somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুর্দিনের ছোটগল্প: ভালোবাসা ও নুন ঝালের দিনগুলো

০৯ ই এপ্রিল, ২০০৮ দুপুর ১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কাঠফাটা রোদে দর দর করে ঘামতে ঘামতে বাড়ী ফিরলেন মাজেজুল আলম। রাস্তার ময়লা, মানুষ, ড্রেন, খানাখন্দ পেরিয়ে এতটা পথ হাঁটতে দম বেরিয়ে যায়। তারপরও আসা যাওয়ার ভাড়া মিলিয়ে বাসভাড়ার সাত টাকা বাঁচানো এই দুর্দিনে যে কতোটা জরুরী, সেটা কে বুঝবে? বাড়ীর কাছাকাছি এসে পা আর চলতে চাইছিল না। কোনক্রমে টেনে হিঁচড়ে বাকী পথটুকু পার করলেন। দরদর করে ঘাম ঝরছে মাথা আর শরীর বেয়ে। বউ সামিনা বেগম একটি পাখা আর এক গ্লাস পানি নিয়ে দৌড়ে এলেন। পাখার বাতাসে একটু ঠান্ডা হয়ে পানিটুকু মুখে দিয়ে যেন একটু দম ফিরে পেলেন মাজেজুল আলম।

- বাসে ভীড় ছিল বেশী? জানতে চাইলেন সামিনা।
- হ্যা! সংক্ষেপে উত্তর দিলেন মাজেজ।
- সেজন্যে দেরী হলো?
- হ্যা, একটা বাসে উঠতে পারিনি। পরেরটায় উঠেছি।
- এত কষ্ট! একটা রিকশা করে চলে আসতে?

কোন উত্তর দিলেন না মাজেজ। বুক ফেড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসতে চাইছিল। সেটাও চেপে রাখলেন। দশ বছরের ছেলে মৃদুল আর মেয়ে সাত বছরের মালা একটু দুরে দাঁড়িয়ে বাবার দিকে তাকিয়েছিল। বাবার এই অবস্থা দেখে কাছে আসতেও সাহস পাচ্ছিল না। একটু সুস্থির হয়ে এদের দিকে ইশারা করতেই এগিয়ে এলো তারা। এই গরমের মাঝেও ওদের শরীরের উত্তাপে আত্মার ভেতরে এক শীতল শান্তি অনুভব করলেন মাজেজুল আলম।

খাবার ঘরে গিয়ে দেখেন, আগে থেকেই সাজিয়ে রেখেছেন সামিনা। শরীরে রাজ্যের ক্লান্তি আর পেটে জলন্ত ক্ষিদে। দ্রুত মুখহাত ধুয়েই খেতে বসলেন।

খাবার মুখে তুলেই চেহারা বিকৃত করলেন মাজেজ। নুনে, ঝালে একাকার! সামিনা কিছুটা ঝাল ভালবাসলেও বাবা ও ছেলে মেয়ে কেউই ঝাল খেতে চায়না। তাই এবাড়ীতে কম ঝালেই রান্না হয় সচরাচর। আজ ও এমন করলো কেন? মেজাজ খারাপ করে মুখের দিকে তাকাতেই মুখ নামিয়ে ফেললেন সামিনা। কিন্তু তার চোখের দৃষ্টিতে এমন কিছু দেখলেন, যে চুপ করে যেতে বাধ্য হলেন মাজেজ। রোজকারের চেয়ে প্রায় অর্ধেক ভাত খেয়ে হাত ধুয়ে উঠে গেলেন খাওয়া ছেড়ে।

রাতে ঘুমোতে গিয়ে মশারী তুলে বিছানায় ঢুকে দেখেন অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে চুপচাপ শুয়ে আছেন সামিনা। ছেলে মেয়ে তখন গভীর ঘুমে মগ্ন। খুব আস্তে, আদরে স্ত্রীর পিঠে হাত রাখলেন মাজেজ। শরীরটা কেঁপে উঠলো যেন। কাঁদছে কি সামিনা? স্ত্রীকে নিজের দিকে ঘোরাতে আকর্ষন করলেন। সামিনা কোন বাঁধা না দিয়ে ঘুরলেন স্বামীর দিকে। কিন্তু হাত দুটোয় চোখ ঢাকা। সামিনা কাঁদছে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে।

- সামিনা সোনা, সামিনা সোনা, তোমার কি হয়েছে? তোমার চোখে জল কেন? নরম আদরে স্ত্রীকে জড়িয়ে বললেন মাজেজ।
উত্তরে আরো জোরে কেঁদে উঠলেন সামিনা। কান্নার দমকে কেঁপে উঠল তার বাড়ন্ত শরীর। আবারো আদরে সামিনা সোনা বলে ডেকে ডেকে তার মাথায়, চুলে হাত বুলিয়ে দিলেন মাজেজ। এতে মনে হলো কিছুটা শান্ত হলেন সামিনা।
- তুমি আজ কিছুই খেতে পারোনি। নুন, ঝাল এতো বেশী ছিল! বলেই আবার কেঁদে উঠলেন সামিনা।
- তাতে কি হয়েছে? এজন্যে কি কেউ কাঁদে নাকি সামিনা সোনা, লক্ষী বউ আমার। কাল ঠিক করে রাঁধলেই তো হলো। বলেই স্ত্রীকে ঘন করে কাছে টানলেন মাজেজ।

কিন্তু শরীর শক্ত করে দুরেই রইলেন সামিনা। আবারও টপ টপ করে জল গড়িয়ে পড়লো চোখের কোল বেয়ে। কাঁদতে কাঁদতেই বললেন,
- কালও রান্না এমনই হবে। নুন, ঝাল বেশীই থাকবে।
- কেন? একটু অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন মাজেজে।
- ঘরে বেশী চাল নেই। মাস খরচের টাকাও শেষ। বাকী এক সপ্তাহ চলবে কি করে জানিনা। নুন, ঝাল বেশী দিলে ছেলেমেয়ে সহ আমরা সবাই একটু কম খাই। তাতে যদি এ সপ্তাহটা চলে!

বলেই আরো জোরে ডুকরে কেঁদে উঠলেন সামিনা। ছেলে মেয়েরাও সে কান্না শুনে জেগে উঠলো। জড়িয়ে ধরলো মা কে । শুধুমাত্র নির্বাক মাজেজুল হক মশারীর ফাঁক দিয়ে উপরের কড়িকাঠের দিকে তাকিয়ে রইলেন।

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০০৮ দুপুর ১:১৮
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×