somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রবীন্দ্রনাথ নিজেই ছিলেনই শ্রেষ্ঠ সাম্প্রদায়িক।

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি বিরাট ছন্নছাড়া মানুষ। এলোমেলো জীবন যাপন। যখন যেখানে খুশি সেখানেই যাচ্ছি, ঘুরে বেড়াচ্ছি, ভাল লাগলে একটা বন্দোবস্ত করে থেকেও যাচ্ছি। যখন বাহিরে যেতে পারি না তখন, লাইব্রেরী পাড়াগুলোতে প্রায়ই হেটে বেড়াই। অথবা লাইব্রেরীর বারান্দায় বসে সময় কাটাই। কখনো লাইব্রেরীর টেবিলে কাটিয়ে দেই পুরো টিনের অর্ধেক অংশ। এসবই আমার ভালোলাগার অংশ। আর আমি তাই করি যা আমার ভালো লাগে। এতে কে কি মনে করল তাতে আমার বিন্দুমাত্রও যায় আসে না। সেই লাইব্রেরী পাড়াতেই আমি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নতুন ভাবে আবিষ্কার করি। কবিগুরুর কবিতা পড়ে আমি তাকে চিনেছি অন্যভাবে আর লাইব্রেরী পাড়ার সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোতে উপস্থিত বক্তাদের বক্তৃতায় আমি কবিকে পেয়েছি ভিন্ন ভাবে। এ যেন পরস্পর বিরোধী অবস্থা। পরোক্ষনেই ভাবি, আমি কোন আদার ব্যাপারি হয়ে জাহাজের পাটাতন আর ইঞ্জিন নিয়ে ভাবছি। “দেশের এইসব খ্যাতনামা বক্তারা যাহাই বলবেন তাহাই সত্য বলিয়া বিবেচিত হইবে। ইহার অন্যথা হইলে আপনাকে রাজাকার বলে গন্য করা হইবে”। এরকমই একটি অলিখিত আইন বর্তমানে বলবত রয়েছে। তাই আমি ভয়ে কিছু বলতে চাই না। বললে আবার যদি আমাকে রাজাকার বলা হয়। রাজাকার বলে আমার জন্মসালটিকে ৯০ এর ঘর থেকে টেনে টুনে ৭১ এর কিছু আগে নিয়ে যাওয়া হবে। তারপর আমার বিরুদ্ধে তদন্ত টিম গঠন করে আমার গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তারা কিযে তদন্ত করলেন আর না করলেন দিন শেষে আমার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হবে। তারপর বিজ্ঞ আদালত বলবেন, প্রহরী! গ্রেফতার করো এই নালায়েক রাজাকারটিকে। নিক্ষেপ করো অন্ধকার কারাগারে। তাহার ফাঁসি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত সে যেন পালাতে না পারে।

এরপর এক নব্য রাজাকারকে ফাঁসির দাবিতে ফুঁসে উঠবে শাহবাগ। ইমরান এইচ সরকার নিজের রং জ্বলা কচু পাতা রং এরে পাঞ্জাবিটি পরে এসে বলবেন, আমরা এই রাজাকারের ফাঁসি দাবি করছি। ফাঁসি ছাড়া আমরা শাহবাগে অবস্থিত তথাকথিত গনজাগরন মঞ্চ থেকে বিদায় হবো না। তারপর লাকী আক্তার তাহার ভেড়া মার্কা গলা নিয়ে স্লোগান শুরু করবেন আর তার পাশেই কয়েক ডেকচি তেহেরী রান্না করা শুরু হবে। সেই তেহেরীর লোভেই বেশ কিছু টোকাই লাকী আক্তারের স্লোগানের সাথে স্লোগান দিবে! ফাঁসি ফাঁসি চাই! আর এই অবস্থায় দেশের ২৬ টি টিভি চ্যানেল তাদের লাইভ ট্রিমিং সিসটেমসহ পাগলা কুত্তাগুলোর মত শাহবাগে দৌড়াবেন। দৌড়ে এসে দেখবেন, আরে মাত্র শতাধিক মানুষ! তারপর সেই মানুষগুলোকে একত্রিত করে, টিভির ক্যামেরায় ধারণ করা হবে। সেই শতাধিক মানুষের সংখ্যাটা আর একটু বাড়ানোর জন্য সেই জনতার সাথে রিপোর্টারও কাতারবন্দি হয়ে যাবেন। তারপর বলবেন, নব্য রাজাকারকে ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে ইতিমধ্যেই কয়েকহাজার জনতা উপস্থিত হয়েছেন! টেলিকাস্ট শেষ। এইবার টিভি চ্যানেলগুলোর বার্তা সম্পাদক রিপোর্টারদের কল দিয়ে গালি দিয়ে বলবেন, ঐ মিয়া তোমাকে বললাম ঘন্টা খানিক ধরে লাইভ দিবা! ১০ মিনিটও হয় নাই লাইভ বন্ধ করে দিলা! রিপোর্টার জবাবে বলবে, বস! মানুষই তো নাই। শ’খানেক মানুষরা জটলা বানাইয়া হাজার খানক কইলাম। এইবার হাজার খানিক লোক আনার ব্যবস্থা করেন। সেগুলোরে লাখ খাইক বইলা চালানোর ব্যাবস্থা করতেছি।

এদিকে তেহেরি নিয়ে আবার আর এক ঝামেলা। ইমরান বাবু মুরগীর তেহেরীর ব্যবস্থা করেছেন। সেগুলো আবার যে সে মুরগী না। পাকিস্তানি মুরগীর পা,গিলা,কলিজা,চামড়ি,ফ্যাপড়া এইসব দিয়া তেহারী। এই তেহেরী দেইখা শখানেক মানুষের মাথা গেলো আউলাইয়া। মানুষ তেড়ে গেল, ইমরান এইচ্চার দিকে। ইমরান এইবার মুখ চোখ কাঁচুমাচু করে কয়, ভাই সেই দিন কি আর আছে! আগে বন্ধু রাষ্ট্রের দূতাবাস থেকে গাড়ি গাড়ি টাকা আসত। এখন তারা পকেটেও টাকা দেয় না। আর শিল্পপতিরা তো আমাগোর উপর থাইক্যা মুখ তুইল্যা নিছে। কি করুম কন? কিন্তু ক্ষুধার্থ মানুষের রাগ বলে একটা কথা আছে। মানুষজন রাগ হয়ে সমস্তা তেহেরি ইমরান এইচ সরকারের মাথার উপর ঢেলে দিল। সেই তেহেরীর নিচে পড়ে দম বন্ধ হয়ে ইমরান সাহেব পটল ‍উত্তোলন করিলেন। দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয় শহীদ। আচ্ছা এই ব্যাটার জন্যও কি ইন্নালিল্লাহ পড়ান যাইবো?



এতো কিছুর আশংকা আছে। তারপরও লিখি। লিখতে যখন বসেছি তখন না লিখলে কি আর চলে। এই শাহবাগী বুদ্ধিজীবিরা সুযোগ পেলেই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে অসাম্প্রদায়িক কবি বলে দাবি করেন। কবিগুরু হলেন অসাম্প্রদায়িকতার মূর্ত প্রতীক। আমাদের বুদ্ধিজীবিরা মুখটাকে হাসি হাসি করে যখন এই কথাগুলো বলেন তখন আমি একটা বিষয় কল্পনা করি। আজ যদি এই সভায় কবিগুরু উপস্থিত থাকতেন তবে নিজের পায়ের চপল দিয়া থাপড়াইয়া বুদ্ধিজীবি ব্যাটার দাঁত মুখ বাঁকা কইরা দিতেন।

কিন্তু কেন? কারণ, ভারতীয় উপমহাদেশে অনেক সাম্প্রদায়কি কবি অথবা লেখক ছিলেন। তাদের মধ্যে অন্যতম শরৎচন্দ্র,ঈশ্বরচন্দ্রসহ আরো অনেকেই। কিন্তু এদের সকলকে ছাড়িয়ে সাম্প্রদায়িক কবির শ্রেষ্ঠ মুকুটাও কবিগুরুই ধারন করেছিলন। ১৯০৪ সাল। পশ্চিমবঙ্গে তখন হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা সর্বাঙ্গে গ্রাস করে ফেলেছে। তারপর মারাঠা অঞ্চলের শিবাজী উৎসবের আদলে কলকাতাতেও শিবাজী উৎসবের আয়োজন করা হয়। সেই শিবাজী উৎসবকে কেন্দ্র করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিবাজী উৎসব কবিতা লিখেন। সেখানে তিনি বলেন,

“সেদিন শুনিনি কথা-আজ মোরা তোমার আদেশ
শির পাতি লব।
কন্ঠে কন্ঠে বক্ষে বক্ষে ভারতে মিলিবে সর্বদেশ
ধ্যানমন্ত্রে তব।
ধ্বজা করি উড়াইব বৈরাগীর উত্তরীবসন
দরিদ্রের বল।
‘এক ধর্মরাজ্য হবে এ ভারতে’ এ মহা বচন
করিব সম্বল।”

ভারতকে তিনি শুধুমাত্র একটি ধর্মরাজ্যে দেখতে চান। এম সাম্প্রদায়িক মনোভাব এর আগে কেউ কখনো দেখিয়েছে কিনা আমার জানা নেই। সাম্প্রদায়িক হওয়া আমার দৃষ্টিতে খারাপ কিছু নয়। কারণ অসাম্প্রদায়িকতা বলতে বাস্তবে কিছুই নেই। পৃথিবীর প্রত্যেক মানুষই সাম্প্রদায়িক। যেমন, আমাদের শাহবাগীরা নিজেদেরকে অসাম্প্রদায়িকতার তল্পিবাহক বলে থাকেন। কিন্তু তারা নিজেরাও মঙ্গল প্রদীপ জ্বালানোর সংস্কৃতি লালন পালন করেন। কিছু হলেই শহীদ মিনারে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালানোর কর্মসূচী পালন করেন। এই মঙ্গল প্রদীপ সংস্কৃতিকি অসাম্প্রদায়িক? মোটেও না। বরঞ্জ এটিও আরো বড় সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি। আমরা যেমন বলে থাকি, নিরপেক্ষ বলতে আদৌত কোন শব্দ নেই। হয় আপনি পক্ষে অথবা বিপক্ষে। মানুষের এই অস্থির মনটিকে কখনো কোন অবস্থাতেই নিরপেক্ষ রাখতে পারবেন না। তেমনি আপনি আপনার বিশ্বাস থেকেও কোনদিন অসাম্প্রদায়িকত হতে পারবেন না। প্রতিটি মানুষই সাম্প্রদায়িকত। তারপরও যারা নিজেকে অসাম্প্রদায়িক বলে পরিচয় দেয়, তারা হল সুবিধাবাদ জিন্দাবাদ। এই সুবিধা আদায় করে তারা তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৩৮
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×