সময়টা ১৯৮৯ সাল।
পাকিস্তানের মিউজিক বাজারে অচেনা এক শিল্পীর নতুন একটি গান আসল। গানটির টাইটেল ছিল ‘দিল দিল পাকিস্তান’। রাতারাতি সেই গানটি পাকিস্তান ছাড়িয়ে সারাবিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে ফেলল। সেই আলোড়ন আজও তেমনি অটুট রয়েছে। পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় গানের প্রথম স্থানটি দখল করে নেয় ‘দিল দিল পাকিস্তান’। যা আজও প্রথম স্থানেই রয়েছে। সেই সাথে পাকিস্তানের মানুষ নতুন একটি নামের সঙ্গে পরিচয় হয়। নামটি ছিল জুনায়েদ জামশেদ।
সেই সময় তিনি পাকিস্তানের ‘লাহোর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনষ্টিটিউট এন্ড কলেজ’ এর শিক্ষার্থী ছিলেন। ‘দিল দিল পাকিস্তান’ গানটির সাথে জুনায়েদ জামশেদ লাখো পাকিস্তানী তরুনীর চোখের ঘুম হারাম করে দেন। সেই থেকে জুনায়েদ জামশেদের পথ চলা শুরু। এরপর তিনি পপ মিউজিক জগতে একটি আলোচিত এবং আলোড়িত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
২০০০ সাল থেকে ২০০৩ সাল। এই সময়টির মাঝে জুনায়েদ জামশেদের সাথে পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার সাঈদ আনোয়ারের পরিচয় ঘটে। সেই পরিচয় থেকে সখ্যতা। সখ্যতা থেকে বন্ধুত্ব। তারপর সেই সাঈদ আনোয়ারের হাত ধরেই তিনি পপ সংগীতের অন্ধকার জীবন থেকে দ্বীন ইসলামের আলোকিত জীবনে ফিরে আসেন।
তাঁর ফিরে আসাটা মোটেও সহজ ছিল না। এরপর একে একে সব শো ক্যানসেল করে দেন। যার কারণে তাঁকে প্রচন্ড অর্থনৈতিক কষ্টে পড়তে হয়। তাঁর গাড়িটিও বিক্রি করে দিতে হয়। তারপরও তিনি হতাশ হননি। আল্লাহর উপর সকল ভরসা রেখে নতুন ব্যবসা শুরু করেন। পাঞ্জাবী পায়জামার ব্যবসা।
আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহপাক তাঁর এই ব্যবসাতে বরকত দান করলেন। বর্তমানে তাঁর ৪৫ টি পাঞ্জাবী পায়জামার শো রুম রয়েছে। তাঁর সেই পাঞ্জাবী পায়জামা গুলো 'J' ব্র্যান্ডে মাল বলা হয়। 'J' ব্র্যান্ড পাকিস্তানের অন্যতম জনপ্রিয় ব্রান্ড। কিন্তু মজার বিষয় হল, জুনায়েদ জামশেদ নিজেই সবগুলো শো-রুম দেখেন নি।
তাঁর একদিকে ব্যবসা চলছিল, ভিন্ন দিকে তিনি সারাবিশ্বে দ্বীনের দাওয়াতের কাজ আঞ্জাম দিতে সফর করছিলেন। সেই দ্বীনের দাওয়াতের কাজ থেকে ফেরার সময়ই বিমান দূর্ঘটনায় পরিবারসহ শহীদ হন। আল্লাহপাক তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে শাহাদাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করুন। সেই সাথে তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌস এর মেহমান হিসেবে কবুল করুন।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:০০