আমি কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নই, নাই রাজনীতি সম্পর্কিত পড়াশোনা, তাই রাজনীতি বুঝি না। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ হওয়ার ইচ্ছে বা যোগ্যতা কোনটাই আমার নেই। তবে নিজের এই ছোট্ট জীবনবৃত্তে বাংলাদেশের রাজনৈতিক উত্থান পতন ধারাবাহিতা দেখে শুনে এইটুকু বুঝেছি, আওয়ামী লীগ'কে দেশছাড়া করার চক্রান্ত করলে নিজেদের অস্তিত্ব হারাবে বিএনপি-জামায়াত, এটা বলতে আজ কোন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন মনে করছিনা।
গতকাল একটা অনলাইন নিউজ পোর্টালে পড়লাম, বিএনপি নেত্রী ব্যারিস্টার ফারজানা রুমি বলছেন প্রতিদিন তিনজন করে পুলিশ মারেন প্রতিটি জেলায় তাহলেই দ্রুত প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আসবে। আর তখন আওয়ামী লীগ'কে দেশছাড়া করতে দশ মিনিট সময়ও লাগবে না। সেখানে বিএনপি'র ফখরুদ্দিন রেজভীসহ সিনিয়র নেতারাও ছিলেন এবং সবাই রুমির কথায় হাততালি দিয়ে সমর্থন করেন।
হা হা হা আমি হেসে উঠছিলাম পড়তে পড়তে বিএনপি নেতানেত্রীদের ছাগল মার্কা কথাবার্তা শুনে। আপনিও হাসতে পারেন চুপি চুপি কেউ দেখবে হা হা হা। কেনইবা এমন ছাগল মার্কা কথাবার্তা শুনে হাসবেন না আপনি! আওয়ামী লীগ'কে দেশছাড়া করবে বাংলাদেশ থেকে তাও আবার দশ মিনিটে!
বাংলাদেশের কীট মীরজাফরদের নির্বুদ্ধিতার সুযোগ নিয়ে মেজর জিয়া প্রধান সামরিক শাসক হোন। বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির চিরশত্রু জামায়াত ও কিছু ক্ষমতা লোভী অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সঙ্গে নিয়ে প্রধান সামরিক শাসক হয়ে সারাদেশ ও মানুষকে অস্ত্রের মুখে রেখে গঠন করেন বিএনপি নামক রাজনৈতিক দলটি। যার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হওয়া একাত্তরের হায়েনা শকুন আলশামস আলবদর রাজাকারদের দল জামায়াতকে এইদেশে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করা। বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির জন্য জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এঁর সুদূর প্রসারী সফল চিন্তাভাবনা নস্যাৎ করে শুরু করেন বাংলাদেশ ও রাজনীতিতে নিষিদ্ধ হওয়া রাজাকার ধর্মব্যবসায়ী জামায়তের পুনর্বাসন। পাকিস্তানকে খুশি করতে দেশ জাতির সাথে বেঈমানী করে দেশে ফিরিয়ে আনেন এদেশে নিষিদ্ধ একাত্তরের আলবদর প্রধান বাংলাদেশর চিরশত্রু গোলাম আযমসহ জামায়াতে ইসলামের শীর্ষ নেতাদের, ধোঁয়া তুলেন 'বহুদলীয় গণতন্ত্র'।
সুদীর্ঘ ২৪ বছর আন্দোলন সংগ্রাম জেলজুলুম সহ্যকরে বাঙালি জাতির জন্য একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ উপহার দেয়া আওয়ামী লীগ ও সর্বকালের সেরা নেতৃত্ব জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান'কে নিষিদ্ধ করেন সামরিক শাসক মেজর জিয়া। বাংলার অকৃতজ্ঞ বেঈমান মানুষ নামে শোয়রদের দ্বারা বঙ্গবন্ধু সপরিবারে হত্যা হওয়ার পর দীর্ঘ দশ বছর বাংলাদেশের মানুষ আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু'র নামটি পর্যন্ত মুখে আনতে ভয় পেতো। তারপর জাতীয় চার নেতাসহ মুক্তিযুদ্ধে অবদানকারী নেতাদের হত্যা করে নেতৃত্ব শূন্য করেন আওয়ামী লীগ'কে নিশ্চিহ্ন করতেই। কিন্তু মহান আল্লাহ্ সবই বুঝেন ও দেখেন জানেন। আল্লাহ্'র কৃপায় আওয়ামী লীগ বিলিন না হয়ে আবারো পুনর্গঠিত হতে থাকে। ১৫ আগষ্ট ১৯৭৫-এ ইতিহাসের নির্মম নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর মহান আল্লাহ্'র রহমতে বেঁচে যাওয়া বঙ্গবন্ধু'র দুই কন্যাকে সামরিক শাসক মেজর জিয়া দেশে আসতে দেননি। ভেবেছিলেন নেতৃত্ব শূন্য আওয়ামী লীগ ধীরেধীরে অস্তিত্বহীন হয়ে যাবে, হয়নি।
বাংলার মানুষ ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের প্রধান হিসেব অধিষ্ঠিত করেন। শুরু হয় আবারো আওয়ামী লীগের এগিয়ে যাওয়া। মেজর জিয়া আওয়ামী লীগের লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীকে হত্যা করেও অস্তিত্বহীন করতে করেনি। বাংলাদেশের জনগণের অধিকার আদায়ে আবারো আন্দোলন সংগ্রাম শুরুকরে আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু'র সাথে, দেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার উপযুক্ত বিচার আল্লাহ্ দেখিয়েছেন বাংলার মানুষকে, শুনেছে বিশ্ববাসী।
আবারো আওয়ামী লীগ'কে নেতৃত্ব শূন্য করে নিশ্চিহ্ন করতে ১৯৮১ সালের মে মাস থেকে আওয়ামী লীগের বৈঠা হাতে হাল ধরার পর থেকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চক্রান্ত ষড়যন্ত্র করতে থাকেন বিভিন্নভাবে। সরাসরি গুলি করা থেকে এমন কোন পন্থা নেই যা করা হয়নি শেখ হাসিনার সাথে। কথায় বলে 'রাখেন আল্লাহ্ মারে কে'। বারবার ঠিক যেন আল্লাহ্ নিজের হাতেই হেফাজত করেছেন বাংলার গণ মানুষের নেত্রী বাঙালি জাতির কর্ণধার শেখ হাসিনাকে। যাঁরা দেশের জন্য নিবেদিত, মানুষের সুখদুঃখকে যাঁরা নিজের সাথে সম্পৃক্ত করে নেন তাঁদের জন্য আল্লাহ্'র সুদৃষ্টি ও রহমত সবসময় থাকে এর উজ্জল প্রমাণ দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা।
বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯১ ও ২০০১ সালে পাকিস্তানি অর্থে ক্ষমতায় এসে রাজনৈতিকভারে আওয়ামী লীগের সাথে পেরে না উঠে বিভিন্নসময় বিভিন্নভাবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা করতে থাকে। মিছিল মিটিং নিষিদ্ধ করে রাখার সাথে সাথে হত্যা গুম আর মিথ্যে মামলা দিয়ে সবসময় কোণঠাসা করে রেখেও যখন আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে পারছিল না, তখন বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাসের কলঙ্কিত ও জঘন্যতম পন্থায় হত্যা করতে জন্ম দেয় ২১ আগষ্ট ২০০৪ইং। আওয়ামী লীগের সুষ্ঠু জনসমাবেশে গ্রেনেড ও সরাসরি গুলি করে শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চেয়েও ব্যর্থ হোন আওয়ামী লীগের আত্মোৎসর্গ করা নেতাকর্মীর দৃঢ় আত্ম বিশ্বাসসহ জনগণের ভালোবাসা ও আল্লাহ্'র অশেষ রহমতে। তারেক পিন্টু বাবরের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ষড়যন্ত্র দ্বারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কিত গণহত্যায় সেদিন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাসহ ২৬ জনের মৃত্যু ও হাজার খানেক নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়, সেদিনও স্বয়ং মহান আল্লাহ্'র কৃপায় বেঁচে যান জনগণের নেত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করা তো দূরের কথা উল্টো আওয়ামী লীগ আরো দিগুণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যেতে থাকে।
আজ কথায় কথায় বিএনপি নেতারা নির্যাতন বাঁধার কথা উল্লেখ করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার নামে আবারো জনগণকে ধুকা দিতে চায়। গণতন্ত্র নাই গণতন্ত্র নাই বলে বলে পাগলই হয়ে গেছে ফখরুল রেজভী'রা! তাদের কাছে গণতন্ত্রের কথা শুনলে হাসি পায় আমার। গণতন্ত্র তাদের কাছে কেমন সেটা বুঝাই খুব মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে! বিএনপি'র ছাগল মার্কা কথাবার্তা শুনলে মনে হয় ছাগল হাচ্ছি দিয়ে মনে করিয়ে দিবে তাদের গণতন্ত্র কালচার কেমন ছিল। তারা এটা বুঝতে চায় না তারা কতটা দেয়াল গড়েছিল আওয়ামী লীগেন সামনে, কত নির্মমভাবে ধ্বংস করেছিল গণতন্ত্রকে। যাউকগা, আসুন আমিই একটু মনে করিয়ে দিচ্ছি আপনাদের গণতন্ত্র নামের গণতন্ত্র হত্যার কিছু, মনে আছে নিশ্চয়....
দেশের মানুষ ভুলেনি আজও পাঁচ কিলোমিটার হাঁটার পরেও প্রধান বিরোধী নেত্রী শেখ হাসিনাকে সিএমএইচ-এ প্রবেশ করতে দেননি আপনারা!!
তখন দেশে গনতন্ত্র ছিল...!
'শব্দ-দূষণ হবে' এই অজুহাতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে মাইক ব্যবহার করতে দেননি আপনারা!!
তখন দেশে কথা বলার স্বাধীনতা ও গনতন্ত্র ছিল...!
প্রধান বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য রেকর্ড করায় সাংবাদিকদের কাছ থেকে ক্যামেরা কেড়ে নিয়েছেন আপনার!!
তখন দেশে গনতন্ত্র ছিল...!
আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় নেতা শাহ এম এস কিবরিয়াকে হত্যা করেছিলেন।
তখন দেশে গনতন্ত্র ছিল....!!
ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে সুষ্ঠু স্বাভাবিক মিছিলেও আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় কেন্দ্রীয় নেতাদের উপর পুলিশ র্যাব দিয়ে অকথ্য নির্মম নির্যাতন চালিয়েছেন।
সেটা বিরোধী দলের অধিকার ছিল ও দেশে গনতন্ত্র ছিল...!
ন্যক্কারজনকভাবে আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসের ভেতর নারীপুরুষ নির্বিশেষে সকল নেতাকর্মীকে পুলিশ দিয়ে পিটিয়েছেন ভাঙচুর করেছেন।
সেটা বিরোধী দলের প্রতি ভালো আচরণ ও দেশে গণতন্ত্র ছিল...!!
ক্ষমতায় বসেই একুশে টিভিকে বন্ধ করেছেন!
তখন দেশে মিডিয়ার স্বাধীনতা ও গনতন্ত্র ছিল...!
সাংবাদিক মানিক সাহা, হুমায়ূন কবিরদেরকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছেন!!
তখন সাংবাদিকদের লেখার স্বাধীনতা ও দেশে গনতন্ত্র ছিল...!
সামান্য অজুহাত দেখিয়ে সংখ্যালঘু প্রতিটি গোষ্ঠীর জমি জবরদখল করে পাকিস্তানি কায়দায় নির্যাতন করেছেন!!
তখন দেশে গণতন্ত্র ছিল...!
সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন নিয়ে রিপোর্ট করায় শাহরিয়ার কবিরদেরকে ধরে নিয়ে অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছেন!!
তখন দেশে সাংবাদিকদের স্বাধীনতা ও গনতন্ত্র ছিল...!
বোমা মেরে সৎ নিষ্ঠাবান জনগণের কাছের নেতা উল্লাহ মাস্টারকে হত্যা করেছিলেন।
তখন দেশে গনতন্ত্র ছিল...!!
গ্রেনেড ও সরাসরি গুলি করে আপনাদের প্রধান বিরোধীদল নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করেছিলেন। আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের ২৬ শীর্ষ নেতাদের হত্যা করেছিলেন।
তখন দেশে গনতন্ত্র ছিল...!!
আজ এতিমের টাকা চুরির দায়ে সাজা দেয়ায় গনতন্ত্র নেই বলে হাহাকার মায়াকান্না করছেন। তা করেন, কান্নাকাটি করবেন, আন্দোলন করবেন সেটা আপনাদের অধিকার। কিন্তু, গণতন্ত্র নাই, হয়রানি করা হচ্ছে, আওয়ামী লীগকে দশ মিনিটে দেশছাড়া করবেন, এমন ছাগল মার্কা কথাবার্তা ছাড়েন। নিজেদের অস্তিত্বের খোঁজ করেন। সেটাই কাজে লাগবে। আর, পুলিশ মারবেন, জনগণকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মনুষ্যকাবাব বানাবেন, দেশের সম্পদ নষ্ট করবেন, আওয়ামী লীগকে দেশছাড়া করতে চাইবেন! তবে মনে করে দেখুন আপনাদের সময়ের কথাগুলো। যদি ভুলে থাকেন তো শুধু একটু মনে মনে করিয়ে দিচ্ছি....
আওয়ামী লীগ নিশ্চিহ্ন করতে র্যাব, পুলিশ, বুজিবি ব্যবহার করেছেন ২০০৬ইং অক্টোবর মাসে। সেদিন দ লগি বৈঠা ঠেকাতে পারেননি। প্রশাসন হাতে নিয়ে হয়রানির কথা বলছেন? আপনাদের মাত্র ১৩০০ গ্রেফতার করেছে এই সরকার।
আর আপনারা ২৬ অক্টোবর ২০০৬ইং মাত্র একদিনেই গ্রেফতার করেছিলেন ৮,০০০ নেতাকর্মীকে। তারপরও প্রশাসন হাতে নিয়ে কতটা পেরেছিলেন সেদিন তা একবার ভেবে দেখুন। আওয়ামী লীগ দেশছাড়া করবেন, নাকি নিজেরা হবেন তা নিজেকে প্রশ্ন করুন, পেয়ে যাবেন উত্তর। এখন অমন চিন্তাভাবনা করতে গেলে রাতে ঘুমের ঘরেও চিৎকার দিয়ে পানি খুঁজবেন।
আওয়ামী লীগ এই বাংলাদেশকে বিশ্বমানচিত্রে জায়গা করে দিয়েছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে, এবং বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে আওয়ামী লীগ অতন্দ্র প্রহরী হয়ে সবসময় আছে, থাকবে সগৌরবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:২৪