somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় (Season-2) - পর্ব- ৪

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



“জান”
“হুম, বলো”
“কাল তোমাকে চিনবো কিভাবে?”
“হাহাহা”
“হাসছো যে?”
“ওমা, তুমি তোমার হবু বউ কে বলছো চিনবা কি করে!! তো হাসবো নাতো কাঁদবো শুনি?”
“না মানে…”
“অতো না মানে করতে হবে না। এটাও তোমার একটা পরীক্ষা। তুমি কাজি অফিসের সামনে আমার জন্য অপেক্ষা করবে আর আমি এসে তোমার সামনে দাঁড়াবো। আমি দেখতে চাই তোমার বউকে তুমি চিনতে পারো কিনা। আমার সামনে এসে বলতে হবে ওয়ান, ফোর থ্রি ! তবেই বুঝবো তুমি আমাকে চিনতে পেরেছ”

এই ছিল সিরাজ আর “নকল রূপা” নামের মেয়েটার শেষ কথোপকথন। এই কথোপকথনের মাধ্যমে মেয়েটা ছেলেটার মাথায় একটা বিশেষ সেল তৈরি করতে সক্ষম হয়, যে সেলের ভিতরে সে নিজ হাতে ইন্সটল করে দেয় একটা বিশেষ সফটওয়্যার! যার দ্বারা সিরাজ নিয়ন্ত্রিত হতে থাকে বছরের পর বছর। সিরাজরা আসলে পাগল হয়না, তাদেরকে এই বিশেষ প্রক্রিয়ায় পাগল বানিয়ে রাখা হয়। সিরাজদের বুঝেও কিছু করার থাকেনা। দিন যায় রাত আসে কিন্তু তাদের রূপা আসেনা…

এরপর থেকে আজ অবধি ওই “নকল রূপা”র ফোন বন্ধ!! “নকল রূপা” বললাম এই জন্য যে, আমার জানামতে দুনিয়ার সব রূপারা অন্যরকম হয়। আর যাই হোকনা কেন তারা প্রতারক হতে পারেনা। তারা হয় অনেক আবেগি, শান্ত, ও এক কথার মানুষ। মানুষ ঠকানো তাদের কর্ম নয়। সে জন্যই পর্দার আড়ালের ভণ্ড রূপারা এই বিশেষ নামটি ব্যাবহার করে একটি ভদ্র ও মার্জিত লেবাসে নিজেকে উপস্থাপন করার জন্য, মানুষ কে ধোঁকা দেয়ার জন্য। কাক ময়ূরের পুচ্ছ লাগালেই যেমন ময়ূর হয়ে যায়না, বা কোন “ময়ূর” তার নামের সাথে “ ী”কার লাগিয়ে ক্যামেরার সামনে নগ্ন হয়ে নাচলেই যে ময়ূর হতে পারেনা তা সিরাজ নামের এই মূর্খ প্রেমিককে হাতে কলমে বুঝিয়ে দিয়ে গেছে ওই ভণ্ড রূপা।

“প্রেম” এমন এক রোগ বা ভাইরাস যার কোন চিকিৎসা আছে বলে আমার জানা নেই। এই রোগে সাধারনত বোকা লোকেরাই বেশি ভোগে। সে সময় কিসের বাবা, কিসের মা, কিসের দিন, কিসের দুনিয়া… তাদের মস্তিস্কের একটা সিংহভাগ অংশ নিয়ন্ত্রিত হয় “প্রেম” নামক এই বিশেষ ভাইরাস দ্বারা। হিতাহিত জ্ঞান বা ভালো মন্দের তফাৎ করতে সম্পূর্ণ রূপে ব্যর্থ তারা। আর যদি অল্প বয়সে কেউ এই রোগে ভোগে তবে সিরাজের মত ভাগ্য ব্যতীত ভিন্ন কিছু দেখিনা।

হটাৎ খুব সিগারেট খেতে ইচ্ছা হচ্ছে!! আমি সিগারেট খাইনা, তবে এখন ইচ্ছা করছে। প্রেম করে ছেঁকা খেল সিরাজ, আর সিগারেট খেতে ইচ্ছা হচ্ছে আমার! বিষয়টা বিভ্রান্তিকর। সিরাজ সিগারেট খায় কিনা তা জিজ্ঞাসা করতে যাব অমনি দেখলাম কি যেন একটা দেখে আনন্দে ভরা জ্বলজ্বলে চোখ নিয়ে উঠে এক দৌর দিলো সে!! আমি অনুস্মরণ করলাম ওকে। দেখলাম দূর থেকে হেটে আসা একটা মেয়ের সামনে গিয়ে ধুপ করে দাড়িয়ে আচমকা তাকে চিল্লিয়ে বলে উঠলো-
“ওয়ান ফোর থ্রি…”!!!
বলে ডাগা ডাগা চোখে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকলো। মেয়েটা জোরে একটা চিৎকার করে ও মাগো দিলো এক দৌড়। মেয়েটার দৌরে এ ধরনের আচরনে সিরাজ মন খারাপ করে ফেলল। তারপর এসে আবার সেই আগের জায়গায় বসে পরল। আমি সিরাজের পাশে এসে দাড়িয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম-
“আমি জানি রূপা কোথায় আছে!!”
কথাটা শুনে সিরাজ বিদ্যুৎ বেগে আমার দিকে তাকাল। আমি ওর দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে মাগুরা বাসস্ট্যান্ডের দিকে রওনা দিলাম। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাকে যশোরে পৌছাতে হবে। আমার তৃতীয় দৃষ্টি বার বার একটি মেয়ের “সুইসাইড” নোট দেখাচ্ছে!! গোটাগোটা অক্ষরে যেখানে লেখা -

“দিন দিন ভ্রূণ টা বড় হচ্ছে … I Quite …”

যেভাবেই হোক তাকে খুজেঁ বের করতে হবে, থামাতে হবে। কিন্তু যশোরে গেলেই যে তাকে খুজেঁ পাবো তার কোন গ্যারান্টি নেই। কোথায় গেলে পাবো জানিনা। এমনকি আদৌ পাবো কিনা তারও কোন গ্যারান্টি নেই। তবে আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছে পাবো! অবশ্যই পাবো। কবে পাবো, কিভাবে পাবো, কোথায় পাবো জানিনা, তবে পাব। সে জন্য স্থান পরিবর্তন করতে হবে। সিরাজ নামের ওই মূর্খ প্রেমিকের পিছে পরে থাকলে যে পাবোনা সেটা নিশ্চিত। এ ছাড়াও ঋষি মনিষিরা এক জায়গায় বেশিক্ষণ থাকতে বাড়ন করেছেন। এতে নাকি সুনিষ্ঠের চেয়ে অনিষ্ঠই বেশি হয়। যদিও আমি কোন ঋষি বা মনিষি নই! তবুও … একটু চেষ্টা করতে দোষ কোথায়!

বাসস্ট্যান্ডের একটা চায়ের দোকানে বসে চা দিয়ে ভিজিয়ে ভিজিয়ে টোস্ট বিস্কুট খাচ্ছি। ব্যস্ত শহর, গাড়ি ঘোড়ার প্যা-পু শব্দে কান ঝাঝালো পরিবেশ। হাজার হাজার মানুষের ব্যস্ত চলাফেরা। এর ভিতরেই খেয়াল করলাম আমার পাশে বসে থাকা এক বয়স্ক মুরুব্বী দেশের বহুল প্রচারিত দৈনিক পত্রিকা “বাংলাদেশ নিত্যদিন” এর একটি বিশেষ সংবাদ খুব মনযোগের সহিত পাঠ করছেন। চোখের হাই পাওয়ারের চশমাটা একটু নাড়িয়ে চাড়িয়ে মনোযোগ দিয়ে দেখছেন। রগরগে শিরোনাম - “একই সঙ্গে চার সুন্দরী তরুণীকে ধানক্ষেতে ফেলে পালাক্রমে ধর্ষণ”। আমি চা বিস্কুট শেষ করে মনের সখ মেটানোর জন্য একটা সিগারেট ধরালাম। আনাড়ি হলেও সিগারেটটা ধরালাম দক্ষ খোরের মতই। তা দেখে সংবাদ পাঠক ওই মুরুব্বী হাতের পেপার টা দোকানদারের দিকে ছুরে দিয়ে চলে যেতে যেতে বললেন-
“নাউজুবিল্লাহ! নাউজুবিল্লাহ! আইজ কালকার পোলাপাইন চরম বিয়াদ্দব! মুরুব্বী মানে না!!”
এর ভিতরেই খেয়াল করলাম আমার পিছনে এসে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে সিরাজ! যদিও তার আগমন বার্তা আগেই পেয়েছি। আমি সিগারেটে একটা লম্বা টান দিলাম বটে কিন্তু গিলতে সাহস পেলাম না। আমার এই অদক্ষতা সুক্ষ ভাবে লুকানোর চেষ্টা করে সিরাজ কে বললাম-
“কি? সিগারেট খাবে?”
সিরাজ মাথা নাড়াল। আমি ওকে পাশে বসতে বললেও সে বসলো না। আমি আবারো সিগারেটে একটা ফুঁৎকার দিয়ে প্রফেশনাল স্মকারদের মত করে বললাম-
“সিরাজ... আর কত কাল?? অনেক তো হল...”
সিরাজ আমার মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো। সে হয়তো মনে মনে বোঝার চেষ্টা করছে আমি তার অভিনয় ধরে ফেলেছি কিনা!! তারপর আবার বললাম-
“মনকে শান্ত করো সিরাজ... যাতে আগমন, তাতেই বিসর্জন?? কেন সিরাজ? তুমি তো পাগল নও!! একবুক জ্বালা আর যন্ত্রণা নিয়ে কোন এক বিশ্বাসঘাতিনীর অপেক্ষায় কেন নিজেকে শাস্থি দিচ্ছ? কেন শেষ করে দিচ্ছ এত মূল্যবান জীবন?? আর কতকাল সেচ্ছাই জিইয়ে রাখতে চাও এক ব্যাধিকে???”

সিরাজের চোখ টলটল করছে। ওকে অনেক সময় নিয়ে কাঁদতে দেয়ার প্রয়োজন… খুব চিৎকার করে কান্না পাচ্ছে ওর…। সব কিছুর একটা সময় ও স্থানের প্রয়োজন হয়। তেমনি কাঁদার জন্যও এই স্থানটি উপযুক্ত নয়। তবে আজ নাহ… একদিন ঠিক আমি ওর কান্না দেখব… দুঃখের নয়… সুখের কান্না…

আমি, মাগুরা আড়পাড়া হয়ে যে বাস গুলো যশোরের উদ্দেশ্যে যাবে তার একটিতে টপ করে উঠে পরলাম। এবং উঠতেই লক্ষ্য করলাম একটা ছেলে “পানিসিং” এর মত হেয়ার স্টাইল দিয়ে কানের মধ্যে হেডফোন গুজে ইয়ো ইয়ো ভঙ্গিতে হাত ঝাকাচ্ছে। এমন সময় এখানেও সেই জানালার পাশের একটা সিটে বসলাম এবং জানালার কাচে সেই ধুপ ধুপ বারি পরার শব্দে সেদিকে তাকালাম-
“কি মামা, চা, বিস্কুট, সিগারেটের বিল না দিয়া কই যাইতাছেন??”
বলল চায়ের দোকানদার। আমি কিছু বলার আগেই লোকটাকে টানতে টানতে সেখান থেকে নিয়ে গেল সিরাজ। জানালার কাচের ভিতর দিয়েই দেখলাম সিরাজ তার পকেট থেকে ভাজ করে রাখা সেই সাড়ে তিন হাজার টাকা থেকে চায়ের দোকানের পাওনা মিটিয়ে দিয়ে বাসের দিকে দৌরে আসলো। আমি ওর জন্য পাশের সিটটা ধরে রাখলাম এবং মনে মনে হাসলাম! কোন এক ভণ্ড রূপার বিয়ের টাকা দিয়ে এক কাপ চা আর সিগারেট খেলাম ভেবে একটু ভালোই লাগলো। আরও ভালো লাগলো এই ভেবে যে, দেরীতে হলেও সিরাজ নিজেই নিজেকে সাহায্য করতে সক্ষম হয়েছে। আসলে আমারা মানুষ জাতি খুবই পরনির্ভরশীল!! আবার স্বার্থপরও। আমরা সব সময় অন্যের সাহায্য কামনা করি। কিন্তু নিজে নিজেকে কখনোই সাহায্য করতে পারিনা, বা করতে চাইনা। যারা নিজে নিজেকে সাহায্য করতে পেরেছে তারাই সফল।
যে টাকা গুলো সিরাজ এতগুলো বছর ছুয়েও দেখেনি, সেই টাকা খরচ করতে পারার অর্থ এটাই যে, সে “প্রেম” নামক এই মোহ, রোগ, বা ভাইরাসের হাত থেকে চিরতরে মুক্তি চায়। আর কোন কিছু থেকে মুক্তি পেতে হলে সেই সম্পর্কিত তথ্য, উপাত্ত, বস্তুগত বা অবস্তুগত পদার্থকে ধ্বংস করা জরুরী। যেটা প্রায় দশ পর করতে সক্ষম হয়েছে সিরাজ!! যাকে এক ধরনের সফলতা বা বিজয় বলা যেতে পারে। সিরাজের মত সব পাগলদের এই আত্মউপলব্ধি ঘটুক এই প্রত্যাশা সব সময়…

চলবে…
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৩
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×