somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্ববাজারে খাদ্যঘাটতি ও বাংলাদেশ: “ক্ষুধিতের বিপ্লব শুরু হতে আর দেরী নেই”

০৫ ই এপ্রিল, ২০০৮ দুপুর ২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতকাল এক জার্মান পত্রিকায় “ক্ষুধিতের বিপ্লব শুরু হতে আর দেরী নেই” শীর্শক খবরটি পড়ে এই লেখাটি শুরু করছি। শিরোনামের পর এভাবে লেখা হয়েছে। “ইকুয়াডরের চাল, জার্মানীতে দই অথবা ফ্রান্সের রুটি, যাই হোক না কেন, সারা পৃথিবী জুড়ে খাদ্যদ্রব্যের দাম ক্রমাগত ও ভায়াবহ গতিতে বেড়ে চলেছে। কিন্তু সবচেয়ে বিপদে আছে গরীব রাষ্ট্রের গরীব নাগরিকরা। তাই বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সাহায্যসংস্থাগুলো দ্রুত বিশ্বব্যপী এই সমস্যার জন্যে বিশ্বোপযোগী সমাধান দাবী করছে।“

প্রকৃতিক দুর্যোগ ও পরিবর্তন, জ্বালানী তেলের উর্ধমুখী দাম, চীন ও ভারতের নিজেদের বর্ধিত চাহিদা খাদ্যদ্রব্যের এর অবিরাম ও রেকর্ডপরিমাণ উর্ধগতিতে সবচেয়ে বেশী অবদান রেখেছে। হাইতিতে নুডলস এর দাম দ্বিগুন, মিশরে বেড়েছে রুটির ৩৫% ও ভোজ্যতেলের দাম ২৫% ।

পাশাপাশি দ্রুত উন্নতিশীল দেশগুলোতে, বিশেষ করে চীন ও ভারতে ভোজ্যপন্য ব্যাবহারের পরিমানও বেড়েছে অনেক। চীনে ১৯৮০ সাল থেকে মাথাপিছু মাংস খাওয়া বেড়েছে ১৫০ শতাংশ। সেখানে শুয়রের মাংসের দাম গতবছরে বেড়েছে ৫৮ শতাংশ।


এই অবধি পত্রিকার খবর ও তার সারাংশ। এসবের আলামত অনেকদিন যাবৎই চোখে পড়ছে। আমার স্ত্রী একটি কোম্পানীতে কাজ করে, যারা পাইকারী হারে চীন সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে জার্মানীতে অরগ্যানিক খাবারদাবার আমদানী করে। তার নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি। গতবছর অবধিও চীন নিজ দেশের রপ্তানীকারকদের সাবসিডি দিয়ে উৎসাহিত করতো। ওদেরকে কোন ট্যক্স দিতে হতো না। এবছর সে সাবসিডি বন্ধ করেছে, নানা ধরণের ট্যক্স বসিয়ে পুরোনো রপ্তানীচুক্তিকে আরো বেশী কঠিন করতে চাইছে।

মোদ্দা কথা হচ্ছে এই যে, প্রতিটি দেশই এখন খাদ্যসংকটে ভুগছে। যাদের নেই, তারা তাদের ক্ষমতানুযায়ী আমদানী করে সে সংকট পূরণ করতে চাইছে, যাদের আছে, তারা তা রপ্তানী না করে সামনের দিনের জন্যে মজুদ রাখতে চাইছে। ফলে ধনী দেশের মানুষ কোনভাবে খেতে পারলেও, আমরা না খেয়ে বা আধপেটা থাকছি।

আমাদের দেশে চালের দাম এখন দ্বিগুনের চেয়েও বেশী। অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারন মানুষ। এই অবস্থাকে দুর্ভিক্ষ বলা যেতে পারে কি, এ নিয়ে বিতর্ক তৈরী হয়েছে। আমরা ভারত কে চালের দাম বাড়িয়েছে বলে অভিযুক্ত করি। এসব বিষয় ও তার কারণ নিয়ে একটু আলোকপাত করতে চাইছি। ভারতের দিকে আঙ্গুল তুলে ভারত বিদ্বেষীরা রাজনৈতিক উদ্দেস্য হাসিল করতে পারে বটে, তবে তাতে আসল সমস্যা ধারেকাছেও আসা হবে না। ভারত আমাদের কথা না ভেবে, তার নিজের নাগরিকদের কথাই ভাববে ও এটাই স্বাভাবিক। ভারত বিদ্বেষীরা ভারতের কাছে যা আশা করে, নিজেদের পরিমন্ডলে নিজেরাও তা পূরণ করতে সক্ষম নয়। এরা কোনদিনও নিজের সন্তানের পেটে আগে খাবার না দিয়ে অন্যকে সাহায্য করতে চাইবে না। আমি নিজেও তা করতে যাব না। তারপরও জানি যে, অন্যের আছে এধরণের দাবী বা প্রত্যাশার অধিকারও আমার নেই। ওরা তা জানে না, বা জানতে চায় না, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলই এদের কাছেই মুখ্য বলেই আঙ্গুল তুলে অন্যকে দোষারোপ করে। আমি ভারতপন্থীও, ভারতবিদ্বষীও নই, কারণ জানি, নিজেদের প্রয়োজনকে পাশ কাটিয়ে কেউ আমাদের জন্যে কিছুই করবে না ও এটাই স্বাভাবিক। কোন দেশই নিজের লাভ না দেখে অন্যের জন্যে কিছু করবে না। আমদের দেশ ধনী হলেও করতো না।

১) বাংলাদেশের বাজারদর নির্ধরিত হয় বড় ব্যাবসায়ী ও আড়তদারদের সিন্ডিকেটের হাতে। পাশাপাশি ব্যাবসায়িক সুবিধার আশায় এরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্বার্থও বহন করে। এরা জানে, তত্বাবধায়ক সরকার সাময়িক। এরা তাই সরবরাহ কমিয়ে বা বন্ধ করে দিয়ে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চাইছে।
২) সিডরের ক্ষতি।
৩) আন্তর্জাতিক খাদ্য পরিস্থিতি।
৪) সরকারের অযোগ্যতা।

এর পাশাপাশি আরেকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাইছি, যা আরো বেশী ভয়ংকর মনে হয়। ধনী ও উন্নত দেশগুলো ইদানীং “পরিবেশবাদের ধুয়ো তুলে” জৈব জ্বালানীর দিকে ঝুকছে। আলামত টের পাওয়া যাচ্ছে বেশ ভালভাবেই। জার্মানীতে যোগাযোগমন্ত্রী পেট্রোলে যাতে জৈব জ্বালানীর পরিমান ৫% এর বেশী না হয়, সে নির্দেশ দিয়েছেন। গরীব দেশের প্রতি অনুকম্পা তার কারণ নয়, কারণ কিছু পুরোনা মডেলের ইন্জিনের এই খাদ্য নাও হজম হতে পারে। অর্থাৎ জৈব জ্বালানী এখন আর পরিকল্পনা নয়, চরম বাস্তবতা। ৫% হলেও এখনই এখানকার গাড়ীতে মানুষের মুখের আহার কেড়ে জৈব জ্বালানী ঢোকানো হচ্ছে। বুশও গরীব রপ্তানীকারক দেশগুলোকে আখের চাষ করতে বাধ্য করাতে চাইছে, যাতে আমেরিকায় জ্বালনী তেলের অভাব না হয়।

সে সমস্ত দেশের সাধারণ চাষীদেরকে এ ধরণের চাষে বাধ্য করছে সে দেশের জমিদার শ্রেনীর ব্যাবসায়ীরা। অনেকটা আমাদের দেশে বৃটিশ ঔপনিবেশিক সময়ের কুখ্যাত “নীল চাষের” মতো। কী ভয়ংকর! মানুষের পেটের খাবার কেড়ে নিয়ে যন্ত্রের পেটে ঢোকানো! কিন্তু এটা সত্যি, সাইন্স ফিকশন বা বানোয়াট কোন কাহিনী হয়। আমাদের সত্যিই দেয়ালে পিঠ ঠেকেছে এবার। এখন প্রবল চাপে নি:শ্বাস বন্ধ হতে বাকী।

কিন্তু করনীয় কি? আমার মতো চুনোপুটির কি বলার থাকতে পারে? শুধুই বলতে পারি আমাদের সমস্যার আরো কাছাকাছি আসার চেষ্টা করা উচিৎ। এখন তথাকথিত বিশ্বায়নের যুগে প্রতিবেশীর দিকে আঙ্গুল তুলে অভিসম্পাত বিদ্বেষ বাড়াতে পারবে বটে, কিন্তু লাভ হবেনা সামন্যও। যেখানে পৃথিবীর অনেক অংশে সীমানাই তুলে দেয়া হয়েছে, সেখানে আমরা প্রতিবেশীর সাথে বাস, ট্রেন যোগাযোগ বা করিডোর হলেই “সব নিয়ে গেল, মারলো রে, খাইল রে” বলে পাড়া মাত করি। পাড়া মাত করার দিন এখন শেষ। আমাদেরকে প্রসারিত দৃষ্টি নিয়ে আরো দুরে তাকাতে হবে। নিজেদের দেশে সাবধানতা, পরিকল্পনা কাজে লাগানোর পাশাপাশি দেশের বাইরেও আন্তর্জাতিক জনমত তৈরী করতে হবে। ইওরোপের সাধারণ মানুষের মাঝে অনেকে রয়েছেন তাদের সরকারে আগ্রাসী বানিজ্যক মনোভাবকে সমর্থন করেন না। তারা অনেকেই এখনই সোচ্চার। তাদের মাঝেও জনমত তৈরী করতে হবে, যাতে জৈব জ্বালানী উৎপাদন মানবিক কারণেই পুরো নিষিদ্ধ করা হয়। এরা বিশ্বায়ন বিশ্বায়ন বলে গলা ফাটায়, গরীব দেশগুলোর খাদ্য সমস্যাও যে বিশ্বায়নের একটি জরুরী অংশ, সেটা পরিস্কার বুঝিয়ে দিতে হবে বিশ্ববাসীকে। তা না হলে “ক্ষুধিতের বিপ্লব শুরু” করা না ছাড়া আর কোন পথ থাকবে না ক্ষুধিতের।



(এখানে লিখব না বলে ভেবেছিলাম। কিন্তু অনেকসময় জরুরী প্রয়োজনীয়তা বিভিন্ন সিদ্ধান্তের জন্যে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।)
৮টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×