প্রায়ই নীরব নিঝুম
শান্ত রাতের সাথে গড়ে ওঠে আমার বন্ধুত্ব!
আমি আর রাত্রি হয়ে যাই অনেক ঘনিষ্ঠ,
একা একা কথা বলি মনে মনে-
আকাশের ওই উজ্জল তারাটির দিকে তাকিয়ে;
কখনওবা অন্ধকারের বুকে জেগে থাকা-
রুপালী চাঁদটার সাথে বন্ধুত্ব জমে ওঠে খুব...।
চারিদিকে নীরব স্তব্ধ বহমান রাত্রির ক্ষয়,
কোথাও কোনো জন-মানুষের সাড়াশব্দ নেই;
দুচোখের দৃষ্টি যায় যতদূর- সুনসান চারিধার
গভীর ঘুমে অচেতন পৃথিবী....।
শুধু নীরব রাত্রি আর আমি, আর কেউ নেই।
রাত্রিকে বলি-
হে ঘুমহীন রাত্রি- তুমি কি জানো
তোমার সাথে আমার কেমন সম্পর্ক...?
কেনইবা তোমার মাঝে ফিরে আসি বারবার...?
কথায় কথায় ভারি করে তুলি তোমার শ্রবণ!
কিছুই বলে না রাত্রি,
নীরবে আমার দিকে ছুড়ে দেয় শীতল দীর্ঘশ্বাস।
তাতেই বুঝে নেই আমি,
হয়তো কষ্টের বুজা বইতে বইতে বোবা হয়ে গেছে,
তাই আর কথা বলতে পারছেনা।
রাতের দীর্ঘশ্বাসের শীতলতায় বুঝে যাই,
একা একা ভাবতে ভাবতে ভেতরবাড়ি
পরিণত হয়েছে বরফ-পাথরে;
তাই বুঝি রাত্রির দীর্ঘশ্বাস খুব শীতল হয়...!
আজকের রাতে কুয়াশা একটু কম হলেও
শীতের যেন কোনো কমতি নেই।
মাফলার গরম জেকেট টাইসের উপরে প্যান্ট
পায়ে শীতোষ্ণ কেডস-
তবুও পশ্চিমা ঠাণ্ডা শীতল বাতাসে
প্রায় কাঁপাকাঁপি অবস্থা আমার শরীরের...!
এরকম কতনা শীতের রাত জেগেছি-
তার কোনো হিসেব রাখা হয়নি কখনও...!
ময়না পাখিটি আমাকে ছেড়ে-
আমার সীমানা ছাড়িয়ে চলে গেছে বহুদূর...
তা প্রায় ষোলো বছর পার হতে কিছুদিন বাকি।
তার পর থেকেই রাতের সাথে আমার সখ্যতা,
মাঝেমধ্যেই ঘুমভেঙে যায মাঝরাতে-
প্রিয়া হারানো মনটাতে অনুভূত হয় ভীষণ শূন্যতা;
হুহু করে কেঁদে ওঠে অন্তর, আর ঘুমুতে পারিনা।
বিছানা ছেড়ে নীরবে বেরিয়ে আসি বারান্দায়,
কখনো কখনো বসে থাকি মুক্ত ছাঁদে।
আজ বারান্দায় বসে আছি চেয়ার পেতে,
ভাবছি হারিয়ে যাওয়া ময়না টিয়া বুলবুলির কথা।
দূরের চাঁদটির সাথে কথা বলছি একা একা,
অজান্তেই বেরিয়ে আসে সব দুঃখ,
বেদনা ভরা কষ্ট আর কিছু সুখ মিশান স্মৃতিকথা;
এক এক করে আমি সব বলে যাই-
চাঁদটি শুধু শুনে যায় মুগ্ধ শ্রোতা হয়ে, কিছুই বলেনা।
আজ, ময়না পাখিটার কথা খুব মনে পড়ছে...!
জানিনা পাখিটি আমার কেমন আছে....?
হয়তো ভেঙে গেছে ঘুম তারও,
লেপ মুড়িয়ে শুয়ে শুয়ে ভাবছে আমার কথা।
ফেলে যাওয়া স্মৃতিগুলো ভাবতে ভাবতে
হয়তো ফোটা দুই অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে গাল বেয়ে।
তাই বুঝি আজ মনটা আমার হয়েছে উদাসী,
হারিয়ে গেছে দুচোখের ঘুম, মনের ক্রান্তি।
না! কিছু ভাবতে পারছিনা!
মাথাটা কেমন যেন যন্ত্রণা করছে খুব...
চুপ হয়ে আছি অর্ধ বাঁকা চাঁদটার দিকে তাকিয়ে।
সত্যিই কি সে আমাকে এখনও ভাবে...!
মনে হয় ভাবে।
দেখেছিলাম প্রিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে
সেই আগের মতোই গভীর মুগ্ধতা লেগে আছে।
ও চোখ আমাকে দেখেই বলে দেয়,
প্রিয়তমা মোর- আজও ভালোবাসে আমায়,
মনে করে মনে মনে....
সোহাগিনী হয়ে দেয় সোহাগ অতি গোপনে।
এই তো কিছুদিন আগের কথা...!
আমার সাথে হেটে হেটে বললো-
আজও আমাকে মনে হলে চোখ ভাসে শ্রাবণে।
আমার সামনে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ
কতো কথাইনা বলে গেল হাসি-মুখে....!
আমি দেখেছি সেদিন অবাক দুচোখে মুগ্ধতায়-
যেনো আষাঢ়ের ভারী আকাশ-
ঘন-কালমেঘ তার চোখ দুটোর ভেতর,
এখনওই হয়তো ঝরবে বৃষ্টি হয়ে...!
হ্যা হ্যা, ঠিকই বুঝেছি আমি,
হয়তো প্রিয়া এখনো ভালোবাসাে আমাকে...।
না! অবাধ্য মনটা কোনো কথাই শুনছে না,
মনে হয় আজ পণ'ই করেছে কাঁদবে বলে...!
আমি কাঁদবো না,
আমি আর ভাববো না,
আমি ফাঁসবো না আর কারো মায়া জালে।
আমি আমার মতোই থাকবো,
বাঁচবো নীরব রাত্রি আর আমি
একাকীত্ব ভুলে হাসবো মন খুলে....।
(২১শে জানুয়ারি ২০১৭ইং)