somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Abiogenesis: নিষ্প্রাণ থেকে প্রাণ

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বন্ধুবর তাজইদ্দিন শামসুলের একটি লেখা…



পৃথিবীর বয়স প্রায় ৪৫২ কোটি বছর। আর পৃথিবীতে প্রাণের উদ্ভব আনুমানিক ৩৮০ কোটি বছর পূর্বে।


পৃথিবীতে প্রাণ কিভাবে এলো?

এ প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য abiogenesis হচ্ছে বিজ্ঞানীমহলে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য অনুকল্প (Hypothesis). Abiogenesis অর্থ ' জড় পদার্থ তথা নিষ্প্রাণ থেকে প্রাণের উৎপত্তি৷' যাইহোক, অণুকল্পটি কী বলে সেটা বুঝার জন্য শিশুপৃথিবী থেকে ভ্রমণ করে আসা দরকার।


৪৫২ কোটি বছর পূর্বে, তথা জন্মলগ্নে পৃথিবী ছিল উত্তপ্ত এক পিণ্ড।আগ্নেয়গিরির উদ্গীরণ, অস্থিতিশীল বায়ুমণ্ডল, স্থির বৈদ্যুতিক আধিক্যের কারণে সর্বদাই বজ্রপাত ঘটতো।বায়ুুুুমণ্ডলে বিদ্যমান গ্যাসের মধ্যে হাইড্রোজেন,অক্সিজেন,অ্যামোনিয়া,মিথেন,জলীয়বাষ্প ইত্যাদি ছিল প্রধান। সুঘটিত ওজোনস্তর না থাকায় সূর্য থেকে আগত অতি-বেগুনী রশ্মি (UV-Ray) খুব সহজভাবেই পৃথিবীতে প্রবেশ করতো।


এ তো গেল আদি পৃথিবীর ভৌত অবস্থার বিবরণ। এখন দেখা যাক,জীব/প্রাণী কী-সব পদার্থ দিয়ে তৈরি।


জীব গঠনের ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালনকারী পদার্থ হচ্ছে হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন, কার্বন, অক্সিজেন ইত্যাদি। উক্ত পদার্থগুলো মিলেমিশে তৈরি করে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং লিপিডস।

মূলত 'প্রাণিদেহ হচ্ছে বিভিন্ন প্রকার প্রোটিনের স্তূপ' আর 'উদ্ভিদদেহ হচ্ছে বিভিন্ন প্রকার কার্বোহাইড্রেটের স্তূপ।'


আমরা জানলাম প্রাণিদেহ প্রোটিন দিয়ে তৈরি।তাহলে প্রোটিন জিনিসটা সংক্ষেপে বলে ফেলি।


প্রাথমিক পর্যায়ে N,H,O,C ইত্যাদি মিলে গঠিত হয় অ্যামিনো এসিড। প্রায় বিশ ধরণের অ্যামিনো এসিড দিয়ে গঠিত হয় একেকটা প্রোটিন অণু।


এখন মূল কথায় আসা যাক, Abiogenesis বলে, আদি পৃথিবীর এরূপ (উপযুক্ত) পরিস্থিতিতে বায়ুুুুমণ্ডলীয় উপাদান তথা H, H2O, CH4 ,NH3  ইত্যাদি পদার্থগুলো বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশ নেয়। ফলে খুব সহজেই অ্যামিনো এসিড তৈরি হয় আর সময়ের সাথে একাধিক অ্যামিনো এসিড মিলে প্রোটিন অণু গঠন করে। তৈরি হয় বিভিন্ন নিওক্লিওটাইড। নিওক্লিওটাইড হচ্ছে RNA,DNA এর গাঠনিক উপাদান এবং নিওক্লিওটাইড থেকে গঠিত হয় RNA এবং DNA অর্থাৎ প্রাণ। 

এজন্য বলা হয় ( We are nothing but outcome of some noble chemical reactions under catalized by nature.)


Abiogenesis সত্যিই কাজ করে কিনা, প্রমাণ করার জন্য ১৯৫২ সালে Stanely Miller একটি পরীক্ষা চালান।

তাঁর এই পরীক্ষা 'Miller-Urey experiment' নামে পরিচিত। তিনি একটি চেম্বারে H, NH3, CH4, H2O ইত্যাদিসহ আরো কতিপয় পদার্থ নিয়ে, আদি পৃথিবীর সম্ভাব্য একটা পরিবেশ তৈরি করেন এবং ৫০০০০ ভোল্টেজ বৈদ্যুতিক স্পার্ক নিক্ষেপ করেন। এই উচ্চ ভোল্টেজের ইলেকট্রিক স্পার্ক তাপমাত্রা ও অতিবেগুনি রশ্মি উৎপন্ন করে। যাইহোক,পরীক্ষার ফলাফল আশাব্যঞ্জক হল। যেখানে কয়েক প্রকার অ্যামিনো এসিড সহ সাইটোসিন ও ইউরাসিল (RNA বেস-এর উপাদান) পাওয়া গেল।


২০০৮ সালে Jeffery  Bada উপর্যুক্ত পরীক্ষার পুনঃনিরীক্ষণ চালালেন। এবারের ফলাফল আরো ভালো; উৎপন্ন হল নিওক্লিওটাইডস এবং ২২ ধরণের অ্যামিনো এসিড। এতে Abiogenesis এর ভিত্তি আরো মজবুত হলো।


Abiogenesis দিয়ে ভাইরাস ব্যাখ্যা করা যাক৷ সরলতম ভাইরাস শুধুমাত্র প্রোটিন দিয়ে তৈরি একটি প্যাকেট। এই প্যাকেটের ভিতরে থাকে RNA অথবা DNA৷ মজার ব্যাপার হচ্ছে, ভাইরাস একটি জড় পদার্থ (প্রোটিন অণু) বৈ আর কিছুই নয়। অর্থাৎ ভাইরাস প্রাণী/ জীব কোনোটাই নয়। কিন্তু, ভাইরাস যেকোনো প্রাণের সংস্পর্শ পেলে (উপযুক্ত পরিবেশ পেলে) জীবের মতো আচরণ করে। অর্থাৎ ভাইরাস এমন একটি জিনিস যা শুধুমাত্র প্রোটিন অণু এবং উপযুক্ত পরিবেশে প্রাণী! ভাইরাসের

এই বিবর্তনের মেকানিজম পর্যবেক্ষণ করলে Abiogenesis প্রক্রিয়াটা ভালোভাবে অনুধাবন করা যায়।


পরিশেষে বলি Abiogenesis অণুকল্পটির অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অন্যদিকে, স্বপক্ষে হাজির করেছে কিছু চমকপ্রদ ও অবিশ্বাস্য প্রমাণ।জগতের জীবকূল যে Abiogenetic নয় তা কে বলতে পারে?


লেখক: তাজউদ্দিন শামসুল (শ্যাম)

শিক্ষার্থী; ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট৷


৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×