সোহেল তাজের খোলা চিঠি
অনেক কষ্ট করে গড়ে তোলা সুন্দর একটি জীবন ছিল যুক্তরাষ্ট্রে। কৈশোর বয়স থেকে নিজে দিনরাত কাজ করে পড়াশুনার খরচ চালিয়েছি। বাবা মায়ের দেয়া শিক্ষা, দেশপ্রেম থেকেই দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে সবকিছু ছেড়ে দেশে ফিরে গিয়েছিলাম। প্রথমে সামাজিকভাবে কাজ শুরু করেছিলাম। আর্সেনিক নিয়ে সচেতনার কাজও অনেক করেছি। গ্রামে গঞ্জে ঘুরেছি দিনের পর দিন। বাবা ও মায়ের রাজনৈতিক সহকর্মীদের পরামর্শ এবং কাপাসিয়ার মানুষের অনুরোধেই আমার সক্রিয় রাজনীতিতে আসা। তারা আমাকে বুঝিয়েছিলেন রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম থেকে আরো ভাল করে দেশের মানুষের জন্য কাজ করা সম্ভব। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও শরীরে বয়ে চলা বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের রক্তই আমাকে আরো বেশী অনুপ্রাণিত করেছে সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যোগ দিতে এবং দেশের মানুষের জন্য ভাল কিছু করতে। ক্ষমতা, অর্থসম্পদ, খ্যাতি প্রতিপত্তির জন্য আমি রাজনীতিতে যোগ দেইনি। যদি উদ্দেশ্য তাই হতো, তাহলে সবকিছু মেনে নিয়ে এখনো এমপি ও মন্ত্রীত্বের পদ আঁকড়ে থাকতাম। মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা তিনি যেন আমাকে বাকী জীবন এই লোভ লালসার উর্ধ্বে রাখেন।
নিজের দলীয় ও তৎকালীন তত্বাবধায়ক সরকারের সৃষ্টি করা শত প্রতিকুলতা সত্বেও ২০০১ সালের নির্বাচনে কাপাসিয়ার মানুষের ভালবাসায় প্রথমবারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলাম। দূর্ভাগ্য, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে ক্ষমতায় আসে বিএনপি-জামাত জোট সরকার। আমার কাপাসিয়ার মানুষের উপর বিএনপি-জামাত জোেেটর চলতে থাকে একের পর এক হামলা, মামলা ও নির্যাতন। প্রতিবাদে কাপাসিয়ার সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি-জামাতের বিরুদ্ধে শতস্ফুর্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলি। বিএনপি-জামাতের হাতে নৃশংশভাবে খুন হয়েছেন আমার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহযোগী যুবলীগ সভাপতি জালাল উদ্দীন সরকার। পুলিশ নির্মমভাবে হত্যা করেছে জামাল ফকিরকে। এসবের প্রতিবাদে শান্তিপূর্ন অনশন করতে গিয়ে বার বার পুলিশের নির্মম হামলার শিকার হয়েছি। বস্তুত: বিএনপি-জামাতের ৫টি বছর হামলা, মামলা ঠেকাতে আমাকে বেশীরভাগ সময় রাজপথ ও আদালত প্রাঙ্গনে সময় কাটাতে হয়েছে। কোন ব্যবসা বানিজ্যে নিজেকে জড়াইনি। পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে যা আয় হতো তাই দিয়েই চলতো আমার রাজনীতি। এমনকি পৈত্রিক সম্পত্তিও বিক্রি করেছি রাজনীতির জন্য। খুব সাদামাটা সাধারণ জীবন যাপন করেছি। বিগত তত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরের কর্মকান্ড আমাকে হতাশ করলেও ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলের যুগোপযোগী নির্বাচনী ইশতেহার আমাকে রাজনীতিতে আরো বেশী উৎসাহিত করে। যে ইশতেহারটি ছিল প্রগতিশীল ও দিনবদলের একটি ঐতিহাসিক অঙ্গীকার। আশাবাদী হই একটি সুস্থ্য রাজনৈতিক সংস্কৃতির। যে সংস্কৃতির মাধ্যমে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। জনগন পাবে আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার। যুদ্ধাপরাধী, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড, জাতীয় চারনেতা, উদীচি ও একুশে আগস্ট হত্যাকান্ড ও সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া ও অহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যাকান্ড এবং ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা সহ সকল হত্যাকান্ডের বিচার হবে। বাংলাদেশে হবে সন্ত্রাস ও জঙ্গীমুক্ত একটি রাষ্ট্রব্যাবস্থা-সবমিলিয়ে একটি সুন্দর সমাজব্যবস্থার স্বপ্ন দেখেছিলাম। আর তাই যে মন্ত্রনালয় কেউ নিতে চায়নি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাসে সেই মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব নিয়েছিলাম। এই দায়িত্বটি ছিল শুধু মন্ত্রীত্ব নয়, একটি চ্যালেঞ্জ। কারণ সু-শাসন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব অপরিসীম। আর সুশাসন প্রতিষ্ঠার দায়িত্বের অনেকটাই ছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের। আমার সব সময়ই চেষ্টা ছিল পুলিশ বাহিনীকে একটি সৃশৃংখল পেশাদার বাহিনী হিসেবে গড়ে জনগনের বন্ধু করে তোলা। মন্ত্রীত্বের শেষ দিন পর্যন্ত আমার সেই চেষ্টা অব্যাহত ছিল। কতটুকু পেরেছি বা কেন পারিনি সে কথায় না গিয়ে শুধু এইটুকু বলতে চাই, আমি আমার মায়ের কাছ থেকে শিখেছি সব সময় অনিয়ম ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। সেটা যেই করু না কেন। যতটুকু সম্ভব আমি আমার সীমিত ক্ষমতার মধ্যে চেষ্টাও করেছিলাম। সেই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াও শুরু করতে সহযোগিতা করেছিলাম।
সোহেল তাজের পদত্যাগ পত্র
কথার পেছনে অনেক কথা থাকে। অনেক লুকায়িত সত্য থাকে। যা দেশ, জনগন ও দলের বৃহত্বর স্বার্থে জনসম্মুখে বলা উচিত না। আর তা সম্ভবও নয়। শুধু এইটুকু বলি, আমি “সঙ্গত” কারণেই এমপি ও মন্ত্রীত্বের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি। যে কয়দিন দায়িত্ব ছিলাম মন্ত্রীত্বের শপথ থেকে বিচ্যুত হইনি। সততা ও নিষ্টার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। দূর্ণীতি অনিয়ম ও অব্যস্থাপনার বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত স্বোচ্চার ছিলাম। যখন মনে করেছি আমার সীমিত ক্ষমতায় জনগনের প্রতি দেয়া কমিটমেন্ট আর রক্ষা করা সম্ভব নয় তখন স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছি। কারণ পদ বা ক্ষমতার লোভে আমি রাজনীতিতে আসিনি। যদি তাই হতো তাহলে মন্ত্রীত্বের লোভনীয় সুযোগ সুবিধা ছেড়ে প্রবাসে চাকুরীর জীবন বেছে নিতাম না। অর্থ সম্পদ বা ক্ষমতার বিন্দুমাত্র মোহ আমার নেই।
আমার কাপাসিয়াবাসীর উদ্দেশ্যে বলতে চাই, সংসদ সদস্যের পদ থেকে পদত্যাগের এই সিদ্ধান্ত নিতে আমার অনেক চিন্তাভাবনা করতে হয়েছে। মানুষের প্রত্যাশা, ভালবাসা, স্নেহ, আমার জন্য এলাকার মানুষের ত্যাগস্বীকার, আবেগ এই সবকিছু চিন্তা করার পরও বাস্তবতা বিচার করে আমি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছি। কাপাশিয়ার মানুষের সম্মান রক্ষার্থে আমার সামনে এছাড়া আর কোন পথ খোলা ছিল না। কারণ কাপাসিয়ার মানুষের মর্যাদা ও সম্মান আমার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত বলে আমি বিশ্বাস করি। আমি জানি, আমার এই সিদ্ধান্তে আপনারা ক্ষুব্ধ ও অভিমানী হবেন, প্রতিবাদ করবেন। কারণ যে ভালাবাসা ও সম্মান আপনারা আমাকে দিয়েছেন এই সম্মানের উপর কোন কালিমা পড়ুক তা আমি চাই না। সঙ্গত কারণেই সবকিছু খুলে বলতে পারছি না। এই কাপাসিয়ার মাটি ও মানুষের সাথে আমার নাড়ির সম্পর্ক। এই কাপাসিয়ার মাঠে ঘাটেই বেড়ে উঠেছেন আমার বাবা বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদ। সেই মাটির গন্ধ আমার গায়েও। তাঁর আদর্শ নিয়েই আমার পথচলা। কাপাসিয়ার মানুষের জন্য অনেক কিছু করার স্বপ্ন নিয়েই আমি প্রবাস জীবনের ইতি টেনেছিলাম। আপনাদের অকুন্ঠ সমর্থন ভালবাসা ও দোয়া পেয়েছি। এর প্রতিদান হয়তো ততটুকু দিতে পারিনি। তবে সেই চেষ্টা আমার সব সময় ছিল। আমি এইটুকু বলতে চাই, সংসদ সদস্যের পদ থেকে পদত্যাগ করলও আপনাদের পাশে থাকবো সব সময়। হয়তো অন্য কোনভাবে, অন্যকোন পথে। এই প্রতিজ্ঞা করছি।
সক্রিয় রাজনীতিতে পুনরায় আসার সম্ভাবনা না থাকলেও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আমার বাবা তাজউদ্দীন আহমদের আদর্শে গড়া আওয়ামী লীগই আমার শেষ ঠিকানা। কারণ এই দলটির সঙ্গে আমার বাবার রক্ত মিশে আছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি বিস্বস্থ থেকে তিনি জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়েছেন। কোন ষড়যন্ত্রের কাছে মাথা নত করেননি। জীবন দিয়েও তা প্রমাণ করে গেছেন।
কাপাসিয়ায় আমার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী যারা আমার জন্য ত্যাগ স্বীকার, জেল জুলুম ও অত্যাচার সহ্য করেছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলবো, আমি সব সময় যেটা আপনাদের বলে এসেছি তা হচ্ছে ব্যক্তিস্বার্থ কেন্দ্রিক রাজনীতি পরিহার করতে হবে। ক্ষমতা ও প্রতিপত্তির রাজনীতি বাদ দিয়ে বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীনের মত নীতি আদর্শের রাজনীতি করতে হবে। ঐতিহ্যবাহী কাপাসিয়ার নেতৃত্ব যেন ভালমানুষের দ্বারা পরিচালিত হয় সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আপনাদের উপর। কাপাসিয়ার জনগনকে সঙ্গে নিয়ে আপনারা সেই পথে এগিয়ে যান। আপনাদের সকলের মত আমিও তাঁকিয়ে আছি ভবিষ্যতের দিকে। হয়তো একদিন সুস্থ্য একটি রাজনৈতিক সং্স্কৃতির মাধ্যমে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ হবে সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী একটি দেশ।
এই প্রত্যাশায়
তানজিম আহমদ (সোহেল তাজ)
তারিখ:২৩ এপ্রিল ২০১২
সুত্রঃ http://www.khobor24.com/?p=38924
আলোচিত ব্লগ
খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?
খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।
পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন
একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়
সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।
সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?
সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ঘুষের ধর্ম নাই
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।
হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।
পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন