somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জন হেনরীর হাতুড়ি: "আমি মেশিনের হবো প্রতিদ্বন্দ্বী"

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা গানের আবেদন, তাৎপর্য কিভাবে পাল্টে যেতে পারে- তা হেমাঙ্গ বিশ্বাসের অনেকবার শুনা "জন হেনরী" গানের ক্ষেত্রে টের পেলাম -সম্প্রতি গানটির প্রেক্ষাপট ও জন হেনরীর জীবন গাঁথা জানবার পরে। গানটি আমাদের ফকির আলমগীরের পরিবেশনায়ও অনেকবার শুনেছি, হেমাঙ্গের পরিবেশনাকে সব দিক থেকেই- গায়কিতে- কন্ঠে- মিউজিক কম্পোজিশনে সব দিকেই ফকির আলমগীরের পরিবেশনার চেয়ে অনেক বেশী দুর্দান্ত মনে হয়েছে- ফলে হেমাঙ্গের পরিবেশনাটাই বেশী শুনা। কিন্তু এতবার শুনার পরেও এই গানটা আজকের মত করে আমার অনুভূতিকে নাড়া দিতে পারেনি- এটা নিশ্চিত বলতে পারি। আগে কি আসলে খুব মন দিয়ে গানটা, গানের প্রতিটা কথা- প্রতিটা শব্দ-ছত্র শুনেছি? মনে হয় না। কেননা গানের কথায় কথায় তো জন হেনরীর জীবনগাঁথাই বিধৃত হয়েছে, একটু মন দিয়ে প্রতিটা লাইন খেয়াল করলেই তো সেটা জানতে পারতাম, সেটা হয়নি। শুনে গেছি, ভালো লেগেছে- একজন জনৈক জন হেনরী- যিনি একজন কালো শ্রমিক- যিনি হাতুড়ি দিয়ে পাহাড় কাটতেন- এতটুকুই কেবল ধরতে পেরেছিলাম- সেটাতেই সন্তুষ্ট ছিলাম। গানের সুরে একটা তেজ আছে, সেটাতেই সন্তুষ্ট ছিলাম, তাই ভালো লেগেছে- এবং অসংখ্যবার শুনেছি। কিন্তু গানটার আসল মর্ম কখনোই ধরতে পারিনি সেদিনের আগে- যেদিন টিএসসি'র সড়ক-দ্বীপে 'সৃজন' গোষ্ঠীর পরিবেশনা শুনলাম। আরো সুনির্দিষ্ট করে বললে, গানটি শুরু করার আগে- যখন জন হেনরী সম্পর্কে দুচার কথা বলা হলো, ইতিহাসটা জানলাম, যন্ত্রের সাথে মানুষের যুদ্ধের তথা সাদার সাথে কালোর- মালিকের সাথে শ্রমিকের যুদ্ধের এক অনবদ্য কাহিনী শুনলাম, তখন থেকে। অবাক হয়ে খেয়াল করলাম, এই প্রথমবারের মত গানটির প্রতিটা কথা, প্রতিটা শব্দ আমি শুনছি- সৃজনের শিল্পীরা কিভাবে গাচ্ছে- কেমন তাদের পরিবেশনা সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপই করছি না, এবং আরো অবাক বিষয় যে- যে মুহুর্তে
"জন হেনরীর কচি ফুল মেয়েটি/ পাথরের বুকে যেন ঝরনা/ মার কোল থেকে সে পথ চেয়ে আছে তার / বাবা তার আসবে না আর না" লাইন কটি গাওয়া হলো- আমার চোখ দিয়ে কেমন যেন পানি বেরিয়ে আসলো! "পাখির কাকলি ভরা ভোরে/ পুবালী আকাশ যবে রঙ্গীন/ হেনরীর বীর গাঁথা বাতাসে ছড়িয়ে দিয়ে/ সিটি দিয়ে চলে যায় ইঞ্জিন"- শুনে অন্যরকম অনুভূতি হয়। সিটি দিয়ে চলে যায় ইঞ্জিন- সিটি দিয়ে চলে যায় ইঞ্জিন- মাথায় বারে বারে লাইনটি ঘুরতে থাকে। আমাদের চারপাশের আরাম-আয়েশে গড়া জীবনরূপ ইঞ্জিনটা কি সুন্দর সিটি দিয়ে চলে যাচ্ছে, জন হেনরীদের অবস্থান সেখানে কোথায়?

বাসায় এসে হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গানটা শুনতে থাকি। নেটে জন হেনরী দিয়ে সার্চ দেই। আরেকবার হোচট খাই। পশ্চিম ভার্জিনিয়ার সি এণ্ড ও রেইলরোডের সেই বিখ্যাত বিগ বেন্ড টানেলের সামনের ফলকে জন হেনরীর কথা উল্লেখ থাকলেও, টালকট শহরের বাইরে জন হেনরীর আবক্ষ ভাস্কর্য শোভা পেলেও- জন হেনরীর অবস্থান কোন ঐতিহাসিকের ইতিহাসে নয়, পাওয়া যায় আমেরিকান ফোকটেল এ! হবেই না বা কেন? অভিজাতদের লিখিত ইতিহাসে নিম্ন বর্গীয়রা চিরকালই উপেক্ষিত। সবকালেই- সব জায়গায়ই। চীনের মহাপ্রাচীর কোন রাজার আমলে ও তত্বাবধানে তৈরি হয়েছে- সেগুলো ইতিহাসের ছাত্রদের পাঠ্য, কিন্তু কত শত শ্রমিকের হাড়-গোড়ের উপর এই প্রাচীর দাঁড়িয়ে আছে তা কোথাও পড়ানো হয় না, তাজমহলের সৌন্দর্যের সাথে সম্রাট শাহজাহান আর সম্রাজ্ঞী মমতাজের অমর প্রেমের কাহিনী একাকার হয়ে যায়- কিন্তু এই ইমারত গড়ার কাজে যাদের অবদান সবচেয়ে বেশী সেই কারিগর, শ্রমিকদের কথা আমাদের কারো মাথায় থাকে না। একইভাবে, খুঁজলে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার সি এণ্ড ও রেইলরোড কোন কোম্পানীর তত্ত্বাবধানে তৈরি হয়েছে, সেই কোম্পানীর প্রোফাইল- তার মালিক- তার হোমড়া চোমড়া সাদা কর্মকর্তাদের বিস্তারিত বৃত্তান্ত বের করা যাবে, খুব বেশীদিন তো হয়নি- ১৮৭০ সালে এই রেইলরোড নির্মাণের কাজ সমাপ্ত হয়- সেসব নথিপত্র আছে নিশ্চয়ই; কিন্তু একজন কালো শ্রমিক- যন্ত্রের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে যে টানা কাজ করতে করতে মারা গিয়েছে- তার কোন নথিপত্র সাদা মালিকেরা কেন সংরক্ষণ করবে? করেওনি। তাইতো সাদাদের চর্চিত ইতিহাসে জন হেনরীর কোন ঠাঁই নেই। কিন্তু এহেন বীরকে কি মানুষ ভুলে যেতে পারে, সে কি হারিয়ে যেতে পারে? পারতো, কিন্তু সাধারণ খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষেরা, কালো মানুষেরা তা হতে দেয়নি। মুখে মুখে - গল্পে গানে- জন হেনরী বেঁচে থাকে। হেনরী হয়ে উঠে উপকথার নায়ক, একজন লিজেণ্ড। তাকে নিয়ে রচিত হয় অসংখ্য গল্পকথা, উপকথা, লোকগান, কবিতা। আমেরিকার কালো মানুষের কাছে, শ্রমিকদের কাছে জন হেনরী হয়ে উঠে প্রেরণার নাম, এক স্বপ্ন পুরুষ। লৌহ মানব, পাথুরে মানুষ। শক্তির আধার। জন হেনরী। প্রতিবাদী জন হেনরী। লড়াকু জন হেনরী।

কিন্তু শুধু লড়াই-সংগ্রাম-প্রতিবাদের প্রেরণাদায়ী হিসাবেই নয়- জন হেনরী আমেরিকার কালো মানুষের কাছে এক অব্যক্ত বেদনারও নাম, কালোদের উপর- শ্রমিকদের উপর সাদাদের-মালিকদের নির্যাতন-নিপীড়নেরও ইতিহাস ঐ জন হেনরী। নেটেই জন হেনরীকে নিয়ে বেশ প্রাচীণ একটা লোকগান শুনলাম, ভাষা কিছুই বুঝতে পারিনি প্রতি লাইনের শুরুতে "জন হেনরী" ছাড়া- কিন্তু পুরো গানটা শুনলে মনে হয় একদল লোক যেন বিলাপ করছে, কি করুন সেই বিলাপ- যেন পিতা হারিয়েছে তার সন্তানকে, সন্তান মাতাকে বা বোন হারিয়েছে ভাইকে কিংবা কোন নারী হারিয়েছে তার প্রাণপ্রিয় স্বামীকে।

কে এই জন হেনরী? এরই মধ্যে মোটামুটি তার পরিচয় জানা হয়ে যাওয়ার কথা। একজন শ্রমিক। আমেরিকার কালো শ্রমিক। জন্ম ১৮৪০ থেকে ১৮৫০ এর মধ্যে কোন এক সময়ে। আমেরিকার আর সব কালো মানুষদের একজন দাস হিসাবেই তার জন্ম, কিন্তু আমেরিকার সিভিল ওয়ারের পরে দাপ্রথা নিষিদ্ধ হলে- হেনরীও দাস জীবন থেকে মুক্তি পায়। বিয়ে করে পায় প্রিয় জীবন সঙ্গিনী পলি এনকে মতান্তরে মেরি ম্যাক ডেলিনকে (হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গানে জীবন সঙ্গিনী হিসাবে মেরি ম্যাক ডেলিনকে পাওয়া যায়)। ৬ ফুট লম্বা- ২০০ পাউন্ড ওজনের জন হেনরী শ্রমিক হিসাবে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে শেষে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার টালকট শহরের সি এণ্ড ও রেইলরোড (Chesapeake and Ohio Railway) নির্মাণের কাজে যোগ দেয়। প্রচন্ড শক্তিধর এই মানুষটি অচিরেই রেলরোড নির্মাণ শ্রমিকদের নেতা হয়ে দাঁড়ায়।

আমেরিকার সিভিল ওয়ারের পরে দেশজুড়ে পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরু হয়। একটি ধনী কোম্পানী চেজাপীক উপসাগর থেকে ওহিও উপত্যকা পর্যন্ত রেইললাইন বাসনোর কাজটির তত্ত্বাবধানে ছিল। জন হেনরীর কর্মস্থল- পশ্চিম ভার্জিনিয়ার টালকট শহর। রেললাইন বসানোর কাজ চলতে থাকে। একসময় সামনে পড়ে 'বিগ-বেণ্ড' নামে এক পর্বত যার পুরুত্ব প্রায় সোয়া এক মাইল। পর্বত কেটে সুরঙ্গ তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। প্রায় ১০০০ কালো শ্রমিকের সাথে জন হেনরীও সুরঙ্গ তৈরির কষ্টকর কাজে নামে। দিনে ১২/১৪ ঘন্টা অমানুষিক পরিশ্রম করতে হয়। জন হেনরী ছিল স্টিল ড্রাইভিং ম্যান, বা হ্যামার ম্যান। ইস্পাতের লম্বা শলাকার এক প্রান্ত পাথরের উপর ধরে থাকে একজন- আরেকজন হাতুড়ি দিয়ে শলাকার অপরপ্রান্তে জোরে আঘাত করে। এই করে পাহাড় কাটতে থাকে। কিন্তু- এতেও মন ভরে না ঐ কোম্পানীর, মন ভরে না সাদা সর্দারের। তার চাই আরো কাজ, আরো কাজ। আরো জলদি এবং কম লোকবলে- যাতে মুনাফা হয় সর্বাধিক। এই সময় সাদা সর্দার নিয়ে আসে স্টিম ড্রিল, যেটা দিয়ে খুব সহজে পাহাড় কাটা সম্ভব হবে। অজানা আশংকায় কেঁপে উঠে শ্রমিকরা। এই বুঝি গেল তাদের চাকরি। কাজ হারালে কাজ পাবে কোথায়? খাবে কি? প্রতিবাদ করে উঠে তারা। যন্ত্রকে মনে হয় সাক্ষাৎ শত্রু। স্টিম ড্রিল ভেঙ্গে ফেলতে উদ্যত হয়, যুদ্ধ ঘোষণা করে- যার নিশ্চিত পরিণতি ছিল কালোদের উপর আরো বেশী নির্যাতন। শ্রমিকদের সবচেয়ে শক্তিশালী, সবচেয়ে কর্মঠ- জন হেনরী শ্রমিকদের যন্ত্র ভাঙ্গার সেই যুদ্ধে বাঁধা দেয়। সে নিশ্চিত জানতো, একটা যন্ত্র ভাঙ্গলে সাদা প্রভু দশটা যন্ত্র আনবে, আর উল্টোদিকে তাদের কাজ তো যাবেই- সাথে জুটবে অনেক নির্যাতন। কিন্তু তাই বলে জন হেনরী যুদ্ধ বন্ধ করে দেয়? না, তা-ও না। সে সাদা প্রভুকে গিয়ে চ্যালেঞ্জ জানায়। যন্ত্রের চেয়েও মানুষের পেশী বেশী কাজ করতে সক্ষম। স্টিম ড্রিলের চেয়ে অধিক গতিতে জন হেনরী পাহাড় কাটবে। সাদা সর্দার তো পারলে হেসেই খুন। কিন্তু জন হেনরী দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। স্টিম ড্রিলের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবে জন হেনরীর হাতুড়ি। শর্ত থাকে- সে যদি জিতে- তবে পুরো কাজে আর যন্ত্র ব্যবহার করতে পারবে না। শুরু হয় প্রতিযোগিতা! পাহাড়ে পাশাপাশি দুটো সুরঙ্গ কাটা শুরু হয়, একটি কাটে জন হেনরী- আরেকটি স্টিম ড্রিল। জন হেনরী দুহাতে নেয় ইয়া বড় হাতুড়ি। হাতুড়িই হেনরীর সম্বল। দিন-রাত পাহাড় কেটে যায়। হাতুড়ি চলতে থাকে অবিরাম।

পাহাড়ের অপর দিকে জমা হয় সহযোদ্ধা শ্রমিকেরা। ঘরে শিশু সন্তানকে রেখে এসে শ্রমিকদের সাথে দাঁড়ায় প্রাণ প্রিয় সঙ্গিনী মেরি ম্যাক ডিলেন। পাহাড়ের গায়ে তারা কান পাতে। কান পেতে হাতুড়ির শব্দ শোনার চেষ্টা করে। তাদের নেতা, প্রাণপ্রিয় মানুষ, ভবিষ্যৎ আশা-ভরসার স্থল জন হেনরী যে যুদ্ধ করছে, যন্ত্রের সাথে মানুষের যুদ্ধ। তারা অপেক্ষা করতে থাকে- সে কি উত্তেজনা, কে জিতবে? মানুষ কি পারবে ঐ ভয়ঙ্কর যন্ত্রের সাথে? অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকে, অবশেষে অপর দিক থেকে একটা ক্ষীণ শব্দ ভেসে আসে- পাহাড়ের গায়ে ভালো করে কান পেতে শুনার চেষ্টা করে- এটা জন হেনরীর হাতুড়ির শব্দ, নাকি ঐ দৈত্যরূপী স্টিম ড্রিলের? আশায় বুক বাঁধে, এটা হাতুড়ির শব্দ না হয়ে পারে না- পরক্ষণেই আশংকা এসে ভর করে- যদি এটা স্টিম ড্রিল হয়? উৎকন্ঠায় মেরি ম্যাক ডিলেনের শ্বাস-প্রশ্বাসটাও বন্ধ হওয়ার উপক্রম, কান পেতে নিবিষ্টভাবে শব্দটা শুনার চেষ্টা করে। অবশেষে সকলের অপেক্ষার সমাপ্তি ঘটে, পাহাড়ের দেয়ালটা হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়ে- সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে সামনে দাঁড়িয়ে আছে তাদেরই জন হেনরী।

উল্লাসে ফেঁটে পড়ে সকলে। যন্ত্রের সাথে লড়াইয়ে মানুষ জিতেছে। কালো মানুষ জিতেছে, যন্ত্রের হারা মানে তো সাদা মানুষেরই হার! জন হেনরী কয়েক পা এগিয়ে এসে পিছে পাহাড়টার দিকে তাকায়। একটাই সুরঙ্গ চোখে পড়ে- যে সুরঙ্গ দিয়ে সে বেরিয়ে এসেছে, বুঝতে পারে জয় হয়েছে কালো মানুষের, শ্রমিকের। হাত দুটো উপরে তুলে উচিয়ে ধরে হাতুড়িটা। তারপরেই মাটিতে পড়ে যায়। ছুটে আসে মেরি ম্যাক ডেলিন। ছুটে আসে কালো শ্রমিক সহযোদ্ধারা। আর উঠে না জন হেনরী।

এই হলো- জন হেনরীর গল্প। কতখানি সত্য? কতখানি মিথ্যা? এটা একাডেমিশিয়েনদের ইতিহাস নয়, এটা উপকথা; আর উপকথা মানেই তো কল্পনার সংমিশ্রণ! এমনটাই আমাদের একাডেমিশিয়েনরা শিখিয়েছেন। মুখে মুখে লোকজন যেসব কিচ্ছা-কাহিনী, গল্পকথা- উপকথা বা রূপকথা তৈরী করে- সেগুলো আধেক সত্য- আধেক কল্পনা, মানে মিথ্যে। ফলে জন হেনরীর উপকথাও পুরো সত্য নয়, এখানেও কল্পনার মিশ্রণ আছে। কেননা এটা তো আর ইতিহাস নয়। এটা হচ্ছে আমেরিকান টল ফোকটেল। একাডেমিশিয়ানরা গবেষণা করছেন- এই উপকথার কতখানি সত্য, আর কতখানি কল্পনা। তা ওনারা করতে থাকুন। আমার কাছে- এটা একটা শোষণ-নির্যাতনের কাহিনী, একটা যুদ্ধের কাহিনী- যে যুদ্ধে যন্ত্র ও মানুষ মুখোমুখি- মুখোমুখি সাদা প্রভু ও কালো শ্রমিক, এবং এটা একই সাথে মানুষের জয়গাঁথাও বটে। যারা ইতিহাস/উপকথার সত্য-মিথ্যা নিয়ে খুব ভাবিত- তাদের বলি, অভিজাতদের রচিত ইতিহাসটাই বরং মিথ্যায় ভরা- নিজ গোত্রীয়দের চাটুকারীতায় ঠাসা; যারা এই উপকথার সত্যতা নিয়ে সন্দেহ তুলতে চান- তাদের বলি, কালোর উপর- শ্রমিকদের উপর সাদাদের-মালিকদের অত্যাচারের ঘটনা সত্য, অতি মুনাফার লোভে মানুষের পেটে লাথি মারার ঘটনা সত্য, তেমনি এর বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রামটাও জ্বলজ্বলে সত্য।

পরিশিষ্ট:
১। হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গানটির লিরিক:

জন হেনরী, জন হেনরী-
নাম তার ছিল জন হেনরী
ছিল যেন জীবন্ত ইঞ্জিন
হাতুড়ির তালে তালে গান গেয়ে শিল্পী
খুশী মনে কাজ করে রাত-দিন
হো হো হো হো- খুশী মনে কাজ করে রাত-দিন।।

কালো পাথরে খোদাই জন হেনরী
কালো পাথরে খোদাই জন হেনরী
গ্রানাইট পেশী গড়া ঝলমল
হাতুড়ির ঘায়ে ঘায়ে পাথরে আগুন ধরে
হাতুড়ি চালানো তার সম্বল
হো হো হো হো - হাতুড়ি চালানো তার সম্বল।।

পশ্চিম ভার্জিনিয়ার রেলে সুরঙ্গে
পশ্চিম ভার্জিনিয়ার রেল সুরঙ্গে
পাথুরে পাহাড় কেটে কেটে
রেল লাইন পাতা হবে হেনরীর হাতুড়ির -
ঘায়ে ঘায়ে রাত যায় কেটে
হো হো হো হো - ঘায়ে ঘায়ে রাত যায় কেটে।।

জন হেনরীর চির প্রিয় সঙ্গিনী
নাম তার মেরি ম্যাক ডেলিন
সুরঙ্গের কাছে যেত কান পেতে শুনত
হেনরীর হাতুড়ির বিন
হো হো হো হো- হেনরীর হাতুড়ির বিন।।

সাদা সর্দার কাজ চায় আরো
সাদা সর্দার কাজ চায় আরো
স্টীম ড্রিল করে আমদানী
আশংকা হেনরীর মেশিনের কাছে বুঝি
পেশী নিবে পরাজয় মানি
হো হো হো হো- পেশী নিবে পরাজয় মানি।।

আমি মেশিনের হবো প্রতিদ্বন্দ্বী
আমি মেশিনের হবো প্রতিদ্বন্দ্বী
জন হেনরী বলে বুক ঠুকে
স্টীম ড্রিলের সাথে চলে হাতুড়ির পাল্লা
কে আর বলো তারে রোখে
হো হো হো হো- কে আর বলো তারে রোখে।।

সাদা সর্দার বলে হেসে হেসে
সাদা সর্দার বলে হেসে হেসে
কালো নিগারের দেখো দুঃসাহস
তোর যদি জয় হয়, হবে না সূর্যোদয়
দুনিয়াটা হবে তোর বশ
হো হো হো হো- দুনিয়াটা হবে তোর বশ।।

জন হেনরীর হাতুড়ির ঝলকে
জন হেনরীর হাতুড়ির ঝলকে
চমকায় বিজলীর গতি
মানুষের সৃষ্টি দুরন্ত স্টীম ড্রিল
মানুষের কাছে মানে নতি
হো হো হো হো- মানুষের কাছে মানে নতি।।

অগ্নিগিরি হলো রুদ্ধ
থেমে গেল হাতুড়ির শব্দ
হেনরীর জয়গান চারিদিকে উঠে জমে
হৃদপিন্ড তার স্তব্ধ
হায় হায় হায় হায়- হৃদপিন্ড তার স্তব্ধ।।

জন হেনরীর কচি ফুল মেয়েটি
জন হেনরীর কচি ফুল মেয়েটি
পাথরের বুকে যেন ঝরনা
মার কোল থেকে সে পথ চেয়ে আছে তার
বাবা তার আসবে না আর না
হায় হায় হায় হায়- বাবা তার আসবে না আর না।।

পাখির কাকলি ভরা ভোরে
পুবালী আকাশ যবে রঙ্গীন
পাখির কাকলি ভরা ভোরে
পুবালী আকাশ যবে রঙ্গীন
হেনরীর বীর গাঁথা বাতাসে ছড়িয়ে দিয়ে
সিটি দিয়ে চলে যায় ইঞ্জিন
হো হো হো হো - সিটি দিয়ে চলে যায় ইঞ্জিন।।

প্রতি মে দিবসের গানে গানে
নীল আকাশের তলে দূর
শ্রমিকের জয়গান কান পেতে শোন ঐ
হেনরীর হাতুড়ির সুর
হো হো হো হো- হেনরীর হাতুড়ির সুর।।

২। হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গানটি এখান থেকে ডাউনলোড করা যাবে।

৩। জন হেনরীকে একটি ফোক গানের লিরিক:
JOHN HENRY
1. Some say he's from Georgia,
Some say he's from Alabam,
But it's wrote on the rock at the Big Ben Tunnel,
That he's an East Virginia Man,
That he's an East Virginia man.
2. John Henry was a steel drivin' man,
He died with a hammah in his han',
Oh, come along boys and line the track
For John Henry ain't never comin' back,
For John Henry ain't never comin' back.
3. John Henry he could hammah,
He could whistle, he could sing,
He went to the mountain early in the mornin'
To hear his hammah ring,
To hear his hammah ring.
4. John Henry went to the section boss,
Says the section boss what kin you do?
Says I can line a track, I kin histe a jack,
I kin pick and shovel too,
I kin pick and shovel too.
5. John Henry told the cap'n,
When you go to town,
Buy me a nine pound hammah
An' I'll drive this steel drill down,
An' I'll drive this steel drill down.
6. Cap'n said to John Henry,
You've got a willin' mind.
But you just well lay yoh hammah down,
You'll nevah beat this drill of mine,
You'll nevah beat this drill of mine.
7. John Henry went to the tunnel
And they put him in lead to drive,
The rock was so tall and John Henry so small
That he laid down his hammah and he cried,
That he laid down his hammah and he cried.
8. The steam drill was on the right han' side,
John Henry was on the left,
Says before I let this steam drill beat me down,
I'll hammah myself to death,
I'll hammah myself to death.
9. Oh the cap'n said to John Henry,
I bleeve this mountain's sinkin' in.
John Henry said to the cap'n, Oh my!
Tain't nothin' but my hammah suckin' wind,
Tain't nothin' but my hammah suckin' wind.
10. John Henry had a cute liddle wife,
And her name was Julie Ann,
And she walk down the track and nevah look back,
Goin' to see her brave steel drivin' man,
Goin' to see her brave steel drivin' man.
11. John Henry had a pretty liddle wife,
She come all dressed in blue.
And the last words she said to him,
John Henry I been true to you,
John Henry I been true to you.
12. John Henry was on the mountain,
The mountain was so high,
He called to his pretty liddle wife,
Said Ah kin almos' touch the sky,
Said Ah kin almos' touch the sky.
13. Who gonna shoe yoh pretty liddle feet,
Who gonna glove yoh han',
Who gonna kiss yoh rosy cheeks,
An' who gonna be yoh man,
An' who gonna be yoh man?
14. Papa gonna shoe my pretty liddle feet,
Mama gonna glove my han',
Sistah gonna kiss my rosy cheeks,
An' I ain't gonna have no man,
An' I ain't gonna have no man.
15. Then John Henry told huh,
Don't you weep an' moan,
I got ten thousand dollars in the First National Bank,
I saved it to buy you a home,
I saved it to buy you a home.
16. John Henry took his liddle boy,
Sit him on his knee,
Said that Big Ben Tunnel
Gonna be the death of me,
Gonna be the death of me.
17. John Henry took that liddle boy,
Helt him in the pahm of his han',
And the last words he said to that chile was,
I want you to be a steel drivin' man,
I want you to be a steel drivin' man.
18. John Henry ast that liddle boy,
Now what are you gonna be?
Says if I live and nothin' happen,
A steel drivin' man I'll be,
A steel drivin' man I'll be.
19. Then John Henry he did hammah,
He did make his hammah soun',
Says now one more lick fore quittin' time,
An' I'll beat this steam drill down,
An' I'll beat this steam drill down.
20. The hammah that John Henry swung,
It weighed over nine poun',
He broke a rib in his left han' side,
And his intrels fell on the groun',
And his intrels fell on the groun'.
21. All the women in the West
That heard of John Henry's death,
Stood in the rain, flagged the east bound train,
Goin' where John Henry dropped dead,
Goin' where John Henry dropped dead.
22. John Henry's liddle mother
Was all dressed in red,
She jumped in bed, covered up her head,
Said I didn't know my boy was dead,
Said I didn't know my boy was dead.
23. They took John Henry to the White House,
And buried him in the san',
And every locomotive come roarin' by,
Says there lays that steel drivin' man,
Says there lays that steel drivin' man.

৪। জন হেনরীকে নিয়ে গানের বিভিন্ন ভার্সনের লিরিক পাওয়া যাবে এই লিংকে

৫। এছাড়া এই লিংকে জন হেনরীকে নিয়ে আরো অনেক অডিও গানের লিংক পাওয়া যাবে।

৬। এই লিংকে গেলে জন হেনরীর কাহিনীটা পাওয়া যাবে।

৭। উইকি পিডিয়ার লিংক

৮। ডিজনীর তৈরী জন হেনরীকে নিয়ে এনিমেশন ফিল্ম:


৯। এই ভিডিওতে কয়েকটা গান পাওয়া যাবে:

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:২৮
২৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×