somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিল্পী এস এম সুলতান ও ভিনসেন্ট ভ্যান গঘঃ জীবন কারিগর

২৮ শে এপ্রিল, ২০০৮ দুপুর ১২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




উপরের ছবিদুটির প্রথমটি এস এম সুলতানের, আরেকটি ভিনসেন্ট ভ্যান গঘের। ভ্যান গঘের এই ছবি আগেই দেখা, এরপরে সুলতানের ছবিটি যখন আমার চোখে পড়ে, তখন কেন যেন ভ্যান গঘের এই ছবিটির কথা মনে পড়ে যায়। দুটি ছবিরই উপজীব্য হারভেস্ট- ফসল। একটিতে দেখা যাচ্ছে ফসলের মাঠ, পাকা ধানের মাঠ, একটি ল্যাণ্ডস্কেপ। আরেকটি পেছনে পাকা ধানের মাঠ, সাথে সাথে ছবিতে উঠে এসেছে কৃষকের উঠানে কাটা ফসলের কর্মযজ্ঞ, এসেছে কৃষকের প্রাণ চাঞ্চল্য। দুটো ছবিতেই হলুদের সমারোহ, এবং দুটিতেই জীবনের ছোঁয়া। ছবি দুটিই যেন কত জীবন্ত, কত আশাবাদ, অফুরন্ত সম্ভাবনার সমারোহ।

আমি যতই সুলতান ও ভ্যান গঘের ছবি দেখতে থাকি, ততই ওনাদের কাজের মধ্যে মিল খুঁজে পাই। দুটি ভিন্ন সময়ে, ভিন্ন দুটি অঞ্চলে- ভিন্ন সমাজে জন্ম নিয়ে ও বেড়ে উঠেও ওনারা যেন কত আপন, কতই না কাছাকাছি। আমি আঁকার স্টাইল বা ফর্ম নিয়ে বলছি না, আমি এ বিষয়ে যথেস্টই অজ্ঞ, আমি শুধু বলতে পারি আমার অনুভূতির কথা এবং সত্যি বলতে কি আমি যখনই ওনাদের ছবি দেখি, অবাক হয়ে ভাবি ওনারা যেন এক আত্মা। যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করি, কেন এমন মনে হয়? এ কি আমার বোঝার ভ্রম অথবা আরোপিত কিছু? ভাবতে থাকি, আরো বেশী করে ছবি দেখি, আবার ভাবি। শেষে মনে করার চেষ্টা করি, সুলতানের ছবি দেখলে কোন অনুভূতি সবচেয়ে বেশী নাড়া দেয়? গঘের ছবি দেখলে মনের গভীরে কোন অনুভূতিটি সবচেয়ে বেশী ক্রিয়া করে? অনুভূতির প্রকাশ কতখানি করতে পারবো জানি না, তবে ওনাদের দুজনের ছবি যখন দেখি, একটি আলোড়ন অনুভব করি, সুলতানের ছবি জীবনের কথা বলে, একই সাথে ভ্যান গঘের ছবিও তাই। ভ্যান গঘের ছবি দেখলে একটা বিষয়ই মনে আসে, মানুষের প্রতি দরদের জায়গাটি, অকৃত্রিম ও খাঁটি। সুলতানের ক্ষেত্রেও তাই। মূল বিষয় মানুষ। এই মানুষ কিন্তু শহুরে, বা সভ্য জগতের মানুষ নয়, কেউকেটা টাইপের তো নয়ই, এরা একান্ত গ্রামীণ, অভাবী খেটে খাওয়া। সুলতান ও ভ্যান গঘ উভয়ের সম্পর্কেই একই অভিযোগ ছিল, তাঁরা নাকি মানুষের এনাটমি জানেন না। কিন্তু এই মিলের চেয়েও আমার কাছে বড় মিল হলো এই যে, ওনাদের সৃষ্ট এই এনাটমি না মানা কিম্ভুত মানুষেরা যেন জীবনের আধার। আকিরা কুরুশাওয়ার ড্রিমস ফিল্মটিতে যখন দেখি আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে, ভ্যান গঘের ছবিটি যখন নড়েচড়ে ওঠে তখন পার্থক্য করে উঠতে পারি না কোনটি গঘের ছবি আর কোনটি আকিরার সেট।

আমাদের কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের কৃষকরাই সুলতানের প্রধান আকর্ষণের বিষয়। ওনার ছবির বিশালাকায় পেশীবহুল কৃষক ও কৃষক পত্নী জীবন জীবিকায় ব্যস্ত। কখনো ফসলের মাঠে, কখনো নদীতে নৌকায় কাটা ফসল তোলাতে, কখনো জলাশয়ে মাছ ধরতে, কখনো উঠোনে ধান মাড়াই করতে, কখনো অলস দুপুরে হাতের কাজ সারতে দেখা যায়। কিষাণীকেও দেখা যায় গরুর দুধ দোয়ানোর কাজে, কিষাণের সাথে কাঁধ মিলিয়ে মাড়াই কাজ করতে, বা কখনো পুষ্করিনী থেকে পানি আনতে, ঢেকিতে ধান ভানতে, ধান ঝাড়তে, কখনো অলস দুপুরে সখীর চুল আছড়াতে। সুলতানের ভাষায় "আমি মানুষকে খুব বড় করে এঁকেছি, যারা অনবরত বিজি আফটার ওয়ার্ক। .... আমি সবসময় কৃষকদের এঁকেছি, কৃষকরা যুগ যুগ ধরে অমানবিক পরিশ্রম করে চলেছে। ওদের উপজীব্য করেই সমাজটা গড়ে উঠেছে। কিন্তু ওদের চিরকালই বিট্রে করা হয়েছে। ব্রিটিশরা করেছে, পাকিস্তানীরা করেছে, '৭১ এ স্বাধীনতা যুদ্ধে তাদের অনেক আশা দেয়া হয়েছিল কিন্তু দে ওয়ার বিট্রেড। এই যে একটা এক্সপ্লয়েটেশন প্রসেস, আমার ছবি তার প্রতি একটা চ্যালেঞ্জ। শোষণ করো, কিন্তু কোন মশা এদের শেষ করতে পারবে না, ব্রিটিশরা করেছে, পাকিস্তানীরা লুটেপুটে খেয়েছে, এখনো চলছে, কিন্তু এরা অমিত শক্তিধর। কৃষককে ওরা কখনো শেষ করতে পারবে না, আমার কৃষক এ রকম"



আর এজন্যই তো ওনার ছবিতে কৃষকের এই পেশী, পেশী তো শক্তিরই অপর নাম। সাধারণভাবে আমরা আমাদের হতদরিদ্র কৃষকদের কথা ভাবলেই চোখে ফুটে ওঠে হাড়জিড়ে হালকা পটকা কিছু মানুষের কথা। কিন্তু এই হাড়জিড়ে মানুষই কিন্তু দিনরাত অবিরাম কঠোর পরিশ্রম করে, সে লাঙ্গল চাষ করে, কোদাল দিয়ে মাটি কোপায়, বীজ দেয়, চারা বোনে, সেচ দেয়, ফসল কাটে, মাড়াই করে। এসব কাজ আমাদের কৃষকের শক্ত দুহাতই সমাধা করে। সেই শক্ত হাত-পায়ের পেশী আমরা সুলতানের চোখে দেখি আর কৃষকদের নতুন করে আবিষ্কার করি। তাইতো সুলতান তাঁর ছবির থিম সম্পর্কে বলেন, "আমার ছবির ব্যাপার হচ্ছে সিম্বল অব এনার্জী। এই যে মাসলটা, এটা যুদ্ধের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে, সয়েলের সঙ্গে যুদ্ধ। তার বাহুর শক্তিতে লাঙ্গলটা মাটির নীচে যাচ্ছে, ফসল ফলাচ্ছে। শ্রমটাই হলো বেসিস। আর আমাদের এই অঞ্চল হাজার বছর ধরে এই কৃষকের শ্রমের উপর দাঁড়িয়ে আছে। অথচ সেই কৃষকদের হাজার বছর ধরে মারা হয়েছে। .....আমি কৃষকের হাজার হাজার বছরের এনার্জীকে, ওদের এনার স্ট্রেন্থকে এক্সাজারেট করে দেখিয়েছি। কাজের ফিলিংসটাকে বড় করে দেখিয়েছি..।"



এই যে কাজের ফিলিংস, এটাই মূল। সেকারণে সুলতানের ছবিতে সুন্দরী, মোহিনী নারী চরিত্র পাওয়া যায় না। কেননা দুধে আলতা গাত্রবর্ণ, পরিপাটি বেশ ও গহনা পরিহিতা, মসৃণা অনড়-অকর্মণ্য রমনী পুতুল সদৃশ সৌন্দর্য তৈরী করলেও, সুলতানের ছবির কর্কশ-কর্মঠ, প্রাণচঞ্চল নারী-চিত্রের মত জীবন সেখানে পাওয়া যায় না। এমনকি সুলতানের ছবিতে চুল আছড়াতে ব্যস্ত নারীদের দেখেও মনে হয়, এরা যেন একটু আগেই ধান মাড়াই দিয়েছে, বা হেসেল ঠেলেছে, বা গাভী দোহন করেছে।



এই তো সুলতানের ছবির নারী, সে কিন্তু কামনীয় নয়, পুরুষের মনোরঞ্জনই নারীর জীবন নয়, সেও কাজ করে এবং শক্তি ধরে। ভ্যান গঘের নারীও একই ভাবে কুৎসিত, সমসাময়িক সকল শিল্পীদের কামনীয় -মোহনীয় নারীর তুলনায় তো বটেই। কুৎসিত, কিন্তু শক্ত-সামর্থ্য; অভাবী কিন্তু পরাজিত নয়। এবং এভাবেই সুন্দর, এই সৌন্দর্য দেহবল্লরীর নয়, এটি জীবন সংগ্রামের।



ভিনসেন্ট ভ্যান গঘের ছবিতেও তো তাই। ঘুরে ফিরে এসেছে কৃষকেরা, শ্রমিকেরা, নারীরাও সেসব পরিবারের। অভাবী, হতদরিদ্র। ভ্যান গঘের পটেটো ইটার্স ছবিটি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়েই থাকি। সুলতানের মত করে বলি, "দরিদ্র একটা ক্ষুদার্ত পরিবার নিবিষ্ট মনে আলো-আধারিতে বসে কটা আলু খাচ্ছে, একটা কষ্টের ছবি অথচ সেখানেও একটা বিউটি আছে, সেটা ইন্সপায়ার করে। ছবি এমন হওয়া উচিৎ- যা দেখে মানুষ নিজেকে ভালোবাসতে পারে, জীবনকে ভালোবাসতে পারে"



ভ্যান গঘের ছবিও একইভাবে মেহনতি মানুষের প্রতিধ্বনি করে। খনি মজুর দিয়ে শুরু, এরপরে তিনি ক্রমাগত এঁকে গেছেন কৃষকদের, শ্রমিকদের। যখন প্রকৃতিকে ধরেছেন, তখনও জীবনকে দেখেছেন, রঙ্গের খেলায় জীবনকেই আমরা তাই পাই, এমনকি তাঁর স্টিল লাইফও তাই অন্যদের স্টিল লাইফের মত 'স্টিল' নয়। তাঁর স্টিল লাইফ "শুজ" ছবিটি দেখলেই বোঝা যায়, এ জুতা জোড়া কোন শ্রমিকের, অথবা কৃষকের, জরাজীর্ণ, ছিড়ে যাওয়া কিন্তু বাতিল নয়। যেন এই মাত্র কোন মজুর কাজ শেষে খুলে রাখলো, অথবা কোন মজুর এখনি হয়তো ওটা পরে রওনা দিবে তার কর্মক্ষেত্রে। ওই জুতা জোড়াই যেন এখানে যুদ্ধ করছে, জীবন যুদ্ধ এবং সেটি পরাজিত নয়। অনেকটা এই জুতা জোড়াই যেন সংগ্রামরত মানুষের প্রতিচ্ছবি।



ভ্যান গঘের সান ফ্লাওয়ার সিরিজের ছবিগুলো তো জীবনেরই প্রতীক।



এই যে, জীবনকে এভাবে তুলে ধরতে পারা, সেটি সম্ভব হয়েছে কেননা তাঁরা দুজনই জীবনকে খুব কাছ থেকে অনুভব করতে পেরেছেন। ভ্যান গঘ বাবার মতই একসময় ঈশ্বরের পথে পা বাড়ান, বেলজিয়ামের বোরিনেজে একটি কয়লা খনি অঞ্চলে যাজক হিসাবে কাজ শুরু করে। সেখানে গিয়ে সেই হতদরিদ্র এবং জঘণ্য জীবনের অধিকারী খনি শ্রমিকদের সাথে একাকার হয়ে যান। সেখানে তার পারিশ্রমিকের বড় অংশই তিনি দিয়ে দিতেন তাদেরকে, খুব কাছ থেকে সেই মানুষগুলোকে তিনি দেখেন এবং অনুভব করেন। একসময় এমন হয়, শীতে কষ্ট পাওয়া- রোগে জরায় মৃত প্রায় মানুষগুলোর সেবা-শুশ্রুষায় ব্যতিব্যস্ত থাকতে গিয়ে, বাইবেল পাঠ বা জেসাস ক্রাইস্টের বানী শোনানোও তাঁর হতো না। এক সময় ধীরে ধীরে এই সামাজিক অনাচার অনিয়ম ঈশ্বরের প্রতিই তাঁর ক্ষোভ ও পরে কিঞ্চিৎ অবিশ্বাসও তৈরী করে।

তবে, এস এম সুলতানের তুলনায় ভ্যান গঘকে সংগ্রাম করতে হয়েছে অনেক বেশী। ভ্যান গঘের জীবদ্দশায় প্রতিষ্ঠা তো দূরের কথা, সর্বসাকূল্যে তাঁর একটি ছবি তিনি বিক্রয় করতে সক্ষম হন। ভাই থিও ভ্যান গঘের কল্যাণে কোন রকম তার জীবন চলতো, দিনের পর দিন না খেয়ে থাকাটা তাঁর জন্য খুবই নৈমত্তিক ব্যাপার ছিল। কাকারা ছিল ছবির ব্যবসায়ী, গুপিল এণ্ড কোং এর ডিলার, পরে ভাই থিও ভ্যান গঘও এই লাইনে যথেষ্ট উন্নতি করে। কিন্তু সেই স্টুডিও তে হাজার চেষ্টা করেও থিও ভিনসেন্ট ভ্যান গঘের ছবি ঢুকাতে পারেনি। যদিও শুরুতে কাকাদের আনুকুল্য ছিল, এবং টারস্টিগও মাঝে মধ্যে ধর্ণা দিয়ে যেত (এবং ছবি দেখে যথারীতি মন্তব্য করতো অবিক্রয়যোগ্য ও উইদ আউট চার্ম! তারপরেও আসতো ছবির জন্য সে তো গঘের কাকাদের কারণেই)। যে একটি ছবি বিক্রয় হয়েছিল, সেটি তার কাকা কিনেছিল এবং আরো বেশ কিছু ছবির অর্ডারও দিয়েছিল। কিন্তু বাঁধ সাধে যখন ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ একজন বারবণিতার সাথে বাস করা শুরু করে দেয় এবং তাকে যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়ে বিয়ে করার ঘোষণা দেয়। সিয়েনের সাথে তার পরিচয় আকস্মিক, তখন সিয়েন গর্ভবতী এবং ইতিমধ্যে তার আরেকটি বাচ্চা আছে, যার বাবার কোন খোঁজ নেই- এমন সিয়েনকে গঘ সত্যিকারের ভালোবাসাই দিতে চেয়েছে।



এই সিয়েন ও ভ্যান গঘের এত কাছাকাছি হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় যেটি কাজ করেছে সেটি হলো উভয়ের সীমাহীন দারিদ্র ও একাকিত্ব। কিন্তু কারণ হিসাবে এর চেয়ে কোন অংশে কম নয় ভ্যান গঘের সেই নরম ও তীব্র মনটি। তিনি তার ভাইকে পত্র মারফত জানাচ্ছেন, "ক্রিস্টিন (সিয়েন) আমার জন্যে মোটেও কোন সমস্যা বা প্রতিকূলতা নয়, বরং সহযোগীতা। যদি সে একা থাকতো সম্ভবত এর মধ্যেই সে মারা যেত। আমরা এমন সমাজে বাস করি যেটি দুর্বলকে ছেড়ে দেয় না, বরং পা দিয়ে তাকে মাড়িয়ে পিষ্ঠ করে এবং যখন কোন দুর্বল নারী পড়ে যায় তখন তাকে তার চাকার নীচে ফেলে পিষ্ঠ করে চলে যায়। এরকম এক সময় এমন সমাজে ক্রিস্টিনার মত নারীকে একা ফেলে দেয়া মোটেও উচিৎ নয়। তাই আমি যেহেতু অসংখ্য দুর্বলকে হুমড়ি খেয়ে পড়তে দেখি তাই বর্তমান সভ্যতা ও উন্নতির প্রতি সন্দেহ তৈরী হয়। আমি সভ্যতায় বিশ্বাস রাখতে চাই, এমনকি এরকম একটি সময়েও, কিন্তু সে সভ্যতাকে অবশ্যই সম্পূর্ণ মানবিকতার উপর গড়ে উঠতে হবে। আমি মনে করি, যা কিছু মানব জীবনকে ধ্বংস করে তা-ই বর্বর এবং আমি তাকে শ্রদ্ধা করি না"।

আর, সুলতানও তার বোহেমিয়ান জীবনে মানুষের কাছাকাছি যেতে পেরেছেন, গিয়েছেন সবসময়ই। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত মানুষের প্রতি, বিশেষত খেটে খাওয়া মানুষের প্রতি ভালোবাসাই তার মধ্যে গড়ে তুলেছে অনন্য এক জীবনবোধ। বাঙালী মুসলমান বিষয়ে তাঁর মত জানতে চাইলে তাইতো তিনি অকপটে বলেন, "ওসব তো সব চক্রান্ত। বাঙালির কোনো ধর্ম নাই, নবী নাই। ওসব হোসেন শাহ আর সব গৌড়ের সুলতানদের চক্রান্ত। বাঙালি ক্যারেক্টারটা পাওয়া যায় ঐ গৌড়ের ইতিহাসটা পড়লে। তখন হিন্দু মুসলামান সবাই বৈষ্ণব পদাবলী লিখত। কৃত্তিবাস, বিদ্যাপতি, আফজল খাঁ, মালাধর বসু এঁরা সব রাজকবি। এঁরা বৈষ্ণব পদ লিখেছেন। মুসলামানরাও লিখেছে। মুসলামানদের ঐ এক ইউসুফ-জুলেখা লেখা হয়েছে। এসব বেসিকেলি সব সেক্যুলার বই। রামায়ণ ছিল কাব্য, ওটাকে ধর্মগ্রন্ত করেছে সামন্ত প্রভুরা, ওরাই সব ডিভিশন করেছে। ..... বঙালির কোন অলি-দরবেশ নেই, তোমরা তো অলি হতে পারবে না, তাই আল্লাহ আল্লাহ করো। ....... বাঙালির বেসিক কিছু গুণ আছে, সে ত্যাগী, সংযমী, সরল, সত্যবাদী, অতিথিপরায়ন। আর আমাদের মধ্যে অনেক বড় মাপের অ্যাবসেলিউট থিংকার তৈরি হয়েছে, সেক্যুলার থিংকার। কালিদাস, বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস, জয়দেব, তারপরে ঐ মধুসুদন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল।বিদ্যাসাগর আরেকজন বড় মানুষ। মধুসুদনের মেঘনাদবধকাব্য, তিলোত্তমাসম্ভব, শর্মিষ্ঠা এগুলো রিলেজিয়াস মোটিভ নিয়ে লেখা হলেও ওগুলো আসলে অসাম্প্রদায়িক"। ঈশ্বর সম্পর্ক আপনার কী ভাবনা এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলে সহজেই বলেন, "কোন ভাবনা নেই। আমি যখন ঐ পাতার রঙ দেখি, আকাশ দেখি তখন ভাবি, যদি কেউ থেকে থাকে সে খুব বড় মাপের একজন আর্টিস্ট"।


সূত্রঃ
১। কথা পরম্পরাঃ গৃহীত ও ভাষান্তরিত সাক্ষাৎকার- শাহাদুজ্জামান
২। অনুবাদ জীবনী উপন্যাস- জীবন তৃষা- অদ্বৈত মল্ল বর্মন
৩। http://www.vggallery.com
৪। থিও ভ্যান গঘ (ভিনসেন্ট ভ্যান গঘের ভাই)কে লেখা পত্রসমূহ
৫। যদ্যপি আমার গুরু - আহমদ ছফা
৬। Dreams- আকিরা কুরুশাওয়া
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০০৮ সকাল ৮:৩৩
৫৩টি মন্তব্য ২২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×