের, দুর্বলের নাই কেহ! কলঙ্ক, এবড় লজ্জা।
কি করে লিখবো! যতবার সাজিয়েছি মনের কথাগুলো,
নিষ্ঠুর বাস্তবতা আর ভালোবাসাহীন পৃথিবী-এলোমেলো
করে যায় আমার ভেতর- বাহির জাগতিক সকল চিন্তা,
দূরে কোথাও হারিয়ে যায় কবিতার শব্দ, আ-র ফিরেনা!
স্বার্থে যখন জিম্মি মানুষ-অর্থের কাছে অসহায় ভালোবাসা,
দরিদ্রতা যখন অভিশাপ, কিভাবে দেই আমি প্রিয়ার দোষ!
সুখইতো নিয়েছে বেছে, পাগলেও তো খোঁজে নিজের বোঝ।
কলমটা হাতেই থাকে প্রতিদিন-টেবিলের উপর খোলা খাতা,
চক্ষু নদীতে জলোচ্ছ্বাস-হৃদয় ক্ষতের রক্ত ঝরে ফোঁটা ফোঁটা;
হইল না আমার কবিতা লিখা-ভিজল বারবার খাতার পাতা।।
আবৃতি : কবিতা- হইল না আমার কবিতা লিখা
সামুতে প্রকাশ ২'রা মার্চ ২০১৭ইং
আমি ধূলির মানুষ
_নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন
আমি নজরুল নই, তাই বিদ্রোহী হতে পারিনা,
নই কবিগুরু রবীন্দ্র- বুঝতে পারিনা সাহিত্য-কী।
জীবনানন্দের মতো প্রকাশ করেতে জানিনা
মুগ্ধতা দেশ-রূপ প্রকৃতি।
দেখাতেও না পারি জসীম উদ্দিনের মতো-
গ্রাম বাংলা, গভীর-দেশপ্রেম আর ভালোবাসা।
সাধারণ, অতি সাধারণ নগণ্য এক যুবক আমি,
লিখতে গিয়েও পারিনা-মনের কথা, ক্ষোভ অসন্তুষ্টি।
স্বার্থপর পৃথিবী'র স্বার্থান্ধ মানুষ কত-রূপি
কেবল দুঃখই দিয়ে গেল, যে যতো পারে মন-ভরি!
দুচোখ যায় যতদূর- দেখি সুন্দর রূপ-প্রকৃতি,
মুগ্ধ নয়ন কৃতজ্ঞ স্রষ্টা'য় অপরূপ-বিশ্ব সৃষ্টি,
মানুষের বোধ বিচারে কত চ্যুতি আর বিচ্যুতি!
নির্মম শোষণে দগ্ধ সদা শোষিত,
ভেঙে যায় মন, বিষণ্ণ প্লাবন
ধরে আগুন রক্তে বারুদ জ্বলন্ত।
তবু আমি দুর্বল শীর্ণ মনে রয়ে যাই চুপ,
বিবেকের ধ্বংসনে নিজেকেই করি ক্ষত।
প্রতিবাদ জানিনা কোনো- বোবা আমি,
ভুলে থাকি সহস্র শোষিতের দুঃখ-বেদনা,
ভুলে চেতনা, জাতি-গৌরব, নিজ-কৃষ্টি!
আমি ধূলির মানুষ, ক্ষুদ্রতে রাখি বিশ্বাস,
ধুলো মেখে গায় মাতিয়া ফিরি, উচ্ছ্বাসে
আনন্দে ভরি,পথের মাঝে ছাড়ি নিঃশ্বাস।
অতি ছোট নগণ্য, অগণিত বৃহৎ সমারোহে
আমি কণা-মাত্র, মনুষ্যত্ব পূঁজি-তা বিরহে,
হই সৃষ্টিসুখে ধন্য, বারে বারে মন-তা কহে।
কবিগান বাহে প্রাণ, কবি-মনে সৃজি মনস্তুষ্টি
স্রষ্টা-প্রেমে মহিয়ান বিশ্বাসীবাদ, অমর সৃষ্টি-
ক্ষুদ্রে খুঁজিব জ্ঞান, সদাগতি ধীরভাবে তুষ্টি।
আবৃতি : কবিতা- আমি ধূলির মানুষ
সামুতে প্রকাশ ১৯ জুন ২০১৭ইং
আমি
_নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন
আমি নই কোন দেব-দেবতা, নই কোন মূর্তি
পাথর সিমেন্টে গড়া ভাস্কর্য নই মহামানব ঋষি।
আমি মানুষ, রক্ত মাংসে গড়া সাধারণ মানুষ
আমার মাঝে আছে হাসি-কান্না অনুভব কষ্টবোধ,
ভালোবাসায় গড়া আমি মানুষ, আছে অনুভূতি।
তাই বুঝি কষ্ট লাগে, অমানবিক-বৈষম্যে পুড়ি।
মানুষ মানুষের উপাদান হারিয়ে নৈতিকতা নীতি
পশুতুল্য মনুষ্যত্ব, চারিদিক মানুষরূপি-মুখোশ,
অন্ধ বিবেক, মনুষ্যত্বহীন মানুষের চরিত্রদোষ;
মানুষকে করে রাখছে বশ্য যেন বদ্ধ খাচার পাখি!
বোনের চোখেমুখে ভয়-বিভীষিকা, আশ-খরা চৈতি!
নির্লুপ্ত মানুষের রুচি পশুসুলভ বিচরণ দুষ্কৃতকারী,
দুর্বলে সবলের অত্যাচার, শিশু-বাচ্চাটিও বেহুশ,
সমাজের নির্মমতা পাষণ্ড মানুষ-আত্মা কি অদ্ভুত!
কন্যাগৃহ মায়ের আর্তনাদ ধর্ষকের কাছে ফরিয়াদি।
মানুষের অধিকার নিয়ে পাশাখেলা-য় রাজনীতি।
লাশের উপর দাঁড়িয়ে গন্ধ শুকে, নয় দেশাত্মবোধি,
ভুলে জাতিসত্তা চেতনা সাম্প্রদায়িক ক্ষমতার লোভ,
ন্যায় কম্পিত অন্যায়ে দাম্ভিক দাপট সাধারণে ক্ষোভ;
হয়-নিঃস্ব নয়তো লাশ যদি কেহ হয়ে উঠে প্রতিবাদী।
ধর্মের নগ্ন ব্যবহার কুলসিত হচ্ছে মানুষ ঘৃণিত সৃষ্টি।
মানবিকতা হারা নির্মমতায়-পূর্ণ মানুষ-কূলে অশান্তি,
আস্তিক নাস্তিকবাদ স্রষ্টায় বিভক্তি উপসনায় বিরোধ,
হারিয়ে উদার্যতা ধর্ম যাজক ধর্মের অপব্যবহারে চুপ;
যেথা-শৃঙ্খলা-শান্তি সেথা নির্বাসিত মানবিক গুণাবলি!
স্তম্ভিত অতিশয় নিষ্কণ্টক, হারাই সাধের সুর ভৈরবী,
মনুষ্যত্বহীন পশুতুল্য মানুষ ভস্মি, মমতার অনুরাগী,
বিবেকহীন-অত্যাচারি'র বিরুদ্ধাচরণ, মানবিকতায় অবুঝ,
দেশদ্রোহী'র বুকে বিষ-তির দুঃশাসনে হই প্রতিবাদী সুর;
খুঁজি না ধর্ম-জাতি, সর্বোচ্চাসনে স্রষ্টা সৃষ্টি-র অগ্রগামী।
আবৃতি : কবিতা- আমি
সামুতে প্রকাশ ২'রা জুন ২০১৭ইং
ছোট সময় হয়তো কবিতা পড়েছিলাম, কিন্তু কোন প্রতিযোগিতায় গান কৌতুক ব্যতীত অন্যকিছু কোন দিন করিনি। কবিতা এমনে অনেক পড়েছি, শুনেছি কোন আবৃতি। তবে নিজে কোনদিন আবৃতি করিনি। বেশকিছু দিন যাবত আমার মাথায় ঘুরছে যে, নিজের অকবিতা গুলো থেকে কিছু কবিতা আমি পড়বো এবং আপলোড করে প্রকাশ করবো। কিন্তু, পাগল হইলেও কিছু লজ্জা মনে হয় চোখে আছে, তাই কখনো আবৃতি করা হয়নি। কয়েকদিন আগে একটা আবৃতি করে ইউটিউব এ আপলোডও করেছিলাম কিন্তু সেটা ব্লগে জানাতে সাহস হয়নি। আজ কেমন যেন লজ্জা শরম সব গেছে, নিজের চারটি অকবিতা নিজেই পড়ে আপলোড করেছি। সেগুলো ব্লগেও রেখে গেলাম। জানি অনেকের কাছেই বিরক্তিকর ব্যাপার হবে, তবুও আজ প্রকাশ করেই দিলাম। আপনার সময় নষ্ট করার জন্য দুঃখিত....। পারলে কিছু পরামর্শ রেখে যাওয়ার অনুরোধ, আমার আবৃতি করারও ইচ্ছে আছে.....।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:২৮